নজর ফেরাতে হবে চিলির দিকে….

Share this:

চিলির এই অভূতপূর্ব গণ-জাগরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? শিখতে পারি এই যে, বাংলাদেসহ বিশ্বের বহু রাষ্ট্রে বর্তমানে যে শ্বাসরুদ্ধকর স্বৈরাচারী দুঃশাসন চলছে, সেই দুঃশাসনই শেষ কথা নয়! বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান প্রায় ‘বিকল্পহীন’ নানা মতাদর্শের নানা মোড়কের ডানপন্থী শাসনপ্রণালীর মধ্যে চিলির জনগণের এই অভূতপূর্ব উত্থান নিশ্চই দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুষের মধ্যে এই হৃতপ্রায় বিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে যে, সংঘটিত মানুষই ইতিহাসের নির্মাতা!

 

গণঅভ্যুত্থান, গণভোট, সংবিধান সভা ও নতুন সংবিধান

নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলি। মূলত গত বছর থেকেই চিলিতে শুরু হওয়া ব্যাপক গণ অভ্যুত্থানের দিকে নজর রাখছিলাম। যে কারণে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সে কারণে তো বটেই ; এমনকি আন্দোলনের অভিনব ফর্মের কারণেও চিলির আন্দোলনের প্রতি আলাদা একটা মনোযোগ ছিল। শেষ পর্যন্ত চিলির জনগণ গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিল যে সিআইএ সমর্থিত সামরিক স্বৈরাচার পিনোশের আমলে প্রণীত সংবিধান দ্বারা আর তাদের দেশ চলবে না। গত বছর আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই তারা যাকে বলছিলেন ‘নতুন চিলি’, সেই নতুন চিলির জন্য জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবেন

খোদ চিলি তো বটেই, এমনকি এই ঘটনা আমাদের জন্যও যথেষ্টই প্রেরণাদায়ক। কারণ বাংলাদেশের মানুষ হিশেবে আমরাও এক ভয়াবহ নজিরবিহীন রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে আছি এবং বাংলাদেশের নানাবিধ রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে শাসনতান্ত্রিক সংকটকেই আমরা প্রধানতম সংকট বলে আসছি দীর্ঘদিন যাবৎ। এখন দেখা যাচ্ছে, চিলির বিপ্লবী জনগণও তাদের যাবতীয় রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সংকটের জন্য সামরিক স্বৈরাচারের আমলে প্রণীত সংবিধানকেই চিহ্নিত করেছেন এবং সেই সংবিধানকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রথম পদক্ষেপ হিশেবে গণভোটে সংবিধান সভার মাধ্যমে নতুন সংবিধানের পক্ষে অভূতপূর্ব রায় দিয়েছেন।

 

ইতিহাসের প্রথম ‘9/11’

কিন্তু বর্তমানের চিলির এই রাজনৈতিক রূপান্তর প্রক্রিয়ার আদি উৎসটা কোথায়? অনেকেই নিশ্চই জানেন, ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের 11 তারিখ চিলির জনপ্রিয় নির্বাচিত সালভাদর আলেন্দে’র সরকারকে এক বীভৎস সামরিক ক্যু এর মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। সিআইএ সমর্থিত সেই ক্যু এর মাধ্যমে ক্ষমতা আরোহণ করেন কুখ্যাত স্বৈরাচার অগাস্ত পিনোশে। এটাই ইতিহাসের প্রথম ‘9/11’। ইতিহাসের পরিহাস হলো, এই ‘9/11’ এর সাথেও জড়িয়ে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম।

চিলির সামরিক বাহিনীর প্রধান এই অগাস্তো পিনোশে দেশটির সমাজতান্ত্রিক সরকারকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতা দখল করার পর দেশ থেকে সমস্ত রকমের বিরোধী মত নির্মূলের লক্ষ্যে হাজার হাজার বিরোধী কর্মী ও সাধারণ নাগরিককে হত্যা নির্যাতন গুম সিক্রেট ডিটেনশন নির্বাসনের মাধ্যমে চিলিকে এক ভয়াল জাহান্নামে পরিণত করেন। এই সামরিক ক্যুতে নিহত চিলির বিখ্যাত গায়ক ভিক্টর জারাকে নিয়ে প্রকাশিত দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী: “In Chile, for example, a fairly orthodox fascist junta has, in two years, wiped out 30,000 of the population, imprisoned another 200,000 and left 22,000 widows and 66,000 orphans; a situation that already hints at fulfilling Bowie’s expectations since the operation, under the management of Augusto Pinochet, was actually fired off by a collective comprising the CIA, the State Dept and American business interests.”

মার্কিন অর্থনীতিবিদ মিল্টন ফ্রিডম্যানের তত্ত্ব Neoliberalism তথা নয়া উদারতাবাদ নামক ভয়ংকর বাজার মৌলবাদের প্রথম রক্তাক্ত পরীক্ষাগার হিশেবে চিহ্নিত করা হয় চিলিকে।মিল্টন ফ্রিডম্যানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় ফেরত চিলির এক ঝাঁক অর্থনীতিবিদ নয়া উদারনীতিবাদী অর্থনৈতিক প্রকল্প দক্ষিণ আমেরিকার দেশে দেশে চাপিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে দেশগুলোর সরকারের প্রভাবশালী পর্যায়ে উপদেষ্টা হিশেবে নিযুক্ত হন। ইতিহাসে তারা ‘শিকাগো বয়েজ’ (Chicago Boys) হিশেবে পরিচিত। ফলে চিলির বর্তমানকালের আন্দোলনকারীরা খুব সঙ্গতকারণেই ‘শিকাগো বয়েজ’ কর্তৃক আরোপিত নয়া উদারনৈতিক প্রকল্পের বিরুদ্ধে দ্যর্থহীনভাবে সোচ্চার। গবেষক আলতাফ পারভেজের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য:

“সংবিধান তৈরির জনআন্দোলন ছিল সাম্প্রতিক চিলিতে একইসঙ্গে নতুন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামও যা হবে জনতার কাছে জবাবদিহিতাপূর্ণ। ২০১৯ সালে চিলিজুড়ে বর্তমান অর্থনৈতিক নীতিকৌশলের বিরুদ্ধে দুনিয়ার নজড়কাড়া যেসব সমাবেশ হয়েছে তারই একটা ফল হলো নতুন সংবিধানের জন্য গণভোট। ঐসব সমাবেশের একটা বড় এজেন্ডা ছিল সামাজিক অসাম্য কমানো। যে অসাম্যের অন্যতম গোড়া প্রোথিত ছিল এতদিনকার সংবিধানে।

গণভোটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল দুটি: সংবিধান কি পুরোপুরি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা লিখবে? নাকি নির্বাচিত এবং মনোনীতদের মিশ্র একটা ব্যবস্থায় সেটা লেখা হবে? জনগণ রায় দিয়েছে– কেবল নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই সংবিধান প্রণয়ন করুক। বর্তমান গণভোটের পর চিলিতে শুরু হবে নির্বাচিত সংবিধানসভার অধীনে নতুন সংবিধান লেখার পালা। আগামী বছর হবে সংবিধানসভার প্রতিনিধি বাছাইয়ের নির্বাচন।

২০২২ সালে সেই সংবিধান অনুমোদনের জন্য আবার ভোট হবে। অর্থাৎ এবার সংগ্রামের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করলো চিলি। এই পুরো অধ্যায়ের মধ্যদিয়ে চিলি সালভাদর আলেন্দেকে হারানোর ঐতিহাসিক রাজনৈতিক বদলা নিতে চলেছে।”

 

বর্তমানের শুরু যেখান থেকে

তবে চিলির এই নজরকাড়া গণঅভ্যুত্থানের এই পর্বের শুরু গত বছর ঠিক এই সময়েই অর্থাৎ অক্টোবর মাসেই। সাবওয়ের ভাড়া ৩% বাড়ানো থেকে বিক্ষোভের সূত্রপাত। এরপর সেই স্ফুলিঙ্গ দাবানল আকারে ছড়িয়ে পড়ে চিলির সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে। প্রথম ১২ দিনেই বিক্ষোভ পরিণত হয় গণআন্দোলনে, যা শেষপর্যন্ত চিলির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন পর্যন্ত গড়ায়।

গতবছর আন্দোলন চলাকালীন আন্দোলনে অংশ নেয়া নানা স্রোতের মানুষের মতামত প্রকাশিত হয় দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায়। বন্ধু ও সহযোদ্ধা সহুল আহমদ সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেন। খুব কৌতুহলী হয়ে খেয়াল করছিলাম, সমাজের একেক শ্রেণী পেশার মানুষের আন্দোলনে অংশ নেয়ার পেছনে একেক প্রণোদনা কাজ করেছে। ভিন্নভাবে বলা যায়, সামরিক স্বৈরাচারের দুঃশাসন চিলিতে এত প্রকট ও ভয়াবহ ছিল যে, আপাতঅর্থে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সাথে বিযুক্ত মানুষও এই আন্দোলনের অংশ না হয়ে পারেননি। এই তালিকা স্কুল শিক্ষক থেকে শুরু করে মেকাপ শিল্পী, চিত্র নির্মাতা, শিক্ষার্থী, শিক্ষানবিশ আর্টিস্ট, ক্যামেরা সহকারী, ট্রান্সপিপল পর্যন্ত বিস্তৃত।

৩২ বছর বয়সী আর্ট হিস্টোরির শিক্ষার্থী মারিয়ার আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণ বেশ চমকপ্রদ। তিনি বলছেন, “যে মানুষগুলো সরকার চালাচ্ছে, এই মানুষগুলোর হাতেই আবার অর্থনৈতিক ক্ষমতা। একটি নিখুঁত চক্র। তারা আরো বেশি টাকা কামানো জন্য আইন বানাচ্ছে, এবং আমরা বাদবাকিরা আরো গরীব হচ্ছি। আন্দোলনের সময় সরকার মানুষকে মেরেছে, নারী-পুরুষকে ধর্ষণ করেছে। অনেকে চোখ হারিয়েছেন। স্বৈরশাসনের পর থেকে আসলে কখনোই মানবাধিকারকে সম্মান দেখানো হয় নি। আমরা ধনীদের দ্বারা দমিত হচ্ছি। এবং সময় এসেছে এটি শেষ করার। জনগণের জন্য এটাই সময় তারা যে ধরণের জিন্দেগী চায় সেটা বেছে নেয়ার।”

চিলির জনগণ খুব স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে পপুলার ম্যান্ডেটের আলেন্দে সরকারকে সিআইএ’র মদদে ক্যু এর মাধ্যমে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে সত্তরের দশকের নিকৃষ্টতম সামরিক স্বৈরাচার পিনোশে ; এখন এই নিওলিবারালিজম তথা নিরানব্বই ভাগ মানুষকে পদ্ধতিগতভাবে গরীব বানানোর অর্থনৈতিক বন্দোবস্ত ও রাজনৈতিক অধিকারহীন ব্যবস্থার কবরও হবে চিলিতে।

চিলির মানুষ তাদের বছরের পর বছর ধরে লালিত ‘নতুন চিলি’র স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার দ্বারপ্রান্তে । কী সেই ‘নতুন চিলি’? আন্দোলনকারী বলছেন, চিলির গণঅসন্তোষ এই ইস্যু কিংবা সেই ইস্যুকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে বলে আপাতভাবে মনে হলেও, আসলে তারা চিলির রাষ্ট্রনৈতিক সংকটের গোড়া ধরে টান দিতে চান।

তারা মনে করেন চিলির রাষ্ট্রনৈতিক সংকটের উৎস চিলির সংবিধান। আন্দোলনকারীরা নতুন সংবিধান সভা গঠনের মাধ্যমে একটা বহুত্ববাদী, গণতান্ত্রিক চিলির জন্য নতুন একটা সংবিধান প্রণয়ন করার জরুরি প্রাথমিক কাজ গণভোটটি সেরে ফেলেছেন।

সমাজ-রাষ্ট্রে ক্রিয়াশীল গণতান্ত্রিক সমস্ত পক্ষের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই এই ধরনের সংবিধান প্রণয়ন করা হবে।

যে সংবিধান রাজনৈতিক পরিসরে সামাজিক কমিটমেন্ট, ব্যক্তি ও সমাজের স্বাধীনতা এবং জনগণকে সার্বভৌম করবে।

“It’s clear that this movement is not just addressing this or that issue. It is raising questions which go right to the roots. […] Our constitution today is the heritage of neoliberalism in Chile, dating back to Pinochet and the Chicago Boys. To change things fundamentally we need to cut those roots. We need to create new rules of the game. We need a completely new constitution, created by a constituent assembly, with all kinds of social representatives involved. That would give real power to the people and encourage a much-needed new culture of participation, involvement, and social commitment to the political space.” (We Will Make a New Chile, Jacobin, 28/10/2019

 

বাংলাদেশ থেকে উপলব্ধি

চিলির এই অভূতপূর্ব গণ-জাগরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? শিখতে পারি এই যে, বাংলাদেসহ বিশ্বের বহু রাষ্ট্রে বর্তমানে যে শ্বাসরুদ্ধকর স্বৈরাচারী দুঃশাসন চলছে, সেই দুঃশাসনই শেষ কথা নয়! বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান প্রায় ‘বিকল্পহীন’ নানা মতাদর্শের নানা মোড়কের ডানপন্থী শাসনপ্রণালীর মধ্যে চিলির জনগণের এই অভূতপূর্ব উত্থান নিশ্চই দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুষের মধ্যে এই হৃতপ্রায় বিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে যে, সংঘটিত মানুষই ইতিহাসের নির্মাতা! গবেষক আলতাফ পারভেজের আরেকটি মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ:

“উভয় আমেরিকার সংগ্রামী মানুষের একটা মোটাদাগের বৈশিষ্ট্য হলো- তারা লেগে পড়ে ছিল এবং সবসময় চেষ্টা করেছে গণক্ষমতার ঐক্যের পরিসর বাড়াতে। ওরা কোণঠাসা হযেছে বার বার, কিন্তু কখনো নিজেদের মধ্যে বিভাজন বাড়াতে দেয়নি। আত্মসমর্পণও করেনি। ফলে সামরিক- বেসামরিক আমলাতন্ত্রের আধিপত্য যখনি কমে তখনি রাজপথের চিত্র পাল্টে যায়। তাদের কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের বড় অংশ কখনোই জনসম্পৃক্তি ছাড়েনি এবং বিভেদবাদের প্রেরণাস্থল হয়ে ওঠেনি। বিশেষভাবে দক্ষিণ আমেরিকা। ওখান থেকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার শিক্ষণীয় আছে বিপুল।”

শাসকের দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, অর্থনৈতিক সংস্কারসহ রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আমূল পরিবর্তনের দাবিতে যে বিক্ষোভ-বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল চিলিতে গত বছর, সেই গণরোষের মুখে তাৎক্ষণিকভাবে মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে দিয়েছিল সেই দেশের সরকার।

আসলে একেই বলে ‘সময়ের প্রয়োজনে’, সময়ের বাস্তবতা বুঝে অলীক কথাবার্তা না বলে, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পরিসরকে বাড়ানো। এবং সেটা কেবলমাত্র সম্ভব যদি বিদ্যমান একচেটিয়া-নিরঙ্কুশ একব্যক্তিকেন্দ্রীক ক্ষমতাকাঠামোকে একটা জবাবদিহিতামূলক, গণক্ষমতাতান্ত্রিক ক্ষমতাকাঠামো দ্বারা প্রতিস্থাপন করা যায়।

যেখানে রাষ্ট্রের সাপেক্ষে মানুষ ও সমাজ নয়, রাষ্ট্রের আইনের শর্তাধীন মৌলিক অধিকার নয়; বরং মানুষ ও সমাজের স্বাধীনতার সাপেক্ষে রাষ্ট্র, মৌলিক অধিকারকে মানুষের অবিচ্ছেদ্য, নিঃশর্ত মানবীয়তা ধরে নিয়ে তাকে ধারণ করতে পারার মত আইন প্রণয়ন করার মতো রাষ্ট্রপ্রকল্প হাজির করা।

বাংলাদেশেও বিদ্যমান নজিরবিহীন রাষ্ট্রনৈতিক সংকটকে এভাবে উন্মোচন করার নজির রয়েছে। সমাজ-রাষ্ট্রে ক্রিয়াশীল সমস্ত প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহকে নিয়ে নূন্যতম ঐক্য ও কর্মসূচির ভিত্তিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রনৈতিক সংকট সমাধানে সম্ভাব্য রূপকল্প বাস্তবায়ন করার আশু কর্তব্য আমাদের সামনে।

প্রত্যেক জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়-অঞ্চল-লিঙ্গ পরিচয়ের বাংলাদেশের সকল মানুষকে মানবিক মর্যাদা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে এমন এক রাষ্ট্রপ্রকল্পের দিকে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে সমস্ত রকমের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট সমাধানের শান্তিপূর্ণ পথ তৈরি করার কোন বিকল্প আমাদের সামনে নাই।

বাংলাদেশেও নতুন এক সংবিধান সভার মাধ্যমে বিদ্যমান একব্যক্তিকেন্দ্রীক একচেটিয়া ক্ষমতাকাঠামোর সংবিধানের অগণতান্ত্রিক, স্বেচ্ছাচারী, নিপীড়নমূলক, ঔপনিবেশিক ও স্বৈরাচারী আইন-কানুনকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষিত প্রতিশ্রুতি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের সাপেক্ষে গণক্ষমতাতান্ত্রিক এবং জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার অধীন রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা সময়ের দাবি। সংবিধান সর্বরোগের দাওয়াই না, কিন্তু বাংলাদেশে মতো ঔপনিবেশিক পরম্পরায় প্রাপ্ত রাষ্ট্রকাঠামোকে (যেখানে রাষ্ট্রের সাথে জনগণের প্রভু-দাসসুলভ সম্পর্ক) ন্যূনতম স্বাধীন মানুষের মর্যাদার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হলে ঔপনিবেশিক সংবিধান ও আইনি কাঠামোর আমূল পরিবর্তন করা সমস্ত সংকট নিরসনের প্রাথমিক পদক্ষেপ তো বটেই।

সমাজ-রাষ্ট্রে রাষ্ট্রনৈতিক বিকার ছড়ানো অসুস্থ, দুরারোগ্য রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে একটি নিরাপদ, সুস্থ ও মানুষের মর্যাদার প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল গণমুখী রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপিত করার মধ্যেই বাংলাদেশের সুন্দর ভবিষ্যতের শর্ত নিহিত। বলিভিয়া সেই পথ দেখাচ্ছে, চিলি সেই পথ দেখাচ্ছে।

 

তারাপদ রায়ের কবিতার মতো করে যেন আমাদের কপাল চাপড়াতে না হয় :

“আমরা বুঝতে পারিনি

আমাদের কবে সর্বনাশ হয়ে গেছে…”

 

 

ছবি কৃতজ্ঞতা

প্রচ্ছদ: Martin Bernetti/AFP via Getty, ইন্টারনেট সূত্রে প্রাপ্ত।

ছবি ১: ইন্টারনেট সূত্রে প্রাপ্ত

ছবি ২: ইন্টারনেট সূত্রে প্রাপ্ত

ছবি ৩: Marcelo Hernandez / Getty ইন্টারনেট সূত্রে প্রাপ্ত

 

Sarwar Tusher is an author and activist; interested in studying the state, power, authority, sovereignty, violence, and social relations.

Subscribe to Shuddhashar FreeVoice to receive updates

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

শুদ্ধস্বর
error: Content is protected !!