ব্যাপক দুর্নীতি, তথ্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এবং নিপীড়নের মাধ্যমে যে কোনো প্রকার ভিন্নমত দমন করা এগুলো প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের শাসনকাঠামোতে জবাবদিহিতার কোনো ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশে বিদ্যমান গণতান্ত্রিক পশ্চাৎপদতা এই পরিস্থিতি নির্মাণ করেছে, মহামারির কারণে যা আরও বেগবান হয়েছে কেবল। জাতির ভবিষ্যত সম্পর্কে তা কোনো ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেয় না। শুধুমাত্র মৃত্যু এবং অর্থনৈতিক লোকসানের দিক থেকেই নয় বরং একটি কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দিয়ে শাসনব্যবস্থার দিক থেকেও দেশের একটি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করে যেতে পারে এই মহামারি।
অনুবাদ : তানভীর আকন্দ
ভূমিকা
২০১১ সাল থেকে, বিশেষ করে ২০১৪ সালের একদলীয় নির্বাচনের পর থেকেই বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পশ্চাৎপদতার একটি ধীর ও ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। যেইসব দেশ নাগরিক অধিকার আর বাকস্বাধীনতার নাটকীয় বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে কোভিড ১৯-এর মতো বৈশ্বিক মহামারির পর বাংলাদেশ সেইসব দেশের কাতারে এসে সামিল হয়েছে। অনেক দেশেই জনস্বাস্থ্যের অজুহাত তুলে নতুন নতুন আইন পাস করা হয়েছে, যা সরকারগুলোকে সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী করে তুলেছে। তাদেরকে অতিসামান্য অথবা কোনো প্রকার জবাবদিহিতারই সম্মুখীন হতে হয় না। বেশ কিছু দেশের সরকার সমালোচনাকারীদের দমন করতে উদ্যত হয়েছে। মার্চের শুরু থেকেই বাংলাদেশ সরকার বিদ্যমান আইনি কাঠামো ও বিচারবহির্ভূত নানা রকম প্রক্রিয়ায় সমালোচনাকারীদের উপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিরোধীদল ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ার ফলে এবং ২০১৮ সালের পরিকল্পিত নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যত একদলীয় ব্যবস্থার অধীন হয়ে পড়ে বাংলাদেশের সংসদ, যে কারণে কার্যকর কোনো জবাবদিহিতার ব্যবস্থাই আর বিদ্যমান নেই এখানে। মহামারির কারণে নাগরিকদের উপর আরও বেশি বিধিনিষেধ আরোপের অজুহাত হাজির হয়েছে, ফলে এই পশ্চাৎপদতার গতি আরও বেশি ত্বরাণ্বিত হয়েছে। মার্চ মাসে যখন সংক্রমণের প্রথম নজির পাওয়া যায় এবং প্রথম মৃত্যুর খবর শোনা যায় তখন থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে সমালোচনাকারীদের প্রতি অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পেতে থাকে, যদিও এমনকি মহামারি মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকা ছিল যাচ্ছেতাই, দুর্বলভাবে পরিকল্পিত এবং চরম দুর্নীতিগ্রস্থ। এই বৈশ্বিক মহামারির আগ্রাসনের মাঝে বাংলাদেশের জনগণ দুর্নীতির এক মহাযজ্ঞের সাক্ষী হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের জবাবদিহিতা অভাব ও বিচারহীনতার কারণে। একই সাথে তারা সাক্ষী হচ্ছে তথ্যের প্রচার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা পদক্ষেপ ও নাগরিকদের উপর সরকারের নানারকম দমনমূলক আচরণের।
অন্য অনেক দেশের মতোই বাংলাদেশেরও এই বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলায় তেমন একটা পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা কোভিড ১৯-এর বিপদকে যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে দেখেনি এবং দাবি করেছে যে বাংলাদেশ মহামারি মোকাবিলায় প্রস্তুত।১ অস্বীকৃতি, ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষানিরীক্ষার পরিমাণ কমিয়ে আনা, কর্মকাণ্ডে সমন্বয়হীনতা এবং আত্মতুষ্টি এসবই ছিল মার্চ ও এপ্রিলের শুরুর দিক পর্যন্ত সরকারের প্রতিক্রিয়া। কিন্তু খুব দ্রুতই এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে বিগত কয়েক বছরের অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে২ জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংসের মুখে এসে পড়েছে।৩ হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে রোগীদের, স্বাস্থ্যকর্মীরা অভিযোগ করছে সুরক্ষাসামগ্রীর অপ্রতুলতা নিয়ে।৪ মার্চের শেষের দিকে এসে দায়সারা গোছের কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করা হলেও ততদিনে বিশেষ করে সমাজের দরিদ্রতম গোষ্ঠীর মধ্যে মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাব অবসম্ভাবী হয়ে উঠতে থাকে।
দুর্নীতির মহাযজ্ঞ
সংক্রমণের হার ক্রমাগত বাড়তে থাকলে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়লে, পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যার মধ্যে রয়েছে মার্চের শেষ ও এপ্রিলের শুরুতে ১১ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ। এই প্যাকেজগুলোতে মূলত ব্যবসায়িক খাতে ঋণ প্রদানের কথা থাকলেও সবচেয়ে বেশি যারা ক্ষতিগ্রস্থ তাদের এর থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।৫ এই প্রণোদনা প্যাকেজগুলোতে ভুল জায়গায় গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এবং পদ্ধতিগত নানারকম অস্পষ্টতা রয়ে গেছে এগুলোর মধ্যে। সরকার ইতোমধ্যেই সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিকরণ, খাদ্য সহায়তা প্রদান, এবং ভর্তুকি মূল্যে চাল প্রদানের উদ্যেশ্যে খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় কর্মসূচি বৃদ্ধি করাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেগুলো প্রশংসনীয়। কিন্তু ত্রাণ কর্মসূচি শুরু হতে না হতেই ত্রাণ সাহায্যের জন্য দেয়া খাদ্য সামগ্রীর লাগামহীন চুরির খবর আসতে থাকে পত্রপত্রিকায়।৬ সরকারি কর্মকর্তাগণ, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী এবং জনপ্রতিনিধিগণ ত্রাণসামগ্রী আত্মসাতে জড়িত হয়ে পড়ে। ১৮ই জুলাইয়ের মধ্যে, স্থানীয় পর্যায়ের ১১১জন নির্বাচিত প্রতিনিধিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়, যাদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি। তিন মাসের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ সংক্রান্ত দুর্নীতির প্রায় ১০০০টি সুনির্দিষ্ট ঘটনার কথা উঠে এসেছে পত্রপত্রিকায়। সংবাদপত্র অনুযায়ী থানায় ৬০০ অভিযোগ দায়ের করা হয় এবং গ্রেফতার করা হয় ৫৯১ জনকে। ক্ষমতাসীন দলের প্রায় ১০০ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয় এর সাথে জড়িত থাকার অপরাধে। ত্রাণের দাবি নিয়ে এবং দেশব্যাপী ঘটতে থাকা অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিবাদ করতে থাকে এবং শত শত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।
কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থদের নগদ অর্থ প্রদানের কর্মসূচিগুলোতে যা ঘটতে দেখা গেছে তার তুলনায় এসব চুরির ঘটনাতো কিছুই না। যেখানে বিশ্বজুড়েই ক্ষতিগ্রস্থদের নগদ অর্থ প্রদানের কর্মসূচি ছিল সরকারগুলোর প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর একটি মূল বৈশিষ্ট্য সেখানে বাংলাদেশে প্রণোদনা প্যাকজেগুলোর ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্তও। সরকারের পক্ষ থেকে অতি অসহায় ৫০ লক্ষ লোককে মোবাইল ফিন্যান্সিং সার্ভিসের মাধ্যমে এককালীন ২৫০০ করে টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু সাহায্যপ্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করতে গিয়ে যেন ত্রাণ বিতরণের মতোই দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি ঘটে, ক্ষমতাসীন দলের কর্মী, তাদের পরিবার, স্থানীয় কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের নাম ঢুকানো হয় তালিকায়। এরকম প্রায় ডজনখানেক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে যেখানে প্রভাবশালী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার একটিমাত্র নম্বরই ডজনখানেক বা কখনো কখনো শ’খানেক নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
এতেও যেন সন্তুষ্টি আসেনি, এপ্রিলের মধ্যেই জানা যায় যে সরকার অনুমোদিত একটি কোম্পানি সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের জন্য এন৯৫ মাস্কের বদলে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করেছে, যেই কোম্পানির সাথে আবার ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া যায়।৭ নকল এন৯৫ মাস্ক সরবরাহ নিয়ে একটি তদন্তের ফলাফলে বলা হয় যে এটি একটি ‘পরিকল্পিত প্রতারণা এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।“৮ কিন্তু এই প্রতিবেদন আর জনসম্মুখে আসেনি এবং এখন পর্যন্ত কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি। পত্রপত্রিকা, সামাজিক মাধ্যম এবং জনগণের আলাপআলোচনায় ব্যাপক সমালোচনাও এই চর্চাকে দমিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। জুলাইয়ের মধ্যেই আমরা জানতে পারি যে একজন আওয়ামী লীগ নেতার কোম্পানি এইসব নকল এন৯৫ মাস্ক সরবরাহ করেছে।৯
লাগামহীন চুরি ও আত্মসাতের পাশাপাশি ক্রমাগত হতবুদ্ধিকর কিছু খবরও আসতে থাকে যেই খবরগুলো দুর্নীতির কারণে জনস্বাাস্থ্যের ব্যাপক বিপর্যয়কেই শুধু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে তাই নয় বরং এই অসৎ কর্মকাণ্ডগুলো কীভাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে পরিচালিত হয়েছে তাকেও স্পষ্ট করে দেখিয়েছে। জুলাই মাসেই জানা যায় কোভিড ১৯ এর চিকিৎসার জন্য সরকার অনুমোদিত একটি হাসপাতাল বড়সড় প্রতারণার সাথে জড়িত। হাসপাতালটি একজন আওয়ামী লীগ কর্মীর মালিকানাধীন, যার সাথে উপরমহলের ভালো যোগাযোগ রয়েছে।১০ হাসপাতালটি মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স নিয়ে পরিচালিত হলেও লাভজনক সব চুক্তিও সরকারি যন্ত্রপাতি পেয়ে আসছিল। একইরকম অভিযোগের ভিত্তিতে অন্তত আরও দুটি হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া হয়। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহে দুর্নীতি১১এবং দাতাগোষ্ঠীর অর্থায়নে চালু হওয়া জরুরি প্রকল্পগুলোতে কেনা সরঞ্জামের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যের কথা সামনে আসে। কিন্তু সমালোচনার মুখে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (DGHS) মহাপরিচালকের পদত্যাগ১২ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং পরিকল্পনা ও গবেষণা বিভাগের পরিচালনকের অপসারণ১৩ব্যতিত এই ব্যাপক দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে তেমন কোনো চেষ্টাই দেখা যায়নি।
তথ্য নিয়ন্ত্রণ
মহামারির প্রকোপ সম্পর্কে তথ্য নিয়ন্ত্রণ সরকারের একটি প্রধান কৌশলে পরিণত হয়, যাতে করে মাহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারি কৌশল যে সফল তা প্রচার করা যায় এবং একই সাথে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়া দুর্নীতির খবর ধামাচাপা দেয়া যায়।
ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে দৈনিক ব্রিফিংয়ের ব্যবস্থা করা হয় যেখানে বিভিন্ন তথ্য প্রদান এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক। কিন্তু প্রেস ব্রিফিংয়ে দেয়া পরিসংখ্যান আদৌ পূর্ণাঙ্গ কিনা সে ব্যাপারে সংশয় দেখা দেয়। যেখানে উল্লেখযোগ্যহারে কম মাত্রায় পরীক্ষা করা হয়েছে সেখানে এই সংখ্যাকে আদৌ নির্ভরযোগ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায় কিনা সে ব্যাপারে প্রশ্ন উঠে আসে। কোভিড ১৯ এর সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে মার্চের ২৩ তারিখে এই ব্রিফিং অনলাইন ফরমেটে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠার সাথে সাথে, স্থাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যউপাত্ত সাংঘর্ষিক হয়ে উঠতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে, অনলাইন ব্রিফিং বাদ দিয়ে ‘দৈনিক স্বাস্থ্য বুলেটিন’ চালু করা হয় যেখানে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ রাখা হয়নি। দৈনিক স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্যের বাইরে তেমন কিছুই পাওয়া যায় না– মোট কতগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে, পরীক্ষা উপকরণ, নতুন শনাক্ত কতজন, কতজনকে কোয়ারেনটাইনে পাঠানো হয়েছে ইত্যাদি। সরকারি হটলাইনে কতগুলো কল করা হয়েছে সেটারও উল্লেখ করা হতো। ক্রমেই অবশ্য ব্রিফিং থেকে নানা বিষয় বাদ পড়তে থাকে। পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত ল্যাবরেটরির সংখ্যা বেড়েছে, এপ্রিলের ১৪ তারিখ পর্যন্তও বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোর হিসাব-নিকাশ প্রদান করা হয়েছে। এপ্রিলের ২৩ তারিখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি মিডিয়া সেল গঠন করে যার কাজের মধ্যে ছিল অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ।১৪ আগস্টের ১১ তারিখ সরকার ঘোষণা দেয় যে দৈনিক অনলাইন ব্রিফিং বন্ধ করে দেয়া হবে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় তথ্যউপাত্তসমেত দৈনিক একটি প্রেস রিলিজ প্রকাশ করবে।১৫
সরকারি হিসাবে কোভিড ১৯ এর মৃত্যু তালিকায় শুধুমাত্র লক্ষণ নিয়ে যারা মারা গেছে তাদের এড়িয়ে যাওয়া হয়। ১৮ই জুলাই পর্যন্ত করোনার লক্ষণ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৮৭৪। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ২৭৫১তে, যার মধ্যে লক্ষণ নিয়ে যারা মারা গেছে তাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে।১৬ জুন মাসে আইইডিসিআর এবং বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে মারাত্মক গড়মিল দেখা যায়, যা সরকারি তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে।১৭
সরকার শুধু যে তথ্যপ্রদান করাই কমিয়ে দিচ্ছে তাই নয়, বরং যারা সরকারি বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করে তথ্য প্রকাশ করেছে তাদেরকেও কঠোর হস্তে দমন করেছে। মার্চ মাসে একটি সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার১৮ এবং সকল সরকারি হাসপাতালের নার্সদের গণমাধ্যমের সাথে কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার।১৯ গুজব ছড়ানোর অভিযোগে একজন ডাক্তারকে জেলে পাঠানো হয়।২০ এপ্রিল মাসে একজন ডাক্তারকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় পিপিই-এর অপর্যাপ্ততা নিয়ে অভিযোগ করার কারণে।২১ মে মাসে সরকারি কর্মচারীদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো কর্মকর্তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়- এমন কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করা যাবে না।২২ ৩০টি টেলিভিশন চ্যানেলের বিষয়বস্তু মনিটর করতে ১৫ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয় সরকার২৩, সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে যেই সিদ্ধান্ত পরে বাতিল করা হয়।২৪
নিপীড়ন: সমালোচকের মুখ চেপে ধরা
তথ্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সরকার সমালোচনাকারীদের পেছনে লাগে, দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছে যেসব সাংবাদিক তাদেরকে টার্গেট করা হয়। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এমনকি ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরাও সামাজিক মাধ্যমে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের জন্য সরকারের আক্রমণের শিকার হয়। সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রণীত নিপীড়ক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার করছে। খুবই অস্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত এই আইন; তাতে নানা ধরণের ফাঁকফোকর রয়ে গেছে। ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার ও কোনো আইনি সহায়তা ছাড়াই যা খুশি তাই শাস্তি প্রদান করার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে এই আইনের মাধ্যমে।
মার্চ থেকে জুনের মধ্যে অন্তত ১০১টি অভিযোগের ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়েছে, যেখানে ১৭৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। মিডিয়া ওয়াচডগ আর্টিকেল ১৯-এর হিসাব অনুযায়ী অভিযুক্তদের মধ্যে ৪৭জনই সাংবাদিক, এদের মধ্যে ২৩ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এছাড়াও মার্চ থেকে জুনের মধ্যে ৬১ জন সাংবাদিক আক্রমণের শিকার অথবা লাঞ্চিত হয়েছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অথবা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের দ্বারা। কিন্তু শুধু সাংবাদিকরাই যে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তাই নয়। সব মিলিয়ে ৮ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়, যার মধ্যে একজন কলেজের, ৪জন বিশ্ববিদ্যালয়ের, ২জন উচ্চমাধ্যমিক ও একজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। কার্টুনিস্ট ও ব্লগাররাও এই তালিকা থেকে বাদ পড়েননি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নির্বিচার ব্যবহারের নমুনা পাওয়া যায় ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে ‘কটুক্তি’ করার অভিযোগে ১৫ বছর বয়সের এক বালকেকে গ্রেফতারের মাধ্যমে। এই মহামারির মাঝেও তাকে কিশোর সংশোধনকেন্দ্রে পাঠানো হয়, যেখানে সরকারের উচিত ছিল জনবহুল জেলখানাগুলো থেকে কারাবন্দিদের মুক্তি দেয়া।২৫ জুনের শুরুতে ১১
জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, যার মধ্যে একজন কার্টুনিস্ট রয়েছেন। অন্যান্য অভিযোগের মধ্যে একটি অভিযোগ ছিল শেখ মুজিবর রহমানের ‘ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা“।২৬ অনেক ক্ষেত্রেই কোনোরকম পরিচয়প্রদান বা ওয়ারেন্ট ছাড়াই সাদা পোশাকে পুলিশ এসে অভিযুক্তদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সমাজ সংস্কারমূলক একটি সংগঠনের কর্মী দিদারুল ভূঁইয়াকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সরকারি সংস্থাগুলো প্রাথমিকভাবে তাকে গ্রেফতারের খবর অস্বীকার করতে থাকে।২৭ গ্রেফতারের এই প্রক্রিয়া শুধু যে গ্রেফতার সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তাই নয় বরং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে যে জোরপূর্বক গুমও করে ফেলা হতে পারে তারই ভয়াবহ বার্তা প্রদান করে। বিগত কয়েক বছরে জোরপূর্বক গুমের ঘটনা খুবই সাধারণ একটি চিত্রে পরিণত হয়েছে, যার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দায়ী করা হয়। ২০১৯ সালে ৩৪ জন গুম হয়েছে এইভাবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এই ব্যাপক ব্যবহারের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা, এবং তা সফলও হচ্ছে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে আইনটি প্রণয়নের পর থেকেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলাগুলো থেকে দুটি বিষয় বেশ সহজেই চোখে পড়ে। প্রথমত, এর বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের দায়ের করা, যেখানে তারা সরাসরি আক্রান্ত নয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ৫০টি মামলা দায়ের করে এবং ৪০টি মামলা দায়ের করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে কাউকে মামলা করার অধিকার প্রদান করা হয়েছে, এমনকি ব্যক্তিগতভাবে বাদী নিজে ক্ষতিগ্রস্থ না হলেও। যার ফলে পার্টি কর্মী ও সরকারি সুবিধাভোগীদের হাতে সেন্সরশিপ আরোপের ক্ষমতাইতুলে দেয়া হয়েছে। দুঃখজনকভাবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনগুলো ক্ষমতাসীন দলের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে মামলা দায়ের করছে। ভিন্ন ভিন্ন দুটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজেদের প্রভাষকের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা দায়ের করেছে২৮ এবং তাদের বরখাস্তও করেছে।২৯ অভিযুক্তদের দুজনই জুলাইয়ের শেষ পর্যন্তও কারাগারে বন্দি ছিলেন।
দ্বিতীয়ত, এই মামলাগুলো দায়ের করা হয় ক্ষমতাশীল দলের নেতৃবৃন্দদের মানহানি করার অভিযোগ তুলে। বিগত কয়েক মাসে অন্তত ৬০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের অথবা স্থানীয় প্রশাসনের মানহানি করার অভিযোগ তুলে। এই মামলাগুলোর মধ্যে ২৭টি মামলা দায়ের করা হয় প্রধানমন্ত্রীর মানহানি বা তাকে সমালোচনা করার অভিযোগে, ১৪ টি মামলা করা হয় সংসদ সদস্যদের মানহানির অভিযোগে। এই মামলাগুলো শুধু যে অভিযুক্তদের জেলে পাঠাচ্ছে এবং আত্মরক্ষার সুযোগটাও কেড়ে নিচ্ছে তাই নয়, বরং এই বার্তাও প্রেরণ করছে যে প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরা সমালোচনার ঊর্ধ্বে।
উত্তরণের পথ
ব্যাপক দুর্নীতি, তথ্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এবং নিপীড়নের মাধ্যমে যে কোনো প্রকার ভিন্নমত দমন করা এগুলো প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের শাসনকাঠামোতে জবাবদিহিতার কোনো ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশে বিদ্যমান গণতান্ত্রিক পশ্চাৎপদতা এই পরিস্থিতি নির্মাণ করেছে, মহামারির কারণে যা আরও বেগবান হয়েছে কেবল। জাতির ভবিষ্যত সম্পর্কে তা কোনো ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেয় না। শুধুমাত্র মৃত্যু এবং অর্থনৈতিক লোকসানের দিক থেকেই নয় বরং একটি কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দিয়ে শাসনব্যবস্থার দিক থেকেও দেশের একটি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করে যেতে পারে এই মহামারি।
যেদিকে এগুচ্ছে দেশ তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। বাংলাদেশের সরকার, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নাগরিক সমাজ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিপির মতো আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর এই প্রবণতাগুলোকে আমলে নিতে হবে, তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে এটা। বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের ভূমিকাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সীমাহীন এই দুর্নীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে জবাবদিহিতার অভাব। বিশেষ করে এই বৈশ্বিক মহামারির কালে দেশ যখন এক অর্থনৈতিক সংকটের মুখে তখন বিদ্যমান ব্যবস্থাপনার বাইরে একটি জবাবদিহিতার ব্যবস্থা তৈরি করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বাজেট বাস্তবায়ন তদারকি করার জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের প্রস্তাব করেন।৩০ আমি আরো একধাপ এগিয়ে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন জাতীয় কমিশন গঠনের প্রস্তাব করব। যেই কমিশন গঠিত হবে সিভিল সার্ভিসের সদস্য, সিভিল সোসাইটি সংগঠন, এনজিও, পলিসি রিসার্চ সংক্রান্ত সংস্থাগুলো, ব্যবসায়িক সংগঠন এবং বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে, যার কাজ হবে মহামারি চলাকালীন সময়ে ত্রাণ কর্মসূচি, সামাজিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক, প্রণোদনা প্যাকেজ এবং বৈদেশিক সাহায্যসমূহের তদারকি করা। ব্যবসায়িক সুযোগসুবিধা ও প্রণোদনাগুলো কেবলমাত্র দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক যোগাযোগ রয়েছে এমন ব্যবসায়ীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার কারণে দুর্নীতিতে বেসরকারি খাতে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি সাধন হচ্ছে। বেসরকারি খাতের টিকে থাকা ও সমৃদ্ধির জন্য একটি কার্যকর অর্থনৈতিক কর্মসূচি নেয়া জরুরি। তাদের উচিত দুর্নীতি বিরোধী শক্তিগুলোর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং স্বচ্ছতা নির্মাণে সিভিল সার্ভিসের সাথে কাজ করা। আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ যেমন সেন্টার ফর ইন্টারনেশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতো সংগঠনগুলোও এখানে অবদান রাখতে পারে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একত্র করে একটি ফোরাম গঠন করে যা এই গোষ্ঠীসমূহের চিন্তাভাবনা প্রকাশের জন্য একটি প্লাটফর্ম প্রদান করবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে এদেরকে সামিল করবে।
এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে মহামারি উপলক্ষ্যে আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীগুলো ৩.১ বিলিয়ন ডলার প্রদান করে বাংলাদেশকে।৩১ যা কিনা এখন পর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগীদের থেকে প্রাপ্ত রেকর্ড সংখ্যক বৈদেশিক আর্থিক সাহায্য।৩২ স্বাস্থ্যখাতে বিশ্বব্যাংক ও এডিপির সহায়তায় পরিচালিত প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন সরঞ্জামাদির জন্য ধার্যকৃত মূল্য ধরা হয়েছে বাজারমূল্যের চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি।৩৩ওয়েবসাইট তৈরিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে অস্বাভাবিক মাত্রায়। দাতা সংস্থা এবং সরকারের উচিত দুর্নীতি দমনের উদ্দেশ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ে তদারকির জন্য একটি ব্যবস্থা তৈরি করা।
ভিন্নমতের উপর চালানো ক্রমবর্ধমান নিপীড়ন বন্ধের পথে প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে কালক্ষেপন না করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা এবং পুরোপুরিভাবে এই আইনের বিলুপ্তি ঘটানো। নিগ্রহের হাত থেকে ব্যক্তিকে রক্ষা করা এবং সাইবার অপরাধ দমন ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল গোষ্ঠীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে আইন তৈরি করা যেতে পারে।আর এটা নিশ্চিত করতে হবে যে এই আইন ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি এবং কারও মুখ বন্ধের জন্য অস্ত্র হয়ে উঠবে না।
তথ্যসূত্র:
1 southasiajournal.net/coronavirus-what-ministers-leaders-said/
2 www.newagebd.net/article/105481/covid-19-exposes-healthcare-system-vulnerabilities
people/
5 www.atlanticcouncil.org/blogs/new-atlanticist/bangladeshs-covid-19-stimulus-leaving-the-most-vulnerable-behind/ 6 tbsnews.net/bangladesh/corruption/six-lakh-fake-beneficiaries-eat-food-aid-meant-poor-109810
7 www.newagebd.net/article/104844/bangladesh-govt-yet-to-initiate-probe-into-face-mask-scam
8 www.dhakatribune.com/bangladesh/corruption/2020/07/17/probe-body-n95-mask-scam-planned-a-punishable-offence 9 bdnews24.com/bangladesh/2020/07/24/bangladesh-arrests-ruling-party-linked-supplier-over-fake-n95-mask-scam
10 tbsnews.net/bangladesh/crime/rab-seals-regents-headquarters-hospitals-103054
11 tbsnews.net/bangladesh/corruption/acc-probe-alleged-corruption-n95-mask-ppe-purchases-91534
12 tbsnews.net/bangladesh/health/dghs-director-general-abul-kalam-azad-resigns-109702
13 businesspostbd.com/post/2503
15 www.thedailystar.net/coronavirus-latest-updates-in-bangladesh-33-die-2996-test-positive-1943233
16 peaceobservatory-cgs.org/uploads/cgsPDF/23-07-20-11-30-990-Covid19graphics%2015.pdf
17 medium.com/netranews/bangladesh-statistics-update-continuing-contradiction-between-who-and-government-covid-19- data-8023841f74b2
18 bdnews24.com/bangladesh/2020/05/03/bsmmu-doctors-forbidden-from-speaking-to-journalists-posting-on-social-media 19 bdnews24.com/bangladesh/2020/04/18/bangladesh-asks-nurses-not-to-speak-to-media-amid-covid-19-crisis
20 www.thedailystar.net/city/news/spreading-rumours-doctor-put-3-day-remand-1884649
21 www.dhakatribune.com/bangladesh/2020/04/30/mugda-general-hospital-director-made-osd
24 bdnews24.com/bangladesh/2020/03/26/information-ministry-cancels-order-on-media-monitoring-over-covid-19-rumours 25 gulfnews.com/world/asia/bangladesh-boy-15-arrested-for-facebook-criticism-of-pm-1.1593004320296
26 www.aljazeera.com/news/2020/05/bangladesh-cartoonist-writer-charged-anti-government-posts-200507102957266.html 27 www.dhakatribune.com/bangladesh/dhaka/2020/05/06/rab-allegedly-picked-up-rashtrochinta-organiser
29 www.thedailystar.net/arrested-under-digital-security-act-ru-teacher-suspended-1921309
30 cpd.org.bd/budget-fy2021-task-force-needed-to-improve-accountability-of-the-covid-budget/
31 preview.tinyurl.com/yyze4e9k
32 tbsnews.net/economy/foreign-aid-crosses-record-7b-amid-covid-19-106306 33 www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2020/06/04/918961
লেখাটি প্রথম Center for International Private Enterprise এর ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়।
মূল লেখার লিংক : www.cipe.org/wp-content/uploads/2020/08/Ali-Riaz.pdf
Ali Riaz is a Distinguished Professor of political science at Illinois State University, USA. He currently also holds the Thomas E Eimermann Professorship. His recent publications include Lived Islam and Islamism in Bangladesh (2017) and Bangladesh: A Political History since Independence (2016). He has coedited Political Violence in South Asia (2019), and Routledge Handbook of Contemporary Bangladesh (2016).
Tanvir Akanda (translator) studied physics in Shahjalal University of Science and Technology, Sylhet. Interested in literature, philosophy, linguistic, colonial history, decolonisation, anti-authoritarianism, comparative literature, translation studies. and various other things. Spends most of the time doing nothing and sometimes reading, writing, and translating texts.