এলার্ম বন্ধ করে দিলাম। আপাততঃ আমাদের আর এর দরকার নেই। এখানে সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে!
অস্বাভাবিক একটা সপ্তাহ শুরু হলো সোমবারে। নিয়মমতো কাজে গিয়েছিলাম। গিয়ে শুনলাম, যাদের যাদের বাড়িতে থাকা বেশি প্রয়োজন তারা চাইলে তাৎক্ষণিক ছুটি পাবেন। সাম্প্রতিক কিছু কারণে আমার নাম এমনিতেই একটা ইচ্ছে তালিকায় ছিলো। আলাদা করে তাই কিছু করতে হয়নি। চার সপ্তার জন্য বাড়ি আসার আগে মানবসম্পদ বিভাগ থেকে এও বলা হলো, দরকার হলে আরো সময় পাওয়া যাবে। স্বেচ্ছা বন্দী হবার ১২ ঘন্টার মধ্যে খবর পেলাম, দেশটাই ঘেরাটোপে বন্দী হয়ে পড়েছে!
বাড়ি ফেরার পথে মনে হলো, জরুরী সদাইপাতিগুলো কিনে নেয়া দরকার। টেসকো, সেইন্সবারি আর মরিসন ঘোরা হলো। দেখে মনে হয়েছে আতঙ্কিত বাজারী মানুষ বাড়ি ফিরে গেছেন। দোকানের তাকগুলো ধু ধু মাঠ হয়ে নেই। ১/২ টা জিনিসপাতি আছে। বিক্রয় কর্মীদের ধারণা সপ্তাহান্তে আবার মানুষ ঝাপিয়ে পড়বে।
সেইন্সবারি থেকে বেরুবার সময় একজন কর্মী ফুল তুলে দিলেন হাতে! অবাক হলাম! আনন্দিত হলাম! মন খারাপ হলো! সারি সারি ফুল পড়ে আছে, কেউ সেটা কিনছেনা! নষ্ট হচ্ছে। স্টোর ম্যানেজারের হয়তো ফুল ফেলতে মন খারাপ হচ্ছিলো, তাই এই শুভেচ্ছা বিনিময়। সারাদিন মাথায় বিষয়টা ঘুরছিলো, ফুলগুলো কেউ কিনছেনা…
আধা যুগের বিলাতবাসে আমার মনে হয়েছে, এই দেশটা আসলে গরীব মানুষের ধনী দেশ! দুনিয়ার সব থেকে ধনী দেশ গুলোর একটি ব্রিটেন, কিন্তু এর সব মানুষ ধনী নয়। দেশটার পরতে পরতে গরীব মানুষে পূর্ণ। কোনমতে স্কুল পাশ করা, স্কুল থেকে ঝরে পড়া দিন মজুরে পূর্ণ একটা দেশ। ফ্রি চিকিৎসা, ফ্রি স্কুল আর সামাজিক নিরাপত্তা নামের বেনিফিটের উপর ভর করে আছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। এসবের যেকোনটার একটু নড়াচড়াতেই ওলটপালট হয়ে যেতে পারে সাধারণ মানুষের জীবনমান।
আশেপাশে যারা আছেন। পরিচয় আছে যাদের সাথে, এরা সব সাধারণ মানুষ। গরীব মানুষ। এদের যেকোন এক এন্ড্রুর সাথে শহর সিলেটের প্রান্তবর্তী বড়গুল গ্রামের এরশাদ আলীর আসলে কোন পার্থক্য নেই। শূন্য মাথায় এই লোকটাই গত সপ্তায় ট্রলি ভর্তি করে বাজার করে নিয়েছে। চাকরী চলে গেলে আকুল সাগরে পড়ার চিন্তাটাও তার আছে। শুধু কিছু ফ্রি সুবিধা আছে বলে, এখনও সে হাসতে পারছে। নয়তে সবই এক। একই কায়দায় এই লোকও বাসে ভিড় করে। সামাজিক দুরত্বের ঘোষণায় উষ্মা প্রকাশ করে!
এইযে ঝড়টা এলো, সারা পৃথিবী তছনছ করে দিচ্ছে। আরও তছনছ করবে। একদার গ্রেট ব্রিটেন এসব সামলাবে কেমন করে? যে ঢাকঢাক গুড়গুড় বলে কয়েকটা সপ্তাহ পার করেছিলো বরিস জনসনের সরকার তা বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে। এখন দেখার বিষয়, আগামীটা কেমন হয়।
Najmul Albab, a Bangladeshi journalist and blogger, is now living in the UK.
My day has started by reading this true facts in Britain. Thanks for being respectful to people’s behaviour in this tough time.