সাক্ষাৎকার
শুদ্ধস্বর: আপনি কবিতার মাধ্যমে কী আবিষ্কার করার এবং বোঝানোর চেষ্টা করে থাকেন?
ওবায়েদ আকাশ: আমি কবিতার মাধ্যমে সত্যি বলতে সৌন্দর্য-নির্মাণের বারতা দিতে চাই। ইতিবাচক নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি আবিষ্কারের প্রয়াসে এই শিল্পযাত্রা। সেখানে নিজেকে উন্মোচন থেকে সমষ্টির ভাবনার খোরাক থাকে। প্রবল ভেতর-দৃষ্টির আধিক্য না-থাকলে মানুষ স্তরান্তরে যেতে পারে না। আর কবিকে তা এফোঁড় ওফোঁড় করে দেখতে হয়। তা না হলে তিনি স্রষ্টা হতে পারেন না। স্রষ্টাকে মৌলিক কিছু সৃষ্টির ভেতর দিয়ে শাশ্বতের সঙ্গে মিলে যেতে হয়। আমি কবিতা দিয়ে বোঝাতে চাই, আপনার ভেতরটা কতোটুকু সৌন্দর্যের অভিঘাতে আলোড়িত হলো।
শুদ্ধস্বর: আপনি বর্তমান বিশ্বকে কীভাবে ব্যাখ্যা করেন এবং বর্তমান ঘটনাগুলো আপনাকে লেখার ক্ষেত্রে কীভাবে ভূমিকা রাখে?
ওবায়েদ আকাশ: বর্তমান বিশ্বকে আমি স্বাভাবিক ঘটমান প্রবণতা দিয়েই মূল্যায়ন করি। এই যে স্বতঃসিদ্ধতা, এই যে নানা ভাঙচুরের ভেতর দিয়ে যাত্রা; এটা দিন দিন বাড়বে। সব কিছুই যেমন বাড়ছে। মানুষের জ্ঞানের পরিধি বেড়েছে। কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। সুখ-দুঃখেরও বিস্তৃতি ঘটেছে। অনেক ইতিবাচকতা তৈরি হচ্ছে, অনেক নেতিবাচকতা তৈরি হচ্ছে। মানুষের ভাবনার বিস্ফোরণ ঘটছে। দেশে দেশে যুদ্ধের মহাকল্পনা চলছে। যার যার শক্তিপ্রদর্শনের ব্যতিবস্ততা শুরু হয়েছে। নতুন শতকে পৃথিবীর মানুষ হত্যা করা ভুলে যাবে বা ভালোবাসা ভুলে যাবে-এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। তাই ভবিষ্যতে মানবিক বোধের যেমন বিস্তার ঘটবে, তেমনি অমানবিকতাও পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীতে যুদ্ধ কোনোদিন থামবে বলে মনে হয় না। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি একটি নতুন অধ্যায় যা মানুষ কখনো এভাবে বিশ্ব¦ব্যাপী প্রত্যক্ষ করেনি। আবার হয়তো নতুন পরিস্থিতি আসবে, সেটাও মানুষের এখনো পর্যন্ত অজানা। আমি শুধু বিস্মিত হয়ে ভাবি, এত এত গল্প শুনি, কিন্তু পৃথিবীতে এমন এজন বিজ্ঞানী, আধ্যাত্মিক সাধক, তান্ত্রিক, ধার্মিক নেই যিনি বিশ্বের নিকট পৃথিবীর খবর বলতে পারেন। বর্তমান অচল বিশ্বের খবর একমাস আগেও কোনো মানুষের ধারণায় ছিল না। সুতরাং মানুষ নিয়তিকে এখনো বশে আনতে শেখেনি। তাই বর্তমান বিশ্ব সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে সিদ্ধান্তে আসা কঠিন। খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এ বিষয়গুলো আমার লেখার উপাদান।
শুদ্ধস্বর: কোন সাহিত্য-ফিকশন বা নন ফিকশন বা কোন লেখক/লেখকরা আপনার নিজের লেখাকে প্রভাবিত বা অনুপ্রাণিত করেছেন? কারা এবং কীভাবে?
ওবায়েদ আকাশ: দেশ-বিদেশের অসংখ্য লেখক আমাকে প্রাণিত করেছে। তাঁদের লেখা পড়েই তো লিখতে শিখেছি। বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তকের কবিদের লেখা পড়ে লিখতে শুরু করেছি। পরে লেখালেখির জগতে প্রফেশনালি প্রবেশ করে দেখেছি, পাঠ্যপুস্তকে খুব মধ্যমমানের বা নিম্নমানের লেখা প্রকাশিত হয়। বিশেষ করে কবিতা। প্রবন্ধও সময়োপযোগী থাকে না।
শিল্পের কাজই হচ্ছে অপর একটি শিল্পীমনকে আলোড়িত করা। আমাকেও তাই করেছে। গতানুগতিক শিল্প কখনো আলোড়িত করে না। ব্যতিক্রমী ও নতুন চিন্তার লেখকরা আমাকে অনুপ্রাণিত করেন। তাঁদের লেখার প্রভাব আমার কবিতায় পড়তে চায়। আমি সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়ে, নিজের স্বর চিনে নেবার চেষ্টা করি।
বিশ্বসাহিত্য থেকে-ফেদেরিকো গার্সিয়া লারকা, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, রাইনার মারিয়া রিলকে, জাঁ আর্তুর র্যাঁবো, ফ্রানজ কাফকা, টিএস এলিয়ট, এ্যাডোনিস, মাহমুদ দারবিশ আমাকে ভীষণভাবে প্রবাভিত করেছেন। বাংলা কবিতায় আমি জীবনানন্দ দাশের কাছে ভীষণভাবে ঋণি। মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ভালো লাগে, কিন্তু তাদের উপস্থাপনা, বিন্যাস এবং ভাষা এখনকার নতুনত্বকে প্রতিনিধিত্ব করে না। বাংলাদেশের কবি বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, আবুল হাসান, শহীদ কাদরী, সিকদার আমিনুল হক, রফিক আজাদসহ আরো অনেকের লেখা প্রাণিত করে। পশ্চিমবঙ্গের বেশ কজন কবি অনুপ্রাণিত করেন। সুনীল, শঙ্খ, বিনয়, উৎপল, জয় আমার প্রিয় কবির তালিকাভুক্ত। এঁদের বেশিরভাগ লেখাই ভালো লাগে।
শুদ্ধস্বর: কীভাবে আপনার ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং অভিজ্ঞতা আপনার কবিতাকে আকার দেয়?
ওবায়েদ আকাশ: মন তো স্থির থাকে না। সে যে কোন পরিস্থিতিতে কী ভাববে তা বলা মুশকিল। আমি কবিতা লেখার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ স্বকীয় রীতির নির্মাণ করি। আবার পরক্ষণেই তাকে ভেঙে চুরমার করে দিই। আবার নতুন রীতিতে লিখি। এজন্য আমার কোনো ব্যক্তিগত যোগাযোগ কাজে আসে না। তবে অভিজ্ঞতা আমার মধ্যে স্বাধীনভাবে কাজ করে। তাই আমার কবিতা নির্দিষ্ট কোনো আকারে প্রতিবিম্বিত নয়। সে সদা পরিবর্তনশীলতার মতো সমসাময়িক।
শুদ্ধস্বর: আপনার কবিতার বক্তব্য উচ্চারণ করতে আপনি কীভাবে কাঠামো, ভাষা এবং ব্যাকরণ নির্মাণ/ব্যবহার করেন? আপনি কি নিজস্ব ফর্ম গড়তে এবং ভাঙতে অভ্যস্ত?
ওবায়েদ আকাশ: যদিও আগের প্রশ্নে এ-প্রশ্নের উত্তরটি রয়েছে। আমি এমন একটি ভাষায় কবিতা লিখতে চাই যে ভাষাটি হবে স্বাধীন এবং স্বাবলম্বী। আমি ব্যাকরণ মানি কিংবা মানি না। বিশেষ করে কবিতা লেখার বেলায়। আমার কবিতার কাঠামো নিরন্তর নিরীক্ষাপ্রবণতার উপর নির্ভর করে। আমি প্রতিনিয়ত পাঠ করতে ও জীবন দেখতে পছন্দ করি। পাঠ করি পাঠ থেকে বের হবার জন্য। প্রভাব কাটানোর জন্য। জীবন দেখি একই কারণে। কিন্তু জীবন থেকে পালাতে পারি না। যে-কারণে আমার কবিতা, বাংলা কবিতার ধারাবাহিকতা, তবে রূপ-লাবণ্যে অন্যের মতো নয়।
শুদ্ধস্বর: রাজনৈতিক কবিতা এবং সাধারণ কবিতার মধ্যে সাহিত্য ও শৈল্পিক মূল্যবোধের দ্বন্দ্ব এবং সংহতি সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
ওবায়েদ আকাশ: কবিতার শৈল্পিক মূল্যবোধ কখনো গড়পড়তা মূল্যবোধকে স্পর্শ করে না। বাবা-মা’র সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের যে-মূল্যবোধ, মালিক-শ্রমিকের সম্পর্কের যে মূল্যবোধ, এদেরও কিন্তু শৈল্পিক মূল্যবোধ আছে। কিন্তু কবিতা এসব কিছুকে পরোয়া করে না। সে নতুন নতুন মূল্যবোধের জন্ম দেয়। আবার রাজনৈতিক কবিতা ও সাধারণ কবিতার মধ্যে কোনো পার্থক্যচিহ্ন আমার বিবেচ্য নয়। কারণ রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা মেনে যা কিছু সংঘটিত হচ্ছে তার সবই রাজনৈতিক। এমনকি প্রেম-বিরহ-বিবাহ সম্পর্ক-ব্যাপারগুলো চরমভাবে রাজনৈতিক। মহৎ শিল্পের প্রশ্নে এদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না। আর সংহতি কখনো শিল্পকে মহিমান্বিত করে না। বিচ্ছেদ ও বিচ্ছিন্নতা শিল্পের নাক্ষত্রিক আকাশ।
শুদ্ধস্বর: আপনার কবিতা কি জাতীয় সীমানা অতিক্রম করে বলে আপনার ধারণা? এটি অন্যান্য জাতীয়তা বা ভাষাগোষ্ঠীর কাছে আবেদন রাখতে পারে বলে কি আপনার মনে হয়? তাহলে কীভাবে?
ওবায়েদ আকাশ: অতিক্রম যদি নাই করে তবে একটি প্রশ্ন করি : জাতীয় সীমানার বাইরে যে-মানুষ কাঁদছে তার কান্নার ধ্বনি কি অলৌকিক মনে হয়? তার চোখের পানি কি নাক দিয়ে বের হয়? দুঃশ্চিন্তায় তাদের যখন হার্টবিট বেড়ে যায় তখন কি তাদের হৃৎপিণ্ড স্থির থাকে। যারা দেশীয় এবং বিশ্বসাহিত্য পাঠ করেন তাদের সবার লেখাই সীমানা অতিক্রম করে। আবার কোনো লেখক যদি অন্য ভাষার সাহিত্য পাঠ না করেন, তাঁর লেখাও সীমানা অতিক্রম করে স্পর্শ করতে পারে। অন্য জাতীয়তা বা ভাষাগোষ্ঠির কাছে আবেদন রাখতে পারে। তাছাড়া সমগ্র মানবগোষ্ঠির সংবেদনশীলতা থেকে যে-মানবিক বোধের জন্ম হয়েছে, তা পৃথিবীর সকল দেশে একই রকম। শুধু তফাত হচ্ছে অর্থনৈতিক অবস্থার। আজ যে-জাতি অর্থনৈতিকভাবে যত বেশি স্বাবলম্বী তাদের সাহিত্য তত বেশি সীমানা অতিক্রম করতে পারছে। তাদের ভাষাকে ভিন্ন জাতীয়তা, ভিন্ন ভাষাগোষ্ঠী আদরণীয় ভাবছে।
শুদ্ধস্বর: আপনি কি মনে করেন কবিতার সংক্রাম দিয়ে মানুষের ইতিহাস পাল্টানো সম্ভব? আপনার জবাবের পক্ষে বলুন।
ওবায়েদ আকাশ: এককথায় ‘সম্ভব’ যদি বলি বা ‘সম্ভব না’ যদি বলি তবে আমাকে একজন রাজনৈতিক কর্মী বা একজন গড়পড়তা পেশাজীবী মনে হবে। আর আপনার প্রশ্নটা নিয়ে একটু সন্দিহান যে, প্রশ্নটা ঠিক আছে কিনা। কারণ ইতিহাস মানে যা ঘটে গেছে। সেই ইতিহাস কি কখনো পাল্টানো যায়?-যায় না। তবে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করা সম্ভব। কবিতার সংক্রাম দিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করা যায়। প্রথম প্রশ্নের উত্তরে সে-কথার ইঙ্গিত আছে। যে-মানুষ প্রতিনিয়ত কবিতা পড়েন, তিনি কখনো খুনের ধারণায় বিশ্বাসী নন। তিনি কখনো অরাজকতার ধারণায় বিশ্বাসী নন, এমনকি অনাচার বা যুদ্ধের ধারণায় বিশ্বাসী নন। আজকের মানুষ যেভাবে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলছে, অতীতে খেলেছে; তাই ভবিষ্যতেও হয়তো খেলবে। কিন্তু আমি আপনি একা বসে এই পরিস্থিতি পাল্টাতে পারব না। এই পরিস্থিতি পাল্টাতে হলে ক্ষমতা ও বিত্তের প্রয়োজন। সেই বিত্ত বা ক্ষমতা যখন কবিতাকে হাতিয়ার ভাববে তখন পৃথিবীতে যুদ্ধ থাকবে না। হত্যা থাকবে না। এটা কখনো সম্ভব নয়; আমি আপনি বা আমরা জানি। যে-কারণে বিত্তের বিকেন্দ্রিকরণ এখন জরুরি। সেই বিকেন্দ্রিকরণে কবিতা অনেক বড়ো হাতিয়ার হয়ে কাজ করতে পারে। কবি তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কবি একজন যোদ্ধা। কলম একটি মোক্ষম অস্ত্র। এই অস্ত্রের দক্ষ পরিচালনা দিয়ে ইচ্ছা মতো মানুষের নতুন নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করা সম্ভব।
____________________________________
কবিতা
বর্ণ ও বৈশ্বায়ন
আর আমার জন্য বসে আছে ক্লান্ত কিছু লোক
তারা আমার লাশ বয়ে নিয়ে একটি মরচেধরা জাহাজের
নোঙরের অপেক্ষা করবে…
জাহাজ থেকে লাফিয়ে পড়বে জন্মান্ধ প্রবীণ নাবিক
খুচরো কিছু তুষার মানবী
এবার তারা আমাকে লিঙ্গান্তর করে
একটি হিমাগারের দিকে নিয়ে যেতে চাইবে
দরজায় বসিয়ে দেবে সমাজতন্ত্রের ঘোড়া
কেননা আমার তো লিঙ্গ ছিল না কোনো, বরং
এ জাতীয় ব্যবচ্ছেদ বিষয়ে জমেছিল সহস্রাব্দের মেদ
আর আমার বর্ণ ও বৈশ্বায়ন নিয়ে
পৃথিবীতে পতিত রাজতন্ত্রের নায়কেরা, যারা
অন্যায্যই প্রশ্ন তুলেছিল
আর ঝুমঝুম প্লাবনের তোড়ে ঝরে পড়ছিল
পৃথিবীতে স্বৈরতন্ত্রের নুন
অভাব্যই আমার মৃত্যুর ভেতর থেকে খসে পড়েছিল
নক্ষত্রের আবালবৃদ্ধবনিতা
কারো কারো আজন্মের লালিত কৃমিতেই তারা
বেদনাতাড়িত হয়ে
ঝুলে পড়েছিল সুচিক্বণ সুপুরিশাখায়
কারো-বা প্রসব যন্ত্রণার কথা মনে পড়ে
-তারা আমার হাত ধরেছিল
-বুকের মাংসের ভেতর গুঁজে দিয়েছিল
থেঁতলানো মুখ
এবার বৃষ্টির ভেতর তারা আমার সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবে
জল থেকে তুলে এনেছিল প্রকাণ্ড কুমির
ঝলসানো পাঁজরের কাছে সঁপে দিয়েছিল
রক্তাক্ত থাবা, আর
জাহাজের পাটাতনগুলো এক এক করে
খুলে যাচ্ছিল লবণাক্ত জলে
অথবা যে এক চিলতে চাঁদ
মুখের কার্নিশে বসে, আমার অক্ষত লাবণ্যের দিকেই
ঝুঁকে পড়েছিল, অগত্যা
জন্মান্ধ প্রবীণ নাবিক, চড়ে বসেছিল
জাহাজের লিঙ্গের চূড়ায়
আমরা তুষারের ভেতর, একটি জাহাজের নোঙরের ভেতর
একটি মাস্তুলের কথা কখনো বলিনি!
আমার জন্য ছুটে এসেছিল ক্লান্ত কিছু লোক
-তাদের ঘুমের প্রয়োজন ছিল
-তাদের মৃত্যুর প্রয়োজন ছিল
আমার লাশ কাঁধে তুলে কেউ তারা
রাজতন্ত্রের ক্লান্ত গাধাটির মতো
গড়িয়ে পড়ছিল তলে
ধনতন্ত্র আর সাম্রাজ্যবাদের তুষার রূপসীরা
আমাকে টেনে নিয়েছিল নিরন্তর প্রসববেদনায়
গেটলক : একটি সংবর্ধনা স্মারক
আমরা এই বহুপতির সংবর্ধনায় আর ভুঁইফোঁড় কিংবা গাঁজাখুরি মার্কা কোনো শব্দ অন্তত একবারও ব্যবহার করবো না। কেননা জীবন কিংবা ভাষার বিবিধ ব্যবহারে আজ, এই সব গাঁজাখুরি শব্দের সম্বন্ধ ভেঙে আমরা বহুদূর এগিয়ে এসেছি। যা দিনকাল,আমরা একটি বরেণ্য বিদ্যালয়ের দিকে ঢুঁসে দেবো আমাদের ধ্বনিযন্ত্রের তির্যক শব্দরশ্মি। ক্রিকেট খেলার মধ্যাহ্ন বিরতিতে আমাদের এই সংবর্ধনাসভার যতি টানা হবে, ঠিক আপেক্ষিক। শেষপর্বের বক্তাদের কণ্ঠে তার তাবৎকালের কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হবে বরণীয় বাক্যবন্দনায়। এই ফাঁকে আমরা উত্থাপন করব-আমাদের পুরনো রেলগাড়ির জন্য একটি ইঞ্জিনের প্রয়োজন। আমাদের একমাত্র ছাদের ওপর একটি প্রাযুক্তিক পুলিশ স্টেশন চাই। ভোঁতা হয়ে গেছে আমাদের ধান মাড়াইয়ের কল। এটাকে অন্তত আমাদের মগজ কিংবা ঘিলু মাড়াইয়ের জন্য যথার্থ করা হোক। আমরা আর কোনো গাঁজাখুরি শব্দমঞ্জরি অন্তত আপনার জন্য প্রযোজ্য রাখিনি। এবার নিশ্চিত আপনার বিবাহের বরযাত্রী হয়ে আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার সাফল্যের জন্যে গড়ে তুলবো দুর্বার আন্দোলন। আমাদের আস্থা করুন, আমাদের প্রকাশিতব্য সদ্যজাত কবিতার পাণ্ডুলিপি থেকে সমস্ত বৈবাহিক চিত্রকল্পগুলো আপনার বিয়েতে সৌজন্য পাঠাব। আমরা প্রত্যেকে অসংখ্য মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সুযোগ্য দালাল। আমাদের কোনো চাকরির প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রেমিকাদের একটা হিল্লে করে দিন। দেখুন আমরা প্রাক-বৈবাহিক সন্তান উৎপাদন, জন্মকল্প কিংবা অ্যাবরশনে একদম বিশ্বাসী নই। আমরা মিছিলে যাই না; তবু মিছিল এসে ঘিলু খুলে দেখে আমাদের। তারা গোলটেবিল করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্ল্যান নিয়ে। আর দেখুন আমাদের আমলা বন্ধুদের বাড় বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। এমনকি সংখ্যাও হা হা। আমাদের আড্ডায় তো চলতে পারত ফরেন হুইস্কি থেকে আদিমতর যা কিছু। গলিঘুপচির মাগির দালালদের সঙ্গে আমাদের সখ্য যে সেই আদ্যিকালের! অযথা অধ্যয়ন থেকে সেই কবেই তো আমরা আমাদের সাংসারিক আড্ডাগুলোয় শেষরাত অবধি অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। আমাদের একটা রফা না-হয় করুন; আমাদের মাইনের সিংহভাগ চলে যায় বাড়ি ভাড়া, চটি পুস্তিকা, পর্নো ডিস্কেট, ক্ল্যাসিক, রাগ কিংবা ভরত নাট্যমের টিকেট সংগ্রহে। মান্যবর সমাজপতি, এসবই পুরনো প্রযুক্তি, আর সব ক্লিশে ধ্রুপদী। দেখুন, আর চাইনে এসব, আমাদের মাস্টারবেশনের চমৎকার এক অভিনব পদ্ধতি বাৎলে দিন। বিশ্বজুড়ে তেলের দামের পাশাপাশি বেড়ে যাচ্ছে কাগজ আর সাবানের মূল্য-একবারও উঠেছি গর্জে এসবের প্রতিবাদে-প্রতিরোধে, কখনো কি মনে পড়ে কারো? প্রিয় সমাজপতি, পুরনো চা-পাতা, সিগারেটের দগ্ধ ফিল্টার, কফি আর ব্যবহৃত কনডমের খোসায় তড়পাচ্ছে আমাদের ঘরভর্তি প্লাস্টিকের ঝুড়ি; আজকাল যত্রতত্র ডাস্টবিন থেকেও শোনা যায় ভাগ্যাহত নবাগতের আর্তচিৎকার। এই সব নবজাতকের মিছিলে একবার আমিও ছিলাম। ওদের মায়েদের সঙ্গে, ওদের অধিকারের ধারায় আমিও তুলেছিলাম ভয়ার্ত স্লোগান। আমাদের গন্তব্য বলতে দেখুন, কখনোই কোনো জিরো পয়েন্টের অস্তিত্ব ছিল না। আমাদের আর্তকণ্ঠ সেদিন গর্জে উঠেছিল আপনার সুরক্ষিত বাড়ির লোহার দরজায়। আমাদের নিষ্পাপ নরম তুলতুলে পা সেদিন বৃষ্টির মতো বর্ষিত হলো আপনার সুরাসিক্ত তলপেট জুড়ে। প্রিয়বর অধিপতি, আমার প্রিয়তমা বোনের জন্য আজ একটি গিটার, অর্গান কিংবা হারমোনিয়মের বিশেষ প্রয়োজন; চাই একটি নাচের পোশাক, হীরের নূপুর, আরো চাই পারফিউমের সর্বোচ্চ ব্রান্ড, ত্বকের প্রসাদ মানে রূপব্যবসার আরো যত আনুষঙ্গিকী। আর চাই অবাধ রাত্রিযাপনের এক সুরম্য প্রাসাদ; ঘ্রাণময় কেবল জলের ফোয়ারা- যা এই পৃথিবীর তাবত অন্ধকার নিয়ে ছুটে আসে প্রিয়তম আমার বোনের টানটান দুটি গোল চোখ থেকে। আমাদের আস্থা করুন ক্ষমতার নিবিষ্ট চূড়া হে, আমরা জল থেকে জলস্তরে, ঘুম থেকে ঘুমান্তরে অগাধ সমুদ্র থেকে ব্যাপক চরায় এসে দাঁড়িয়েছি। মান্যবরেষু হে, আমার নধর সন্তান, পিতার বার্ধক্যের ত্বকে ভরে দিন অজস্র জীবাণুশূন্য রক্তের ইনজেকশন; আমি জানি, আজ কিংবা কাল, যে কোনো আততায়ীর ক্ষুধার্ত লালায়, তাদেরই প্রস্রবিত রক্তের ধারায় আঁকা হবে উৎসবের শত রঙ। আপনার দুটি অত্যুজ্জ্বল নাক্ষত্রিক চোখেই আমাদের নিবদ্ধিত দৃষ্টি হে মহান পতি। আমরা হরিজন, অচ্ছুৎ, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জাতকূলহীনা, লঘু…;সামান্য বিদ্যুচ্চমকে দেখুন, কেঁপে ওঠে আমাদের পাঁজরের হাড়; এক আঁজলা কেরোসিনের বরাদ্দ দিন; জ্বেলে দিন আমাদের শনবাতার ঘর, ছেঁড়া বস্ত্র, ছালাচটি- আমাদের অযত্ন অভুক্ত সন্তানের খসখসে বিশুষ্ক ফাটা ত্বক। নিজেকে একটু সেঁকুন মান্যজন; জল থেকে জলে হ্যালোট্যাব দিয়ে শুদ্ধ করুন, ধুয়ে দিন ছাইভস্মের চিহ্ন অপার। আর আমার দু’হাত ভরে দিন, ভরে দিন আগ্নেয় ধাতব কিংবা লৌহজাত ভালবাসার অথৈ বৈদ্যুতিক পাওয়ার দিয়ে; দেখুন অজস্র বিস্ফোরণে কেমন মাতাল উল্লাসে নেচে ওঠে বাংলাদেশ; মান্যজন সর্বপতি হে, আজকের এই অবিরল ঘ্রাণবতী ফুলের বন্যায়, আপনার এই নগণ্য সংবর্ধনায় এটুকু বিশ্বাস না হয় করেই দেখুন!
হর্ষতরঙ্গ
হর্ষতরঙ্গ, তুমি নিবেদিতার জন্য এক টুকরো
জায়গাজমি রেখ
জানো যে, অসময়ে বজ্র-বিষয়ক মামলায়
তার চুলের গভীর দিয়ে ঢুকে পড়েছে রাষ্ট্রীয় শোষণ
এখন সে সমুদ্রকে বাজার আনিয়ে দেয়, গভীর রাতে
তার কামনার পাশে উন্মুক্ত করে ব্যক্তিগত মহার্ঘ শরীর
নিবেদিতা বোঝে তার নিশ্বাসের ওপর
কত দ্রুত গজিয়ে উঠছে সারি সারি দালান সভ্যতা
অথচ তার জন্য একটি কামরাও বরাদ্দ নেই, যেখানে সে
অন্তত নিজের শরীরটাকে খুলে
এক মুহূর্ত বিশ্রাম করিয়ে নিতে পারে!
আনন্দলহরী, তুমি নিবেদিতার বুকের ওপর থেকে
একটিও আগাছা উপড়ে ফেলতে যেও না
রাজার মৃত্যু
একটি স্নিগ্ধ যুদ্ধের পর আজ
আমি তোমার কথা ভাবলাম
মৃত ইঁদারার পাশে ভাঁটফুল
নড়েচড়ে ওঠে
শত শত সৈন্য মরে তাতে
মরে রাজাও-রাজন্য সমেত
এক হাত অবশিষ্ট রেখে
মৃত ইঁদারার বুকে শত শত কাক
খলবলিয়ে ওঠে
আরো সৈন্য আকাশ ফুঁড়ে নামে
কত রক্ত কত সৈন্য
তুমি তার নামধাম জানো
তুমি বলো-
এইসব ক্ষরিত রক্তের স্বাদ
সবই যার ভাঁটফুলে উদ্ধৃত আছে
আর আছে অবশিষ্ট
মানুষের প্রয়োজনে
রাজা-যার দীর্ঘ এক হাত
তাকে নিয়ে ভাবনা হলে শুরু
তাকে নিয়ে গল্প বলা যাক :
তুমি বলো : এই হাত বড়ো হলে
মানুষেরা সুখশান্তি পেত
তুমি বলো : এই হাত মরে গেলে পরে
রাজাহীন মানুষেরা
রাজাদের গল্প বলে যেত
আর যারা ভাঁটফুল চেনে
এক হাত অবশিষ্ট রেখে
রাজার মৃত্যুকে তারা
বুঝে নিয়েছিল
যোদ্ধাহত উদ্ভিদের ঘ্রাণে
করোনা বিষয়ক ঠোঁটের অসুখ
একজন চতুর্দশপদী প্রাণির একটি পা ধরে টানতে টানতে
আমরা সমগ্র বিশ্ব ঘেমে উজাড় হয়ে যাচ্ছি-
এবং প্রাণিটি তৎক্ষণাৎ জানালো তার এই প্রায়-অক্ষম পা’টির জন্য
এমন গণশুশ্রূষার ভীষণ প্রয়োজন ছিল!
এবং তাতে প্রাণিটির দ্বিগুণ সামর্থ্য অর্জনে আর কোনো দ্বিধা রইল না
এবং তার দ্বিতীয় পা’টি ধরে টান দিতে না দিতেই
প্রায়-অক্ষম পা’টি প্রবল উৎসাহে ফিরে এলো
এইভাবে তৃতীয় এবং চতুর্থ এবং পঞ্চম…
যখন আমরা সমগ্র বিশ্ব একের পর এক চোদ্দোটি পা নিয়ে খেলছি
বিস্ময় প্রাণিটি তার বহুক্ষণ আগেই এত সব পায়ের কথা ভুলে
তার মাথার ওপর গজিয়ে ওঠা শতাধিক শিংয়ের কথা ভাবছে-
এবার সে সবচেয়ে সামান্য শিংটি ব্যবহার করে সমগ্র আকাশ চিরে
প্রবল বৃষ্টি নামিয়ে দিলো; আর মধ্যম শিংটি ব্যবহার করে
পাতাল খুঁড়ে বইয়ে দিলো তুমুল প্লাবন-
এবং পৃথিবীতে অভাবিত বুদ্ধিমান মানুষ হঠাৎ নির্বোধ হয়ে
প্রবল স্রোতে ভেসে যেতে যেতে ভাবছে :
তাহলে অদ্ভুত প্রাণিটি তার সর্বোচ্চ শিংটি ব্যবহার করে আর কী কী
ঘটিয়ে দিতে পারে!!
এবং এতো সব কিছু ঘটে যাবার আগেই বিস্ময় প্রাণিটার নেপথ্যজুড়ে
তাদের ব্যক্তিগত অবয়ব ঝুলে থাকতে দেখে
যে যার মতো গভীর তরঙ্গে নিশ্চুপ হয়ে গেল!
প্রশ্ন
কিংকর্তব্যবিমূঢ় তোমার দেখালেপনা
এখন শহরজুড়ে একটিও নদীর সন্ধান দিতে পারছে না
অথচ শহরের স্তনবৃন্ত
ভরা মৌসুমের আঙুরের বোঁটার মতো ঝরে পড়তে পারে
এমন আসন্ন বেলা-
তখন দুধের নহরে শহর ভেসে গেলে কী জবাব দেবে
বলো?
প্রতিদিন ট্রাকভর্তি ফুলকপি-ঢেঁড়সের দুধ
ঝিঙে-পটলের লালা এবং
পুঁইশাক-পাটশাকের লাবণ্য এসে
পুরো শহর মেকআপ করে দিচ্ছে
আর পরনারী পরপুরুষেরা তাতে
মোহিত হয়ে বিবিসি সিএনএন এবং
আল জাজিরায় প্রচার করে দিচ্ছে-
তোমার দুয়ারে এখন আন্তর্জাতিক নন্দনতাত্ত্বিক
আর
গণমাধ্যমের বিশ্বখ্যাত কূটনৈতিক বার্তা পরিবেশক
এবার তাদের চোখা চোখা প্রশ্নের কী জবাব দেবে
বলো?
একাত্তর
একটি যুদ্ধাহত গাছের ডাল থেকে বৃষ্টি পড়ছে
সমস্ত বনের ভেতর
ঢুকে পড়েছে গড়ানো রক্তের পৃথিবী
রাত্রিরা রক্ত খাইছে, রক্তস্নান, রক্ত পোহাচ্ছে-
বাইরে তখন একা একাত্তর
তার সমস্ত শরীরে শোণিত যখম
টুপটুপ করে ঝরে পড়ছে রুদ্ধশ্বাস
সারি সারি খুনের অঝর নিশ্বাস
মার্চের শরীর জুড়ে কিলবিল করছে
ধর্ষিত সম্ভ্রমের রাত
দ্বীপভূমি জুড়ে সবুজ ঘাসের মাথায় হামলে পড়েছে সূর্যাস্ত
রণাঙ্গনে একাত্তর
শরীর ফুঁড়ে ফিনকি দিচ্ছে গেরিলা, বীর নারী
পাইথন পেঁচিয়ে ধরা দেহে একটু একটু করে নড়ছে
বাংলাদেশ
ধানক্ষেত জুড়ে স্নিগ্ধ ক্লান্ত সবুজ
অনিবার্য লালে ব্যাপক সূর্যের স্রোত
অরণ্য থেকে অজানায় বেরিয়ে পড়েছে
পৃথিবীর মুখর ডানার পাখি
একটি মিছিলের প্রস্তুতি ছিল, বৃষ্টিতে
দীর্ঘকায় কাঁধ থেকে সরে যাচ্ছে সুন্দর মুখের কিছু
কদাকার বিজ্ঞাপন
আমাদের চোখভরতি ধুলো; অন্ধকার সেমিনার ফেলে
উড়ে আসা এই ধুলো-ময়লা
প্রাগৈতিহাসিক
কাঁধভরতি সাম্প্রতিক কিছু অন্ধকার নিয়ে
দাঁড়িয়েছি ঘোরলাগা বৃষ্টির ছাঁদে
তারপরে মেঘ, গাছপালা, সুন্দর মুখের মেয়েরা
পরে আছে কলাপাতা শাড়ি
আজ বৃষ্টি আজ অন্ধকার আজ ধুলোময়লায় আধডুবো চাঁদ
ভেসে যাচ্ছে আষাঢ়ের ঢলে
আজ, অন্তত একটি মিছিলের প্রস্তুতি ছিল, বৃষ্টিতে-
এই প্রতিশ্রুতি
আমরা কিছু পতঙ্গ সকাশে সবিনয় নিবেদন করি-
দাউ দাউ আগুনের ফেস্টুন হাতে, পরস্পর ডাকাডাকি করে
আমাদের মিছিলের প্রস্তুতি থাকে
আজ কিছু স্তাবকতা খসে পড়ে অন্ধকার থেকে
আমাদের গ্রীবাভর্তি কালো, প্রিয় রাজপথ নয়
মেঠোপথে অভাবিত মেঘের গর্জন শুনে তামাশা মস্করা আর
ঢলাঢলি চলে
আর কিছু পতঙ্গ জানে
আজ সবিনয় নিবেদন থেকে বলাবলি করে
আগুনের বৃষ্টি ঝরেছিল
একটি মিছিলের প্রস্তুতি ছিল, বৃষ্টিতে-
যুদ্ধ ও ক্ষমতা এই নব বৈশাখে
আচ্ছা বলো তো দেখি-
যুদ্ধ ও ক্ষমতা যদি
অলটারনেটিভ হয়, আর যারা
পালাই পালাই করে
দেশ ছেড়ে যায়
শহরের অলিগলি হতে
টায়ার পোড়ার ঘ্রাণে
কিছু নারী গর্ভবতী হয়
আচ্ছা বলো তো দেখি
তুমি ভালোবাস রাজা
আর আমি রসিক ভ্রমরা
ফিসফিস গান আমি
রচনা করেছি ঢের
আমিও বৈশাখ হতে
খরতপ্ত রোদে
শুকিয়ে সযত্ন করি
এ-পোড়া হৃদয়
বিচ্ছেদ ও বিরহ যদি
অলটারনেটিভ হয়
নিমগ্ন কবিরা যদি
দীর্ঘ বরষায়
কামনার চোরাগলি
সেঁটে দেয় তালা
আমিও নিমগ্ন থাকি
চোরাবালি স্রোতে-
আর কবিতায়
যা-তা লিখে যে বা যারা
কবি হয়ে ম’লো
আচ্ছা বলো তো দেখি
দেয়ালে খোঁড়লে
যে সকল প্রেমপদ্য
ঝোলে পোস্টারে
এই সব
লিরিক ও রক্তই যদি
সমার্থক হয়
প্রীতি ও প্রসঙ্গ ওঠে
রাজার সকাশে
আর ওড়ে বিহঙ্গ কিছু
আকাশে বাতাসে
এই নব বৈশাখে
মানুষই জঙ্গলে বাস, আর
পশুরা প্রাসাদে
আচ্ছা বলো তো দেখি
ব্যাপক ঘর্ষণে জন্ম
ধরা যাক শুভ্ররং বাড়ি
মস্ত এক বিকৃত পশু
এই ঘরে বসবাস তারই!
পেন্টাগনে ঝড় ওঠে
বারুদে সরোষে
আরও গীত যা যা তার
ঘুম ডেকে আনে
সে কি তা জানে
সে কি তা জানে!!
ভোর হলো ভোর হলো
চারিদিকে আলো; আর
তার জন্মান্ধ বাড়ি
আছে চিরঅন্ধকারই!!