তুলনারহিত কত গান গাই

Share this:

কাব্যদর্শন

আমি মনে করি, জেনে বা অজান্তে সকলেই কবি; তবে সকলেই লিখিত রুপের কবি নন। কেউ লিখিত রুপের, কেউ পাঠক রুপের, কেউ শ্রোতা রুপের, কেউ ভাব রুপের কবি। একজন কবি যখন লিখেন তার অনেক পরে তিনি আর ওই কবিতার মধ্যে বাস নাও করতে পারেন। কিন্তু অনেক পরে এসেও যে পাঠক ওই কবিতার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারেন -তার ভিতর কবিতার মঞ্জুষা আহরণের গুণ আছে বলেই তিনি ওই কবিতার পাঠক রুপি কবি।

মানুষের অভিজ্ঞতা এবং ভাষার জগতে প্রচুর কল্পিত সংস্থান অনুসরণ করে একটি কবিতার প্রাণভূমি নির্মিত হয়। তার উপরে যেমন থাকতে পারে খোলা আকাশ, আবার আকাশের বন্দি দশাও। তৃতীয় বিশ্বের সঙ্গে প্রথম বিশ্বের বিরোধী অংশগুলোর মতোই কবিতা। আবার তোমার আমার মধ্যকার বিরোধ -যা অতৃপ্তিতে রচিত, তার মধ্যেও যেমন কবিতা জন্ম, তেমনি কবিতার মৃত্যুও নিহিত। কবিতা নিশ্চিতভাবে এবং আন্তরিকতার সাথে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত,  রাজনীতি-সমাজনীতি-অর্থনীতি, মেরামতহীন, ভেঙ্গে যাওয়া ব্যক্ত কিংবা অব্যক্ত বোধের সাথে আমাদেরকে সংযুক্ত করে।

প্রাচুর্যের ডাইনিং স্পেসে বসে কফি খাওয়ার মত কোনো বিলাসিতা, আর যাই হোক- কবিতা নয়। মানবতার স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতার সংগ্রামে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং আকর্ষক ক্ষেত্র কবিতা।

 

 

সম্পর্ক

ঠিকানা মোহাম্মদপুর, কাটাসুর লেন

ইতিহাস কী করে জানবে এতসব ঘটনা

দুজন দু’ধারে থাকি;

মাঝখানে অনেক রটনা, এই লেন-ই হাইফেন।

 

বনের ধারে

তাকালে, রৌদ্র যেভাবে নিভে আর জ্বলে

রৌদ্রর প্রসঙ্গে কি সূর্য আড়ালে চলে যায়

নাকি সূর্যের প্রসঙ্গে রৌদ্রভাব জমে ওঠে

এই অমীমাংসিত প্রশ্নের ঘোর

তোমার চোখে দেখা একখণ্ড আদিম পাথর

আলগোছে একবারও নেইনি হাতে

একটা প্রশ্নের উত্তর

আজ সকাল সকাল রক্তমাংসের দেহ

জানুপাতে

বনের ধারে

একটা অপরিচিত ঘরের ভিতরে

সমাগত সন্ধ্যার আধাঁরে

পৃথিবীতে এ মুহূর্তে আর কোনো গল্প নাই;

দৃশ্য নাই লোকালয় নাই, আভরণ নাই

চারিদিকে লোহা বরফ ঋতুরক্ত গলে

এই কথা লিখে প্রেম, কবিতার নাম করে

এড়িয়ে গিয়েছি আমি দারুণ কৌশলে।

 

 

একটি তুলনামুলক কবিতা

স্পেনের যুবতী হাফপ্যান্ট পড়ে হাটে

তাতে বাংলাদেশের যুবক আমি

অতিরঞ্জিত হই

মনের মৌনতা নিয়ে ঘুরি সমুদ্র পাঠে

 

পথেই তুলনা করি বিপথের

তুলনারহিত কত গান গাই

গুঞ্জন করি, পাই বা না পাই

ভেসে যাই জলকানন্দের ঢেউয়ে

 

দৃশ্যের প্ররোচনা থেকে

অদৃশ্যের নিকটে যাই

আমরা কি কখনো পেয়েছি তাকে

চিরকাল যাকে কাছে চাই

 

একটু পার্বণ করি; দূরের ভাষায়

অষ্ফুটস্বরে বাহুলগ্ন মন

পাখিদের ভাষাও শিখি নাই

গোধূলিতে আজও আমি ব্যাকুলপ্রবণ

 

 

আশ্চর্য একটা তারিখ

আশ্চর্য একটা তারিখ চেয়ে আছে

গণিতের খাতার ভিতর

পুরনো একটা ফুলের পাপড়ি যেমন

প্রিয়তম বইয়ের পৃষ্ঠায় চাপা পড়ে বছর বছর

 

আশ্চর্য একটা তারিখ চেয়ে আছে

ক্যালেন্ডারের পৃষ্ঠার উপর

মোনালিসার মত অনেক বছর ধরে

চেয়ে আছে চোখের ভিতর

 

আশ্চর্য একটা মুখ এই দিকে চেয়ে আছে

শতাব্দী থেকে শতাব্দীর পর

পুরনো শেলফে যেমন দগদগে ক্ষত থাকে

যেমনটা থাকে তোমার মনের ভিতর।

 

 

ট্যাবু ও টোটেম

আমি ও তুমি মিলে এই সন্ধ্যার কুয়াশা

দ্রুততম বিএমডব্লিউ বাপাশ দিয়ে উড়ে গেল

বাংলা মোটর মোড়ে

এলোমেলো হলো আমার রিকশার ভাষা

 

পথ তো সুদূর

প্রত্যেকেরই যেতে হবে আরও

কিছুটা দূর;

তুমি, আমি ও আশা

সুদূর পথের মত

প্রতিদিন খুঁজেছি তার ভাষা

 

যেমন শেখা হয়নি আজও পাখিদের গান

যেমন সারাদিন তোমার সঙ্গে থেকেও

পৃথক পালঙ্কে ঘুমিয়েছি আমরা দুজন

 

আমিও তুমি মিলে গাঢ় হল প্রেম

দুজন দুদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর

অন্ধকারের হাত ধরে যা ছুঁয়েছি তাতেই

ট্যাবু ও টোটেম

 

 

Alfred Khokon (Bengali) is a widely acclaimed young poet of Bangladesh, born in 1971 in Barisal. He has published several volumes of poetry and prose. Alfred Khokon—like his third-world counterparts—believes that “poetry is not luxury’’ and that poetry is the most engaging field of humanity’s struggle for freedom and creativity. He obtained an M.A. in Bangla literature from the University of Dhaka. He lives in Dhaka and edits a literary magazine called Nandan.

 

1 thought on “তুলনারহিত কত গান গাই”

  1. অনবদ্য কবিতা। সহজিয়া ভাষায় কবিতার অনুপম আনন্দ পেলাম। কবি’কে অভিনন্দন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

শুদ্ধস্বর
error: Content is protected !!