মুক্তবাজার অর্থনীতি সর্বপ্রকার পরিকল্পনামূলক অর্থনীতির বিরোধিতা করে। আজকাল আমরা কী দেখতে পাচ্ছি? — আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রে, যারা মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারক ও বাহক, নিকট অতীতে বড় বড় অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো (Bank) দেউলিয়া হয়ে গেছে। এই অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচানোর জন্য ওইসব রাষ্ট্রের সরকার এগিয়ে এসেছে এবং সেগুলো কিনে নিয়েছে। আমরা জানি, রাষ্ট্রের অর্থের উৎস জনগণের প্রদেয় কর। তাহলে রাষ্ট্র ব্যাংকগুলো কিনে নিচ্ছে জনগণের করের টাকায়। এ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, সরবরাহ ও চাহিদাতত্ত্ব আর বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
বিশ্বায়ন, ইংরেজি শব্দ গ্লোবালাইজেশনের বাংলা পারিভাষিক শব্দ। Civilization প্রক্রিয়ার অনুষঙ্গ হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির অভিঘাত বিশ্বায়নের গতিকে ত্বরান্বিত করেছে । বিশ্ব অনেকাংশেই পরিণত হয়েছে একটি আধুনিক গ্রামে । যার প্রায় প্রতিটি বাসিন্দা একে অপরের ভালোমন্দ, সুখ-দুঃখ, সৃষ্টি কিংবা ধ্বংসের খবর দ্রুতই জানতে পারে; সুযোগ পায় সংঘটিত ঘটনাগুলোর সাঙ্গে একাত্মতা পোষণ কিংবা বিরোধিতার।
এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া তার চলার পথে যার সাঙ্গে হাতে হাত ধরে চলছে সে হল মুক্তবাজার অর্থনীতি । মুক্তবাজার অর্থনীতির মূল কথা হল, কোনোকিছুর বাজারদর নির্ধারিত হবে তার চাহিদা ও সরবরাহের নিরিখে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কিছুই করণীয় নেই। অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বাঞ্ছনীয় নয়। বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজারের সঙ্গে সাম্প্রতিক সাহিত্যের আন্তঃসম্পর্ক এই নিবন্ধের মূল প্রতিপাদ্য।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বই একটি পণ্য (Product) হিসেবে বিবেচিত হয়। একটি বই যখন পণ্য হিসেবে বিবেচিত হয় তখন তা ক্রেতার অভিরুচির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এই ধরনের নির্ভরশীলতা সাহিত্যের জন্য মঙ্গলজনক নয়। বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করা যাক—
ক
মুক্তবাজার অর্থনীতি সর্বপ্রকার পরিকল্পনামূলক অর্থনীতির বিরোধিতা করে। আজকাল আমরা কী দেখতে পাচ্ছি? — আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রে, যারা মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারক ও বাহক, নিকট অতীতে বড় বড় অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো (Bank) দেউলিয়া হয়ে গেছে। এই অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচানোর জন্য ওইসব রাষ্ট্রের সরকার এগিয়ে এসেছে এবং সেগুলো কিনে নিয়েছে। আমরা জানি, রাষ্ট্রের অর্থের উৎস জনগণের প্রদেয় কর। তাহলে রাষ্ট্র ব্যাংকগুলো কিনে নিচ্ছে জনগণের করের টাকায়। এ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, সরবরাহ ও চাহিদাতত্ত্ব আর বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
এখন একটু চিন্তা করে দেখুন, শুধু ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে বইয়ের যে বাজার ফ্রি মার্কেট ইকনোমিতে গড়ে উঠেছে তা সার্বিকভাবে কেমন?
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি— পঙক্তিদ্বয় উত্তম সাহিত্যের উদাহরণ হতে পারে কিন্তু তা রূঢ বাস্তবতার সাহিত্যিক প্রকাশ বৈ অন্যকিছু নয় !
স্থূল অর্থে পেটে ক্ষুধা বা অন্য অর্থে প্রচণ্ডরকম অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে জগতে কজন বই কিনতে বা পড়তে যাবেন? কতজনই বা যাবেন ওইসব বই লিখতে কিংবা প্রকাশ করতে? মানবীয় আচরণের ধরন কিন্তু বলে মানুষের প্রবণতা হচ্ছে নিশ্চয়তা খোঁজা।
খ
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দেখা দেয় অতি-উৎপাদানের সমস্যা। উদাহরণ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সমস্যাকে বিবেচনাকরা যায়। আলোচ্য দেশে অনেক সংস্থা প্রায়শ অধিকহারে পণ্য উৎপাদন করে ক্রেতা খুঁজে পায় না। ফলে সংস্থাগুলো যেসবঅর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে ওইসব পণ্য উৎপাদন করে তারা ঋণের টাকা ফেরত দিতে পারে না। ফলে আমরা দেখি ওইদেশের অর্থনীতির ত্রাহিমধুসূদন অবস্থা। এই সমস্যা থেকে যে আমাদের দেশ ও সম্ভবত একেবারে মুক্ত নয়। ব্যক্তিগতভাবে আমিএবং আমার মতো অনেকেই ১৫০/- টাকার নতুন ঝকঝকে তকতকে সাহিত্যিক মানসম্পন্ন বই মাত্র ২০/৩০ টাকায় ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুলের মাজারের সামনের ফুটপাতে, নীলক্ষেতের ফুটপাতে এবং বাংলাবাজারে অহরহ বিক্রি হতে দেখি। মাঝেমাঝে সংসদ ভবনের সামনে ফুটপাতে , পুরানা পল্টন ও নয়াপল্টনে পাওয়া যায়।
গ
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আরেক সমস্যা হচ্ছে ফটকাবাজারি ও অতিলাভের লালসা। মূলত, দুর্নীতিবান্ধব হওয়ার কারণে উপরিউক্তকর্ম দুটি মুক্তবাজারে সংঘটিত হয়। মুক্তবাজারে বিনিময় সম্পন্ন হয় টাকার মাধ্যমে। লোকজন টাকা উপার্জন করে ধনী হয়। কিন্তুটাকা নিজে সম্পদ নয়, সম্পদ হিসেবে প্রতিভাত হয়। ফলে প্রকৃত সম্পদ আর মুদ্রা সরবরাহের মধ্যে প্রায়শ সঙ্গতি থাকে না। এরফলে সৃষ্টি হয় এক নতুনতর সংকট। পকেটে টাকা আছে কিন্তু পণ্য (Produc) নেই। যেমন: আমি কিছুদিন যাবৎ আহমদ ছফাঅনুদিত গ্যেটের ফাউস্ট খুঁজছি। সম্ভাব্য সকল গ্রন্থমার্কেটে একাধিকবার হানা দিয়েও গ্রন্থটি করতলস্থ করতে পারিনি। উপরন্তুগ্রন্থমার্কেটে ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে গ্রন্থটির কয়েকজন সম্ভাব্য ক্রেতার সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে। আলাপসূত্রে জানতে পারি তাঁদেরঅভিজ্ঞতাও আমার মতো । একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি শকুন্তলা, পদ্মাবতী, কমলাকান্তের দপ্তর, অবরোধবাসিনী ইত্যাদিপুস্তক সংগ্রহ করতে গিয়ে।
অথচ এইসব গ্রন্থের সাহিত্যিক মূল্য সর্বজনবিদিত। তাই বলা যায়, বইগুলো করতলস্থ না হওয়ার কারণ নিশ্চিতভাবে সাহিত্য-সংশ্লিষ্ট নয়। কারণ অন্য কিছু। আর একটি ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করছি। কোনো কারণে আমরা কয়েক বন্ধু জি.সি. দেব রচনাবলীর তৃতীয় খণ্ড খুঁজতে শুরু করি। প্রায় ৬ মাস খোঁজাখুঁজির পর বইটি নীলক্ষেতের এক স্বনামধন্য (!) দোকানে পাওয়া গেল। কিন্তু কিনতে গিয়ে আক্কেল গুড়ুম। দোকানি বইটির লিখিত মূল্য কালো কালি দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। সে আমাদের কাছে এমন মূল্য দাবি করল যা প্রায় অবিশ্বাস্য, ১২০০/- টাকা। অনেক দামাদামির পর ৯০০/- টাকা দিয়ে কেনা গেল। কিন্তু পরে জেনেছি বইটির গায়ে লিখিতমূল্য ছিল ১২৫/- টাকা। আমার এই অভিজ্ঞতা পদার্থবিজ্ঞানের স্নাতক শ্রেণির বাংলা বই কিনতে গিয়ে একাধিকবার হয়েছে।
ঘ
চাহিদার বিষয়টি সর্বক্ষেত্রে নৈতিক বিধিতে পড়ে না। মাদকদ্রব্যের চাহিদা বেশি এবং বিক্রয়ে লাভও হয় বেশি। এখান থেকে যদি সিদ্ধান্তে আসা যায়, মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পপি চাষ কাম্য তবে সেটা সার্বিকভাবে ক্ষতিকর হতে বাধ্য। মাদকের প্রভাব রাষ্ট্রের অগণিত মানুষকে স্বাস্থ্যহীন করবে। ফলে রাষ্ট্র তার শ্রমকে হারাবে। এখন, শ্রম সম্পদ সৃষ্টি করে। অধিক সংখ্যক স্বাস্থ্যহীন মানুষ মানেই কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়া। পরিণতি—রাষ্ট্রের সম্পদ তৈরির পথ রুদ্ধ হওয়া।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে মানুষ চায় বিক্রি করে লাভবান হতে। কিন্তু এই লাভের প্রচেষ্টা থেকে সমাজ বা রাষ্ট্রের কী ক্ষতি হচ্ছে তা থাকে বিবেচনার বাইরে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ধরে নেওয়া হয়, মানুষ স্বার্থপর এবং সে তার আপন স্বার্থেই কাজ করে। অর্থাৎ স্বার্থপরতাই হল মুক্তবাজার অর্থনীতির মূলনীতি। কিন্তু একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের সকলের স্বার্থের এই ধরনের সরলীকরণ কতটুকু যৌক্তিক?
একটি অতিপরিচিত সাহিত্যকর্মের নমুনা তুলে ধরছি —
নদী কভু পান নাহি করে নিজ জল,
তরুগণ নাহি খায় নিজ নিজ ফল।
গাভী কভু নাহি করে নিজ দুগ্ধ পান,
কাষ্ঠ দগ্ধ হযে করে পরে অন্ন দান।
স্বর্ণ করে নিজ রূপে অপরে শোভিত,
বংশী করে নিজ সুরে অপরে মোহিত।
শস্য জন্মাইয়া নাহি খায় জলধরে,
সাধুর ঐশ্বর্য শুধু পরহিত তরে।
উপরিউক্ত পঙ্ক্তিসমূহ থেকে এটা স্পষ্টভাবে প্রতিভাত—কিছু সত্তার অভিযোজনের ধরনই এমন যে সে নিজের স্বার্থেই অন্যকে সহায়তা করে। এই বিষয়গুলো কি অস্বীকারযোগ্য?
ঙ
মুক্তবাজার অর্থনীতি বা বিশ্বায়নের ফলে মুদ্রণযন্ত্র সহজলভ্য হয়েছে। মুদ্রণযন্ত্রের এই সহজপ্রাপ্যতা ও মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণা মোতাবেক যেকোনো মূল্যে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রবণতা থেকে উদ্ভব হয়েছে জনপ্রিয় সাহিত্যের। প্রাঞ্জলতা, স্বতঃস্ফূর্ততা, বিনোদন বা রম্যতা এবং জীবনকে হালকাভাবে দেখা মোটামুটি এইসব গুণের (!) সমন্বয়ে একজন লেখক জনপ্রিয় লেখক হয়ে ওঠেন। ক্রমান্বয়ে স্ফীত হওয়া মধ্যবিত্তের অবিকশিত, অগভীর ও অকর্ষিত মনোকাঠামো এবং ক্রয়ক্ষমতাসম্পন্ন অনুর্ধ্ব ২৫ থেকে ২৭ বছরের পাঠক এইসব জনপ্রিয় সাহিত্যের ভোক্তা।
এইসব জনপ্রিয় লেখকদের ভিতরে সমৃদ্ধ উপলব্ধিজগৎ এবং শিল্পের উচ্চতর নান্দনিকতা না থাকলেও অপরিণত এবং সীমিতমাত্রার শিল্পক্ষমতা বিদ্যমান। শিল্পের এই সীমিত মাত্রার পুঁজি নিয়ে খ্যাতি পাওয়া গেলেও সময় এদের সৃষ্টিকর্মকে কাল থেকে মহাকালে বয়ে নিয়ে যায় না, শুধু দিয়ে যায় ক্ষণস্থায়ী কিন্তু গতিময় এক ধরনের স্থায়িত্ব।
দেকার্ত, লাইবনিজ, স্পিনোজা, লক, র্বাকলে, হিউম, কান্ট, হেগেল, মার্ক্স কিংবা লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, গ্যাটে কিংবা মাইকেল মধুসূদন এঁরা কেউই জনপ্রিয় লেখক ছিলেন না। কারণ এঁদের সমৃদ্ধ উপলব্ধিজগৎ কিংবা শিল্পের উচ্চতর সম্পন্নতায় অপরিণত উপলব্ধিজগৎ ও সীমিতমাত্রার শিল্পক্ষমতা নিয়ে কেবলমাত্র ক্রয়ক্ষমতাসম্পন্ন পাঠক প্রবেশ করতে পারেন না।
প্রকৃত শিল্পী বা সাহিত্যিকের জনবিচ্ছিন্নতা এবং জনপ্রিয় শিল্পী বা সাহিত্যিকের অতি-জনঘনিষ্ঠতায় শিল্পের অবস্থা কী হতে পারে সে সম্পর্কে এজরা পাউন্ডের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য—
খারাপ শিল্পী মাত্রই অপরাধী, কেননা তারা জীবনের ভুল ছবি তুলে ধরেন। একজন শিল্পী তো কালের দলিলরক্ষক, রেকর্ড কিপার। একজন প্রকৃত শিল্পী তো তিনিই যিনি তার কাল ও পরিপার্শ্বের বিশ্বস্ত ছবিকে আগামী পৃথিবীর সজীব অনুভূতির জন্য রেখে যান। এই দরকারের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি যা আঁকতে যাচ্ছেন তার উপর যদি ফিরে কেবলই নিজের ছোপ লাগাতে থাকেন, তবে আগামীকালের পৃথিবী তার লেখার ভেতর তাকে খুঁজে পেলেও তার অব্যবহিত পৃথিবীকে খুঁজে পাবে না। একজন শিল্পী যা কিছুই আঁকেন তাকে তার ভিতরকার রুচি ও পরিশীলন দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলতে পারেন, তাকে জ্বলন্ত ও বাস্তববোধের স্পর্শে বিশ্বাসযোগ্য ও রক্তমাংসময় করে তুলতে পারেন—উচ্চায়ত মূল্যবোধ ও জীবনদৃষ্টির সংক্রামে তাকে বড় করে তুলতে পারেন, কিন্তু তার সাহিত্যপরিচয় থেকে তাকে সরিয়ে অন্যকিছু করে তুলতে পারেন না। এটা করতে গিয়ে শিল্প শক্তিহীন হয়ে পড়ে।
মুক্তবাজারে যেহেতু চাহিদা ও সরবরাহের নিরিখে বাজারদর তৈরি হয় সেহেতু কারবারিরা কৃত্রিমভাবে চাহিদা তৈরির প্রয়াস পায়। মানুষের সৌন্দর্যকামিতা, বিত্তবাসনা, যৌন অনুভূতি ধরে ঝাঁকুনি দিলে ক্রয়ক্ষমতা না থাকলেও ক্রয়অভ্যাস গড়ে ওঠে। ফলে বাজারে সরবরাহ বাড়ে। এইরকম ক্ষেত্রে যার যেটা সরবরাহ করার কথা নয়, সে তা সরবরাহ করে। যেমন: আমাদের দৈনিকগুলোর সাহিত্যচর্চা। দৈনিকের কাজ খবর পরিবেশন করা। কিন্তু তারা বর্তমানে তাদের মূল কাজের সঙ্গে সঙ্গে মতামত তৈরি, সাহিত্যচর্চা ইত্যাদি শুরু করেছে। ফলে প্রকৃত সাহিত্যপত্রিকা এবং লিটল ম্যাগগুলো মারাত্মকরকম অসুবিধার সম্মুখীন।
দৈনিকগুলোর আরেক কাজ হচ্ছে সাহিত্যে কেউ নোবেল পাওয়ামাত্রই তাকে নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়া। অটোবায়োগ্রাফি থেকে শুরু করে সৃষ্টিকর্মের অনুবাদ পর্যন্ত করা। অথচ স্বীকৃতি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁদের কোনো খোঁজ-খবরই থাকে না দৈনিকগুলোতে। সৃষ্টিকর্মের খোঁজ-খবর রাখা তো দূরের কথা। যদি ঐসব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত লেখকদের কোনো খোঁজ-খবর থেকে থাকে তাহলে তা থাকে বিশুদ্ধ সাহিত্যপত্রিকা কিংবা লিটল ম্যাগাজিনে। অবশ্য এই কথা বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বলা।
আবার এই বিশ্বায়ন বা মুক্তবাজারের ফলেই আমরা সাহিত্য বা অন্যান্য সৃষ্টিশীলতার সর্বশেষ খোঁজ-খবর নিয়মিত পাই। সুবিধামতো সেগুলো আস্বাদন করতে পারি। ফলে যেকোনো সৃষ্টির পুনরাবৃত্তি রোধ হয়, ক্ষেত্রবিশেষে রোধ হয় লুপ্ত হওয়া। এই বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজারের প্রভাবেই আমরা ক্রমান্বয়ে হয়ে উঠি দেশীয় থেকে আন্তর্জাতিক নাগরিক। হয়তো আমরা আন্তর্জাতিক নাগরিকের সকল সুযোগ-সুবিধা পাই কিংবা পাব এই বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার নামক আপাত অপ্রতিরোধ্য প্রক্রিয়া থেকে।
এইসব ইতি-নেতি নিয়েই বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার। সাম্প্রতিক সাহিত্যে এর অভিঘাতও আমরা সংক্ষেপে দেখলাম। প্রকৃত প্রস্তাবে, ফুল থেকে মৌমাছি নেয় মধু আর মাকড়সা নেয় বিষ। গ্রহণের ধরন থেকেই বোঝা যায় কে কি। এই সরল সত্য আমরা যতটুকু হৃদয়ঙ্গম করতে পারব ততই মঙ্গল।
Ahmed Lipu is an author. The topic of interest in Philosophy. Published Books: Byaktikotay Nyorbyaktik(2011), Darshan(2017), Byakto : Bibidho Phenomena’r Darshonik Parzalochona(2018), Yugolsandhi : Muldhara-Bikalpodhara(2019)