প্রশ্নোত্তর:
শুদ্ধস্বর: কবিতা লিখতে হবে বা কবিতা লেখার জন্য তাড়না বোধের ব্যাপারটা প্রথম কিভাবে অনুভব (মানসিক অবস্থা, পরিবেশ-প্রতিবেশের সাথে সংশ্লেষ) করতে শুরু করলেন?
আশিক আকবর: বোধহয় আট বা নয় ক্লাসে পড়ি। তখনো মনে হয় পাঠাগার থেকে বই এনে পড়া শুরু করিনি। ফনিক্স সাইকেলে ইস্কুলে নিজে নিজেই যাই। টিফিনের পর স্কুল ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখি। প্রথম প্রেমের কাছে চিঠি লেখা বোধকরি চলছে।
হঠাৎ এক রাতে, রোজার মাসের রাত। সেহরী খাওয়ার পর মাইকোসে শুয়ে আছি। বিশাল দুইতলা টিনের বাড়ির মাঝের কক্ষে, চৌকি সংলগ্ন মাইকোসের উপর আমি। এর চারপাশে রেলিং। রেলিং এর উপর দুই খামে বেঁধে চওড়া তক্তা টানানো। তার উপর আমার দুই একটি বই খাতা। মনে হচ্ছে তখন আমার জন্য আলাদা চেয়ার টেবিল বানানো হলেও বিছানার পাশের তক্তায় দুই একটা বই খাতা রাখতাম। এখনের মতো একেবারে বালিশের কাছে না। তবে হাতের নাগালে, একটু উপরে।
প্রথম কবিতা লেখার সেই রাত। কেউ আমাকে কবিতা লেখতে বলেনি। পাঠ্য বইয়ের বাইরে কবিতাও পড়ি না। পরিচিত কেউ কবিতাও লেখে না। কখনো ভাবিনি নিজে কবিতা লিখবো কখনো। তবু আমাকে কবিতা লিখতে হলো। যেন বা বাধ্য হলাম।
বিশাল ঘরের সব মানুষ শান্ত। সেহরীর পরের নিস্তব্দ সময়। কোথাও কুপি বাতি জ্বালানো নেই। ঘর ভর্তি অন্ধকার। শুয়ে আছি। ভরাপেটেও ঘুম নেই। কি এক অস্বস্তি। কি এক হাসফাস। এটা কতোক্ষণ চলছিলো যেনবা। এক সময় অন্ধকারে খাতা খুঁজে তক্তা থেকে নামাই। খোলা কাগজে বানানো রাফ খাতা। খুঁজে বের করি কাঠপেন্সিল। এবং আশ্চর্য; অন্ধকারেই খাতাতে লিখি কয়েক লাইন। ঐটাই আমার প্রথম কবিতা। স্পষ্ট মনে আছে, পরে ঐ কবিতাটি আমি ইউনিসেফের দেআ দুধ শাদা রুল টানা খাতাতে লিখে রেখেছিলাম। প্রাইমারী স্কুলে কখনো কখনো পাওয়া ঐ খাতা হাইস্কুল বেলায় কিভাবে এলো সে এক রহস্য। তার চেয়েও ঘোর এক রহস্য আমার কবিতা লেখা শুরু হওয়া। কবিতাটির নাম ছিলো কৃষক।
শুদ্ধস্বর: আপনার কবিতার সমসাময়িকতা, রাজনৈতিক বোধ, নিজস্ব ভাষা শৈলির বিষয়গুলো যতটুকু সম্ভব বিস্তারিত ভাবে শুনতে আগ্রহী।
আশিক আকবর: খুব সংক্ষেপে এর প্রশ্নটির সার সংক্ষেপ উত্তর দিচ্ছি প্রথমে।
আশির দশক থেকে আজ পর্যন্ত আমার সমসাময়িকতা। আর রাজনৈতিক ভাবে কমিউনিসট মতাদর্শে মানুষের মুক্তি দেখি। এ দর্শনের বর্তমান সর্বোচ্চ বিকাশ মাওবাদ। আমি পৃথিবীর মাওবাদীদের দিকে চেয়ে আছি। যদিও পূর্ববাংলার মাওবাদীদের বিকাশের জন্যই ওদের সাথে আমি দ্বন্ধে লিপ্ত। আশা করছি এর দ্বন্ধের সুফলে ভারতবর্ষে পার্টিজানদের সাথে সৃজনশীলের সম্পর্ক উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছাবে। তারা বুঝবে সাংস্কৃতিক বাহিনী ও গেরিলা বাহিনী পাশাপাশি না চললে বিপ্লব অসম্ভব। এবং এই মুহুর্তে গত একশ বৎসরের সঠিকতার পাশাপাশি বিচ্যুতি থেকে শিক্ষা নিয়ে আগানো উচিত। যাতে সৃজনশীলরা আমৃত্যু পার্টিজানদের সাথে তথা সত্যিকারের কমিউনিসট পার্টির সাথে যুক্ত থাকতে পারে।
নিজস্ব ভাষা শৈলী বিষয়ে জানতে চেয়েছেন, সে ক্ষেত্রে বলি — কবির একটি নিজস্ব কাব্য ভাষা তৈরী হয়। নিজের আলাদা পরিচিতির জন্য একজন কবির এটা লাগেই। ব্যাক্তিগত ভাবে অনেকেই আমাকে বলেন, আমার কাব্যভাষা চেনা যায়। অন্যের কবিতাতে নিজের বাগভঙ্গির ছায়া দেখলে কিঞ্চিৎ চমকেও উঠি। কিছুটা হলেও বুঝি নিজের একটা কাব্য শৈলী বোধকরি তৈরী হয়ে গেছে। তবে আমি সেখানে স্থির থাকতে রাজি নই। বহন করতেও রাজি নই। কেননা আজকাল আমি মনে করছি, করি হবে বহুস্বরা। বহুস্বরে সে বলবে। বহু রকম নিজস্ব কাব্য ভাষা থাকবে তার। সচেতন ভাবেই কখনো কখনো এর অনুশীলন করি । যেমন —
প্রচলিত রূপ↓
তোমাকে ভালোবেসে
সবাই কে ভুলেছি আমি
সবাই কে ভালোবেসে
তোমাকে ভুলে যাবো আমি
নিজস্ব রূপ
ভালোবেসে। তোমাকে ভালোবেসে। ভুলেছি। সকল কে ভুলেছি।
ভুলবো। তোমাকে ভুলবো। ভালোবেসে। সকল কে ভালোবেসে।
কিংবা ধরুন, পূর্ববর্তী কবিদের পাশ কাটানোর জন্য অনেক কিছুই করি। যেমন দেখুন, হাজার বছর ধরে … এর প্রভাব ভেঙ্গে দিতে অনায়াসে লিখি —
হাজার হাজার বৎসর ধরে ধরে উড়ে,
অনায়াসে পাখি উড়ে, উড়ে…
বিস্তারিত না যেয়ে শুধু সংবাদ দেই। “পদ্যিকা” নামে একটি বাংলা কবিতা আঙ্গিক উদ্ভাবন করেছি। আবিস্কার করছি তিনটি নতুন ছন্দ। এক, পুনরাবৃত্ত ছন্দ। এর উদাহরণ আছে এই প্রশ্নের উত্তরের প্রথম উদাহরণে। দুই, বর্ণবৃত্ত ছন্দ। তিন, বিপরীতাক্ষর ছন্দ।
শুদ্ধস্বর: কবিতার শ্লীল অশ্লীল ব্যাপারগুলো সম্পর্কে আপনার ধারণা ও অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
আশিক আকবর: ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি, শ্লীল অশ্লীল দিয়ে কবিতা কে আলাদা করাই ঠিক না। প্রাকৃতজনের ভাষা জীবন ঘনিষ্ঠ ভাষা, যাতে যৌনতা মাখা, গালি মাখা, কৌতুককরতা মাখা। তথাকথিত ভদ্রলোকদের নুনুকাটা ভাষা আসার আগ পর্যন্ত এ নিয়ে কারো কোনো আপত্তিই ছিলো না। এখন চারদিকে মুক্ত ভাষার প্রতি জোর আপত্তি। এটা কুশিক্ষার ফল।
ভাষা একটা অস্ত্র। সঠিক জায়গায় সঠিক ভাষাটিই ব্যবহার কাম্য। আমি তাই করার চেষ্টা করি। তবে আরোপিত ভাবে না। ইচ্ছাকৃত ভাবে না। ভেতর থেকে আসা রাগ ক্ষোভ অবদমন উদগীরন না হলে ওটা এড়িয়েই চলি। কিন্তু যখন এসে যায়, আসতে চায়, তখন আর সেন্সর করি না। বরঞ্চ ভেতরের প্রকাশটাকে ঝেড়ে মুছেই প্রকাশ করতে চাই। এই অভিজ্ঞতা শ্রেণী ভেদে নানা রকম। প্রথমতঃ আপত্তি করলো পার্টিজান কমরেডদের এক আধজন। তারা বললো, আপনার কবিতার বই কাউকে কিনতে বলা যায় না। কারণ ঐ যৌনতামাখা গালি। তাদের সাথে সংগ্রাম শুরু করলে, তারা এতো দিনে নমনীয় হয়েছে। মেনে নিয়েছে অনেকটা অশ্লীলতা অস্ত্র হিসাবে ব্যবহারের যুক্তি কে। দ্বিতীয়তঃ তেড়ে এলো কলেজ ইউনিভারসিটির পরিচিত শিক্ষকরা। কেউ কেউ বলেই বসলো, আমাদেরকে খিস্তি খেউরের যুগে নিয়ে যাবে নাকি? অনেকে আমার সর কীর্তি মুছে দিতে চাইলো কবিতার তথাকথিত অশ্লীলতা সামনে এনে। কোনো পাঠচক্রের অনুষ্ঠানে কবিতা পড়লে, আলোচনা উঠলো এইসব জীবন ঘনিষ্ঠ কবিতা অনুষ্ঠানে পড়া যাবে কিনা। পক্ষ তৈরী হয়ে গেলো দুইটা। অনেকে আবিষ্কার করে নিলো গালি ব্যবহারে আমার নিজস্বতা। এই পর্বে “ফুফাতো বইন” নামে আমার এক কবিতা আলোচিত হয়ে উঠলো। বিখ্যাত হৈআ উঠলো। নানা জনের মুখেই এই কবিতার প্রসঙ্গ আমি এখনো শুনি। এর মধ্যেই ঘটলো বিস্ময়কর ঘটনা। এক তরুণ কবি বললো, “ফুফাতো বইন” কবিতাটি তার চাই। সে ফেইস বুকে সেটি খুঁজে পাচ্ছে না। আমিও খুঁজলাম। না পেলাম না। এখন ভরসা একে পাওয়ার তিনটা। এক, যদি ফেইস বুক এটা ফেরত দেয়। দুই, এটি হুট করে বের হওয়া ময়মনসিংহের খোলা সাহিত্য সাময়িকে আমার অনুমতিবিহীন ছাপা হৈছিলো। যদি ঐটার কপি মিলে। তিন, একজন অনলাইনে এইটি আবৃত্তি করেছিলো, যদি তার কপি থাকে। আর যদি এর উদ্ধার না হয়, তবে এটি আমাকে কষ্ট দিতে দিতে মিথে পরিণত হবে। জয় হোক যৌক্তিক অশ্লীলতার, অশালীনতার। মুছে যাক শ্লীল অশ্লীলের ভেদাভেদ। কবিতা হোক সর্ব রকমের শৃঙ্খল মুক্ত।
শুদ্ধস্বর: বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের বাংলা কবিতা নিয়ে আাপনার নিজস্ব মূল্যায়ন/ বিশ্লেষন জানতে চাই। এটা যে কোনো সময় ধরে হতে পারে, আপনার যেমন ইচ্ছে।
আশিক আকবর: বাংলাদেশ বা পশ্চিম বাংলা, যা সরকারী নথি মোতাবেক নাম বদল করে এখন “বাংলা”। এই দুই বাংলার কবিতা এখনো মোটা দাগে আলাদা হয়ে উঠেনি। যদিও গদ্য লেখালেখিতে ও কথায় আলাদা করার জোর চেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা মূলতঃ বাঙালির ঐক্য কে বিনষ্ট করার একটা ধুরন্ধর কার্যক্রমও হতে পারে। এ শহর বাংলা সাহিত্যের রাজধানী। ও শহর পায়রার বিষ্ঠা। এগুলো মূলতঃ ভাসা ভাসা বাণী। এর কার্যকারীতা খুবই কম।
এখনো বাংলা কবিতার সামগ্রীক মূল্যায়ণ করতে গেলে আলাদা আলাদা করে বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার কবিতা আলাদা করে মূল্যায়ণ করার কিছু নাই। তবে সামগ্রীক কবিতা নিয়ে আমি বলতে চাই, তিরিশ দশকে প্রচলিত কাব্য ভাষা ক্লান্তিকর হয়ে উঠেছে। এই ভাষা বাংলা কবিতা আর ধারণ করে থাকতে চাচ্ছে না। থাকবেও না। এই ভাষা বদল হয়ে যাবেই। অনেকের ভাষা ভঙ্গির মধ্যে এর স্ফূরণ দেখা যাচ্ছে।
শুদ্ধস্বর: খুব সাম্প্রতিক সময়ে আপনার পাঠ অভিজ্ঞতা (যে কোনো বই বা লেখা) নিয়ে কিছু বলুন।
আশিক আকবর: বই পড়া পূর্বের তুলনায় অনেক কমে গেছে। তবুও হাতের কাছে দুই একটা অপঠিত বই রাখি। বইটি খুব না টানলে দেখা যায়, সেই আবার ফেইসবুকেই এসেই গুতাগুতি করছি। এখন আমার বালিসের ডান পাশে শীর্ষবিন্দু নামের লিটলম্যাগ হতে চাওয়া সাহিত্য পত্রিকা ও মাওবাদী অগ্রযোদ্ধা নামের পেপার ব্যাক এক বই। শীর্ষবিন্দুতে নিজের গুচ্ছ কবিতা দেখা ছাড়া আর তেমন কিছু দেখা হয়নি। তবে মাওবাদী অগ্রযোদ্ধা বইটি পড়েছি। এইটি মূলতঃ পূর্ববাংলার আন্ডারগাউন্ড পার্টিতে কাজ করা শহীদ ও স্বাভবিক ভাবে মৃত প্রতিনিধি স্থানীয় চুয়াল্লিশ জন কমরেডের অতি সংক্ষিপ্ত জীবন সংগ্রাম ও পরিচিতি। এটিতে কমরেডদের তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। এটি আমার ভালো লাগেনি। বইটি শুরু হয়েছে কবি ও কমরেড সিরাজ সিকদারের এর পরিচিতি ও জীবন সংগ্রাম দিয়ে। বইয়ের মধ্যে দুইজন নারী কমরেডের কথা আছে। তাদের একজন রাবেয়া আক্তার বেলী। তাকে হত্যা করা হয় একাত্তরের পরের স্বাধীন দেশে। কিন্তু তার লাশটি জনগণ দাফন করে রাস্তার পাশে। একজন মানুষ কে একেবারে পথের মধ্যে কবর দেআটি আমাকে স্পর্শ করে। আর আমি লিখতে অনুপ্রাণিত হই। কবিতা এখানে দিয়ে দিলে মনেহয় অপ্রাসঙ্গিক হবে না। তাই দিচ্ছি —
পলাশ ডাঙ্গার পথ
কবিতা:
প্রেমপত্র
আসো আজ দু’দণ্ড গল্প করি
পুরুনো দিনের সিঁড়িতে বসি
কাশি আসুক
তবু চলো দু’জনেই দু’টি সিগারেট ধরাই
চা কফি কিংবা শাদা পানি না হয় পরে করে নেবো পান
আজ কাল আর গলাতে বৈরাগ্য মালা দেখি না
দেখি কণ্ঠার কাছে বড় সড় আঁচিল নাকি তিল
না, না, অমন করে কুল কুল হেসে মরো না
তিপ্পান্নতেও আমাকে জাগিও না
আরব্য রজনীর চেয়েও দীর্ঘ একেকটি রাত্রিকে ঘুমাতেই দাও
আচ্ছা, দ্বিতীয় স্বামীকে যেদিন জবাই করতে গেলে
ঐ রাতের ঘটনাটি না হয় বলো
তখন কি আমেরিকার অন্ধকারে খুন খুন খেলা ছিলো চলমান
আটকানো সাত সাতটি পাণ্ডুলিপি কি আনবেই না আর
যাই বলো
স্বামীটি কিন্তু বেশ বুঝতো তোমাকে
নইলে কেনোই বা পাখি আর ফুলেই রাখলো দখল
আস্ত তোমাকে হারিয়েও
নিশ্চয়ই তিনি অপেক্ষা করছেন তোমার
তুমি ফিরেই যাও
বেক্কল ট্যান্ডল নিয়ে ঘুইরো না আর
আমার বোধ বুদ্ধিও তোমাকে নিয়ে সাজাতে চায় না সংসার
অজস্র নারী কে জেনে জেনে, জেনে গেছি
নারকীয় সংসারে নায়িকার না থাকাই ভালো
চিরকাল শে বসন্তে আড়াল থেকেই ডাকুক
কবিতা হোক
একশ রকম রান্নায় আরাধ্যিকা অধরাই থাকুক
সিদ্ধান্ত
মৃত্যু এক অমীমাংসিত অধ্যায়
ওখানে বাস করেন আদিম অন্ধকার
এবং মহিমান্বিত আলোক
বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসে এদের কে ভাগ করা চলে
কিন্তু মূলতঃ আলোক এবং অন্ধকার একই
যদি এরা তীব্রতর হয়
সদ্য মৃত মানুষটার সাথে
মাত্র কয়েক মিনিট কথা বলে ছিলাম
তিনি তার নাতিদের কথা বলছিলেন
বলছিলেন, ছোটো নাতিটা বিয়ে করে ফেলেছে
বড়টিকে যেন বিয়ে করিয়ে দেই
একটু থেমে থেকে বলেছিলেন, ও বিয়ে করে ফেলেছে কিনা, কে জানে!
মৃত্যুটাও এমনি,
মৃত্যুর ঐ পাড়টাও দোলাচলেরই জগৎ
সরাসরি তদন্ত না করে ঐ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেআ ঠিক হবে না
নামহীন
খাঁচা খুলে পাখি উড়ানোর কাজ কমিউনিসটদের
খাঁচা খুলো
এবং উড়াও
ঐ ঐ
নীল নীল আকাশে
সে অন্য কেউ
আমি কিছুই না হে,কিছুই না।
আমাকে কেউ কোথাও পাবে না। ব্রহ্মপুত্র পাড়ে যে আড্ডা দেয়, সে অন্য কেও।
অফিসে বসে যে লাখ লাখ টাকার হিসাব কষে, সে অন্য কেউ।
চারুকলার ফুটে যার হাত,
বই বিক্রি করে, সেও অন্য কেউ।
যে …
এই অন্য কেউ কে চিনি না আমি। না চিনতে চিনতে, শেষের বেলা এসে ডাকছে অচেনা রে।
তবুও তাকে চেনার হচ্ছে না একটুও খায়েস…
আমা হৈতে বিচ্ছিন্ন রেখো না
আমা হৈতে বিচ্ছিন্ন রেখো না আমাকে, বলো না এমন কথা, যাহা মস্তিস্কে আগুন ধরায়, হৃদয়ে আনে ব্যথাতুরা লবণের স্বাদ। চোখে হাজার হাজার বৎসরের নিদ্রা নিআ জাগি। সারমেয় সাথে পথ পাশে শুই।
বৃষ্টি ঝরে, রোদ পড়ে, ধূলো বালির আস্তরণে একলা হারাই। পাগলা গারদ নেয় না আমাকে। নেয় না বৌএর বিছানা, নেয় না সংসার । মাইল মাইল পথ নেয়। টানে পথ। কন্ঠ বিভ্রম তাড়া করে। আলু ভর্তা ভাত, সুস্বাদু ঝোল ঝোল মাংস ভাত হয়ে যায়। কালো কুৎসিত মেয়ে হয় কারিনা কাপুর, সোফিয়া লোরেন…
বৃষ্টির পানি লাগে আঙ্গুরের রস। দুধ কে মধু। মধু কে বিষ। এমন উলট পালট লাগে চারপাশ। উল্টোরতিতেও মেলে না শান্তি কুসুম। অর্গাজম সুখ। ছাইপাশ পথেও কেউ কেউ যায়। ওখানেও সেই নৈসঙ্গ নুপুর, একার রাজত্ব।
বহুত্বের কথা বলি না। বলি না, বহুমুখের ভণ্ডামী এনজিও দর্শন। তুমি গরীব থাকো রে ভাই। আমরা তোমাকে ধনী করে দেবো। রোগগ্রস্থ হও, আল্লার ওয়াস্তে ভালো করে দেবো। ক্লিনিকে, বেসরকারী হসপিটাল কল্যাণে সর্বশান্ত করে দেবো। শাড়ী তুলতে তুলতে, প্যান্ট খুলতে এমন এমন করবো, যাতে জ্বলজ্বল করে সদর ঘাটের চাঁদ।
ঐ চাঁদ কে না ভালোবাসে? আমিও বাসি, খুব খুব বাসি। চাঁদের ভেতরে যে চাঁদ তারা আছে। আছে জঙ্গলের আধিপত্য। ঐখানে আমার মাওবাদী বাহিনী, পৃথিবীকে করতে সদা তৎপর। পৃথিবীর গর্ভবতী হওয়া জরুরী। জরুরী ভীষণ তার নতুন করেই জন্মানো। বিপ্লব, আসো ভাই, আসো।
কোটি কোটি মনুষ্যকুলের পরিত্রানহীন, পৃথিবী চলছে না আর। ছোটো ছোটো যুদ্ধের খাবারে অস্ত্র কারখানা চাকা চলে। পরমাণু নাপাম এটম বোমার ধ্বংস স্বপ্নে হতাশার উল্টানো ট্রাক আসে, আসে আত্মহত্যা ডাক…
আত্মহত্যা থনে আত্মবলি উত্তম। উত্তম লড়তে লড়তে গাদ্দাফি শহীদ। আরো উত্তম ক্রিস্টোফার কডওয়েলিয় রেডগার্ড রক্ষা আত্মদান।
বাতাস
বাঁশের পাতায়, আমড়া গাছের পাতায়, হরতকি গাছটির প্রশাখায়,
অনেক দোল, অনেক বাতাস।
জামগাছ দুলছে, কামিনী পাতা কাঁপছে, মাধবী লতার ঝাড় যেন উড়ে যাবে,
সুপাড়ি গাছে, কাঠাল গাছে, ডালিম গাছটির ছোট্ট ডালে, কচু ঝোঁপে, পিতরাজ গাছটির পাতায়,
অনেক বাতাস, অনেক
আমার ইচ্ছে করছে, শ্রাবণ মাসের এই রৌদ্রকরোজ্জল সকালে, তীব্র দাবদাহে,
কোথাও গাছের ছায়ায় দোলনা ঝুলিয়ে শুয়ে থাকতে
শরীরে বাতাসের স্পর্শ পেতে পেতে কার্ল মার্কস বা কাহলীল জীবরান পড়তে
কিংবা কোনো আন্ডারগাউন্ড পার্টির করোনা কালীন থিসিসে রেড মার্ক দিতে
আমার ইচ্ছে করছে খুব
আজ এই আলোক উজ্জল শ্রাবণ সকালে
ক্লান্ত আমি
মাটির শয্যায় নিয়েছি শয়ান
জানালা খুলে, দরোজা খুলে
পাতায় পাতায় শাখায় শাখায় বাতাস দেখছি
ঘাড় ঘামছে, গলা ঘামছে, কপাল ঘামছে, চ্যাট চ্যাট করছে শরীর,
ফ্যান ছেড়ে দিলাম,
সাঁই সাঁই ঘুরছে তিন ব্লেডের ফ্যান
বাতাস ছুঁয়ে ছুঁয়ে শান্ত শরীর
পৃথিবীতে বসন্ত বয়ে গেলেই
আমার কি
আমরা
আমার বাড়িতে বৃষ্টি হয়
তোমার বাড়িতে খিচুরী রান্না হয়
তোমার বাড়ির খিচুরী তুমি খাও
আমার বাড়ির বৃষ্টিতে আমি ভিজি
More Posts From this Author:
- None Found
শুদ্ধস্বর কে ধন্যবাদ জানাই কিবি আশিক আকবর কে নিয়ে এই সাক্ষাতকার টি প্রকাশ করার জন্য।
কবি আশিক আকবর ভাল লেখেন। উনার লেখা কবিতা আবৃত্তি করেছি অন লাইনে। উনার ফেইসবুকে লেখাগুলো পড়ি।
ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের বীক্ষণ এ পরিচয় হয়েছিল কবি আশিক আকবর এর সাথে সেই নব্বই এর দশকে।
উনার কবিতা মান সম্পন্ন বকে মনে করি এবং অন্যান্য কবিতা থেকে বিন্ন আঙ্গিকের।