The feminist movement is part of politics in the West from the late nineteenth to early twentieth century. The Indian subcontinent could not go that far. Here, the feminist movement had to take different approaches.
In the modern state of Bangladesh, the biggest enemy of feminism is the state itself. The state itself is the first to oppose the adoption of women as one of nature’s creations with all its human qualities and all the characteristics of femininity. It can be said that there is no one powerful man compared to the state. Only by keeping a woman at home can the state simplify its practice and pursue its agendas.
In order to make the feminist movement relevant, it is important to address the laws that allow for discrimination and abusive behavior in addition to finding solutions through small units such as households and families. Cultural behaviors that undermine women have to be dealt with through personal and group behavior. But through legal means, civil society should follow up regularly and act as a force to ensure the equality of all citizens of the state. Freedom is much more political than personal.
যে কোন বাদের প্রাথমিক প্রচলনই হয় একটা ধারণার মধ্য দিয়ে। আর সেই বাদ পরিপূর্ণতা পায়, বিস্তৃতি লাভ করে ও টিকে থাকে তার সমর্থনকারীদের মধ্য দিয়ে। একুশ শতক অবধি বিভিন্ন পথ পরিক্রমায় নারীবাদের বিভিন্ন ধারা বয়ে গেছে। ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ওপর ভর দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তা প্রাসঙ্গিকতা লাভ করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে ইসলামিক ফেমিনিজম, আফ্রিকার দেশগুলোতে ব্ল্যাক ফেমিনিজম, ইউরোপের দেশগুলোতে লিবারেল ফেমিনিজম, কোথাও এনার্কো-ফেমিনিজম এভাবেই বহমান নারীবাদের নদী-উপনদী। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ফেমিনিজমের খরস্রোতা নদী বেশ ঢেউ-তরঙ্গে উচ্ছল। কিন্তু বাংলাদেশে? বাংলাদেশই সম্ভবত একমাত্র দেশ যেখানে নারীবাদকে ক্ষমতা, রাজনীতি, শোষনের প্রাতিষ্ঠানিক উপশম বলে এখনো ধরে নেয়া হয় না। এখনো নারীবাদকে ব্যক্তিগত, একটু বিস্তৃত করে বললে সামাজিক আন্দোলন হিসেবেই চালিয়ে দেয়া হয়।
পশ্চিমে উনিশের শেষে বা বিশ শতকে নারীবাদকে যেভাবে রাজনীতির অংশ হিসেবে বিবেচনা করে আন্দোলন করা হয়েছে উপমহাদেশে এখনো সেই পর্যন্ত যেতেই পারেনি। তার আগেই এই আন্দোলন ফেমিনিস্টদের আন্ত:কোন্দলে ও রাজপথে অবমুক্ত করার প্রচেষ্টাহীনতা পোশাকের স্বাধীনতা ও দু’চারটে মানববন্ধনের বেশি কিছু দিতে পারেনি।
আধুনিক রাষ্ট্রে নারীবাদের সবচেয়ে বড় শত্রু স্বয়ং রাষ্ট্র। নারীকে তার মানবীয় সত্বা ও নারীর সমস্ত বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রকৃতির অন্যতম সৃষ্টি হিসেবে গ্রহণে সবার আগে বিরোধিতা করে স্বয়ং রাষ্ট্র। বলা যেতে পারে, রাষ্ট্রের মতো বলবান, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী পুরুষ আর কেউই নেই। নারীকে ঘরে রাখতে পারলেই রাষ্ট্র তার ক্ষমতাচর্চাকে সহজ ও নির্ভেজাল করতে পারে। অনেকেই ভাবতে পারেন, রাষ্ট্র কীভাবে নারীকে শৃঙ্খলিত করতে পারে, নারীবান্ধব নিয়ম কানুন বদলালেই তো কার্যসিদ্ধি হয়।
কিন্তু নারীবাদের সাথে তো স্বয়ং কর্তৃত্বেরই বিরোধ। নারীবাদ শুধু নারীদের ওপর নয়, নারী ও পুরুষ উভয়েরই ওপর থেকে সকল ধরণের কর্তৃত্বের অবসান চায়। মানবিক মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র মানুষের সন্নিবেশে পারিবারিক, সামাজিক ও বৈশ্বিক কাঠামো চায়। যেখানে কেউ কাওকে শোষণ করবে না, জবরদস্তি খাটাবে না, কোনকিছু করতে বাধ্য করবে না। কিন্তু রাষ্ট্র সর্বদা গণমনোরঞ্জক। তার টিকে থাকার জন্য পেশিশক্তি দরকার, সেই পেশিশক্তি কেবল পুরুষ ও পুরুষতন্ত্রেরই থাকে। এবং এই ক্ষমতার সাথে যেসব নারীরা সম্পৃক্ত হয় তারাও হয়ে ওঠে শাসক। রাষ্ট্র তাকেও নারীর ফ্রেমে পুরে শক্তিশালী পুরুষের চিন্তাপদ্ধতি গুঁজে দিতে থাকে। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ নারী রাষ্ট্রযন্ত্রের ফোঁকরে চাপা পড়ে পিষ্ট হতে থাকে। আর রাষ্ট্র নিজে টিকে থাকার জন্যই মূলত তাকে পিতৃতন্ত্রের সহায়তা নিতে হয়। তার জন্য কিছু মানুষ দরকার যারা তাকে মহান হিসেবে হাজির করার কাজে ন্যস্ত থাকবে কিন্তু সেটা করতে হলে বাকি মানুষকে অবশ্যই সিস্টেমের বলি হতে হবে। কে হবে সেই সিস্টেমের বলি? নারী ছাড়া বিনা বাক্যব্যয়ে জীবন উৎসর্গ আর কেইবা করতে পারে? সুতরাং নারীর ওপর দমন-পীড়ন ও ক্ষমতার ছড়ি ঘোরানোর বিকল্প নেই।
রাষ্ট্র যদি নারীকে অর্ধ-নাগরিক না-ই ভাবে, দমন-পীড়ন যদি না-ই চালানোর অভিসন্ধি যদি রাষ্ট্রের না থাকে তাহলে সংসদ, সংবিধান, নাগরিক-আইনের ভেতর পরিবর্তন কেন আনা হয়নি? ২০১৩ সালে গৃহীত ‘পিতামাতার ভরণপোষণ আইনে’ বিধিমালার একটি ধারায় পিতামাতার পরিচর্যার বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, সন্তান নিজে উপস্থিত না থাকতে পারলে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তাঁর ‘স্ত্রী’ পিতামাতার পরিচর্যা করবেন। তাহলে কি ধরেই নেয়া যায় না যে পুরো আইনটি পুরুষের সাপেক্ষে তৈরি! নারী এখানে অন্যের সহযোগী। একইসাথে তো বলা হয়নি ‘সন্তান নিজে উপস্থিত না থাকতে পারলে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তাঁর ‘স্বামী’ পিতামাতার পরিচর্যা করবেন’! অথাৎ রাষ্ট্র নারীকে এখনো নাগরিকের পূর্ণ মর্যাদা দেয়নি। তারকাছে পিতামাতাও কেবল পুরুষের পিতামাতা। কোন পিতামাতার কোন পুত্র-সন্তান না থাকলে কি সেই পিতামাত্রা পদ্মার ভাটিজলে ভেলায় উঠে বসে পড়বেন!
অথচ হবার কথা ছিল ভিন্ন। রাষ্ট্র শিশু, বেকার, শারীরিকভাবে অক্ষম ও বয়স্কদের ভরণ-পোষণ নিজে করবে। শিশুর পড়াশোনা, মানসিক ও শারিরীক বিকাশে সহায়তার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বয়স্ক ভাতা, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বৃদ্ধাশ্রম, চিকিৎসাসেবা বা অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষার দায়িত্বও রাষ্ট্রের নেয়ার কথা। কিন্তু রাষ্ট্রের পেটে খাবার, রাতে পা টেপার জন্য রান্নাঘরের চাবি, সেবা-শুশ্রুষার দায়িত্ব তো কারো নিতে হবে! সেই দায়িত্ব পালনে নারীর বিকল্প আর কিছু হতেই পারে না। নারীকে এমনভাবে তৈরির জন্য গার্হস্থ্য অর্থনীতি নামে স্বয়ং শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত খোলা হয়েছে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খোলা অন্যায় কিছু নয় কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র নারীরাই ভর্তি হতে পারবে, পুরুষের চৌকাঠ পেরোনো বারণ হলে তা ভয়ঙ্কর রকমের যৌনবাদী প্রতিষ্ঠান।
রাষ্ট্রের আরেকটি ধূর্ততার প্রমাণ পাওয়া যায় পারিবারিক আইনে। যেহেতু বিয়ে, তালাক ইত্যাদি আইনের ক্ষেত্রে ধর্ম নিরপেক্ষ সাধারণ কোন আইন নেই, সেক্ষেত্রে যার পারিবারিক ধর্ম যা সে মোতাবেক আইন কার্যকর হবে। যেমন বিবাহ বিচ্ছেদ আইনে বলা হয়েছে তিন কারণে বিয়ে ভেঙে যেতে পারে-
(১) আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়া স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমে;
(২) ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ অনুযায়ী স্ত্রীর অনুরোধে আদালতের ডিক্রি অনুসারে এবং
(৩) কোনো কারণ প্রদর্শন ব্যতিরেকে স্বামীর ইচ্ছানুযায়ী।
প্রথম দু’টি আইন স্বস্তিকর হলেও ৩য় আইনটি চূড়ান্ত রকমের যৌনবাদী আইন। একটা রাষ্ট্র কেবল অসংবেদনশীলভাবে পক্ষপাতিত্ব করলে, নারীর স্বতন্ত্রতা কেড়ে নিতে আগ্রহী হলেই এমন ধরণের লিঙ্গবৈষম্য করতে পারে এবং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এমন নারীবিদ্বেষী আইন চলতে দিতে পারে। এমনকি আইনানুযায়ী ছেলে এবং মেয়েকে বাবার সম্পদ ২:১ অনুপাতে ভাগ করে দেয়ার আইনই প্রমাণ করে রাষ্ট্র নারীকে কী চোখে দেখে।
হিন্দু বিবাহ আইন তো বর্বরতার সকল পর্যায় অতিক্রম করে এখনো রাষ্ট্রের মদদে বহাল তবিয়তে রাজ করছে। হিন্দুধর্মে বিবাহে মেয়ের সম্মতি নিষ্প্রয়োজন, বিবাহ বিচ্ছেদযোগ্য নয় এবং অনিয়ন্ত্রিত বহুবিবাহ অনুমোদিত। পিতা যেখানে সর্বদাই সন্তানদের অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারী সেখানে মাতা অভিভাবক হতে পারলেও তার অধিকার পিতার চেয়ে কম। সকল কন্যা সন্তান উত্তরাধিকার বিষয়ে সমানাধিকারী নয়। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অবিবাহিত ও বিবাহিত সপুত্রক কন্যাগণ উত্তরাধিকারী হতে পারে। সন্তান ধারণের ক্ষমতার বয়স অতিক্রান্ত এমন বিবাহিত কন্যা বা পুত্রহীনা বিধবা কন্যারা উত্তরাধিকারী হতে পারে না। হিন্দু আইনে দত্তক অনুমোদিত, কিন্তু শুধু ছেলেরাই দত্তক হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
ধর্ম থেকে লিঙ্গবৈষম্য তুলে কোন সরকার, কোন রাষ্ট্রই বিরাগভাজন হতে চান না তার বড় প্রমাণ এই পারিবারিক আইনগুলো। খ্রিস্টান ধর্মে সরাসরি বলা হয় ‘পুরুষের কর্তা হচ্ছে যীশু, আর নারীর কর্তা হচ্ছে পুরুষ।’ বাইবেলে এও বলা হচ্ছে ‘পরিবারে পুত্র সন্তান থাকলে কন্যা সন্তান কোনো সম্পত্তি পাবে না।’ আর তালাক হলে তো কথাই নেই, সন্তাননের রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য দাসী হিসেবে যতদিন নারীর প্রয়োজন ততদিন তাকে দিয়ে একটু বড় হলে বাবার কাছে হস্তান্তর করার মতো অমানবিক কাজও খোদ রাষ্ট্র করে থাকে।
রাষ্ট্র মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের ব্যানারে বছরে কয়েকটা প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক সেমিনার আর ১০০টা সেলাই মেশিন বিতরণ করলেই সেই রাষ্ট্ নারীবান্ধব, লিঙ্গবৈষম্যহীন হয় না। বরং লিঙ্গ রাজনীতিকে টিকিয়ে রেখে নারীদের মিছেমিছে স্বাধীনতার দই-চিড়া খাইয়ে গলায় দড়ি বেঁধে পিতৃতন্ত্রের হাতে ক্ষমতার শেকল দিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছে। আর এদিকে বাংলাদেশে নারীবাদী আন্দোলনকে এখনো ‘সামাজিক’ আন্দোলনের বেশি কিছু ভাবাই হচ্ছে না। রাজনৈতিকভাবে লিঙ্গবৈষম্যের বিরোধিতা করে জনসচেতনতা, সম-অধিকার বিষয়ক ওয়ার্কশপ আর হাইস্কুলের মেয়েদের বাই-সাইকেল কিনে দেয়ার মধ্যে নারীবাদী আন্দোলন নাই। সেটা বড়জোর চ্যারিটি হতে পারে, উন্নয়ন সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্প হতে পারে, জনপ্রিয়তা তৈরি করে নির্বাচনে জেতার কৌশল হতে পারে। কিন্তু নারীবাদী আন্দোলন হতে পারে না।
নারীবাদী আন্দোলনকে প্রাসঙ্গিক করতে হলে ঘর ও পরিবারের মতো ছোট ছোট একক ধরে কাজ করার পাশাপাশি নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক ও অবমাননাকর সকল আইনি নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তোলা জরুরি। নারীকে হেয় করে এমন সাংস্কৃতিক আচরণকে ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত আচরণের মধ্য দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। আইন করে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সমানাধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে সুশীল সমাজের নিয়মিত ফলোআপ নিতে হবে ও ফোর্সগ্রুপ হিসেবে কাজ করতে হবে। বিচ্ছিন্ন ও একক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের লিখিত ও অলিখিত আন্দোলনকে সংঘবদ্ধভাবে হয়ে লিঙ্গগত পরিচয়ের কারণে অন্যায় ও বৈষম্যের শিকার হলে জনমত তৈরি করে তা প্রতিহত করতে হবে ও শাস্তির দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে।
মোদ্দাকথা, নারীবাদ কর্তৃত্বের বিলোপ করে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র ও স্বাধীনতার কথা বললেও স্বতন্ত্র আন্দোলন করে এর কোন গতি আনা যাবে না। ব্যক্তি স্বাধীনতা যতটা ব্যক্তিগত, তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক।
Bithy Soptorshi is a journalist by profession. Her interests are in history, contemporary politics, feminism, and archeology. She also worked on women’s rights and has published two books: The X-Chromosome, an essay on women’s rights and feminism, and a book of poetry Three and a half years.