এ্যান্টি ব্লাসফেমি আইন- বিশ্বাস রক্ষা নাকি শাসক শ্রেণিকে টিকিয়ে রাখার অস্ত্র?

Share this:

English Synopsis

This article discusses the relationship between blasphemy and the power politics of states in terms of historical context. It tries to find out whether the anti-blasphemy laws that can be found in ‘Ur Nammu Code’ or the ‘Code of Hammurabi’ to the newer ‘Sharia Law’ were erected to protect the interest of the political elites, the powerful ecclesiasts, the few who get the crème-de-la-crème of the socio-economic benefits in the name of God, or if these anti-blasphemy laws were in fact merely a tool to protect the rights of believers. The article explores how organized world religions transformed the idea of the creator God, which belonged to the mass psyche and protected against existential crisis, into an overprotective religious God that enforced a system of economic dependency that serve only a few. The author starts the article with a story about Asia Bibi of Pakistan who was convicted of blasphemy for saying “I believe in my religion and in Jesus Christ, who died on the cross for the sins of mankind. What did your Prophet Mohammed ever do to save mankind? And why should it be me that converts instead of you?” The author then asks a question: if this is an example of blasphemy, then why are the statements like “Christians are unclean” and “You should be converted to Islam,” which were used as attacks against Asia Bibi, not considered to be blasphemous?

 

প্রায় বছর দশেক আগে, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রামের এক আসিয়া বিবির গল্প সারা পৃথিবীতে আলোড়ন তোলে।

না, আসিয়া এমন কোনো বৈপ্লবিক বিজ্ঞান গবেষণা করে ফেলেন নাই, সরকার পতনের আন্দোলন বা ষড়যন্ত্র করেন নাই, ঘরে বসে কুটির শিল্পের ব্যবসা করে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান নাই। তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘ধর্ম অবমাননাকারী’ একটামাত্র মন্তব্যের জন্য।

আসিয়া নরিন নামের এই নারী ধর্ম বিশ্বাসের দিক থেকে ছিলেন একজন সাধারণ ক্যাথেলিক খ্রিশ্চান। তিনি পরিবারকে সাহায্যের জন্য শেইখুপুরার এক জমিতে চাষের কাজ করতেন। একদিন কাজের মাঝখানে তিনি কুয়া থেকে পানি তুলতে যান। পানি তোলা শেষ হলে কুয়ার পাশে রাখা একটা পুরানো ধাতব পাত্র দিয়ে পানি তুলে খান। সেই সময় আসিয়ার এক মুসলিম প্রতিবেশি আসিয়াকে জানান, এই পাত্র দিয়ে একজন বিধর্মী পানি খেতে পারবেন না, কারণ বিধর্মীরা (অর্থাৎ খ্রিশ্চানরা) নোংরা এবং এই পাত্র শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য রাখা আছে। দ্বিপাক্ষিক তর্কের ফলশ্রুতিতে কুয়ার চারপাশে লোক জড়ো হয়ে যায়, এবং আশেপাশের লোকজন আসিয়াকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য উপদেশ দিতে থাকলে উত্তেজিত আসিয়া চিৎকার করে বলেন, “আমি আমার ধর্ম এবং যীশু খ্রিস্টে বিশ্বাস করি, আমি বিশ্বাস করি যীশু সমস্ত মানবজাতির জন্য জীবন দিয়েছেন। তোমাদের নবী মুহাম্মদ মানবজাতিকে রক্ষায় কী এমন করেছেন?”

বলাই বাহুল্য, এই মন্তব্যের জের ধরে ধর্ম অবমাননার দায়ে পাকিস্তানের আদালতে আসিয়ার ফাঁসির আদেশ হয়। যদিও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার আপ্রাণ চেষ্টায় প্রায় দশ বছর পরে শেষমেশ ২০১৯ সালে আসিয়া ক্যানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে সমর্থ হন।

ব্লাসফেমি বা ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে শুধু পাকিস্তান না, পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভিন্ন আইন আছে আজকের দিন পর্যন্ত। এবং শুধুমাত্র ইসলামেই ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে আইন নাই, বাকি দুটি আব্রাহামিক ধর্ম অর্থাৎ ইহুদী ও খ্রিস্টধর্ম সহ পৃথিবীর বেশিরভাগ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মেই ব্লাসফেমিকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়।

বুৎপত্তিগতভাবে ব্লাসফেমি শব্দের অর্থ ঈশ্বরসৃষ্ট যেকোনো প্রাণী এবং ঈশ্বরকে সম্মানহানি করা বা তাকে অপমানের উদ্দেশ্যে কোনো কথা বলা বা কাজ করা। কিন্তু প্রায়োগিক অর্থে ব্লাসফেমি বলতে শুধুমাত্র ঈশ্বর, ঈশ্বরসংক্রান্ত অলঙ্ঘনীয় বিষয়াদি এবং প্রচলিত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যায় এমন বিষয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পদ্ধতিতে নিন্দা, ‘উদ্ধত’ বাক্যপ্রয়োগ এবং হাস্যরস সহযোগে বা হাস্যরস ছাড়া অপমান করা বোঝায়।

ধর্ম বা ঈশ্বর অবমাননা কী কারণে গুরুতর অপরাধ হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তা বুঝতে হলে ক্ষমতার প্রশ্নে ধর্ম এবং উদ্বৃত্ত সম্পদ নির্ভর অর্থনীতিকে বুঝতে হবে। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মানুষ যখন কৃষিনির্ভর সভ্যতার সূত্র ধরে উদ্বৃত্ত সম্পদ নির্ভর অর্থনীতির দিকে যাত্রা শুরু করেন, তখন সম্পদ তথা ক্ষমতার মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের বহু যুগের কাল্পনিক ঈশ্বরকে ধর্মগ্রন্থের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া জরুরী হয়ে পড়ে। কারণ ঈশ্বরের মাধ্যমেই শুধুমাত্র নির্দিষ্ট এক শ্রেণির মানুষকে এই উদ্বৃত্ত সম্পদের ‘ন্যয্য’ মালিক হিসাবে রাজা, পুরোহিত বা উচ্চমর্যাদার ব্রাহ্মণের পদবিতে অভিষিক্ত করা সম্ভব।

পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্মীয় নীতিমালার দলিলের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে লিখিত ‘উর নামু কোড’, ‘সুমেরিয়ান কোড অভ লিপিত-ইশথার অভ ইসিন’ এবং পরবর্তীতে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে এ্যাকেইডিয়ান ভাষায় লেখা প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার ‘কোড অভ হামুরাবি’তেই সম্ভবতঃ প্রথম ধর্ম অবমাননাকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কোড অভ হামুরাবিতে বলা হয়, যুবরাজ হামুরাবি ঈশ্বর আনু এবং বেলের মাধ্যমে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং কেউ সেই ঈশ্বরের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তোলার স্পর্ধা দেখালে তাকে ঈশ্বরের আদেশে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হবে। মজার বিষয় হচ্ছে, এইক্ষেত্রে শুধু ঈশ্বর অবমাননা না, কেউ ক্ষমতাসীন শাসক গোষ্ঠী এবং তাদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে অসদাচরণ করলেও মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই কোডে বলা হয়, একজন সাধারণ শ্রমিক যদি একজন সাধারণ নারীকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যে শাস্তি পাবেন, তার চাইতে বেশি শাস্তি পাবেন যদি তিনি একজন উচ্চশ্রেণির বা শাসকগোষ্ঠীর নারীদের কাউকে ধর্ষণ করেন। শুধু ধর্ষণ না, শাসক গোষ্ঠীর নারী পুরুষের সাথে সংগঠিত চুরি ডাকাতি এবং মানহানি সহ অন্যান্য সকল অপরাধের ক্ষেত্রে শাস্তির মাত্রা বেশি হবে।

‘উচ্চশ্রেণি’কে ঈশ্বরের আদেশে সুরক্ষা দেয়ার এই ‘আইন’ সুমেরিয়া, মেসোপটেমিয়ার পাশাপাশি গ্রিক এবং সিন্ধু সভ্যতাতেও স্পষ্ট আকারে দেখা যায়। খ্রিস্টের জন্মের ১৪০০ বছর আগে লিখিত ‘হিট্টি কোড’ এবং ‘ড্রাকোনিয়ান কোড অভ এথেন্স’ এ ঈশ্বর এবং ধর্মীয় উচ্চশ্রেণির অবমাননার জন্য ক্রুশে বিদ্ধ করে, পানিতে ডুবিয়ে, জীবিত কবর দিয়ে বা শূলে চড়িয়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। এই আইনের ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর ইতিহাসে সম্ভবতঃ প্রথম ধর্ম অবমাননার দায়ে গ্রিক দাশর্ণিক সক্রেটিসই মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। অন্যান্য যারা সক্রেটিসের আগে মারা যান, তারা সবাই এতই ‘নিম্নবর্গের’ মানুষ ছিলেন যে তাদের মৃত্যু কোথাও লিপিবদ্ধ হয় নাই।

একই সময়ে সিন্ধু সভ্যতায়ও আমরা বেদে পরোক্ষভাবে ধর্ম অবমাননার উপকরণ দেখি। ঋগবেদের মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি অত্রি প্রণিত সংহিতাতে ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং জাতি ভেদ প্রথার উল্লেখ পাওয়া যায়। এখানে বলা হয়, “যারা নিজ নিজ ধর্ম পরিত্যাগ করবে রাজা তাদের শাস্তি দিয়ে স্বর্গের ভাগীদার হবে।” এইক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ঋগবেদে কোথাও ঈশ্বর শব্দের অস্তিত্ব নাই। এই প্রসঙ্গে প্রাচীন ভারতীয় ব্যাকরণবিদ পাণিনি বলেছিলেন, “ঈশ্বর শব্দের আভিধানিক অর্থ আর যাই হোক; কোনোভাবে সৃষ্টিকর্তা বা মহান সত্তা নয়”। সনাতন ধর্মে ঈশ্বর বলতে বেদ বা মতান্তরে রাজা বোঝানো হয়। এছাড়াও এই ধর্মের ছয়টা দর্শনের মধ্যে দুইটা হল সাংখ্য এবং মীমাংসা। এই দুই দর্শন ঈশ্বরকে স্বীকার করে না। যোগদর্শন, বৈশেষিক, বেদান্ত এবং ন্যায় দর্শনে ঈশ্বর নিয়ে আলোচনা করা হয়, তবে প্রত্যেক দর্শনে ঈশ্বর ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। এবং যেই কারণে সম্ভবতঃ বিষ্ণু সংহিতা, হারিত সংহিতা, উশন সংহিতা, অঙ্গির সংহিতা, যম সংহিতা, সংবর্ত সংহিতা, আপস্তম্ব সংহিতা, কাত্যায়ন সংহিতা, বৃহস্পতি সংহিতা, পরাশর সংহিতা, ব্যাস সংহিতা, শঙ্খ সংহিতা, গৌতম সংহিতা, শতাতপ সংহিতা, বশিষ্ঠ সংহিতা এবং অতি অবশ্যই মনু সংহিতা অর্থাৎ বেদের উপর ভিত্তি করে লিখিত প্রতিটা আইন প্রণয়নকারী দলিলেই ঈশ্বর নয়, বরং- ঈশ্বরের নির্দেশে উচ্চশ্রেণি অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, বা বলা ভালো ব্রাহ্মণ পুরুষকে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে।

সনাতন ধর্মের আবির্ভাবের প্রায় দুই হাজার বছর পরে ব্রোঞ্জ যুগে ব্যাবিলনিয়ান সভ্যতার বিপরীতে মধ্যপ্রাচ্যে আব্রাহামিক ধর্মের জন্ম হয়। সনাতনের সাথে আব্রাহামিক অর্থাৎ ইহুদী খ্রিশ্চান এবং ইসলাম ধর্মের অন্যতম প্রধান পার্থক্য হল এই তিন ধর্মেই এক ঈশ্বরের প্রবল পরাক্রমশালী অবিনশ্বর অস্তিত্ব স্বীকার করে তাকেই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী করা হয়েছে। তুলনামূলক নবীন ধর্ম হওয়ায় এই তিন ধর্ম প্রাচীন সনাতনের জাতিবিদ্বেষী জাত-পাত ধারণা থেকে মুক্ত অবশ্যই, কিন্তু এইক্ষেত্রেও ঈশ্বরের নির্দেশ অমান্যকারী বা ধর্ম অবমাননাকারীর জন্য কঠিন শাস্তির বিধান এসেছে। এইক্ষেত্রে সনাতনের মতই ঈশ্বরের আদেশে ধর্মের পুরোহিতকে রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ অবস্থানে রাখা হয়েছে। খ্রিস্টের জন্মের তিনশ বছর পরে রোমান সম্রাট কনস্টেনটিনের সময় থেকে গির্জাকে রোমান সাম্রাজ্যের সর্বময় ক্ষমতাধর শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়, যেই শক্তি আজকের পৃথিবীতেও বহাল তবিয়তে মহানন্দে বিরাজ করছে।

তাই, খানিক সরলীকরণ হলেও সম্ভবতঃ বলা যায়, মানুষের বিশ্বাসের ঈশ্বরকে ব্যবহারের মাধ্যমে ধর্মের প্রতিষ্ঠা এবং ধর্মের ‘সম্মান’ রক্ষার এই কয়েক হাজার বছরের প্রচেষ্টা শুধুমাত্র শাসক শ্রেণিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাখার এক ধরণের হাতিয়ার হিসাবেই ব্যবহৃত হয়েছে।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কী কারণে এই হাতিয়ার দিয়ে মানুষ এত যুগ ধরে নিজেকে নিয়ন্ত্রিত হতে দিয়েছেন? কী কারণে প্রশ্ন ব্যতিরেকে তাকে নিজের মধ্যে লালন করে গেছেন?

এই প্রসংগে কার্ল মার্ক্সের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে। তিনি বলেছিলেন, “মানুষই ধর্ম তৈরি করেন, ধর্ম মানুষকে তৈরী করে না। আসলেই যেই মানুষ এখনো নিজেকে নিজের মধ্যে জয় করে নিতে পারেন নি কিংবা যিনি নিজেকে আবার হারিয়ে ফেলেছেন, ধর্ম হচ্ছে সেই মানুষের নিজের সম্পর্কে চৈতন্য, তার নিজের গৌরবচেতনা। কিন্তু মানুষ পৃথিবীর বাইরে বিচ্ছিন্নভাবে বসে থাকা কোনো বিমূর্ত সত্তা নয়। মানুষ অর্থ হচ্ছে মানুষের এই পৃথিবী, রাষ্ট্র, সমাজ। এই রাষ্ট্র, এই সমাজই জন্ম দেয় ধর্মের যা হলো পৃথিবী সম্পর্কে মাথা নিচে পা উপরে ওলটানো চেতনা। এই ধর্ম পৃথিবীর চেতনার চাইতে বিপরীত, কারণ এই চেতনাই একটা উল্টে যাওয়া পৃথিবী।

আর ধর্ম হল এই পৃথিবীর সাধারন তত্ত্ব, এর বিশ্বকোষ, এই পৃথিবীর জনপ্রিয় যুক্তি, এর আধ্যাত্নিক মর্যাদা, এর উৎসাহ, এর নৈতিক আদেশ, পরিপূরক আচার –অনুষ্ঠান, স্বান্তনা ও ন্যায্যতা প্রতিপাদনের সার্বজনীন ভিত্তি। এটা হচ্ছে মানুষের অন্তর্নিহিত মর্মার্থের ভূতুড়ে বাস্তবায়ন কারণ মানুষের মর্ম সদর্থক কোন সত্য অস্তিত্ব অর্জন করতে সক্ষম হননি। ধর্মের বিরুদ্ধে সংগ্রাম সে কারণে পরোক্ষ সেই পৃথিবীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম যার আধ্যাত্মিক সৌরভই হচ্ছে ধর্ম।”

হ্যাঁ, ঈশ্বরে বিশ্বাস মানুষকে এক ধরণের নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়, তাকে অস্তিত্বহীন হওয়া থেকে রক্ষা করে, তার জীবনের অর্থ তৈরি করে সত্য। কিন্তু একইসাথে সেই বিশ্বাস খুব সুচাতুর্যের সাথে তৈরি করা ধর্মীয় ঈশ্বরের সাথে সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের পার্থক্যও ঘুচিয়ে দেয়। এবং সেকারণে ধর্মীয় ঈশ্বরের মাধ্যমে তৈরি হওয়া ক্ষমতার কেন্দ্র মানুষ দেখতে পান না, দেখতে পান না কীভাবে সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর ধর্মের ঈশ্বরের নামে তাকে শাসকশ্রেণির হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে শোষন করছে, ফলে তাকেই তিনি সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর বলে বিশ্বাস করেন, ফলে তিনি নিজের বিশ্বাসকেই সত্য জ্ঞান করেন এবং নিজের সেই বিশ্বাস রক্ষা করতে অন্যের বিশ্বাসকে আহত করতেও নৈতিকভাবে প্রস্তুত থাকেন।

ব্লাসফেমি বা ধর্ম অবমাননা মানুষের এই বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছে। ধর্মপ্রবক্তারা জানেন, এক ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ নিজ অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই অন্য ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের বিশ্বাসের মাধ্যমে আহত হতে চান না। মানুষের একে অপরের বিশ্বাসকে আহত করার নৈতিক বা রাজনৈতিক অধিকার কতদূর, তা বিশদ দার্শণিক আলাপের বিষয়, অবশ্যই। সুতরাং সেই জটিল আলাপে না ঢোকাই শ্রেয়। তবে এই বিষয়ে একটা মজার গল্প আছে। আজকের দিনে কীভাবে ধর্মবিশ্বাস, ধর্ম রক্ষা করার অধিকার এবং ধর্ম অবমাননা রাষ্ট্রযন্ত্রে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে, তা দেখার আগে সেই গল্পটা বলা যেতে পারে।

১৯১৯ সালে দার্শণিক জাকারিয়া চ্যাফি জুনিয়ার ‘ফ্রিডম অফ স্পিচ ইন ওয়ার টাইম’ নামে হার্ভার্ড ল’ রিভিউয়ে একটা আর্টিকেল প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি একটা কেইসের কথা উল্লেখ করেন। কেইসটা এরকম- এক ভদ্রলোক মনের আনন্দে রাস্তায় হাত নাচাতে নাচাতে হেঁটে যাচ্ছেন। তো উনার সেই হাত গিয়ে ধাক্কা লাগে রাস্তায় হাঁটতে থাকা আরেক ভদ্রলোকের নাকে। কীভাবে হাত নাড়ালে সেই হাত গিয়ে আরেকজনের নাকে লাগতে পারে- সেটা আমি বলতে পারবো না; হাতের মালিক এবং নাকের মালিক বলতে পারবেন। তো নাকের মালিক ভদ্রলোক হাতের মালিকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দিলে আদালতের রায়ে হাতের মালিক ভদ্রলোককে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তো হাতের মালিকের আইনজীবি রায় শুনে বিচারপতিকে জিজ্ঞেস করেন, “এটা আপনার ক্যামন বিচার হল ধর্মাবতার? আমার মক্কেল কি এখন রাস্তা দিয়ে নিজ খুশিতে হাঁটতেও পারবেন না?”

আইনজীবির প্রশ্নের উত্তরে বিচারপতি বলেন, “একজন মানুষের হাত নাড়ানোর অধিকার সেখানেই শেষ হয় যেখানে আরেকজন মানুষের নাক শুরু হচ্ছে!”

বিচারপতির এই উক্তির উপর ভিত্তি করেই শিল্পী বা শিল্পের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে পশ্চিমা দর্শণে একটা গুরুত্বপূর্ণ তর্কের শুরু হয়েছে আজকে থেকে কিছুদিন আগে। ‘ফ্রিডম অভ এক্সপ্রেশান’ বনাম ‘ফ্রিডম অভ ইম্প্রেশান’ এবং ‘ফ্রিডম অভ স্পিচ’ বনাম ‘রেসপেক্ট ফর গড’ আলাপে শিল্পের স্বায়ত্বশাসন এবং ধর্মের স্বায়ত্বশাসনের সহাবস্থান সম্ভব কিনা, সম্ভব হলে কীভাবে সম্ভব, সম্ভব না হলে ক্যানো সম্ভব না এই তর্কগুলি উঠে এসেছিলো ফ্রান্সের চার্লি এব্দো নামের একটা স্যাটায়ার ম্যাগাজিন প্রসঙ্গে। এই ম্যাগাজিনে ঈশ্বর, বিশ্বাস এবং ইহুদী, খ্রিশ্চান ও মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে হাস্যরসাত্মক কার্টুন আঁকা হত। সেই কার্টুনের জের ধরে ২০১৫ সালে ইসলামী জঙ্গী সংগঠন আল-কায়েদা চার্লি এব্দোর অফিসে ঢুকে ১২ জনকে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনার পরে সারা পৃথিবীতে যেই প্র্যাগম্যাটিক বনাম ইউটিলেটারিয়ান অবস্থানের ভিত্তিতে দার্শণিক তর্কের শুরু হয়, তার মধ্যে অন্যতম প্রধান বিষয় ছিলো, জুরিসপ্রুডিন্স বা আইনশাস্ত্রের যথার্থ তত্ত্ব কী। বলাই বাহুল্য, এই তর্কগুলির একটাও আজকের দিন পর্যন্ত মীমাংসিত না।

যাইহোক। এখন অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক।

আগেই উল্লেখ করেছি, পৃথিবীতে আজকের দিনে পৃথিবীর বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে আইন আছে। মজার বিষয় হচ্ছে, গণতন্ত্রের মূল ভিত্তির মধ্যে সাম্যবাদ বা ধর্মনিরপেক্ষতা বা বাক স্বাধীনতার অধিকার একটা অন্যতম প্রধান ভিত্তি হলেও আজকের দিন পর্যন্ত পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রেই সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা নাই। জাতিসংঘের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তিতে ১৬৭টা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আবদ্ধ হলেও এবং ৬৭টা রাষ্ট্র তাতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করলেও ক্যানাডা, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নর্দান আয়ারল্যান্ড, ইটালি সহ পৃথিবীর বেশিরভাগ রাষ্ট্রেই ধর্ম অবমাননাকে কোনো না কোনো আকারে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের ২০১৭ সালের রিপোর্টে ৭১টা দেশের তালিকা উঠে আসে যেখানে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে আইন রয়েছে। এইক্ষেত্রে উল্লেখ্য, উপরেল্লেখিত বেশিরভাগ খ্রিশ্চানপ্রধান রাষ্ট্রগুলির সাধারণ আইনে সরাসরি ‘ধর্ম অবমাননা’ বলে আর কোনো শব্দ নাই, বরং তা সরিয়ে স্টিভেন কোডের অধীনে ‘ব্লাসফেমাস লিবেল’ বা ‘নিন্দামূলক বাক্য’ ব্যবহার করা হয়েছে। এবং এর মাধ্যমেই ২০০৬ সালে জার্মানিতে ‘কুরান,পবিত্র কুরান’ লেখা টয়লেট পেপার বিলি করায় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, ২০০৯ সালে ফিনল্যান্ডে ইসলাম বিষয়ে একটি ব্লগ পোস্টে অবমাননাকর মন্তব্য করায় এক ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয় এবং২০১৭ সালে ডেনমার্কে মুসলিম ধর্মগ্রন্থ কুরান পোড়ানোর একটা ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করায় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। তবে অতি অবশ্যই, ধর্ম অবমাননার শাস্তি হিসাবে মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্র থেকে বেশিরভাগক্ষেত্রে তাদের শাস্তির মাত্রা লঘু। মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রগুলি শরিয়া আইনের মাধ্যমে ধর্ম অবমাননাকে সরাসরি মৃত্যুদণ্ডযোগ্য শাস্তি হিসাবে বিবেচনা করে, এই তথ্য বোধকরি সবারই জানা আছে।

জাতিসংঘের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির অধীনে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করলেও, বেশিরভাগ মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রের মত বাংলাদেশে শরিয়া আইন বলবৎ না থাকলেও এবং সরাসরি ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইন না থাকলেও বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং ফৌজদারী বিধিতে ধর্ম অবমাননাকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়। মজার বিষয় হচ্ছে, তথ্য প্রযুক্তি আইনের মাধ্যমে শুধু ধর্ম অবমাননা না, বরং যেকোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদালত কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত মীমাংসিত কোনো বিষয় এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রচারণা বা প্রোপাগান্ডা চালালে বা অবমাননা করলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও ২০১৩ সালে উগ্রবাদী মুসলিম জঙ্গীদের মারফত বাংলাদেশে একের পর এক নাস্তিক বা নিরীশ্বরবাদী বা অজ্ঞেয়বাদী ব্লগারদের হত্যাকাণ্ডের সময়ও বাংলাদেশ সরকার এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরব ছিলেন। সেই সময় তিনি বলেন, “মুসলিমদের অনুভূতিকে আহত করে এমন কিছু ব্লগারদের লেখা উচিত না।”

এদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতিহারে ২১ ধারা অনুচ্ছেদ ৩ এ আওয়ামী লীগ কুরান ও সুন্না পরিপন্থী কোনো আইন বাংলাদেশে প্রণয়ন করা হবে না বলে আগাম ঘোষনা করলে, সেই ঘোষনার উপর ভিত্তি করে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে শরিয়া আইন প্রণয়ন সহ ১৩ দফা দাবীতে ধর্মীয় সংগঠন হেফাজত ইসলাম সমাবেশ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের কোনো দাবী না মানলেও একই সুরে সুর মিলিয়ে বলেন, “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মত কোন কথা যদি লেখায় থাকে, অবশ্যই আমাদের তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা খুব স্বাভাবিক। আমি একজন মুসলমান। এখন নবী করিম (সাঃ) সম্পর্কে কেউ যদি আজেবাজে কথা লেখে, আমরাতো চুপ করে বসে থাকতে পারি না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কেউ হয়তো ধর্ম না মানতে পারে, তার মানে এই না যে তারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কথা বলবে বা নোংরা কথা লিখবে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্য আপাতঃদৃষ্টিতে প্র্যাগম্যাটিক শোনালেও নাস্তিক ব্লগার হত্যাকাণ্ডে তার সরকারের নিরবতাকে সংখ্যাগুরু মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাসের প্রতি পক্ষপাতমূলক অবস্থান এবং সেই বিশ্বাস যেকোনো পদ্ধতিতে আহত হলে কোনো জবাবদিহিতা ব্যতিরেকে রাষ্ট্রীয় আইনের বাইরে আহতকারী ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া সম্ভব বলে ভাবা হলে ভুল হবে না। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি, একে অপরের বিশ্বাস বা অবিশ্বাসকে আহত করা ও ঘৃণা ছড়ানোর মাধ্যমে সমাজ বা রাষ্ট্রে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার নৈতিক অধিকার যেমন একজন সাধারণ স্বতন্ত্র ব্যক্তির থাকা উচিৎ না, তেমনি একইভাবে মানুষের বাক স্বাধীনতা রক্ষা করার রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক অধিকারও খর্ব করা সম্ভব না। কিন্তু আগেই বলেছি, ‘কতদূর’ কথা বা কাজে অন্য মানুষের বিশ্বাস বা অবিশ্বাসকে আহত করা হয়, তা আলোচনাস্বাপেক্ষ। কারণ আমরা জানি, অঞ্চলভেদে, লিঙ্গভেদে, জাতিভেদে, প্রজন্মভেদেও মানুষের বিশ্বাস অবিশ্বাস আহত হবার মাপকাঠিতে পার্থক্য থাকে। আমরা এও জানি, এক দেশের বুলি অন্য দেশের গালি বলে বিবেচিত হতে পারে। ইংল্যান্ডের বেশিরভাগ শহরে ‘জিসাস ফাকিং ক্রাইস্ট’ জাতীয় বাক্য সাধারণ মানুষের কথ্যভাষার সাথে স্বাভাবিকভাবে জড়িত থাকলেও ইটালি বা পোলান্ডে এই বাক্যের মাধ্যমে নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির জেল বা জরিমানা হয়ে যেতে পারে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের পূর্বসূরীদের একটা মজার তরিকা ছিলো, ‘যস্মিন দেশে যদাচার’ বা ‘হোয়েন ইন রোম, এ্যাক্ট লাইক আ রোমান’ অর্থাৎ অন্যের বিবেচনাবোধকে বিবেচনা করে আপনার কথা বলা উচিৎ। এবং সেইক্ষেত্রেও আবার একই ‘ডিম আগে না মুরগী আগে’ প্রশ্ন চলে আসে সামনে। প্রশ্ন আসে- সেইক্ষেত্রে কোন্‌ অঞ্চলের কতজনের বিবেচনাবোধকে আপনি কতক্ষণ সময় ধরে কতদূর বিবেচনা করবেন?

এছাড়াও, আসিয়া বিবির উদাহরণ যদি আরেকবার দেখা যায়, তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে, পাকিস্তানের মত মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রে ‘তোমাদের নবী মুহাম্মদ মানবজাতিকে রক্ষায় কী এমন করেছেন?’ এই বাক্যে ধর্ম অবমাননা হলে ‘বিধর্মীরা (অর্থাৎ খ্রিশ্চানরা) নোংরা’ বাক্যে ধর্ম অবমাননা ও জাতিবিদ্বেষ ক্যানো হবে না? কিংবা বাংলাদেশের মত মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রে নবী মুহাম্মদের যৌন জীবন নিয়ে প্রশ্ন করলে যদি ধর্ম অবমাননা হয়, তাহলে শ্রী কৃষ্ণের যৌন জীবন নিয়ে কথা বললে ধর্ম অবমাননা ক্যানো হবে না? ক্যানো বাংলাদেশের মত মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রে বসে ‘লাল পিঁপড়া কামড়ায়, তাই সে হিন্দু, আর কালো পিঁপড়া কামড়ায় না, তাই সে মুসলমান’ জাতীয় কথা সামাজিক পরিসরে নিয়মিত বলা হলে তাকে শুধুই রসিকতা হিসাবে ধরা হবে, ক্যানো তা ধর্ম অবমাননা বলে বিবেচিত হবে না?

এখন প্রশ্ন আসতে পারে- ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে আইন কি তাহলে সাধারণ মানুষকে না, বরং শুধুই শাসকগোষ্ঠীর সংখ্যাগুরু সমর্থকের বিশ্বাসকে সুরক্ষা দেয়ার হাতিয়ার? ধর্মের মাধ্যমে সরাসরি যেভাবে ব্রাহ্মণ, পুরোহিত, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, উচ্চশ্রেণিকে শাসকগোষ্ঠী তৈরি করে তাদের সুরক্ষা দেয়া হয়েছে এত যুগ ধরে, রাষ্ট্র কি ঠিক সেইরকম একটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠে রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিরুদ্ধে, বঙ্গবন্ধুর অবমাননার বিরুদ্ধে আইন তৈরি করে শাসক গোষ্ঠীকেই শুধু সুরক্ষা দেয়ার মাধ্যমে নিজেই একটা ধর্ম হয়ে উঠতে চাইছে এখন? মানুষকে রাষ্ট্র মারফত বাক স্বাধীনতার অধিকার দিয়ে আবার বিপরীত দিকে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে আইন চালু রেখে তার কথা বলার বিষয়ের উপর খবরদারী করে কি এমন এক নিয়ন্ত্রিত জনগোষ্ঠী তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে, যারা শুধু শাসকগোষ্ঠীর সুরে সুর মিলিয়ে শোষিত হয়ে থাকবেন আরো কয়েকশ যুগ?

প্রশ্ন আসতে পারে- ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে আইন কি তাহলে শুধুই শাসক শ্রেণির ক্ষমতার কেন্দ্র বলবৎ রেখে, সাধারণ মানুষকে নিয়ন্ত্রণের অধিকার জারি রেখে, তাদের আরো কয়েক হাজার বছর ধরে নিষ্পেষন করার আইন? ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে আইন কি ধনীকে আরো ধনী, ক্ষমতাধরকে আরো ক্ষমতাধর এবং দরিদ্রকে আরো দরিদ্র বানানোর আইন?

 

Nadia Islam was born in Libya in 1985. She studied fashion design, forensic science, and genetic engineering in London, UK. She is currently working and living between Bosnia and Russia. She is a vegan, agnostic, and feminist in personal-social life. Her passions include parallel world, Indian classical and heavy metal music, conspiracy theories, fictional novels, going green movement, scuba diving, painting, theology, writing, and cat-cafes.

 

 

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

শুদ্ধস্বর
error: Content is protected !!