প্রশ্নোত্তর:
শুদ্ধস্বর: কবিতা লিখতে হবে বা কবিতা লেখার জন্য তাড়না বোধের ব্যাপারটা প্রথম কিভাবে অনুভব (মানসিক অবস্থা, পরিবেশ-প্রতিবেশের সাথে সংশ্লেষ) করতে শুরু করলেন?
এহসান হাবীব: এই প্রশ্নটির মুখোমুখি আমি অনেকবার হয়েছি। এবং প্রতিবার উত্তর দিতে গিয়ে খেয়াল করেছি যে, প্রত্যেকবার আমি ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দিয়েছি। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, আগের উত্তরগুলো মিথ্যা ছিলো। বরং ওই যে, পরিবেশ প্রতিবেশের কথা আপনি বলেছেন, কবিতা লেখার সময় যে পরিবেশ-প্রতিবেশ কাজ করে যার ফলশ্রুতিতে একটা কবিতার জন্ম হয়, এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময়ও সেই পরিবেশ-প্রতিবেশ উত্তরটিকে প্রভাবিত করে। মানে আমি বলতে চাচ্ছি, আজকে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় আমার আজকের মানসিক অবস্থা উত্তরটিকে হয়তো গতকালের উত্তরের চেয়ে ভিন্ন করে দিতে পারে। এই যে আমি এখানে কথা বলছি, কবির উচ্চারিত যে কোনো কথাই কিন্তু আমার কাছে এক ধরনের কবিতাই মনে হয় শেষ পর্যন্ত। কবিতা লিখতে হবে বা লেখার জন্য তাড়না অনুভবের প্রথম স্মৃতি আমার আজ আর মনে নাই। আমার জন্ম হয়েছে এমন একটা পরিবারে যেখানে সাহিত্য আমি উত্তরাধিার সূত্রে প্রাপ্ত হয়েছি। আমার বাবা কবিতা লিখতেন, দাদাকে আমি দেখিনি, আমার জন্মের কয়েক দশক আগেই তিনি মারা যান। তিনি মৌলানা ছিলেন, ছিলেন কোরানের হাফেজ। বাবার কাছে শুনেছি তিনি ছন্দে ছন্দে কথা বলতে ভালোবাসতেন। বাবা বলেছিলেন, দাদার একজন কাজের লোক ছিলো নুরী নামে, দাদা প্রায়ই তার কাজে বিরক্ত হয়ে বলতেন, ”নুরী তোর পিছে কতো আমি ঘুরি?” আমার জন্মের পর কবিতা ও কবি নামক শব্দদ্বয়ের সাথে পরিচিত হওয়ার পরই প্রথম আমি জানি যে, আমার বাবা একজন কবি। আমার প্রথম দেখা কবি হচ্ছেন আমার বাবা। বাবার প্রচুর বই ছিলো। আমি যখন পড়তে পারতাম না তখন বাবা আমাকে সেগুলো পড়ে পড়ে শুনাতেন। হয়তো তখন আমার অবচেতন মনে লেখক হওয়ার বাসনা জেগেছিলো। মনে আছে আমরা অন্যের কবিতা নকল করে করে কবিতা বানানোর চেষ্টা করতাম। সেটা আমার প্রাথমিক স্কুল যুগের কথা। তারপর অনেকদিন আর সেই চেষ্টা করিনি। কবি হবো এই বাসনাও মনের মধ্যে ছিলো না। তবে পড়ার অভ্যাসটা ছিলো। কবিতা ,উপন্যাস, ইতিহাস ,ভ্রমন, আত্মজীবনী বাবার সংগ্রহ থেকে পড়েছি। ক্লাশ নাইনে পড়ার আগেই আমি জীবনানন্দ, শক্তি, সুনীল, সমরেশ, পড়েছি। ‘দেশ’ শারদীয় সংখ্যা বাবা সংগ্রহ করতেন ফলে আমার পাঠ মূলত বাংলাদেশের চেয়ে পশ্চিমবাংলার সহিত্যিকদের তুলনামূলক বেশি হতো। পড়তে পড়তে হয়তো একটা কবির হৃদয় খাড়া হয়ে গেছিলো আমার ভেতরে। আমি সচেতনভাবে প্রথম কবিতা লেখার তাড়না অনুভব করি যখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। তখন আমি একজন বিবাহিত নারীর প্রেমে পড়ি। তিনি আমার বন্ধু ছিলেন। আমরা একসঙ্গে পড়তাম। আমাদের মাঝে ভালো বন্ধূত্ব ছিলো। আমরা একসঙ্গে প্রচুর ঘুরাঘুরি করেছি। কিন্তু তাকে কখনোই আমার প্রেমে পড়ার কথাটা বলতে পারিনি। মূলত অনুচ্চারিত কথার বেদনা থেকেই আমার কবিতা লেখার শুরু। আজো অনেক কথাই আমি বলতে পারি না। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন প্রেম আর রাজনীতি আমার কবিতার প্রধান অনুষঙ্গ। আমি অহরহ প্রেমে পড়ি, অনেক প্রেম আমার উপর এসে পড়ে। কিন্তু আমার যাপিত জীবন এগুলো এলাও করে না কিন্তু হৃদয়ের ক্ষরণ বা যন্ত্রণা যাই বলি না কেনো একে তো আর আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। এমনকি মনোরোগ চিকিৎসকের দেয়া ঔষধও একে থামাতে পারে না। তেমনিভাবে রাষ্ট্র বা সমাজের অনাচার, মানুষের অধিকার হরণে যখন হৃদয় রক্তাক্ত হয় তখন রাষ্ট্র আমাকে কথা বলতে দেয় না। আমি কথা বলতে পারি না। আপনি জানেন, ৫৭ ধারায় আমার বিরুদ্ধে সিরিজ মামলা হয়েছে, পুলিশি হয়রানীর পাশাপাশি আমাকে অপহরণও করা হয়েছিলো। আমাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। ফলে এই সমাজে কথা বলাটা কতটুকু গর্হিত কাজ তা আপনি জানেন। কিন্তু আপনি হৃদয় আর জবানকে বন্ধ করে কতোক্ষণ থাকতে পারবেন? বিশেষত যখন আপনার হৃদয় একজন কবির হৃদয়। তাই আমি লিখি। আমার অব্যক্ত যন্ত্রণা আমি কবিতার ভেতর দিয়ে রিলিজ করি।
শুদ্ধস্বর: আপনার কবিতায় সমসাময়িকতা, রাজনৈতিক বোধ, নিজস্ব ভাষা শৈলির বিষয়গুলো যতোটুকু সম্ভব বিস্তারিত ভাবে শুনতে আগ্রহী।
এহসান হাবীব: সমসাময়িকতা প্রত্যেক কবির কবিতাতেই থাকে। কবি যে সময়ের ভেতর জীবন যাপন করেন, তিনি কবিতাতে মূলত তার সময়কেই প্রতিস্থাপিত করেন। লক্ষ্য করবার বিষয় হচ্ছে দৃষ্টিকোণ। অর্থাৎ তিনি কোন আঙ্গিকে তার সময়কে উপস্থাপন করছেন। আজকের সময়ে আপনি লক্ষ্য করবেন বাংলাদেশকে দুই আঙ্গিক থেকে দেখা হচ্ছে। একদিকে মুজিববর্ষ উদযাপন হচ্ছে উন্নয়নের মহা ডামাঢোলে, খেয়াল করলে দেখবেন প্রচুর কবিতা ও সাহিত্য এর উপর ভিত্তি করে রচিত হচ্ছে এমনকি কবির প্রেমের কবিতাতেও এর ছায়া পড়ছে। আরেকদিকে, গুম খুন, দুর্নীতি, ফ্যাসিজম ও রুদ্ধবাকের জনপদ হিসেবে এইদেশকে দেখা হচ্ছে। খুব কম হলেও এইসব সবসাময়িক বিষয় কিছু কবিদের কবিতা লেখায় ও বলায় প্রকাশ পাচ্ছে। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি যে, সমসাময়িকতা প্রত্যেক সময়ের কবিদের একটা প্রধান অনুষঙ্গ। ফলে সমসাময়িক বিষয়আশয় আমার কবিতায় প্রভাব ফেলবে, উঠে আসবে এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। আমি আগের প্রশ্নেই বলেছি প্রেম ও রাজনীতি তাড়িত আমি এবং আমার কবিতা। খেয়াল করবার বিষয় প্রেম ও রাজনীতিকে আমি আলাদা করে রাখিনি। কারণ আমি মনে করি বর্তমান সময়ে রাজনীতির বাইরে কিছু নেই। প্রাত্যহিক জীবনে সকালে ঘুম থেকে উঠে টয়লেট যাওয়াটা পর্যন্ত রাজনতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সকালে আপনার বাথরুম যাওয়াটা আনন্দদায়ক হবে নাকি কষ্টকর হবে সেটাও নির্ধারণ হয় আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর। কবি মানেই অগ্রসর সময়ের চিন্তক। ফলে রাজনীতি তার জীবন নিযন্ত্রণ করবেই। আমি বিস্তারিত বলতে পারছি না। আমার ভয় আছে। আমি বাংলাদেশের ডান বাম মধ্য এবং উগ্র সবগুলো রাজনৈতিক ধারার সাথে পরিচিত। জীবনের বহুটা সময় আমি এই সবগুলো ধারার সঙ্গে কাটিয়ে এর পাঠ চুকিয়ে দিয়েছি দুই দশকেরও বেশি সময় আগে। আমি এখন আমার রাজনৈতিক বোধ ও আকাঙ্ক্ষা শুধু আমার কবিতাতেই ফুটিয়ে তুলতে চাই। এর বেশি আমি এখন আর ভাবছি না। জানি না ভবিষ্যতে কী হবে? শুধু এটুকু বলতে পারি,সর্বহারা ও মধ্যবিত্ত, প্রলেতারিয়েত শ্রেণির রাজনৈতিক মুক্তি আমার আকাঙ্ক্ষিত। আমি আমার কবিতায় এই বোধকে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি। এমনকি আমার ব্যক্তিগত প্রেমের কবিতার মধ্যেও আমি এর দ্বারা তাড়িত হই। কারণ আমি জানি, আমার প্রেমিকাগণ এই শ্রেণীরই প্রতিনিধিত্ব করে ফলে আমার কবিতা যদি আপনি খেয়াল করেন আর মনোযোগ দেন তাহলে এর সত্যতা পাবেন আশা করি। আমার কবিতার ভাষা শৈলী নিয়ে আমার নিজের কিছু বলার নেই। আমি আমার মতোই কথা বলি এবং আমার কথা বলার ঢংয়েই আমার কবিতা রচিত হয়। আমি নিজে অবশ্য মনে করি কবিতার বিষয়ই তার ভাষাশৈলি অথবা স্টাইল নির্ধারণ করে দেয়। বাকি বিষয় পাঠক বিবেচনা করবেন।
শুদ্ধস্বর: কবিতার শ্লীল অশ্লীল ব্যাপারগুলো সম্পর্কে আপনার ধারণা ও অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
এহসান হাবীব: এই প্রশ্নটা আমি ঠিক বুঝতে পারি নাই। কবিতার শ্লীল আর অশ্লীল ব্যাপারটা কী আসলে? অশ্লীলতার অভিযোগে মলয় রায় চৌধুরীর “প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার” কবিতাটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। আমি অনেকবার এই কবিতাটা পড়েছি। আমার কাছে তো অশ্লীল মনে হয় নাই। ষাটের উত্তাল সময়, মানুষে মানুষে বিভাজন, শিল্পের নাম করে পশুপতিদের শিল্পপতি বনে যাওয়া, নকশাল আন্দোলনের ভিত যখন সৃষ্টি হচ্ছে, রাষ্ট্রের কাছে যখন মানুষ স্রেফ একটা প্রাণী যাকে যখন ইচ্ছে পিষে ফেলা যায়। এইসব ঘটনার বিপরীতে মানুষের বিকারহীনতার মুখে চপেটাঘাত করার জন্য এই উচ্চারণগুলি আমার কাছে অশ্লীল মনে হয়নি। পাশাপাশি শিল্পের ছুৎমার্গর বিরুদ্ধে এই কবিতা বিদ্রোহও ঘোষণা করে। আপনি স্মরণ করতে পারেন, গিনসবার্গ যখন লিখেন, “Amerika when will we end the human war?/ Go fuck yourself with your atom bomb.” এই পঙক্তি দুটোর শেষ চরণে যখন কবি স্পষ্টতই “ফাক” বাংলায় ”চোদা” শব্দটি উচ্চারণ করছেন তখন কি আপনার অশ্লীল মনে হয়? কবি কিন্তু নিজেই এই শব্দ ব্যবহারের কারণ একই কবিতায় উল্লেখ করেছেন, কবি বলছেন, “America how can I write a holy litany in your silly mood?” মানে, রাষ্ট্র যখন নির্বোধ আর বর্বর আচরণ করে তখন কবি কী করে পবিত্র বা ধরেন সভ্য শব্দ দিয়ে তিনি তার ক্ষোভ প্রকাশ করে? আবার ধরেন বিনয়ের ”ভুট্টা সিরিজ” এই কাব্যকেও অনেকে অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত করেন। সাহিত্যরসের মধ্যে আদিরস বলে একটা রস আছে। সেই চর্যাপদ থেকে শুরু হয়ে ”শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” হয়ে একেবারে অধূনা সময়েও আপনি এর দেখা পাবেন। এই রসের ব্যবহার যদি শিল্পীতভাবে হয় তাহলে তাকে অশ্লীল বলার কোন অধিকার আপনার নাই। বিষয়টা হচ্ছে আপনি কীভাবে প্রয়োগ করছেন? আরোপিত? নাকি শিল্পিত? আরোপিত হলে একটি অশ্লীল শব্দ ব্যবহার না করেও আপনার কবিতা শুনতে অশ্লীল লাগতে পারে। সম্প্রতি কিছু কবিতা নজরে আসে যেখানে জোরপূর্বক কবিতার ভেতর ধর্মীয় শব্দরাজির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে কবিতার ভিন্নমাত্রা দেয়া হচ্ছে বলে দাবী কর হচ্ছে। আমার কাছে বরং এগুলোকে অশ্লীল মনে হয়। হাল আমলে সাইয়েদ জামিলের কিছু কবিতাকে অশ্লীল বলা হচ্ছে আমার কাছে কিন্তু সেগুলোকে অশ্লীল মনে হয় না। কারণ জামিলের কবিতাগুলো আমি দেখিছি কী স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমাজ ও সভ্যতা সম্পর্কে তার অবদমনকে সে ফুটিয়ে তুলেছে। কবিতার বাইরে আমি অন্য একটা উদাহরণ দেই। সিফাত উল্লাহ নামে এক ভদ্রলোক ইউটিউবে বেশ জনপ্রিয়। ২০১৬/১৭ সালের দিকে শাসকগোষ্ঠীকে নিয়ে তার প্রচুর গালিগালাজপূর্ণ ভিডিও হাজার হাজার শেয়ার হয়েছে। আপনি সময়টা খেয়াল করুন। ৫৭ ধারার জয়জয়কার তখন। হরেদরে ৫৭ ধারায় মামলা হচ্ছে। সরকারের সামান্যতম সমালোচনা করা যাচ্ছে না, কোটাবিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে, নিরাপদ সড়কের দাবীতে স্কুলের বাচ্চারা হেলমেটধারী সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হচ্ছে কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না। সামান্য প্রতিবাদ করলেই তার বিরুদ্ধে ৫৭ ধারার মামলা দেয়া হচ্ছে। এই ধারাটি এতোই ভয়ানক যে, মামলা হলেই নিশ্চিত জেল, জামিন অযোগ্য ধারা। ফলে মানুষ ভয়ে চুপসে ছিলো। সেই সময় সিফাতউল্লাহ দেশের বাইরে থেকে সরকারকে গালিগালাজ করে ভিডিও পোস্ট করতেন। আর বাংলাদেশে সেটা লক্ষ লক্ষ ভিউ হতো। মানে গালিগালাজ হচ্ছে ভয়ার্ত মানুষের অবদমনের সর্বশেষ হাতিয়ার। ক্ষুব্ধ মানুষেরা কিন্তু এগুলোকে অশ্লীল মনে করেনি। বরং প্রতিবাদের ভাষা হিসেবেই গ্রহণ করেছিলো। ফলে শ্লীল অশ্লীলতার বিষয়টা বিবেচনা করা হয় আপনার অবস্থানের উপর । আপনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন, যে সমাজে বাস করছেন সেই সময়ে সেই সমাজে আপনার অবস্থানটা কোথায়? আপনার অবস্থানই নির্ধারণ করবে সময়টাকে আপনি শ্লীল হিসেবে বিবেচনা করবেন নাকি অশ্লীল? সময় যদি আপনার কাছে অশ্লীল হয়ে ধরা দেয় তাহলে কবিতার এইসব অনুষঙ্গ আপনার কাছে অশ্লীল মনে নাও হতে পারে। আর যদি সময়ের সুবিধাভোগী হন তাহলে তো আপনার কাছে অশ্লীল ঠেকবেই।
শুদ্ধস্বর: বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলা কবিতা নিয়ে আপনার নিজস্ব মূল্যায়ণ/বিশ্লেষণ জানতে চাই। এটা যে কোন সময় ধরে হতে পারে, আপনার যেমন ইচ্ছে।
এহসান হাবীব: কবিতার মূল্যায়ন শব্দটাকে আমি খুব ভয় পাই? কারণ মূল্যায়ন শব্দটির সাথে অথরিটি শব্দটির একটা সম্পর্ক আছে। আমি মনে করি না যে কবিতা মূল্যায়নের কোন অথরিটি আছে বা থাকতে পারে। তবে ব্যক্তির পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে। সেভাবে আমি আমার ভালো লাগা মন্দ লাগা শেয়ার করতে পারি। আপনি হয়তো চমকে যেতে পারেন বা আমাকে আপনি কবিতামূর্খও ভাবতে পারেন, আমার পছন্দ অপছন্দ শুনে। দুই বাংলার তুমুল জনপ্রিয় ও বোদ্ধাপ্রিয় কবি শঙ্খ ঘোষের কবিতা আমার পছন্দ হয় না। হাল আমলে বাংলাদেশে খুব মূল্যায়িত কথাশিল্পী প্রয়াত শহীদুল জহিরকে আমার স্রেফ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর বাই প্রডাক্ট মনে হয়। এবার বুঝুন আমার বিদ্যা আর বোধের দৌড়। আমি একবার বলেছি, পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য আমার কাছে বাংলাদেশের সাহিত্যের আগে পৌঁছেছে। এই ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য আমি একসময় বাংলাদেশের কবিতা খুব করে পড়েছি। এখন অবশ্য কবিতা খুব একটা পড়াই হয় না আমার। নিজের সময়ের কবিদের কবিতা আমি আসলে খুব একটা পড়তেও চাই না। কেনো চাই না সেই ব্যাখ্যা অন্য একদিন দেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ কী পশ্চিমবাঙলা দুই জায়গাতেই আজকে আমার নিজের ভালো লাগা নিয়ে বলি। শক্তির কবিতা আমার ভালো লাগে। ভালো লাগে তার কবিতায় পাগলামি, চরণের অসংযত উন্ন্যাসিকতা, বেদনার ভেতর নিজেকে লীন করে দেয়ার যে বোধ তা আমি খুব উপভোগ করি। আল মাহমুদের সংযত চরণের ভেতর দূরাগত বেদনামূখর বাংলাদেশ ফুটিয়ে তোলা, কবিতার ভেতর দিয়ে প্রেম ও দ্রোহের প্রকাশ আমার ভালো লাগে। শামসুর রাহমানের পারিপাঠ্য শব্দরাজির ভেতর দিয়ে কবিতার যে নতুন ঢং সেই ঢং আমার ভালো লাগে, জীবদ্দশায় বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ মিহি শব্দের ভেতর দিয়ে শামসুর রাহমান কবিতায় যে বয়ান দিয়েছেন এটা আমাকে অবাক করে। রণজিৎ দাশ, জয় গোস্বামী এদিকে হুমায়ুন আজাদ, আবিদ আজাদ, আবু হাসান শাহরিয়ার আমার ভালো লাগে। ওপারে তারাপদ রায এপারে আবুল হাসান এরকম ভালো লাগার আরো অনেক নাম বলা যাবে। আমি শুধু আমার পছন্দের ধরণটার কথা তুলে ধরলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে তারা প্রচল কবিতার পথে হেঁটেছেন এবং ভিন্ন ভিন্ন সুর ও আঙ্গিকে আমাকে অপূর্বসব কবিতার আস্বাদন দিয়েছেন। কিন্তু আমার কাছে আশির দশক থেকে দুই বাংলার কবিদের মাঝে একটা ফারাক ধরা পড়েছে। পশ্চিমবাংলার কবিরা যেমন এখনো প্রচল কবিতার পথেই হাঁটছেন অপরদিকে আশির দশক থেকে বাংলাদেশের কবিরা কবিতায় নিরীক্ষাপ্রবণ ও আঙ্গিকগত পরিবর্তনের পথে হেঁটেছেন। আবার এই সময় থেকে বাংলাদেশের কবিরা যেমন রাজনীতিচিন্তাশূন্য হয়ে পড়েছেন তেমনিভাবে পশ্চিমবাংলার কবিরা সমাজ ও রাজনীতি সচেতনতা তাদের কবিতায় ধরে রেখেছেন। নাম ধরে বলা যায় কিন্তু এখন আলসি লাগছে। ক্লান্ত লাগছে। বলতে ইচ্ছে করছে না। এটা এখানেই শেষ করে দেই।
শুদ্ধস্বর: খুব সাম্প্রতিক সময়ে আপনার পাঠ অভিজ্ঞতা (যে কোন বই বা লেখা নিয়ে কিছু বলুন)
এহসান হাবীব: অতি সম্প্রতি আমি ইতিহাস, আত্মজীবনী আর ভ্রমণকাহিনী পড়ছি। সাহিত্য সে অর্থে খুব একটা পড়া হচ্ছে না। বিচ্ছিন্নভাবে হয়তো কোথাও কবিতা ও গল্প পড়েছি। তা উল্লেখ করার মতো কিছু নয়। এই মুহূর্তে পড়ছি ম্যানুয়েল কোমরুফ সম্পাদিত সোহরাব সুমনের অনুবাদে দ্য ট্রাভেলস অব মারকো পলো। একটু খটোমটো অনুবাদ কিন্তু পলোর সঙ্গে চেঙ্গিস খানের তাতার সাম্রাজ্য বাইজানটাইন সভ্যতা আর পারস্যের অলিগলিতে ঘুরে বেড়াতে আমার ভালোা লাগছে।
কবিতা:
সুইসাইড নোট
(কবি সৌরভ মাহমুদ্কে )
পড়ুন পরম করুণাময়ের নামে।
দিন ও রাত্রির সন্ধিক্ষণে
এই ঘোর কালি সন্ধ্যায়
যদি এক বর্ণও মিথ্যে বলি-
আমার ছেড়ে যাওয়া প্রেমিকার কসম
দিনশেষে আমাকে পাবে না বলে
যে বারবার মরে যেতে চেয়েছে
তার নাম করে আর কিছুক্ষণ পরেই
গলায় নরোম গামছা পেচিয়ে ঝুলে পড়বো সিলিংএ
ঝুলতে ঝুলতে আমার হাত লম্বা হয়ে গেলে
তাকে একবার শেষবার ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করবো।
অথবা আমি আমার মায়ের নামেও আত্মহত্যা করতে পারি
যার অতৃপ্ত বাসনার নিষ্ঠুর নিয়তি আমি
মায়ের নাম করে ঝাপিয়ে পড়বো কোন দ্রুতগামী ট্রেনের নিচে
আমার অসুখী বাবা, যিনি বুড়ো হয়ে গেছেন
বিছানায় লেপ্টে থেকে তিনি আর কোন স্বপ্ন দেখেন না
বাবার স্বপ্নহীন যন্ত্র্রণায় আমি উঁচু কোন দালান থেকে লাফিয়ে পড়বো
পাখির মতো উড়তে উড়তে পৌঁছে যাবো মৃত্যু অবধি।
আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।
কতোবার মরবো আমি?
কতোবার আমার মরা উচিত?
ওই যে, পেয়ারা বাগানের মালকিন
বসে আছে সরু হাত নিয়ে।
চাঁদের সন্ধ্যায় যে আমাকে গভীর আলিঙ্গন করেছিলো
বলেছিলো, ভালোবাসি।
তার চলে যাওয়ার দৃশ্যপট দেখতে দেখতে
আমি নিপুন ব্লেড দিয়ে কেটে দিবো শিরা
রক্ত তড়পানো যন্ত্রণা মাড়িয়ে মাড়িয়ে সে চলে যাবে
মৃত্যু তাকে বাঁধা দিতে পারবে না।
ঘরে অমন লক্ষী স্ত্রী রেখে
প্রত্যেক কবির মতো
পরনারী সঙ্গ লোভী আজন্ম লুম্পেন আমি।
তবু আমারও রয়েছে আত্মহত্যার অধিকার
আমারও বলার অধিকার আছে
রাষ্ট্র, তুমি যতোই আমার জিহ্বায় পেরেক ঠুকে দাও
তবু আমি লিখে যেতে পারি এই অন্তিম সুইসাইড নোট।
গড় আয়ুর নিচে মারা যাওয়া
যতো স্ট্রোক, হার্ট এটাক
গুলির মুখে
ক্রসফায়ারে
গুমে হারিয়ে যাওয়া মানুষ
রাষ্ট্রের সমূহ ইতরামির বিপরীতে
প্রতিটি মৃত্যুই আত্মহত্যা
আমাকে বলতে দাও রাষ্ট্র
এই তো শেষবার
ফ্যাসিবাদের এই বুড়ি সুন্দরীকালে
তোমার ছেনালীপনার ইতিবৃত্ত আমাকে বলে যেতে দাও।
আমার ছেড়ে যাওয়া প্রেমিকা
লুম্পেন যুবকের হাত ধরে চলে যাওয়া পেয়ারা বাগান
মায়ের অতৃপ্ত বাসনা, বাবার অসুখী জীবন
এরা কেউ আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী নয়।
মূলত, এরা সকলেই আত্মহত্যার দিকে ধাবমান।
নিগূঢ় সন্ধ্যার কসম!
মনোরোগ চিকিৎসার সান্ধ্য্যকালীন ডোজ পূর্ণ করেছি
এখন এই অচঞ্চল চিত্তে
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আত্মহত্যা করবো আমি।
সম্ভাব্য সবগুলো উপায় রেখে
আমি নিরাপদ প্রস্থানে যাবো
বারান্দায় ইজি চেয়ারে শুয়ে কফিতে মিশিয়ে দেবো একশ ঘুমের বড়ি
তারপর পুরো একটা সিগারেট শেষ করবো।
রাত ঘন হয়ে এলে আমি আমার কন্যাদ্বয়কে
জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে তলিয়ে যাবো
আর জেগে উঠবো না।
আমার এই মৃত্যুর জন্য তোমরা কেউ দায়ী নও।
আমার মৃত্যুর জন্য তোমরা রাষ্ট্রের ফাঁসী দাবী করো।
প্রণয়সঙ্গী
আকাশ কিছুটা নীল
বাকিটা ধুলোময়
সূর্যের আলো তার আভা ছড়িয়েছে নিরুত্তাপ।
একটু সোনারঙ যেনো তার বিস্তীর্ণ সীমানা জুড়ে
অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর
কিছু ছোট ছোট বুদবুদ খেলা করে চোখে।
এমন আকাশে
খেলা করছে
ডিগবাজি দিচ্ছে
পাখা ঝাপটাচ্ছে
দুটো চিল।
খেলা করে করে শেষ বিকেলে
উড়ে উড়ে দূরে চলে গেলো
চিল দুটো
যার যার নিজেদের দিকে।
দুরত্ব
ছায়ার নিকট থেকে ছায়া সরে যাচ্ছে
হাতের উপর থেকে হাত
নদীর উপর থেকে চাঁদ সরে যাচ্ছে
মানুষের কাছে দাঁড়িয়ে থেকে একটু একটু করে সরে যাচ্ছে মানুষ
যেনো পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা
দুটো হৃদপিণ্ড
কাঁপতে কাঁপতে
সরে যাচ্ছে দূরে।
তাদের নিজেদের অজান্তে!
এই শীতে
অনেক ঝামেলা করবো আমি
শীতের সন্ধ্যায় চুপচাপ বেরিয়ে পড়বো আলপথ ধরে।
অনেক দূর দূর অব্দি হাঁটতে থাকবো
হাঁটতে হাঁটতে আমার পা ফুলে উঠবে
টনটন করে উঠবে জমানো ব্যথা।
কাউকে কিচ্ছুটি না বলে গাঢ় কুয়াশায় নিজেকে মিলিয়ে ফেলবো।
যেনো কাল সকালে তুমি জানবেই না
গত সন্ধ্যায় তোমার গা লেপ্টে কেউ ছিলো।
অনেক ঝামেলা হবে এইবার
খুব করে মিছিল হবে
মিছিল করে আমার দুঃখ টগবগ ফুটতে থাকবে
গুলির সামনে শুয়ে পড়বো
তোমার দীর্ঘশ্বাসের ভেতর পুড়তে থাকবে
অত্যাচারি রাজার শাসন।
আমি তোমার উষ্ণ চাদরের মাঝে লুকিয়ে থেকে
তোমার বুকের ভেতর লেপ্টে থেকে
অনেক দূর অব্দি চলে যাবো
আর ফিরবোই না।
খুব ঝামেলা হবে কিন্তু বলে দিচ্ছি
রক্ত ক্লেদের ভেতর আমি উন্মুক্ত প্রান্তরে
কুয়াশার মাঠে তোমাকে জড়িয়ে ধরবো
চুমু খাবো
তুমি অভিশাপ দেবে।
আমি শাপগ্রস্ত হয়ে
হু হু মাঠের ভেতর দিক্বিদিক ছুটবো
নিরন্ন মানুষের মতো হাঁটতে থাকবো নির্জনতা নিয়ে
ভোরবেলা সর্বহারার তাবুর নিচে শুয়ে থাকবো
অপেক্ষা করবো অনন্তের।
অনেক ঝামেলা হবে
এই শীতে।
দেখা না দেখার গল্প
আমাদের দেখা হলো অচেনা মাঠে
আমাদের কথা হলো অচেনা ভাষায়
মুহূর্ত কয় মাত্র
আমাদের দেখা নেই বহুদিন
কথা নেই-
যেনো রক্তের গ্লুকোজ কমে যাচ্ছে আমাদের।
হাঁসফাঁস করা দমবন্ধ ঘরে
অক্সিজেন নাই করে দিয়ে বলছো-
বাঁচো।
হয়তো তোমার প্রেমিক প্রাণপন আটকে রাখছে তোমাকে
যেনো আমার দিকে আসতেই দিচ্ছে না
তোমার স্বামী অনবরত ফোনে আড়ি পেতে বসে আছে
আমাদের হড়বড় কথার মাঝে একটা বোবামাছি
মৌণ করে দিয়েছে আমাদের প্রান্তর।
তবু অজস্র জন্ম ধরে আমি কথা বলছি তোমার দিকে
তুমি ভাষাহীন একটা শাদা ফুল।
অন্তত নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার আগে
কথা বলো, জানিয়ো-
তুমি
কেমন আছো?
কেউ আমাকে ফোন দিতে পারেন
কেউ আমাকে ফোন দিতে পারেন
চ্যাটক্লান্ত রমনীরা ঘুমিয়ে পড়েছে
গোপন প্রেমিকারাও তাদের স্বামী সন্তানের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে।
তাহাজ্জুদ পড়বেন বলে একজন আমাকে অপেক্ষা করতে বলে
নামাজে দাঁড়িয়ে গেছেন।
রাত ঘন হচ্ছে।
দীর্ঘ হচ্ছে।
আমি প্রচণ্ড গরমে ঘামছি।
ভাবছি, একটা শীতল পানীয়র মতো একটা ফোনকল যদি আসে।
যে কোন বিষয় নিয়ে কথা হতে পারে।
আমি শুনবো।
যে কেউ আমাকে ফোন দিতে পারেন।
রাতের নিস্তব্ধতা খান খান করে দিয়ে বেজে উঠতে পারে রিংটোন।
ওপাশ থেকে ভারী বাজখাই গলায় কেউ কথা বলে ভেঙে দিতে পারেন
দীর্ঘকালের এই বধির বদ্বীপের নিস্তব্ধতা।
কেউ মোলায়েম গলায় শুনাতে পারেন নতুন কোন গানের কলি।
কথা বলার যেকোন বিষয়ই হতে পারে।
আমি শুনবো।
কেউ আগামিকালের গোপন কোন অপারেশনের পরিকল্পনাও করতে পারেন।
আমি গোপনীয়তা বজায় রাখবো।
কেউ আমাকে ফোন দিতে পারেন।
বন্ধু অথবা শত্রু
শুনাতে পারেন প্রণয়, গোপন প্রেমের কোন কাহিনী
অথবা কেউ বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করতে পারেন আগামিকালের মৃত্যু পরোয়ানা।
তবু কেউ ফোন করুক। এই দীর্ঘ রাতের নির্জনতা ছিঁড়ে
কথারা বলে উঠুক। খলবল করে বেরিয়ে পড়ুক নির্জন প্রকোষ্ঠ থেকে।
অনন্ত বোবা রাত্রির মুখে ভাষা ফুটে উঠুক।
কেউ আমাকে ফোন দিক।
জানি তো, তাদের স্বামী সন্তান রয়েছে। রয়েছে দিনের আলোর বিপুল সম্ভার।
আমি তাদের গোপনীয়তা বজায় রাখবো।
বাচ্চাদের স্কুল
চাকরি চলে যাওয়ার পর
বউ একটা নতুন চাকরি ধরায়া দিছে
নোয়ামনিকে তার ইস্কুলে আনা নেওয়ার চাকরি।
এই চাকরিটা আমি অবশ্য আনন্দের সাথে করি।
বাচ্চাদের ইস্কুল আমার ভালো লাগে।
হরেক রকম বাচ্চা। একসাথে এত্তগুলা বাচ্চা। দৌড়ছে, কিচিরমিচির করছে
লুটোপুটি, হুটোপুটি। কী অদ্ভূত সুন্দর! বাচ্চাদের ইস্কুল ছাড়া
এই দৃশ্য আর কোথাও পাওয়া যাবে না।
একেকটা বাচ্চা ক্লাস শেষে বেরিয়ে এসে তার মায়েদের বুকে আছড়ে পড়ছে।
আমার দেখতে কী যে ভালো লাগছে।
আহা! বাচ্চাদের মায়েরা।
ফর্সা, গোলগাল। নাদুস নুদুস একেকটা বাচ্চার মা।
তারা আমাকে দেখে
আগুন্তুক ভাবে বোধহয়।
দেখে আর কী যেনো ভাবে?
ভাবে কি! মনে হয় তারা আমাকে চোখ দিয়া খায়।
খাচ্ছে তো রোজ । অনেকজন।
আমারও ভালো লাগে। ভালো লাগলে আমিও খাই।
বাচ্চাদের ইস্কুল।
এইভাবে অনেকজনের খাওয়া খাওয়ি হয়ে বেঁচে আছে দীর্ঘকাল।