স্প্যানিশ মাস্টার ফিল্ম মেকার এবং চিত্রনাট্যকার Pedro Almodovar-এর অন্যতম আলোচিত সিনেমা Volver (the return)। সিনেমাটি ২০০৬ সালে মুক্তি পায়।
Pedro Almodovar-এর গল্প বলার ঢং অনুযায়ী রঙ আর টুইস্টে বোনা সিনেমাটি জনরে’তে কমেডি ড্রামা হলেও, সিনেমা দেখা শুরু করার পর দর্শক ভাবতে পারে, তারা হয়ত একটি পরাবাস্তব সিনেমা দেখতে যাচ্ছে। কেননা দর্শক দেখে সিনেমার অন্যতম প্রধান চরিত্র রাইমুন্ডার (Penelope Cruz) বোন সোলে (Lola Duenas) তাদের মৃতা মা ইরিনে’কে( Carmen Maura) দেখতে শুরু করে। আবার অন্যদিকে রাইমুন্ডা তার খুন হওয়া স্বামীর লাশ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখে দিনের পর দিন, এমন পরিস্থিতিতে দর্শকের হরর সিনেমা দেখার প্রত্যাশা অযাচিত নয়। কিন্তু, যারা Almodovar’এর স্টাইলের সঙ্গে পরিচিত, তারা জানেন; তিনি কীভাবে হরর আর কমেডি’র বিক্রিয়ায় কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরতে পছন্দ করেন।
Almodovar’র সিনেমার প্রধান স্বাক্ষর হলো রঙের ব্যবহার। মূলত সিনেমায় রঙকে বিচিত্রভাবে উপস্থাপন করে তিনি দর্শকদের সাথে কাহিনির মূল সেতুটা নির্মাণ করে নেন। Volver-এর রঙের ব্যবহারের কথা যদি বলি, সিনেমার সর্বত্র লাল রঙের প্রাধান্য দেখা যায়। নারীর ভালোবাসা থেকে শুরু করে নারীর প্রতিশোধ বা প্রতিরোধে খুনের মতো সহিংসতা, নারীর শক্তি, ক্রোধ, আবেগ সব কিছুকে এক ফিতাতে তুলে ধরতে চেয়েছেন Almodovar লাল রঙ ব্যবহার করে।
Volver নারীকেন্দ্রিক সিনেমা, যেখানে নারীদের শেঁকড়, পারস্পরিক সম্পর্কগুলো নিয়ে কথা বলা হয়েছে। এই সিনেমায় বিভিন্ন চরিত্রের নারীরা তাদের নানান ভাবমূর্তি নিয়ে দর্শকের সামনে হাজির হয়েছে, কন্যা, জায়া জননী’র বাইরেও নারীদের আরও অনেক সামাজিক পরিচয় নিয়ে।
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নারীদের চিরন্তন বিপত্তি নিয়ে Volver-এর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। নারীদের পারস্পরিক সম্পর্ক, তাদের ঘিরে পুরুষের লালসা, যৌন নির্যাতন, মৃত্যু, ক্যান্সার, প্রতিশোধ, বিশ্বাসঘাতকতা, বিচ্ছেদ সর্বোপরি নারীর একার টিকে থাকার লড়াই বা এগিয়ে চলার পিচ্ছিল পথকে উপস্থাপন করা হয়েছে। সিনেমাটিতে সব ক’টি প্রধান চরিত্রই নারী, দু’ একজন পুরুষ চরিত্রের উপস্থিতি ছিল স্বল্প সময়ের জন্য। তারপরও পুরুষ দ্বারা নারীদের বারংবার প্রতারিত, লাঞ্ছিত হওয়া, নারীদের কথোপকথনের মাধ্যমে পুরুষদের বিশ্বাসঘাতকতা আর ব্যভিচারের বর্ণনা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। রাইমুন্ডা আর পাওলা’র কথায় দর্শক জানতে পারে, পাওলা’র হাতে খুন হয়েছে (আত্মরক্ষার স্বার্থে) পাকো, পাওলা’র সৎবাবা; যাকে সে নিজের বাবা হিসাবে জেনে আসছিল।
কাহিনির আদিতে এমন উপস্থাপনা দর্শকদের একটি বিষণ্ণ সিনেমা দেখার ইঙ্গিত দিলেও শেষ পর্যন্ত জীবনঘনিষ্ঠ কৌতুক আর হৃদ্যতারও দেখা মেলে, যেমন, রাইমুন্ডা তার বোন আর কন্যার সঙ্গে মৃতা মায়ের পাদের (নির্গত বায়ু) গন্ধ শনাক্ত করে আনন্দময় স্মৃতি- চারণ করে। এর মাধ্যমে দর্শক মায়ের সাথে মেয়ের ঘনিষ্ঠতা এবং হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের একটি ধারণা পায়।
গল্পের শুরু দক্ষিণ মাদ্রিদের একটি গ্রাম, লা মানচা’তে। রাইমুন্ডা বোন আর মেয়ের সাথে সেখানে তার মা বাবার কবর পরিষ্কার এবং বার্ষিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ করে মাদ্রিদে ফিরে আসছিল। ফিরে আসার আগে রাইমুন্ডারা তাদের খালার সঙ্গে দেখা করতে যায়, গ্রামে গুজব রয়েছে, সে খালার সঙ্গে একটি ভূত বা প্রেতাত্মা দেখা যায় বলে!
যদিও সিনেমায় ভৌতিকতা নেই কিন্তু এতে মৃত আত্মার উপস্থিতি রয়েছে। কোনো খুনের দৃশ্য নেই কিন্তু খুনের সহিংসতা রয়েছে। ধর্ষণের দৃশ্য নেই কিন্তু ধর্ষণ পরবর্তী ভয়াবহতা আর দ্বেষ রয়েছে। পরিচালকের মুন্সিয়ানায় কাহিনিতে জাদুবাস্তবতার ছোঁয়া, আর দর্শক পরিচালকের মাঝে সূত্রধর হয়ে আসে সব নারী চরিত্ররা।
রাইমুন্ডার চরিত্রে Penelope Cruz পরিপূর্ণ অভিনয় করেছেন নিঃসন্দেহে। এই চরিত্রের কারণে তিনি অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন এবং তিনি প্রথম স্প্যানিশ অভিনেত্রী ছিলেন যাকে অস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। কিশোরী কন্যা, পাওলা ( Yohana Cobo)’র মায়ের ভূমিকাতে তার দারুণ দক্ষ অভিনয় আবার তার মোহগ্রস্ত আকর্ষণ সব মিলিয়ে পর্দায় Cruz’র উপস্থিতিকে দুধারি চাক্কুর উপর জমে থাকা পানির বিন্দুর সঙ্গে তুলনা চলে। রাইমুন্ডা চরিত্রটি শ্রম-শ্রেণী, সংগ্রামী, কঠোর এবং নমনীয়তার যুগলবন্দী এক নারীর রূপ। জীবনধারণের জন্য অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয় তাকে। হাস্য মুখের কিন্তু উচ্চকিত, রঙিন পোশাকে স্ফূর্ত রাইমুন্ডা, ,প্রয়োজনে কঠোর এবং চট জলদি সিদ্ধান্ত নিতে পটু। পাকো, রাইমুন্ডার স্বামী খুন হলে, পরবর্তীকালে তাকে দেখা যায়, দ্রুত কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় ছুরি, রান্নাঘর পরিষ্কার করে পাকো’র মৃতদেহ প্রতিবেশীর পরিত্যক্ত রেস্তোরার ডিপ ফ্রিজে রেখে দিতে। আবার সে রেস্তোরা প্রতিবেশী নারীদের সহযোগিতায় পুনরায় চালু করে যেন সে পাকো’র মৃতদেহ পাহারা দিতে পারে। অপর দিকে, ঘাড়ে লেগে থাকা রক্তের দাগের কারণ জানাতে গিয়ে, সত্য আড়াল করে সে পুরুষ দ্বারা নারীর লাঞ্ছিত হওয়ার মতোন শাশ্বত আর বিশ্বাসযোগ্য এমন উত্তরের আশ্রয় নিয়ে বলতে বাধ্য হয়, “নারীর ঝামেলা”। বাস্তবতা হলো, এটি ছিল সমাজে নারীর অবস্থান সম্পর্কে চরম বাস্তব সত্য এবং নিষ্ঠুর রসিকতা।
রাইমুন্ডা কন্যাকে রক্ষা করতে যেমন সব ঝামেলা গ্রহণ করতে প্রস্তুত তেমনি আবার পাকোর পছন্দের স্থানে তাকে সমাহিত করতে ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করে না। রাইমুন্ডা বিনা প্রশ্নে আইন থেকে কন্যাকে রক্ষা করবার জন্য যা যা করার সবই করে। কন্যার জন্য রাইমুন্ডার এই সমর্থন শুধু কন্যাস্নেহ যে না, তা জানতে হলে দর্শকদের রাইমুন্ডার মৃত মা ইরিনের ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। কারণ, মায়ের প্রতি তার ভালোবাসা থাকলেও ক্ষোভও কম ছিল না। পাওলার বয়সে রাইমুন্ডাও তার বাবার দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছিল, যার ফলশ্রুতিতে পাওলার জন্ম। রাইমুন্ডা ভাবত, তার মা ইরিনে হয়ত বিষয়টি জানত এবং তাকে বাবার হাত থেকে রক্ষা করতে পারত, কিন্তু করেনি। অভিমান করে রাইমুন্ডা দূরে চলে যায়, একা সে কন্যার জন্ম দেয়, পাকো’র সাথে সংসার করে, কখনও কাউকে পাওলা’র জন্ম কাহিনি জানতে দেয়নি।
অপর দিকে রাইমুন্ডার তিন বছর আগের মৃত মা ইরিনে তার কন্যাদের কাছে ফিরে এলে কাহিনিতে চমক যেমন আসে তেমনি রাইমুন্ডাও মায়ের প্রতি বয়ে বেড়ানো অব্যক্ত ক্ষোভ থেকে মুক্তি পায়, যখন সে জানতে পারে তার মা কন্যার প্রতি বাবার করা অন্যায় আচরণের প্রতিবাদে এবং অন্য নারীতে আসক্তির কারণে স্বামীকে খুন করেছে। মায়ের এই ব্যাখ্যায় রাইমুন্ডার ভেতর জমে থাকা দীর্ঘ দিনের ক্রোধ প্রশমিত হয়, বাবা’র প্রতি পুষে রাখা ঘৃণা প্রশান্তিতে যেমন রূপ নেয় তেমনি মায়ের জন্য ওর পুরনো ভালোবাসাও ফিরে আসে।
ইরিনের স্বামীকে খুন করে আত্মগোপন করে থাকা, কন্যার হাতে খুন হয়ে যাওয়া স্বামীর লাশের সৎকার করা বা পাওলার জন্ম রহস্য নিজের ভেতর বয়ে বেড়ানো রাইমুন্ডা বা ইরিনের চরিত্র–এটাই জানান দেয় প্রতিটি নারী যেন গোপন-অগোপন সুখ-দুঃখ লুকিয়ে রাখার এক একটি সিন্দুক, যাদের বুকের গভীরে অনেক অনুচ্চারিত কথার প্রাণ- ভ্রমর রয়েছে। আবার এইসব কিছু নারীদের মাঝে প্রেম ভালোবাসাকে গভীর আর আস্থাশীল করে তোলে।
সিনেমার গল্প যত এগোতে থাকে, ধীরে ধীরে খোসা ছাড়তে থাকা ফলের মতো রাইমুন্ডা, তার বোন সোলে বা তাদের মা ইরিনে, আর কন্যা পাওলা, প্রতিবেশী নারীদের দুঃখগাথা বা রাইমুন্ডার বাবার মিস্ট্রেসের কন্যার ক্যান্সার, জীবনের সাধারণ কিন্তু কঠিন বাস্তবতার গল্প দর্শকের সামনে উন্মোচিত হতে থাকে। পারিবারিক রহস্য, লুকানো অভিমান, স্নেহ, বুকে চাপা দেয়া, না বলা কথাগুলো উঠে আসতে থাকে। সেই সঙ্গে তাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের রুটিন, খাবার, কথা বলার শব্দ বা বয়ে চলা সংস্কৃতিও দর্শকের চোখে ধরা পড়ে। পরিচিত অপরিচিত অতিথির সামনে রাতের রেস্তোরায় রাইমুন্ডার মায়ের কাছ থেকে শেখা বিষাদের গান গেয়ে যেমন তার সংস্কৃতির সাথে একাত্মতার পরিচয় দেয়, তেমনি বংশ পরম্পরায় প্রাপ্ত সংস্কৃতি বয়ে নিতে নারীরা যে পারদর্শী তেমনি আবার যুগ যুগ ধরে নারীরাই যেন পরম্পরার দুঃখ গাথাকে বয়ে নিয়ে চলে।
রাইমুন্ডাদের জন্য খালার কুকিজ বানিয়ে দেয়া বা বোন সোলের বাসায় বেড়াতে আসার সময় রাইমুন্ডার খাবার রান্না করে আনা, পরিবেশন করার ঢং , জোর করে বোনের ঘরে ঢুকে পড়া- এই সব অগুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম বলে দেয়, পরিবারের সদস্য বা আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কতটা দৃঢ় বন্ধন থাকলে এমন পারস্পরিক আদান প্রদান বা অধিকার দাবি করার মতো সংস্কৃতি গড়ে উঠতে পারে।
Volver মানে ফিরে আসা। কার ফিরে আসা? কিসের ফিরে আসা বা কার কাছে কার ফিরে আসা? হারিয়ে যাওয়া মানুষদের ফিরে আসা নাকি হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কগুলোর ফিরে আসা? হয়তবা শেঁকড়ের কাছে ফিরে আসা’র কথা বলা হয়েছে। রাইমুন্ডার কণ্ঠে গাওয়া গানটি Volver সিনেমার সাউন্ডট্রাক। আমোদের সুরে গেয়ে ওঠা গানটিতে শেষ পর্যন্ত বিষণ্ণ আর বারংবার ফিরে আসার ব্যাকুলতা প্রতিধ্বনিত হয়ছে। নীরব রাতে পরিচিত অপরিচিত শ্রোতাদের সামনে রেস্তোরাতে রাইমুন্ডার গানে ওর একাকিত্ব যেমন ফুটে ওঠে তেমনি স্পেনের সাধারণ নারীদের একাকিত্ব ও বিষাদের বর্ণনাও যেন ফুটে ওঠে।
সিনেমার অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বললে অবশ্যই কয়েকটি দৃশ্য দর্শকদের আতঙ্কিত, স্তব্ধ করে। একটি দৃশ্য নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা যায়, তা হলো সিনেমার প্রায় শুরুতে, পাওলার হাতে খুন হয়ে রান্না ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা পাকো। প্রথমে রাইমুন্ডার চিৎকার করে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে আসা, তারপর মেয়ের কাছ থেকে ঘটনা জেনে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া। মেয়েকে আইনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রাইমুন্ডা খুনের সব প্রমাণ ধুয়ে দিতে চায়। এই দৃশ্যটিতে জীবনের আটপৌরে বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলার জন্য আগের সন্ধ্যায় রাইমুন্ডাকে যে অ্যাঙ্গেলে দাঁড়িয়ে সিঙ্কে স্পঞ্জ দিয়ে ঘষে তৈজসপত্র পরিষ্কার করতে দেখা গিয়েছিল পরের সন্ধ্যায় ঠিক একই অ্যাঙ্গেলে দাঁড়িয়ে, একই স্পঞ্জে খুনের ছুরি পরিষ্কার করতে দেখা যায়। ঠাণ্ডা মাথায়, সিঙ্কে দৈনন্দিন ব্যবহারের থালার উপর রক্তের ছুরি ধোয়ার দৃশ্যটি নিঃসন্দেহে রোমহর্ষক এবং কঠিন বাস্তব।
মৃত পাকো রান্না ঘরে রক্তের ওপর উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে, সাদা টিস্যু লাল রক্তে ভিজে ওঠে, লাল টিস্যু বিনবক্সে জমা হতে থাকে, ঘর মোছার মপ রক্তে লাল হয়ে যায়–এই সব কিছু সরাসরি খুনের দৃশ্য না দেখিয়েও খুনের নির্মমতা বয়ান করে। তারপরও সব কিছু খুব সহজ আর ধারাবাহিকভাবে রাইমুন্ডা করতে থাকে, যেন এই কাজও নারীদের ঘর গৃহস্থালী সামলানোর মতো খুব দৈনন্দিন কোনও কাজ। হয়ত নারী নিজস্ব শক্তিতেই অনেক কাজ সহজ করে নিতে পারে।
একটি সাধারণ গল্পের চরিত্রদের রঙিন আর বর্ণিল করে তুলে ধরার সাথে নারীর সঙ্গে নারীর বন্ধন, এবং নারীদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা ক্ষমতা দেখানো হয়েছে এই সিনেমাতে। খুন, ধর্ষণ বা নানা রকম হতাশার গল্প থাকা সত্ত্বেও, নারী, রঙ, আর পরিচালকের জাদুবাস্তবতার মতো পরিচালনার ছোঁয়ায় সিনেমাটি দর্শকদের দুঃখে আক্রান্ত হতে দেয় না। শেষ পর্যন্ত, বিষণ্ণতাকে পাশ কাটিয়ে নারীদের ঘিরে আশা উজ্জীবিত থেকে যায় সিনেমাতে।
Shamim Runa is a novelist, playwright, film critic, and women’s rights activist.