নারী, যারে দেখতে নারি

Share this:

Women, Look at the Women | Leesa Gazi

English Summary:

The stigma around sexual violence is monstrous. The status of ‘shoti’ (virgin/faithful) determines the moral character of any woman in South Asian culture. She is judged by it. Her worth depends on it. So she is labelled as ‘impure’ or ‘sinful’ when she is raped: despite being herself the victim of a crime. Women are considered to be responsible for bearing the burden of ‘honour’ in a family in a patriarchal society. ‘Shame’ is inflicted upon them for failing to carry that burden. They are nothing but bodies, sexual objects, reproductive units – their whole existence is defined by ’honour.’ Where women are seen as male property and custodians of male pride, defiling them is a painless method of defaming their fathers, brothers or husbands – and in turn, their families, their communities, and even their countries. When women are incumbents of the pride of others, they are also then held responsible for the loss of said pride, whether it was their fault or not. ‘Honour’ killings, female infanticides, sex-selective abortions, and sexual violence towards women are commonplace in South Asia, and they all derive from the same mentality.

In more or less every part of the world, male-on-female rape has been seen as a source of shame for the victims. Patriarchal societies have burdened women with the loss of dignity caused by rape, whereas the action of the perpetrator is often overlooked and not factored into the discussion. The root of evil comes from that mindset. If you want to dishonour a family, you go after their daughters. Targeting women and girls using rape and sexual violence as a tactic of dishonouring, shaming, and defeating the enemy comes from the same attitude.

If we’re going to change these attitudes, we need to eradicate this view which has been encoded into our cultural DNA.

কোথা থেকে শুরু করবো ভাবছি। মেয়েদের বেদনার কথা, হত হওয়া, নাকাল হওয়ার কথা বলতে গেলে সৃষ্টির ঊষা থেকে শুরু করতে হয়। শুধুমাত্র মেয়ে হয়ে জন্মানোর অপরাধে কত মেয়ে নিহত হয় তার হিসাব কে রাখে! কখনও কখনও জন্মাতেও পারে না; ভ্রূণেই নারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা চিরতরে বিনষ্ট করা হয়। আমি ভাবছিলাম, এই সৃষ্টি জগতে আর কি কোন জাতি আছে যাকে হত্যা করার জন্য আর কোন কারণের প্রয়োজন হয় না, তার স্বত্তাই যথেষ্ট। ভেবে পাই না, একজন নারীর শরীর কিভাবে এতোটা ঘৃণা এবং এতোটা সহিংসতা উস্কে দিতে পারে? নারী শরীরকে কেন্দ্র করে এই যে চরম বিদ্বেষ এর উৎস কোথায়?

নারীর উপর সমাজের খড়গ হস্ত তোলা থাকে তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের বিপক্ষে যৌন সহিংসতা ঘিরে যে কলঙ্ক সে তো ভয়ানক। দক্ষিণ এশীয় সংস্কৃতিতে আজও যেকোনো নারীর নৈতিক চরিত্র নির্ধারিত হয় সেই নারীর ‘সতী’ পরিচয়ের ভিত্তিতে — সেকি কুমারী, সেকি সম্পর্কে বিশ্বস্ত সেই প্রশ্নে। একজন নারি সতী কি না তাও ঠিক করে দেয় সমাজ। তাকে সেই ধারণার নিক্তিতে বিচার করা হয়। তার মূল্য এর উপর নির্ভর করে। কাজেই সে যখন যৌন সহিংসতা বা ধর্ষণের শিকার হয় তখন তাকেই ‘অশুদ্ধ’ বা ‘পাপী’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়: অপরাধ তার উপর সংঘটিত হওয়া সত্ত্বেও। একটি পরিবারের ‘মর্যাদা’ রক্ষার দায় এবং এর বোঝা বইবার দায়িত্ব পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সেই পরিবারের নারীর উপর-ই বর্তায়, নারী তা বহন করতে বাধ্য। আর সেই বোঝা বহনে নারী যদি ব্যর্থ হয় ‘লজ্জা’ তার উপরই প্রতিস্থাপন করা হয়: নারীর যৌন নির্যাতনের দায় তাই তাকেই বইতে হয়। কারণ ‘শরীর’ ছাড়া তাকে আর কিছু ভাবা হয় না; সে শরীর সর্বস্ব, সে যৌন উপাদান, সে প্রজনন ক্ষেত্র। নারীকে যখন পুরুষের সম্পত্তি এবং পুরুষ-অহংকারের জিম্মাদার হিসাবে দেখা হয়, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই কোন পরিবারের বাবা, ভাই বা স্বামীকে নিয়ন্ত্রণ বা হেয় করতে হলে, তাদের উপর প্রতিশোধ নিতে হলে, ছড়ি ঘুরাতে হলে, তাদের কাবু করতে হলে সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে সেই পরিবারের মেয়েদেরকে টার্গেট করা, তাদের ‘অপবিত্র’ করা। কারণ হাজার বছরের পুরুষ শাসিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি শেখায় নারীর পবিত্রতা, বিশুদ্ধতা, মর্যাদা, সম্ভ্রম এইসবই তার যোনীতে সীমাবদ্ধ। তার বাইরে সে আর কিছুই না। নারী যখন অন্যের অহংকার বহাল রাখার দায়িত্বে থাকতে বাধ্য তখন সেই অহংকারে দাগ লাগলে, অহংকার পাংশুল হলে তার মাশুল নারীকেই গুনতে হয়; এতে তার দোষ থাকুক বা না থাকুক। আপনি যদি কোনও পরিবারকে অসম্মান করতে চান তবে আপনি অবশ্যই তাদের কন্যাদের ধাওয়া করুন, তাদের ক্ষতিসাধন করুন এবং সেই ক্ষতিটি অবশ্যই যৌন কিসিমের হতে হবে। ঘুরেফিরে এই একই মনোভাবের শিকার হয় পরিবার, গোষ্ঠী, সমাজ এমনকি দেশও। সেই কারণেই যুদ্ধ, বিগ্রহ বা সশস্ত্র সংঘাতে শত্রুদের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন ও পরাস্ত করার কৌশল হিসাবে তাদের নারীদের উপর ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতা ব্যবহার করা হয়।

মেয়েরা ছোট থেকেই বুঝে যায় তার অপমানের দায় তারই, যে অপমান করলো সে অধিকাংশ সময় আলোচনায়ই আসে না। এর দৃষ্টান্ত যৌন হয়রানি থেকে ধর্ষণ, সব ক্ষেত্রে সমানভাবে লক্ষ্যনীয় যা যৌন শিকারির পক্ষে সাফাই গাওয়া এবং কৈফিয়ত দেয়ারই নামান্তর। কোন মেয়ে ধর্ষিত হলে বা হয়রানির শিকার হলে তাৎক্ষনিকভাবে তার চরিত্রের ব্যবচ্ছেদ শুরু হয়ে যায়, — মেয়েটার পোশাক কি ছিলো, কে সাথে ছিলো, কেউ সাথে না থাকলে কেন ছিলো না, রাতে বের হলো কেন, ঐ সময় ঐ জায়গায় কি করছিলো, মেয়েদের বাইরে বের হবার দরকার কি, যে সাজ দেয় হবে না, ঢঙ করে কথা বলার পরিণতি, ছেলে নাচায়, ভালোবাসা দেয় না, মেয়েদের ‘না’ আসলে ‘হ্যাঁ’, তাদের মুখে এক মনে আর — এই সবই তখন ময়নাতদন্তের বিষয় বলে বিবেচিত হয়, অথচ যে অপরাধী সে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আলোচনার বাইরেই থেকে যায়। নারীর বিরুদ্ধে সঙ্ঘটিত অপরাধ সমূহ যা দক্ষিণ এশিয় দেশগুলিতে ব্যাপক হারে দেখা যায়, যেমন ‘অনার কিলিং’, মেয়েশিশু হত্যা, মেয়ে-ভ্রুণ হত্যা, ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন ও হয়রানি, বাল্য বিবাহ — এগুলো সবই এই একই মানসিকতা থেকে উদ্ভূত এবং অশুভের মূল ডালপালা মেলে এই একই মনোগঠনের প্রশ্রয় পেয়ে। এই মানসিকতারই ভিন্ন ভিন্ন চেহারা আমরা দেশ কাল পাত্র ভেদে প্রতিটি পুরুশ্রান্ত্রিক সমাজে প্রতিফলিত হতে দেখি এবং পৃথিবী জুড়েই নারী এ গ্রহণ ও বহনের জায়গায় থাকে, এর নির্মম শিকার হয়। সেই কারণেই বিশ্বের কম-বেশি সবখানেই নারীর উপর পুরুষের যৌন সহিংসতা ভুক্তভোগীর জন্যই লজ্জার কারণ হয়, অপরাধীর জন্য ততটা না।

যদি আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এই ধ্যান ধারণা এবং মনোভাবের বদল আনতে চাই তবে আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি সমূলে উৎপাটন করা জরুরী যা আমাদের চিন্তা চেতনা, আমাদের সাংস্কৃতিক ডিএনএতে গেড়ে বসেছে। নারীও এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বলয়ে আবদ্ধ, সেও এর বিষে নীল, কারণ সেও এই মানসিকতার দূষিত আলো হাওয়ায় বেড়ে ওঠা মানুষ। কখনও কখনও পুরুষের পাশাপাশি সেও এই মানসিকতার ধারক এবং বাহক হয়ে ওঠে। সুতরাং নারীও এই মনোগঠন থেকে মুক্ত না। আমাদের এর থেকে পরিত্রাণ জরুরী। মেয়েদেরকে যদি আমরা মানুষ হিসেবে গণ্য করতে চাই তাহলে এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ এবং এর মনোগঠন দুই থেকেই বেরিয়ে আশা আবশ্যক।

এছাড়া পুরুষও কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শিকার। তার কাছ থেকেও এই সমাজ বিশেষ ধরণের আচরণ আশা করে যার ফলশ্রুতিতে সে নারীকে অবলা, অক্ষম এবং নিজেকে পরিত্রাতা হিসাবে ভাবতে শেখে, নারীকে নিয়ন্ত্রণ করতে সচেষ্ট হয়, তার উপর কর্তৃত্ব ফলাতে ব্যস্ত হয়। যার কারণে নারী পুরুষ সত্যিকার অর্থে পার্টনার বা সাথী হয়ে উঠতে পারে না। এতে নারী যেমন বঞ্চিত হয় পুরুষও বঞ্চিত হয়। নারী পুরুষের মধ্যে সমতা কখনই আসবে না যদি না আমরা এই সংগ্রামে, জাগরণে পুরুষকেও যুক্ত করতে পারি। নারী পুরুষের সাম্যের প্রশ্নে পুরুষের অংশগ্রহণ, সংহতি এবং সমর্থন নিশ্চিত করা আবশ্যক। সমতার সমর্থক এবং ঝান্ডাবাহি হিসাবে নারীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারও পথচলা জরুরী।

কয়েকটি বিষয় যা বদল আনতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে তার একটি হলো, ছেলে সন্তানদের ছোট বয়স থেকেই মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং মেয়েদের সাথে শালীন ব্যবহারের শিক্ষা দেয়া। মেয়ে সন্তানকে বাইরে বেরুতে নিষেধ করার পরিবর্তে ছেলে সন্তানকে শেখানো, যেকোনো মেয়ের সাথে কিরকম আচরণ করতে হয়, করা শোভন। কেউ যৌন হয়রানি করলে আমরা একটা কথা প্রায়ই বলতে শুনি, — ‘এদের কি মা বোন নাই’ — আমার এই বয়ানে সমস্যা বোধ হয়। যথাযথ সম্মান পাওয়ার জন্য একজন নারীর কারও মা, বোন, স্ত্রী, বা কন্যা হওয়ার প্রয়োজন নাই। সে একজন যেকোনো নারী এই পরিচয়ই যথেষ্ট হওয়া উচিৎ। শুধু মা বোনের কথা চিন্তা করে কারও সাথে শোভন ব্যবহার করার শিক্ষা দিলে তখন এই উত্তরটাই শুনবেন, ‘মা, বোন আছে কিন্তু বউ তো নাই।’ আরেকটি বিষয় হলো, সম্মতির গুরুত্ব ছেলে সন্তানদের যথাযথভাবে শেখানো খুবই জরুরী। এ শুধুমাত্র যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে না, সব ক্ষেত্রেই। ‘না’ কে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে শিখতে হবে, যে ‘না’ করছে তাকে এবং তার ‘না’ কে সম্মান করা শিখতে হবে।

আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের মেয়ে সন্তানদের ডানা খর্ব করি, তাদের উচ্চাশাকে ছোট করি, কম আমল দেই তাদের চাওয়ার, তাদের স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করি। আমার মেয়ে এ বছর ষোলয় পা দিবে সেই কারণেই হয়তোবা এই ভাবনাগুলি বারবার মনের মধ্যে তোলপাড় করে। ও ওর অপার ডানা মেলে দেবে অজানায়, যেমন ইচ্ছা জীবনকে বরণ করে নেবে। ভুল করবে, ভুল থেকে শিক্ষা নেবে কি নেবে না এই তো জীবন। ভুল করতে যেন ভয় না পায়। চরিত্র গঠনে জীবনে ভুল করা বড় প্রয়োজন। যদিও ছেলেদের ভুল মানবিয় দৃষ্টিতে দেখা হয় কিন্তু মেয়েদের ভুলের অর্থ প্রায়শই যবনিকাপাত। তাই ‘নিজের মতো করে’ এই তিনটা সাদাসিধা শব্দ মেয়েদের জীবনে কমই তাদের অস্তিত্ব জাহির করতে পারে।

মাগো, তুই নিজের জীবনের বৈঠা নিজের হাতেই রাখ, যদি কোথাও রাশ টেনে ধরতে হয়, তুই ধর আর কারও হাতে নিয়ন্ত্রণ তুলে দিস না। নিজের মত করে বাঁচার কথা ভাব, বাঁচ।

Leesa Gazi is a Bangladeshi-born British writer, playwright, film director, actress, and co-founder of a London based arts company Komola Collective. She is the concept developer, co-writer, and performer of the theatre production Birangona: Women of War with her arts company, which she later developed into the documentary film Rising Silence that won multiple international awards. Currently she is working on her feature film Barir Naam Shahana.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

শুদ্ধস্বর
error: Content is protected !!