প্রশ্নোত্তর:
শুদ্ধস্বর: কবিতা লিখতে হবে বা কবিতা লেখার জন্য তাড়না বা বোধের ব্যাপারটা প্রথম কীভাবে অনুভব (মানসিক অবস্থা, পরিবেশ-প্রতিবেশের সাথে সংশ্লেষ) করতে শুরু করলেন?
আয়শা ঝর্না: প্রথম প্রশ্নের জবাবে বলি কবিতা কখন যে আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেলো তা নিজেও বুঝতে পারিনি। কিন্তু কবিতা লেখার তাড়না মূলতঃ আমার অনুভব থেকে আসে। হ্যাঁ পরিবেশ, মানসিক পরিস্থিতি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোন দৃশ্যপট কিংবা কোন স্মৃতি কিংবা কোন ঘটনার অনুরননে কবিতা রচিত হয়। ভেতর থেকেই এক কবিতার এক মিথস্ক্রিয়া চলতে থাকে।
শুদ্ধস্বর: আপনার কবিতার সমসাময়িকতা, রাজনৈতিক বোধ, নিজস্ব ভাষাশৈলীর বিষয়গুলো যতটুকু সম্ভব বিস্তারিত ভাবে শুনতে আগ্রহী।
আয়শা ঝর্না: আমার কবিতা সম সাময়িক তো বটেই, একটা সচেতনতা, রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা, সাধারণ মানুষের অধিকার এ সমস্ত কিছুই আমার কবিতায় ধরা দেয় কেননা আমি এ সমাজ রাষ্ট্রের একটি অংশ। আমি আমার নিজস্ব ভাষাশৈলী যাকিনা আমার দুনিয়ার নিকটবর্তী। তা নিজস্ব কিনা জানি না তবে আমার নিজের একটা কবিতা জগৎ তো তৈরি হয়েছেই। যাকিনা আমার নিজের স্বর। একজন কবির নিজস্ব স্বর তো থাকতেই হয়, নাহলে তাকে আলাদা করে আইডেন্টিফাই করবে কিভাবে!
আয়শা ঝর্না: কবিতায় অশ্লীল শ্লিল ব্যাপারটি প্রত্যক কবির নিজস্ব প্রকাশভঙ্গী। আমরা বিনয় মজুমদারের কবিতাতেও দেখি এ রকম বিষয়। কিন্তু সে কবিতাগুলো পাঠক অতটা নেয়নি, যতটা তার ফিরে এসো চাকাকে নিয়েছে। অন্যদিকে এখন অনেক কবি লিখছেন হর হামেশা অশ্লীল বাক্যে কখনো কখনো তা মাত্রাও ছাড়িয়ে যায় কিন্তু এই ধরনের কবিতা খুব বেশীদিন টিকে থাকে না। তা সময়ের এক অনুরণন কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী নয়।
আয়শা ঝর্না: পশ্চিম বাংলার কবিতার সাথে আমাদের কবিতার কিছুটা পার্থক্য স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে হয়েছে, যা আগে ছিলো না। বাংলাদেশ যেখানে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কোলকাতা সেখানে বৃহৎ একটি দেশের অঙ্গরাজ্য। ফলে সেখানে কিছু পার্থক্য তো থাকবেই। আমাদের থেকে এক সময় কোলকাতা খুব এগিয়ে ছিল কারণ কোলকাতার সাহিত্যের ইতিহাস অনেক পুরনো, সমৃদ্ধশালী। অন্যদিকে বাংলাদেশের সাহিত্যর বাক বদল ঘটে ষাটের দশক থেকে, তারা তাদের নিজস্ব ভাষা শৈলীতে মনোযোগী হয়ে ওঠে। তারই পরাম্পরায় আজকের বাংলাদেশের সাহিত্য। তা অবশ্যই কোলকাতার কবিতা থেকে বেশ আলাদা, ভিন্ন একটা আবহ এ দেশের কবিদের কবিতায় কাজ করে। চিনিয়ে দেয় তাদের নিজস্ব স্বর।
আয়শা ঝর্না: সাম্প্রতিক সময়ে আমি অনেক বেশী পড়তে পারিনি লেখা নিয়েই ব্যস্ততা ছিল অনেক। তার ভেতর আমি ওক্তাভিও পাজের কবিতার অনুবাদ নিয়েও ব্যস্ত ছিলাম। পাজ পড়ছিলাম, তাছাড়া আরও কন্টেম্পরারী লেখকদের লেখাও পড়ে ফেলি, সময় পেলেই। ফিলোসোফির বই পড়ি। করোনাকালীন সময়ে প্রচুর লেখা আর অনলাইন ইন্টারন্যাশনাল প্লাটফর্মে এটেন্ড করেছি, এটা আমার জন্য ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা। এই সময়টা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে কবির কোন নির্দিষ্ট দেশ নেই। ফলে অনেক অচেনা ভিন দেশের কবি আমার আপন হয়ে উঠেছে, বন্ধুজন হয়েছেন। তাদের লেখা আমার লেখার সাথে এক্সচেঞ্জ হয়ে বুঝতে চেয়েছি আমরা কতটা এগিয়েছি কিংবা আমাদের কবিতা শেল্ফ আইডেন্টিটি নিয়ে কতটা দাঁড়াতে পারে ইন্টারন্যাশনাল অডিয়েন্সে? আমি দেখেছি অনেকটাই সক্ষম আমাদের কবিতা কোন অংশেই কম নয়।
বাবা মারা গেলেন প্রায় দেড় মাস হতে চললো কিন্তু সেই শোক কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লাগছে। এই অবস্থায় এক ধরনের বিষাদ আমাকে ঘিরে রেখেছে চেষ্টা করছি সে অবস্থা থেকে সেরে উঠতে। ফলে কম পড়া হচ্ছে।
ধরো এ শহরে লকডাউনের ভেতর আমরা
হাঁটছি একশো একটি বছর কিছু
মেঘ এলো কোথা থেকে উড়ে!
ঘরে দানাপানি নেই একফোঁটা,
দাঁত দিয়া ছিড়া কাঁচা মাংস
খাইলেও কইতো না কিছু কেউ।
জুটতো হয়তো কিছু,
এখন এ বৃষ্টিতে আমাগো ঘর ভেজে
খালি শাদা ভাত আর ডাল
বেশী না এটুকু মেঘ, দাও
রঙহীন কালি নেই
পদশব্দ শুনতে কি পাও?
পরাধীন নাগরিক আমি,
সব জমা রেখে জেলে পুরে
কখনও দলছুট পাখির ডানায় রৌদ্রের ছায়া
বলতে দেখিনা।
এক কালো গাঢ় মেঘ, ঘনঘোর
তোমার হাতের কাছে ছিল
যাকিছু শুন্যতা মগ্নতা উচ্ছাস সব
জানাবো না, বলবো না বাবা,
তুমি নারী,অধিকার? আধা।
ধর্ম তোমাকে জানায়
চেও না, থেতলে দেবে
মুখ চোখ তলপেট যোনী।
ধরনীতে, কাম, লোভ, ক্ষমতা সবই
অস্বীকার করে যোনিকেই!
More Posts From this Author:
- None Found
সাক্ষাৎকার এবং কবিতা ভাল লেগেছে