কিউবা: প্রতিশ্রুতি, অবরোধ আর নেমকহারামির কথন

Share this:

কিউবার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকের সংগ্রামের সাথে সংহতি না হয়ে যদি সংহতি হয় কিউবা রাষ্ট্রের সাথে, তবে সেটা সমাজতন্ত্রের মৌলিক চেতনার সাথেই বড়সড় নেমকহারামি।

সমাজতন্ত্রের ইশতেহার থেকে শুরু করে যেকোনো বক্তৃতা, যেকোনো পাঠ পড়লেই একটা বিষয় খুবই স্পষ্ট বোঝা যায়- সমাজতন্ত্র বিষয়টাই দাঁড়িয়ে আছে শ্রম আর শ্রমিকের ন্যায্যতার খুঁটিতে ভিত্তি করে। পৃথিবীব্যাপী সমাজতন্ত্রের যেকোনো আন্দোলন শেষ পর্যন্ত শ্রমিকের আন্দোলন, শ্রমিকের অধিকার আদায়ের আন্দোলন।

সমাজতন্ত্রের দোহাই দিয়ে পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত যত শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে, জনগণের কাছে তাদের প্রত্যেকের প্রধান প্রতিশ্রুতিই ছিল শ্রম আর আর শ্রমিকের নায্যতা ও সাম্য প্রতিষ্ঠিত করা। কিউবাও তার বাহিরে নয়।

কিউবায় সম্প্রতি শ্রমিক বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এই শ্রমিক বিক্ষোভের চিত্রটা আসলে কেমন তা বোঝার জন্য নিরপেক্ষ কোনো সূত্র আমাদের কাছে নেই। কিউবায় নেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের উন্মুক্ত বিচরণ ও সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ। কিউবার পরিস্থিতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রায় প্রত্যেকটাই পশ্চিমা কর্পোরেট সংবাদমাধ্যম। সমাজতন্ত্র সংশ্লিষ্ট যে কোনও কিছু নিয়েই যাদের পক্ষপাতের ইতিহাস খুবই পুরনো। এর বাহিরে আমরা ধরতে পারি গার্ডিয়ানের মতো নন কর্পোরেট সংবাদমাধ্যমকে। কিন্তু অতীতে কিউবার পক্ষে জনগণের সংহতি সমাবেশের ছবি সম্প্রতি কিউবার সরকার বিরোধী ছবি বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করে ইতিমধ্যে গার্ডিয়ান নিজেও তার পক্ষপাত প্রকাশ করে দিয়েছে। সুতরাং কিউবা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা যতটুকুই জানি, তার পুরোটাই আসলে পশ্চিমা গণমাধ্যমের চোখ দিয়ে জানা আর সেই জানার উপর ভিত্তি করেই আমাদের পক্ষ, বিপক্ষ, প্রতিপক্ষ আর নিরপেক্ষতা।

এইবার আসি কিউবার শ্রমিক বিক্ষোভের আলাপে। যেই বিক্ষোভকে অনেকেই অবহিত করছেন মার্কিনদের প্ররোচিত বিক্ষোভ হিসেবে। এই অবহিত করার ব্যাপারটা নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকে যায়। যদি ধরেও নেওয়া হয় মার্কিন মুল্লুকের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে কিউবার জনসাধারণ, তাতেও আসলে একটু খটকা থাকে। কারণ কিউবার জন্মের দিন থেকেই ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যাচেষ্টা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক অবরোধ পর্যন্ত এমন কোনো ষড়যন্ত্র নেই যা আমেরিকান সরকার করার চেষ্টা করেনি। তাতেও আমেরিকা খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি কখনও। বিপুল সংখ্যক জনগণকে রাজপথে নামাতে পারেনি কিউবার সরকারের বিপক্ষে।

তো এবার এমন কী পরিস্থিতি আসলো যে আমেরিকার প্ররোচনায় পথে নেমে পড়েছে হাজারো মানুষের ঢল! ঘটনাটা আসলে এখানেই। কিউবায় এবারের আন্দোলনে আসলে নতুন করে মার্কিন প্ররোচনার দরকারই ছিল না।

আমেরিকান অবরোধের পর থেকে কিউবার বন্দর কেন্দ্রিক বাণিজ্য প্রায় অচল অবস্থাতেই ছিল। তাও যা টুকটুক জাহাজ ভিড়ত, করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটাও আপাতত বন্ধ। ফলে আমদানি-রপ্তানির যে নুন্যতম সুযোগ ছিল, সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে উন্নত বিশ্বের চাপিয়ে দেওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের টানা দুই মৌসুম জুড়ে জমিতেই নষ্ট হয়েছে কিউবার লাখ লাখ টন ফসল। কৃষক ফসল বাজারজাত করতে পারেনি। আরও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কিউবার অর্থনীতি। শুরু হয়েছে খাদ্য সঙ্কট দেখা দেওয়ার সম্ভবনা। কৃষি আর রপ্তানির বাহিরে কিউবার অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতো দেশটির পর্যটন শিল্প। করোনায় সেটাও ধসে গেছে।

মানে কৃষকের ঘরে খাবার পৌঁছায়নি, শ্রমিকেরা কাজ হারিয়েছে, কোনও দেশ খাদ্য সহায়তা পাঠাচ্ছে না, ওষুধ পাঠাচ্ছে না, অর্থনীতি প্রায় বিকল অবস্থার দিকে আগাচ্ছে।

বিক্ষোভের পরিস্থিতি তৈরি হবার জন্য এই কারণগুলোই যথেষ্ট। যেই কারণগুলোর পেছনে দায়ী মার্কিন অর্থনৈতিক অবরোধ। আমেরিকা সেই কারণ উপেক্ষা করে বিক্ষোভের আগুনে বড়জোর ঘি ঢালতে পারে।

তবুও কিউবার এই শ্রমিক বিক্ষোভ অন্যায্য নয়। কেন ন্যায্য বলছি ও কেন গড়ে উঠেছে এই আন্দোলন তা বুঝতে হলে খুব ছোট্ট করে তৃতীয় বিশ্বের অর্থনীতির সাথে কিউবার অর্থনীতির পার্থক্যটা বুঝতে হবে আমাদের।

বিশ্ব অর্থনীতি চলছে পুঁজির শোষণের (Exploitation) চালিকা শক্তিতে। যার একটা বড় উদাহরণ হচ্ছে মূল্যহীন মুদ্রা ছাপানো এবং শ্রমের বিপরীতে সেই মুদ্রা বিতরণ করা। মূল্যহীন বলছি কারণ, আমাদের হাতে থাকা মুদ্রাগুলো শেষপর্যন্ত সম্পদের একটা স্মারক। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সেই স্মারকের পেছনে রাষ্ট্রীয় কোনো সম্পদ আসলে থাকে না। মুদ্রাগুলো জাল না হলেও আদতে তা থাকে মূল্যহীন কাগজ। আর সেই মূল্যহীন কাগজকে সামঞ্জস্যপূর্ণ  করে তুলতে দ্রব্যমূল্য থেকে শুরু করে বাড়িয়ে তোলা হয় সব কিছুর দাম। রাস্তায় হাঁটা থেকে শুরু করে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার প্রয়োজনে পর্যন্ত সেই মুদ্রাগুলো আবার রাষ্ট্রকেই ফেরত দিয়ে দিতে হয় আমাদের।

অন্যদিকে আছে তৃতীয় বিশ্বের শ্রমশক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য বৈদেশিক ঋণ। ভয়াবহ শর্তসাপেক্ষ সেইসব ঋণের মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি হলেও সেখানকার শ্রমিক থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ জনপদের কয়েক জনম কেটে যায় সেই মাথাপিছু ঋণের বোঝা থেকে বেরিয়ে আসতে। সেই ঋণ শোধ করতে দ্রব্যমূল্য থেকে শুরু করে নাগরিক যেকোনো সেবার উপরেও অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশের বর্তমান মাথাপিছু ঋণ ৮৫ হাজার টাকা। যার ভোগান্তি ইতিমধ্যে আমরা খুব ভালোভাবে টের পাচ্ছি।

তো, যা বলছিলাম। তৃতীয় বিশ্বের অর্থনীতির থেকে কিউবার অর্থনীতি বেশ আলাদা। সেখানে না আছে পুঁজির শোষণ (Exploitation), না আছে কর্মসংস্থানের নামে নাগরিকদের ঘাড়ের উপর রাষ্ট্রীয় ঋণের চাপ। কিউবার অর্থনীতি চলে আরেকটু অন্যভাবে। সেখানে শ্রমের ফসল বাজারজাত হলে পারিশ্রমিক পায় তারা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কিউবার শ্রমের বাজার বৈচিত্রমুখী নয়। হাতেগোনা কেবল কয়েক ধরনের শ্রম ও কয়েক ধরনের শ্রমের বাজার রয়েছে দেশটিতে। এবং সেই শ্রমের বাজার ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বিষয়টার মতো ডিজিটাল বাজার না। সেই বাজার গায়-গতরে খেটে শ্রমের আর ঘামের বাজার।

করোনায় যখন সারা পৃথিবীর মানুষ ও অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়েছে, বিপর্যস্ত হয়েছে কিউবাও। তবে অন্যান্য দেশ সেই পরিস্থিতি থেকে নানানভাবে পুনরুদ্ধারের পথ খুঁজে পেলেও কিউবার আসলে কোনও পথ নেই। একদিকে যুগের পর যুগ ধরে মার্কিন অর্থনৈতিক অবরোধ, একদিকে বন্ধুহীনতা, করোনা পরিস্থিতি ও টিকাহীনতা। টিকার রাজনীতিতে কিউবার অবস্থান এতটা অসহায় যে, শেষপর্যন্ত সম্পূর্ণ বিপরীত আদর্শের আরেক রাষ্ট্র- মার্কিন অর্থনৈতিক অবরোধে থাকা ইরানের সাথে মিলে টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করেছে তারা। যদিও সে চেষ্টা ফলপ্রসুহয়নি খুব একটা।

তো এই বিপর্যয়ে কিউবার বাজার কমেছে। শ্রমিক কাজ হারিয়েছে। রেশনের বাহিরে বেড়েছে দ্রব্যমূল্য। অন্যদিকে টিকার অভাবে ধুঁকছে মানুষ। বিক্ষোভের জন্য এই কয়টা কারণই আসলে যথেষ্ট। এবং আন্দোলনকারীদের দাবিদাওয়াও এই সব সংশ্লিষ্টই।

এই সমস্যা তো আসলে শ্রমিকের সমস্যা না, এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার দায় রাষ্ট্রের। বিশেষ করে সমাজতন্ত্রের প্রতিশ্রুতিতে দেওয়া রাষ্ট্রের। যদিও প্রধান সত্য এটাই যে, এই সব সমস্যার পেছনেই রয়েছে মার্কিন অবরোধ।

জনগণ সমস্যায় পড়লে সেই সমস্যার কথা সরকারকেই জানাবে সেটা স্বাভাবিক। সেখানে একজন শ্রমিকও যদি কর্মহীন থাকে তার সম্পূর্ণ অধিকার আছে বিক্ষুব্ধ হবার এবং রাষ্ট্রের ব্যর্থতার কথা রাষ্ট্রকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানোর। মানুষের অধিকারে বিশ্বাসী বিশ্বের যে কোনও মানুষেরই নৈতিক দায়িত্ব শ্রমিকের সেই দাবির সাথে সংহতি জানানো।

কিন্তু অন্তত বাংলাদেশের দৃশ্যপটে আমরা এর সম্পূর্ণ ভিন্নচিত্র দেখছি। আমরা দেখছি বিক্ষুব্ধ শ্রমিকের প্রতি নয়, বরং বিক্ষুব্ধ শ্রমিককে দমন করতে চাওয়া রাষ্ট্রের প্রতি এদেশের বাম-প্রগতিশীল মহলের সংহতি এবং যেকোনো যুক্তির মুখে ‘মার্কিন ষড়যন্ত্রে’র স্কচটেপ মেরে দেওয়ার চেষ্টা। মার্কিনরা কিউবার জন্য সমস্যাই। কিন্তু সেই সমস্যার জন্য কিউবার সাধারণ জনগণের নিজের অধিকার নিয়ে কথা বলার অধিকার বিলুপ্ত হয়ে যায় না।

মার্কিনদের আলাপে যদি আসি তাহলে এক কথায় বলতে হয়, আমেরিকা রাষ্ট্রের কোনও নৈতিক আধিকারই আসলে নেই কিউবার এই শ্রমিক সঙ্কট নিয়ে কথা বলার। কিউবায় তারা অবরোধ জারি  করে রেখেছে। অবরোধ জারি করার পরেও সেখানে বেকারত্বের হার সব মিলিয়ে ৪-৫%, অন্যদিকে খোদ আমেরিকায় বেকারত্বের হাত ১১ % এর উপরে। যা কিনা পৃথিবীর অন্যতম অনিরাপদ রাষ্ট্র আফগানিস্তানের বেকারত্বের হারের সমান।

জিডিপির আলাপে যদি আসি তাহলে মাত্র ১ কোটি জনসংখ্যার দেশটির জিডিপি প্রায় ১৬০ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশের জিডিপি ৩৫৩ বিলিয়ন ডলার। মানে মার্কিন অবরোধে থেকেও কত উন্নত এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের তুলনায় কিউবা তার অর্থনীতিতে এগিয়ে সেটা তুলে ধরতেই এই তুলনা দুটো দেখানো হলো।

তো মার্কিনদের নাক গলানোর বাহানা ছেড়ে আবার একটু মূল আলাপে ফেরা যাক।

কী এমন কারণ হতে পারে যার জন্য কিউবার শ্রমজীবী সংগ্রামী মানুষের স্লোগানে নিজেদের কেবলা না খুঁজে কিউবার সরকারের প্রতি আস্থা রাখছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিবিধ অঞ্চলের বামপন্থী সংগঠনগুলো! তাও এমন একটা সময় যখন ঘোষণা দিয়ে সরকারপন্থী নাগরিকদের লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে শ্রমিকদের ন্যায্য বিক্ষোভ দমন করতে? যে প্রবণতা সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল তুরস্কের ফ্যাসিস্ট তাইয়েপ এরদোয়ান বিরোধী অভ্যুত্থানের সময়। যখন এরদোয়ান নিজের গদি রক্ষা করতে জনগণকে লেলিয়ে দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর একটা অংশ ও এরদোয়ান বিরোধী শক্তিকে দমন করতে।

প্রাথমিক কারণটা তো খুবই স্পষ্ট- আমেরিকা বিরোধিতার অবস্থান থেকে। সে অবস্থান অমূলক নয়। সে অবস্থানই বরং আরও শক্ত এবং আরও শক্তিশালী হওয়া উচিৎ। কিন্তু এই একটা কারণই শেষ কারণও নয়। আরো অনেক কারণের মাঝে অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে সমাজতন্ত্রের বিজ্ঞাপন হারাবার ভয়।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও চায়নার সম্প্রসারণবাদী রূপ ধারণের পর কিউবাই বিশ্বের বাম মহলের কাছে সমাজতন্ত্রের একমাত্র বিজ্ঞাপন। সমাজতান্ত্রিক কায়দায় স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্র পরিচালনার জীবন্ত একমাত্র উদাহরণ। বাম মহলের কাছে সমাজতন্ত্রের শরীরের মুকুট কিউবা। এই মুকুট তারা হারাতে চায় না। শরীর জুড়ে যত ক্ষতই থাকুক, তবু মুকুট ধরে রাখাই প্রধান লক্ষ্য। এমনকি মুকুট বাঁচাতে গিয়ে যদি পায়জামাও খুলে যায়, তবুও। যেহেতু এই মুকুট তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্যের শেষ বিজ্ঞাপন। তাই যখন এরদোয়ান কায়দায় কিউবার সরকার শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করছে (যে আন্দোলন আদতে কোনো প্রতিবিপ্লবী আন্দোলনও নয়), তখনও তাদের সমর্থন কিউবা সরকারের প্রতিই।

প্রতিবিপ্লবী প্রবণতা বলে যদি কিছু থাকে, তবে তাদের এই অবস্থানই সবচেয়ে বেশি প্রতিবিপ্লবী। যেখানে তারা শ্রমিকের মাঝে নয়, বরং রাষ্ট্রের মাঝে সমাজতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার ভাবনায় আছে। খুব নিকট অতীতে নজর দিলেও দেখা যায় এই প্রবণতাই শেষপর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের অন্যতম কারণ। এই প্রবণতাই চীনকে এক আগ্রাসী সম্প্রসারণ যন্ত্রতে পরিনত করেছে। আর যদি তারা মনেই করে থাকে তাদের প্রিয় সরকারের বিরুদ্ধে কেউ ন্যায্য কিছু বললেই তাকে দমন করা ফরজ, তাহলে ফ্যাসিস্ট কিংবা স্বৈরাচারের সাথে তাদের কোনো পার্থক্য আসলে থাকে না। অথচ তারাই সারা বিশ্বে ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

সমাজতন্ত্র টিকে থাকে মূলত শ্রমিকের অধিকার টিকে থাকার উপর, শ্রমিকের স্বতঃস্ফূর্ত কণ্ঠস্বরই শেষপর্যন্ত সমাজতন্ত্রের স্লোগান। শ্রমিকের অধিকারই সমাজতন্ত্রের শেষ কথা। সমাজতন্ত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কোনো সরকার যদি শ্রমিকের ন্যায্য দাবী রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তবে নিজ জনগণের কাছে সেই ব্যর্থতা স্বীকার করা উচিৎ। আলাপে আলোচনায় সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা উচিৎ। তা না করে যখন সমাজতন্ত্র রক্ষার নামে শ্রমিক দমনের মতো নেমকহারামি শুরু হয়, তখন মনে করিয়ে দেওয়া শ্রেয়- একদিন সেই দেশে বিপ্লব হয়েছিল।

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

শুদ্ধস্বর
error: Content is protected !!