এই সময়, সেই গল্প
“আহ্ করোনা… উঁহু করোনা.., বাচ্চারা এই গানটা দারুণ বানিয়েছে, নাহ্?” কেউ একজন পাঠিয়েছে মেসেঞ্জারে।
আজকাল আর কেউ জিজ্ঞ্যেস করছে না, দিন কেমন যাচ্ছে? প্রশ্নটি এখন অবান্তর। ভয়াবহ রকমের গুজব, অত্যন্ত আশাবাদী আবিষ্কার বা চরমতম ফান, এইসবে বাজার গরম। দেদারসে চালান হচ্ছে যত্র-তত্র, ঘণ্টায় ঘণ্টায় এসবে ভরে যাচ্ছে ভেতরের চিঠির বাক্স। কয়েকজন আত্মীয়স্বজন রুটিন করে ফোন দিচ্ছে। বহু পুরোনো বন্ধুরা, অনেক বছর হলো যারা, আমার সঙ্গে বলার মতো কথা হারিয়ে ফেলেছিল। তারাও গোপনে আমার ভেতর বাক্সে পাঠাচ্ছে বেঁচে থাকার নানান সালসা। ভয় না পাবার অভয়বাণী। আদা-কালোজিরা-হলুদের মিশ্রণের মহত্ত্ব। চৌদ্দ দিন হলো।
বুঝতে পারছি, আমার নাক যে গন্ধের জন্য হাহকার করে, তা ওই হতচ্ছাড়া হোমলেসদের পোটকা গন্ধ! কতদিন যাই না মেট্রো ইস্টিশনে! একটার পর একটা ইস্টিশনের দরজা খুলে উঠে আসা আর বেড়িয়ে যাওয়া ভিন্ন ভিন্ন রঙের দিন। ব্যায়ানউড- ভ্যানউইক-ফরেস্টহিল-রিগোপার্ক…। মনেমনে বলি, ওই ইস্টিশনে দরজা না খুলুক! ওটা ডিঙিয়ে যেতে চাই, নামও নিতে চাই না তার। ভূতের ভয়ে ছেলেবেলায় যেমন বুকে থুতু মেখে মেখে বড় হয়েছি। অথচ ঘরে বসে টিভির চ্যানেল চেঞ্জ করে করে ক্রমাগত সেই নামটিই শুনছি বারংবার- এলমার্স্ট! নগরের লাশকাটা ঘরে পরিণত হয়েছে যেন সে। বধ্যভূমির মতো একটার পর একটা লাশ জমা হচ্ছে তার উঠোনজুড়ে। হাসপাতাল নয়, লোকে বলছে কসাইখানা। ভেন্টিলেশনের ভাগ-বাঁটোয়ারায় নাকি নিশ্বাস হারিয়ে যাচ্ছে সবার।
খুব মনে পড়ছে কলম্বিয়ান তরুণী উইডো তাতিয়ানাকে, ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল জার্মান বৃদ্ধ গেলেনমার। প্রায়ই নিজের ফ্যাকাল্টি ছেড়ে এসে দাঁড়ায় আমাদের এখানে, মদির চোখে চেয়ে থাকে তাতিয়ানার দিকে। প্রথম ওর জন্যই খুব বেশি চিন্তা হচ্ছিল; এই রোগে নাকি বুড়োরাই মরছে! এখন তাতিয়ানার জন্যও মন কাঁদে, কী এমন বয়স মেয়েটার! ক্যান্টিনের বড় বেঞ্চি দখলে রাখত মিশরীয় মেয়ে হাইয়াম। মোটা মোটা রুটি বা ডিশভর্তি চিজ পাস্তা সাজিয়ে একপাল ভীষণ গল্পিস বন্ধু নিয়ে। ছোটবেলায় ছোট হুজুরের সুরেলা কোরআন পাঠ শুনতে শুনতে আরবি ভাষার প্রেমে পড়েছিলাম! মেয়েটির কন্ঠের কর্কশতায় এতদিনে সে প্রেম ছুটল! সেই বিরক্তিকর আর ঝগড়াটে হাইয়ামকেও মনে পড়ছে!
মিস ত্রিনিদাদ ব্যঙ্গ করে উজবেক বৃদ্ধ মোহাম্মাদকে বলেছিল, হি ইজ অ্যাহ টকেটিভ বয়! মোহাম্মাদ কাঠবেড়ালির মতো ঠুক ঠুক করে বাদামের খোসা ছিলে কুটকুট করে চিবাতো, এমন সাবধানে, যেন দাঁত না ভাঙে! আর সুঠাম দেহি আলর্বাতোর উচ্ছ্বল ‘ওলা.. ওলা’ চিৎকার। চার চাকার ট্রলি ঠেলে ঝড়ের গতিতে আসা চঞ্চলা প্যাত্রেসিয়া। দিনের দীর্ঘ সময়জুড়ে ওদের সঙ্গে আমার মমতায় বাঁধা ছিল ঘর; এখন খুব মনে পড়ছে সবাইকে। লকডাউনের আগের দিন উজবেক বৃদ্ধ মোহাম্মেদের দিকে ভয়ে শেষবার তাকায়নি, সবাই বলেছিল রোগটায় মরে বুড়োরা। এখন পাত্রেসিয়া আর তাতিয়ানার মুখটাও ঝাপসা লাগছে!
সেই মার্চের ১৪ তারিখে বলেছিল, চৌদ্দ দিনের আইসোলেশনে যাও। তারপর, বেঁচে ফিরে এসো। আজ, এমনকি গত পরশুও যাকে পাবেন, শুনবেন বলছে, মাত্র চৌদ্দ দিনের আইসোলেশনে যাও। আমি বললাম, ব্যাপারটা কী হলো?
সুমিত স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলে, সোজা কথা, এখন ১৪ দিনে বর্ষ চলছে।
মানে?
তুমি চৌদ্দ দিন বেঁচে আছো মানে পনেরোতম দিনটি হচ্ছে তোমার নবজন্ম.. এই জন্মকে টিকিয়ে রাখতে আরও চৌদ্দ দিন.. তারপর নবজন্ম.. তারপর আরও চৌদ্দ দিন..
থামো.. থামো..। সুমিতকে থামাতে না থামাতেই প্রতিদিনকার মতো মোবাইলের বেলআইন ঘণ্টা বেঁজে ওঠে।
টিংটং.. টিংটং.. নিউজ আপডেট, নিউইয়ার্কের গভর্নর কুমোর ব্রিফিং,
টিংটং.. টিংটং.. নিউজ আপডেট, মেয়র ব্লাজিও লাইভে..
টিংটং.. টিংটং.. নিউজ আপডেট, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্রিফিং..
এভাবে চলছে! আজ সিভিএস, কাল পিসিপি.. পরশু ওয়ালগ্রিন.. আমরা ফ্রি সার্ভিস দিব। আমরা আপনাদের পাশেই আছি.. আপনারা ঘরে থাকুন। সবকিছু বেশ চলছে। কিছু দরকার হলে ৩১১ কল করুন। মোবাইলের টিংটং .. টিংটং নিউজ আপডেট আর কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে ছুটে চলেছে অ্যাম্বুলেন্স। আমার কানের কাছে সুমিতের কথাগুলো ভনভন করে, চৌদ্দ দিনে বর্ষ!.. আরে চৌদ্দ দিন পর তো ১৪ই এপ্রিল, মানে পহেলা বৈশাখ! আমাদের নববর্ষ.. স্বভাব মতো চেঁচিয়ে উঠতে পারলাম না; স্বভাব পাল্টে যাচ্ছে। শহরের এক লাখ কফিন রেডি! এখন আনন্দ-বিষাদ নিজেই গিলে ফেলছি! সেই ফাঁকে আবারও আমাকে পাশ কাটিয়ে অন্য কাউকে নিয়ে ঘেউ ঘেউ শব্দে বেড়িয়ে গেল একটি অ্যাম্বুলেন্স!
২
প্রবাস জীবনে প্রতিবেশীদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল; কিন্তু গল্প হয়ে ওঠেনি। যদিও তারা আমার স্বদেশি; তবুও ভাবি ভাবি ডাকে, মাখো-মাখো সম্পর্ক হয়ে উঠল না! সে আমারই দোষ। শিশুদের প্লে-গ্রাউন্ড, স্কুল বা মুসলিম সেন্টারের জামাতে নামাজ পড়া, কোনোখানেই যখন তারা আমাকে খুঁজে পাবে না; তখন তাদেরকে মিছিমিছি দোষ দেওয়াটা হবে অন্যায়। তাছাড়া আমি ম্যাকডোনাল্ডাসের চিকেন স্যান্ডুইচ খাই, ডানকিনের হ্যাশ-ব্রাউন আর পপাইজের চিকেন। সেখানে বাচ্চাদের খাবার কেনার সময়, আমাকে দেখেছে কেউ কেউ! কাছাকাছি থেকেও একটা দূরত্বের ব্যাপার ঘটে যাওয়াটা খুব অস্বাভাবিক নয়। উনারা সবাই ভাজা মুড়ির প্যাকেটে ‘হালাল’ লেখাটি ভালো করে দেখে নিয়ে তবেই কিনেন। আর বন্ধুত্ব না হওয়ার বিষয়টা আমার বা তাদের কারও কোনো সমস্যা হচ্ছিল না; যার যার জীবন চলছিল ঠিকঠাক। কিন্তু সারা পৃথিবী এখন ভীষণ রকম অসুখী দিনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সবাই মিলে টিভির ক্রলিং-এ চোখ, আক্রান্তের সংখ্যা-নতুন আক্রান্ত, মৃত্যুর সংখ্যা-নতুন মৃত্যু। দেখছি গুনে গুনে ক্রমশ তালিকার শীর্ষে উঠে যাচ্ছে আমেরিকা। ট্রাম্পের স্বপ্ন! প্রতিটি দিনেই শুরু হচ্ছে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেইনটাইন।
ঘুম থেকে উঠতেই ডা. ফাউচির নির্লিপ্ত আর শুকনো মুখখানা মনে পড়ে, ট্রাম্পের চোখের চারপাশ জুড়ে শ্বেতরোগীর মতো প্রাকৃতিক সানগ্লাসের ছাপ! নীরব বার্নি স্যান্ডাস; সব বুড়ো ভাম। মানুষকে মরতে দিয়ে প্রমাণ করতে চায় মানবাধিকার! এসব উদ্ভট আদার বেপারি মার্কা চিন্তা করতে করতে মেসেজটা পেলাম; নিউইয়র্ক সিটি থেকে-“Be a good neighbor. Check on your fellow New Yorkers to see how they are doing: call, send an email, or talk through the door“, আর দুপুরেরই টেলিফোন!
প্রতিবেশি ছুলু-বুলুর মা ফোন করেছেন! দুই বছরের মাথায়, এই প্রথম। তিনি জানালেন, অন্যপাশের ভাবি, ওসামার মা, ফোন নম্বরটা দিয়েছে! ভেতরে ভেতরে একটা ধাক্কা খেলাম; বাম বা ডান কোনো ঘরের সঙ্গেই আমার মোবাইল নম্বর বা খানাদানা আদান-প্রদান হয়ে ওঠেনি। না, জানি কত কষ্ট করে বেচারি আমার নম্বরটা জোগাড় করেছেন! ভীষণ ভালো লাগল তাদের আন্তরিকতায়। রাতে ঘুমোবার আগে শেষ বাংলাদেশের খবর পড়ছিলাম। কোন এক গাঁয়ের বধূ সারারাত প্রতিবেশীকে ফোন করেছে, হাসপাতালে ফোন করেছে, এমনকি আত্মীয়-স্বজনকে, কাউকেই পাননি সহযোগিতার জন্য। বেচারি সারারাত অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ছটফট করেছেন। সকালে স্বামীটি মারা যায়। আর এই বিদেশ ভূইঁয়ে প্রতিবেশীর আন্তরিক সাড়া পাওয়াটা তো ভাগ্যের বিষয়। সে কথা আর উনাকে বলা যায় না।
তিনি জানালেন, ওই ভাবি আর আমি, আপনাকে নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম?
আমি উৎকন্ঠিত হই, ক্যানো?
এই আইসোলেশনের সময় বলে..
আমি বুঝতে পারি না, অস্বস্তির সঙ্গে বলি- আমি ভালো আছি, গত পাঁচ মাস কোথাও ভ্রমনে যাইনি; এমনকি জ্বর.. ঠান্ডা.. শুকনো কাঁশি.. হয়নি.. আমি নেগেটিভ।
ছি ছি ভাবি, আপনি এসব ভাবছেন ক্যানো। আমি কি তাই বলেছি?
ওহ্, আমি আসলে.. এখন এমন প্যানডেমিক.. এমন প্যানিক অবস্থা..
হ্যাঁ, সত্যিই। এমন ঘরের মধ্যে আটকে থাকতে আপনার নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হচ্ছে? আমরা তো ঘরেই থাকি, আমাদের আর অসুবিধে কী। কিন্তু আপনি..
না না, আমাকে নিয়ে ভাববেন না। আমি.. শেষ করতে পারি না তিনি বলেন,
না ভাবি, আমরা কি আর বুঝি না। এই ক’দিনে আমাদের মতো মানুষের ঘরে থাকতে হাঁপ ধরে যাচ্ছে! আমরা আর কই যাই, বলুন? একটু গ্রোসারি বা বাচ্চাদের পার্কে, তাতেই মনে হচ্ছে কারাগারে আছি! আর আপনি তো সারাদিনই বাইরে থাকতেন, আপনার কষ্টটা.. আইসোলেশনটা তো ভীষণ কষ্টের.. খাবারেও নিশ্চয় কষ্ট..
আমি বললাম, সকালে মিল্ক অ্যান্ড সিরিয়াল, দুপুরের পাস্তা আর রাতে যাই হোক দুমুঠো ভাত না খেয়ে ঘুম আসে না।
আপনাকে ভাবি একদমই ভেতো বাঙালি মনে হয়নি।
অপ্রস্তুত হেসে বলি, ওহ্, তাই না কি?
হ্যাঁ, আপনি যে ইন্ডিয়ান না, বাংলাদেশি বাঙালি। সে বুঝতেই তো অনেক সময় লেগেছে।
ওহ্, আচ্ছা।
তিনি বেশ দুঃখ মিশ্রিত কন্ঠে বলেন, দেখেন কী খারাপ সময়, ঘরে বসে থাকা।
একগাল হাসি ছেড়ে বললাম, শুনলে অবাক হবেন, হোমকোরাইণ্টাইনে আমি আগেও থেকেছি।
উনি বলেন, কী যে বলেন! এমন দিনেও রসিকতা করছেন?
না না, সত্যি বলছি। আপনার ছুলু-বুলু যখন পেটে ছিল, তখনকার কথা মনে পড়ে? যখন সাতমাস; তখন দুপুরের খাবার খেয়ে বামকাত শুয়ে নিশ্চয়ই ওদের নড়াচড়া অনুভব করতেন!
ওপাশে ভাবি খানিকাটা অপ্রস্তুত হন। বলে, মানে?
মানে আমার ছেলেটি যখন সাতমাসের পেটে ছিল, তখন ওমন করে শুয়ে থাকতাম! আর ওর প্রতিটি হাত-পা নড়েচড়ে উঠলে বুঝতে পেতাম, খেলছে!
ওপাশে, হয়তো ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি কথা বলতে পারলেন না। এও আমার দোষ, সারাটা জীবন মানুষ আমার বাইরেটাই দেখল! ভেতরটা দেখায়নি। যেমন বয়সটা লুকিয়ে এখনও নাকি বাচ্চা মেয়ে সেজে থাকি! ভাবি কথা বলতে পারছেন না। ওপাশে, নিশ্বাসের ঘন শব্দ। আমার শ্বাসকষ্টের কথা মনে পড়ে। তাকে রিলিফ দিতে বলি, সত্যি বলছি ভাবি, আমি আটমাস মাস বেড কোরাইন্টাইনে ছিলাম। ডাক্তার বলেছিল, শিশুটির জন্ম না দেওয়া পর্যন্ত আপনি বিছানায় শুয়ে থাকবেন। প্রথম পাঁচ মাস মাথার নিচে দুটো বালিশ, আর পায়ের নিচে একটি বালিশ দিয়ে শুয়েছিলাম। শুয়ে শুয়ে ছাদের টিকটিকি গুলোর একটা তালিকাও করে ফেলেছিলাম। তারপর শুধু বাম-কাত হয়ে শুয়ে থেকেছি, আরও তিনটি মাস। আমার কোনো কষ্ট হয়নি। আমার দেহে নতুন প্রাণের স্পন্দন ছিল। ওপাশে নিশ্বাস আরও ঘন হয়।
আমি ক্যানো জানি নিজেকে থামাতে পারি না। বহুদিন বিচ্ছিন্ন থাকা প্রতিবেশীর সংযোগ পেয়ে বলেই চলি.. আমার ছেলেটি এমন দুষ্টু ছিল, পেটের ভেতরেই সাঁতার কাটছিল! একদিন দুপুরে ওর বাবা দেখে, আমি কাত হয়ে শুয়ে, আর পেটের চামড়া ভেদে স্পষ্ট আকার নিয়ে ছেলেটি; আমার পাশেই শুয়েছে যেন! আপনার ছালু-বুলু যখন পেটে ছিল..।
আমাদের এভাবেই সংযোগ হলো। পরের দিন ওসামার মা ফোন করেন। খুব মায়াবতী কন্ঠে বলেন, তিনি জানতেনই না আমার ছেলের কথা, ওর নাম চন্দ্রবিন্দু।
তারপর ওসামার আঁকা ছবি এলো আমার মোবাইলে, ছেলেটি চমৎকার ওক কাঠের বেঞ্চিতে কাঠবিড়ালি এঁকেছে! পার্কের আকাশ, ওক কাঠ, কাঠবিড়ালি সব পিংক রঙে রঙিন। বসন্তে এ দেশ এমন পিংক হয়ে ওঠে। পরের দিন ছুলু-বুলুর মা জানাল, তাঁর মেয়েরাই আজ ব্রেকফার্স্ট বানিয়েছে! বিশ্রী ঘরবন্দি দিনগুলিকে ওরা চমৎকার করে তুলছে। পাশের ঘরগুলো থেকে এক একটা ছবি আসে; ক্রমশ তাদের ডাইনিং টেবিলের বাদামি ম্যাটও আমার চেনা হয়ে যায়। ওসামার মায়ের লেবুগাছ! শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচাতে তুলে এনেছিল বসার ঘরে, আর বের করা হয়নি। টার্চস্কিন খুঁচিয়ে গুগল ছবিঘরে খুব কাছে থেকে পাড়া-প্রতিবেশী নিয়ে সামাজিক দূরত্বে, কাছাকাছি সময় পার করছি। চৌদ্দ.. চৌদ্দ করে বর্ষ.. বর্ষ দিন। আর মায়ের কথা মনে পড়ে। তিনি ছড়া কাটতেন, ‘হে মানব তুমি হও সাবধান, মৃত্যু তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে.. পাবে না পরিত্রাণ!’
আজ ছুলু-বুলুর মা বললেন, তাঁর ভাসুরের বউ; ওজনপার্কে থাকেন, তার করোনা হয়েছে। ওসামার মা বললেন, ভাবি; ভালো যে এখন আপনার চন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশে আছে। ওখানে তো এখনও করোনা তেমন করে আক্রমণ চালায়নি। বেঁচে থাকলে, এইদিন পেরুলে, চন্দ্রবিন্দুকে আমেরিকা নিয়ে আসবেন। অনেকেই এভাবে আসে, পড়ে গ্রিনকার্ড পেলে স্বামী-সন্তান আনে।
তার কথায় আমি চমকে উঠি, আমাকে তিনি অবৈধ্য অভিবাসী ভেবেছেন! দোষ আমারই; আমি কেবল আটমাসের গর্ভকালীন বেড কোয়ারেইনটাইনের গল্প করেছিলাম। মাতৃত্বকালীন সময়ে সন্তানের সঙ্গে সংযোগের গল্প বলেছি। কোয়ারেইনটাইন শেষের গল্পটি করা হয়নি। তাই ছুলু-বুলুর মা বুঝতে পারেননি। হয়তো ওসামার মাও চিন্তা করেননি, কেবল গর্ভকালীন কোয়ারেইনটাইনই চন্দ্রবিন্দুর সঙ্গে আমার সময়! সেই আইসোলেশন শেষে আমি কোনো শিশু কোলে নিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারিনি।
বললাম, আটমাস কোয়ারেইনটাইনে থেকেও শেষ রক্ষা করতে পারিনি। দেশে আমার ছেলেটির কবর আছে।
সহসা একটা আর্তনাদ ভেসে আসে..
ওসামার মাকে আর সে কথা বলতে হয়নি। তিনি জেনে গিয়েছিলেন। পরের দিন ফোন করে বললেন, ভাবি আরও চৌদ্দ দিন..
এতদিন বাদে সন্তানের গল্প করে করে আমরা পরস্পর কেমন কাছের মানুষ হয়ে গেলাম! ঘরে থাকা মানুষ। বললাম, সেবার আমি একা একা ছিলাম, আর একাই বেড়িয়ে এসেছিলাম। এবার সারা পৃথিবীর মানুষ ঘরে.. আমার কথা শেষ হয় না। ছুলু-বুলুর মা বলে, এই দিন শেষে, আমরাই আপনাকে সঙ্গে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ব.. একসাথে।
প্রশ্নোত্তর
শুদ্ধস্বর: গল্প লেখার ব্যাপারে আপনার তাড়নার জায়গাটা কোথায়? অর্থাৎ কোন বিষয় এবং ঘটনাগুলো আপনাকে গল্প লেখার জগতে পৌঁছে দিলো?
বদরুন নাহার: শৈশব থেকে দেখেছি মা কথায় কথায় ছড়া কেটে নয়তো কবিতা আউড়ে উপদেশ দিতেন, আমাদের নীতিশাস্ত্র শেখাতেন। হয়তো সেই কারণেই আমার লেখা শুরু হয়েছিল কবিতায়। তবে কবে নিজের ভাবনাকে গল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করার তাড়না বোধ করলাম, তা হয়তো এখন বলা সম্ভব; যেহেতু অনেকদিন ধরে গদ্যমাধ্যমে কাজ করছি। পেছনে তাকালে বিশেষ কিছু ঘটানা, সুনির্দিষ্ট কিছু সময় বিবেচনায় আনা যায়, অনুভূত হয়, যা নিজের কাছেও একটা স্পষ্ট ধরণা দেয়। মফস্বল শহরের বেড়ে উঠেছি। সেই ছেলেবেলা থেকে কবিতা পাঠের আসরের একজন ছিলাম। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের মঞ্চে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য, তখন স্কুলে পড়ি। সেই দায়, সেই দ্রোহই হয়তো পরবর্তীতে লেখার তাড়নায় রূপ নিয়েছে। পরবর্তীতে কলেজ জীবনে ফরিদপুর শহরে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হই। বন্ধুরা মিলে ’ভূমিজ’ নামে কবিতার ছোটকাগজ প্রকাশ করি। কবিতার পাশাপাশি কিছু গদ্যও লিখতে শুরু করি। একবার কলেজ ম্যাগাজিনের জন্য একটা নিবন্ধ জমা দিয়েছিলাম, শিরোনাম ছিল ‘জনগণ চায়’। স্বৈরাচারি আমল উত্তরকাল চলছে, তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির প্রতি মানুষর আস্থা রাখতে চাইছে। বিএনপির সময়কাল চলছে, আওয়ামী লীগের আন্দোলনকাল অব্যাহত। তো সেই সময় রাজনৈতিক বিশ্লেষণমূলক লেখাটি ছাপা হলো না। কলেজ সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধি যিনি সম্পাদনার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত, তিনি জানালেন লেখাটি একটু এডিট করে দিলে ছাপাতে পারেন। কেননা, লেখাটি আ. লীগ বা বিএনপি কারও পক্ষেই যায়নি। যে কোন একটি পক্ষাবলম্বন করে লিখলেই ছাপাবেন। কিন্তু আমি লেখাটি এডিট করিনি। পলিটিক্যাল ইকোনমিক্স আমার আগ্রহের জায়গা হলেও, দলীয় রাজনীতির দলাদলির প্রতি অনীহা আমার। জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে যে ক্ষমতার রাজনীতি, আমার কাছে তা মূল্যহীন। আমাদের বেড়ে ওঠার সময়টা থেকেই একরকম রাজনীতি বিমুখ একটা প্রজন্ম তৈরি হচ্ছিল। রাজনীতি থেকে দূরে থেকে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করাই শ্রেয় বলে এক ধরনের সুশীল শ্রেণির উদ্ভব ঘটছিল।
যেহেতু আমরা স্বাধীন দেশে বড় হচ্ছি, পূর্ববর্তী সময়ের মতো পরাধীনতার চাপ নেই; তৃতীয় বিশ্বের এই দেশে রাজনীতি ক্ষমতা গ্রহণের হাতিয়ার মাত্র; যেখানে জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে বেশ কাজে লাগানো যাচ্ছে। তাদের যেমন কোনো নীতি বা উদ্দেশ্য স্পষ্ট ছিল না, আর তার বিপরীতে গা-বাঁচানো সুশীল গোষ্ঠীও তৈরি হলো। আমি মানুষের অধিকারে বিশ্বাসী। গণমানুষের জীবন আমাকে ভাবাতো, সেই মানুষের কথা লিখতে চাইতাম। আর এইসব ভাবনা থেকে মনে হলো কবিতার চেয়ে গল্পের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগটা সহজ হবে।
পরবর্তীতে আরও একটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় গেটে অর্ধমৃত রাহেলা নামের গার্মেন্টস কর্মী এক নারী, দুদিন পড়ে থাকার পর উদ্ধার হলো। তাঁকে নির্যাতন শেষে হত্যার চেষ্টায় কণ্ঠনালি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলে রেখে যায়, মেয়েটি পরে মারা যায়। তো তাকে নিয়ে একখানা কবিতা লিখেছিলাম। মনে পড়ে, লেখক-বন্ধুদের আড্ডায় কবিতাটি পাঠও করেছি, পরে মনে হলো ঠিক ভাবনাটাকে প্রকাশ করা গেল না। কবিতার চিত্রকল্প ও বিমূর্ততাকে ছাপিয়ে যাওয়া দরকার মাঝেমাঝে মানুষে মানুষে যোগাযোগটাকে আরও সহজ করতে। মনে হলো গদ্যই আমার ভাব প্রকাশের মাধ্যম।
শুদ্ধস্বর: কীভাবে আপনার ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং অভিজ্ঞতা আপনার গল্পকে আকার দেয়?
বদরুন নাহার : সমসাময়িক বিষয়গুলো আমাকে ভাবায় আর মূলত সেই গল্পই লিখে যাচ্ছি। ব্যক্তিগত যোগাযোগ আর অভিজ্ঞতাই আমার মূল ভরসা। তবে এক্ষেত্রে তার প্রকাশ সামষ্টিক জীবনবোধ হতেই। বলে রাখা ভালো যে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বা অভিজ্ঞতা মনেই আমার ব্যক্তিজীবনকে ধরে নিবেন না। একবার এক পাঠকের ফোন পেয়েছিলাম একটি গল্প প্রসঙ্গে। প্রথম আলো পত্রিকার শিশুপাতায় প্রকাশিত গল্প পড়ে তিনি ফোন করেছিলেন। বললেন, আপনার মেয়েকে নিয়ে লেখা গল্পটি চমৎকার হয়েছে। পাঠক হয়তো জানেনই না, বাস্তবে আমার কোনো মেয়ে বা সন্তান নেই।
আমাদের সময়টাকে আমি বোঝার চেষ্টা করেছি, করছি সবসময়। সেই সাথে এই সমাজ-দেশ-মানুষ, আর তাদের ইতিহাস। অর্থনৈতিক রাজনীতির কাছে পরাজিত তবু আশাবাদী গণমানুষের দৈনিক জীবন-সংগ্রাম, এটি আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন এই আমেরিকার জীবনেও দেখছি একদল প্রান্তিক মানুষের চেহারা, একই রকম। এরাই আমার সময়টাকে বুঝতে সাহায্য করে, এরাই আমার গল্প নির্মাণের অনুষঙ্গ।
শুদ্ধস্বর: আপনি কি মনে করেন সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রভাব কথাসাহিত্যের উপর রয়েছে বা থাকা উচিত? আপনার অভিজ্ঞতা এবং পঠনপাঠনের আলোকে বলুন।
বদরুন নাহার: অবশ্যই রয়েছে, রাজনীতি বাদ দিয়ে সমাজ এবং সময়কে অপনি কীভাবে উপস্থাপন করবেন! সে আপনি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলেকোঠার সেপাই বলেন, মহাশ্বেতা দেবীর হাজার চুরাশির মা বলেন, হুমায়ূন আহমেদের হলুদ হিমু কালো র্যাব বলেন মারগারেট মিচেলের গন উইথ দ্যা উইন্ড বা জর্জ অরওয়েলের নাইন্টিন এইটি ফোর, এ সবগুলিতে কিন্তু সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতা সরাসরি আছে। আর পরোক্ষভাবে সকল সফল কথাসাহিত্যই কোনো না কোনো রাজনৈতিক-সামাজিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি তে যে গভীর রাজনীতি উপস্থিতি রয়েছে, তাকে তো অস্বীকারের জায়গা নেই।
শুদ্ধস্বর: এমন একটি ছোটোগল্প সম্পর্কে বলুন যা আপনাকে কাঁদিয়েছে বা আপনার চিন্তা ও বোধকে প্রচণ্ডভাবে ধাক্কা দিয়েছে।
বদরুন নাহার: অনেক গল্প পড়েই তো এমন অনুভূতি হয়েছে, এ মুহূর্তে মনে পড়ছে হাসান আজিজুল হকের মা-মেয়ের সংসার, মশিউল আলম-এর ছোটোগল্প দুধ। রবীন্দ্রনাথের পোস্ট মাস্টার ভীষণ মনখারাপ হয়েছিল। এছাড়া আমেরিকান ছোটোগল্প লেখক ও হেনরীর দ্যা লাস্ট লিফ গল্পটি মনে হলে এখনও কান্না পায়।
শুদ্ধস্বর: আপনার গল্প লিখতে আপনি কীভাবে কাঠামো, ভাষা এবং ব্যাকরণ নির্মাণ/ব্যবহার করেন? আপনি কি নিজস্ব ফর্ম গড়তে এবং ভাঙতে অভ্যস্ত?
বদরুন নাহার : একটি গল্প মাথায় নিয়ে লিখতে শুরু করি, তখন যে বিষয়টি প্রধান হয়ে কাজ করে তা গল্পটির বিষয়বস্তু। গল্পটিই আমাকে নিয়ে যায় তার আপন তাগিদে। কোনো কাঠামো, ভাষা বা ব্যাকরণ মাথায় নিয়ে গল্পটা শুরু হয় না। তবে লেখা শেষে যখন গল্পটি নিজস্ব আঙ্গিক পায়, তখন কোথাও কোনো বিচ্যুতি খুঁজে পেলে তা ঠিক করে নেবার বিষয়টি মাথায় থাকে। আমি আমার মতো করে লিখি, ভাঙা-গড়া সব সময় চলে। ইতিমধ্যে আমার গল্প নিয়ে যেসকল আলোচনা এসেছে, তাতে সেই সকল আলোচকেরা তো প্রায়শ বলেন, বদরুন নাহারের গল্পের ভাষা কাঠামোর মধ্যে তেমন কোনে নতুনত্ব নেই; তবে নিজস্ব ভঙ্গিটি আছে আর আছে বিষয় বৈচিত্র্য। তো এটা তো তাদেরই খুঁজে দেখার কথা। আপনার নিশ্চয় মনে আছে আমার তৃতীয় গল্পগ্রন্থ ভাতগল্প-এর কথা, শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত বইটির আলোচনা-সমালোচনা। তবে কখনও-সখনও কোনো কোনো পাঠক বলেছে, আপনার লেখা পড়লেই বুঝতে পারি। এটা শুনলে আনন্দিত হই।
শুদ্ধস্বর: আপনার কাছে একটি সার্থক ছোটোগল্পের মূল উপাদান কী?
বদরুন নাহার: যে গল্প পাঠ শুরু করলে শেষ না করে স্বস্তি নেই। আবার পাঠ শেষে গল্পটি মনের ভেতর তরঙ্গায়িত হতে থাকে। তেমন একটি গল্প আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ সহজপাঠ্য, গল্পের জাদু আর ভাবনার খোরাক এগুলোই যথার্থ উপাদান বলে মনে হয়। আর সার্থকতা তো একটি আপেক্ষিক বিষয়, অনেক ক্ষেত্রে তা একাডেমিক প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহার হয়।
শুদ্ধস্বর: লেখকের রাজনৈতিক বোধ কতটা গুরুত্বপূর্ণ? রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক অন্যায্যতার বিরুদ্ধে লেখকের কোন ধরনের ভূমিকা থাকা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
বদরুন নাহার: লেখকের রাজনৈতিক বোধ থাকাটা জরুরি। আমি মনে করি লেখকের কিছু দায়বদ্ধতাও আছে। আর সে কারণেই, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক বিষয়ে সচেতন থাকাটাকে আমি গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। তবে লেখক হিসাবে কী করণীয় আর সেই একই লেখক ব্যক্তি মানুষ হিসাবে কোন পদক্ষেপ নেবেন, তা যার যার অভিরুচি। আগেই বলেছি, সেই কলেজ ম্যাগাজিনের লেখাটি এডিট করিনি, ছাপাও হয়নি। এই কয়েক বছর আগের কথা একটা নির্ভেজাল ফিকশান, অনেকদিন ধরেই আমার লেখা ছাপা হয় এমন একটি সাহিত্যপত্রে ছাপা হল না, সম্পাদক দুঃখ প্রকাশ করলেন, মেনে নিলাম তবে অন্য একটি দৈনিকের সাহিত্যপাতায় ছাপা হলো, প্রায় একই সময়কালে মানে একই রাজনৈতিক হাওয়ায়। শিল্পমানের উৎকর্ষতার জন্য বা ভাষার মান রক্ষার্থে একটি লেখায় ছুরি-কলম চালাতে আমি রাজি, তবে বিষয় বস্তুর সাথে আপোষ করার সুযোগ নেই, এটির আমার দায়বদ্ধতার জায়গা।
শুদ্ধস্বর: আপনি এখন কী লিখছেন? আপনার বর্তমান লেখালেখি সম্পর্কে পাঠকদের জন্য কিছু বলুন!
বদরুন নাহার: অতিসম্প্রতি সে অর্থে নতুন কোনো লেখায় হাত দেইনি। অনেকদিন ধরে শুরু করা একটি উপন্যাসের শেষ হয়েছে, প্রকাশনার প্রস্তুতি চলছে। মাঝে দীর্ঘ এক দশক সিলেটে থাকাকালীন সুযোগ হয় চা শ্রমিকদের কাছে থেকে দেখার। তাদের জীবনযাপনই নয়, ভেতরের রাজনৈতিক বিষয়গুলো খুব গভীরভাবে লক্ষ করি। শুধু প্রশাসন অথবা মূল ধারার গণমাধ্যমই নয়, আবিষ্কার করি বিকল্প মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়াতে যা দেখতে পাই তার বাইরেও অন্য এক গভীর সত্য লুকিয়ে আছে। এসব অভিজ্ঞতা থেকে উপন্যাসটি লিখেছি। ইতিহাস ও মিথ আশ্রিত এ উপন্যাসের পটভূমি সমকাল। কতটা ভেতর থেকে সে বইটি প্রকাশ হলে পাঠকেরা বিচার করবেন, তবে অন্তত বিহগ দৃষ্টিতে না দেখে হৃদয় দিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি। এই উপন্যাসটি লিখতে শুরু করি সিলেট শহরের বসবাসের সময়। নিউইর্য়াকে এসে বাকি লেখাটা শেষ করি।
More Posts From this Author:
- None Found