বিবর্তনের যান্ত্রিকতাবাদ অতীত দ্বারা বর্তমানকে আর উদ্দেশ্যবাদ ভবিষ্যৎ দ্বারা বর্তমানকে নিয়ন্ত্রণ করে। উভয় মতবাদের এইনিয়ন্ত্রণ কৌশল লক্ষ করে বের্গস চেয়েছেন বুদ্ধির দাসত্ব এবং অভিজ্ঞতার আধিপত্য থেকে মুক্তি লাভ করে স্বজ্ঞার সহায়তায় গভীর অভিনিবেশের সাথে জীবন এবং জগতের বিবর্তনকে দেখতে। হেগেল চেয়েছেন তাঁর ডাই-ইলেকট্রিকের সহায়তায় একে ব্যাখ্যা করতে।হয়তো বৈদান্তিকেরা প্রকৃতির এই উদ্দেশ্যহীন স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীন অভিব্যক্তিরই নাম দিয়েছিলেন ‘লীলা’।
মানুষের বুদ্ধি নতুনের সৃষ্টি বুঝে উঠতে পারে না, কারণ বুদ্ধির কাজ হল : যা জানা আছে, তার ভিতরই অজানাকে খুঁজে বের করা।প্রতিজ্ঞা বাক্যের ভেতর সিদ্ধান্ত খুঁজে না পেলে বুদ্ধির অনুমোদিত তর্ক হয় না, হেত্বাভাস বা দোষযুক্ত তর্কইহয়। —গোবিন্দ চন্দ্র দেব (তত্ত্ববিদ্যাসার)
প্রাককথন
বিবর্তনের কথা বললেই আধুনিক মনে প্রায় অবচেতনেই চলে আসে ডারউইনের The Origin of Species -এর নাম। সন্দেহ নেই গ্রন্থটি মানবচিন্তার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। কিন্তু কতজন লোক গ্রন্থটি পাঠ করেছেন? প্রফেসর স্টিভ জোনস-এরভাষায় ‘অধিকাংশ জীববিজ্ঞানী প্রজাতির উৎপত্তি পাঠ করেননি। অধিকাংশ মার্কসবাদী পুঁজি (The Capital) পড়েননি।’ কথাটি তর্কাতীত না হলেও নিশ্চয়ই অল্পবিস্তর সত্য ধারণ করে। অতএব লোকজন মুখ্যত পরের মুখে ঝাল খাচ্ছেন। ‘ডারউইন তাঁর প্রজাতির উৎপত্তি গ্রন্থে মূলত জীববিদ্যার যান্ত্রিক বিবর্তনের কথা বলেছেন। ভূবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যা বিশ্বজগতের সৃষ্টি সম্বন্ধে যে সংশয় বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তিসম্পন্ন মানুষের মনে উনিশ শতকে জাগিয়েছিল, তার স্বাভাবিক পরিণতি হল জীববিদ্যায় যান্ত্রিক বিবর্তনের আবির্ভাব’ [The Origin of Species (paperback). Oxford Press, 1994. (ডারউইনের ভূমিকা)]। তাছাড়া মানব চিন্তার ইতিহাসে সার্বিকভাবে উদ্দেশ্যবাদী বিবর্তন, অভিনব উৎপত্তিবাদ ইত্যাদি চিন্তারও কিন্তু উপস্থিতি আছে। এদের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি যাই হোক না কেন দার্শনিক ভিত নেহাত দুর্বল নয়।
একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার
ক. প্রত্যেকটি প্রজাতি স্বতন্ত্রভাবে সৃষ্টি নয়, বরং পরিবৃত্তিসমূহের (Varieties) মতোই অন্যান্য প্রজাতি থেকে উৎপত্তি হয়েছে [The Origin of Species (paperback). Oxford Press, 1994. (ডারউইনের ভূমিকা)]।
আমি যতটুকু সচেতন ও নিরপেক্ষ বিচার করতে সক্ষম তা দিয়ে বলতে পারি যে, স্বতন্ত্র প্রজাতির সৃষ্টির ধারণা ভুল [The Origin of Species (paperback). Oxford Press, 1994. (ডারউইনের ভূমিকা)]।
আমি নিঃসন্দেহ যে, প্রজাতি সুস্থিত নয়; এবং মনে করি, এখন যেগুলোকে একই গণভুক্ত করা হয়, সেসব প্রজাতি বর্তমানে বিলুপ্ত প্রজাতির সরাসরি উত্তরসূরি, একই প্রজাতির বিভিন্ন পরিবৃত্তি যেমন, তেমনিভাবে এদেরও এ পরিবর্তন সাধনের মূল, তবে সবটুকু নয়—করেছে প্রাকৃতিক নির্বাচন [The Origin of Species (paperback). Oxford Press, 1994. (ডারউইনের ভূমিকা)]।
আমি ঘোষণা করতে চাই যে, প্রাথমিক মানসিক শক্তি সম্পর্কে যেমন, তেমনি জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে আমার কোনো কিছু করার নেই[The Origin of Species , অধ্যায় ৭, অনুচ্ছেদ ১ ]।
বর্তমানে জীবনের উৎপত্তি নিয়ে চিন্তা করা থেকে বাজে কাজ আর কিছু নেই; এর চেয়ে বরং বস্তুর উৎপত্তি নিয়ে ভাবা যায় [The Origin of Species, অধ্যায় ৭, অনুচ্ছেদ ১]।
উদ্ধৃতির বহর আর বড় না করেও বলা যায় জীবনের বিবর্তন সম্পর্কে এতে ডারউইনের চিন্তাধারা মোটামুটি বিধৃত হয়েছে। তিনি এইসব উদ্ধৃতিতে যা বলতে সচেষ্ট হয়েছেন তা হল—প্রজাতির উৎপত্তি একদিনে বা ক্ষণিকে হয়নি, এটি একটি দীর্ঘ পথপরিক্রমার ফসল। তাছাড়া শেষদুটি উদ্ধৃতিতে ‘উৎপত্তি’ শব্দটির ব্যবহার তাৎপর্যপূর্ণ। একজন পরিণত পাঠক তাৎপর্যটা যে কী তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
জীবজগৎ সম্পর্কে ডারউইনের এই মত বিভিন্ন ধর্মে বর্ণিত মতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় মোটে। আধুনিক কালের একজন বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তিসম্পন্ন মানুষের কাছে তাহলে এটি ধর্মগ্রন্থ সমূহের অসম্পূর্ণতা কিংবা ভ্রান্তিই প্রকাশ করছে, নয় কি?
কিন্তু ডারউইন কি ধর্ম নিয়ে কথা বলেছেন? কিংবা তিনি কি কোনো ধর্মতাত্ত্বিক ছিলেন?
মোটেই তা নয়। বরং একজন জীববিজ্ঞানী হিসেবে তিনি একটি জীববিজ্ঞানের তত্ত্ব বা সূত্রই আবিষ্কার করেছেনমাত্র। আর এর অভিঘাত গিয়ে লেগেছে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলোর ওপর। এভাবেই বিজ্ঞানের একটি উপাত্ত (Fact) কিংবা আবিষ্কার মানব চিন্তার ইতিহাসে জ্ঞান অর্জনের পদ্ধতিসমূহের ওপর কিংবা মানবচিন্তায় মূল্যের ধারণার (Axiology) ওপর স্থায়ী প্রভাব ফেলে।
সাথে সাথে আমাদের এটাও মনে রাখা দরকার, ধর্মগ্রন্থ সমূহে বর্ণিত জগৎ, জীবন সম্পর্কে কোনো ধারণা ভুল বলে প্রতিপন্ন হলেই ধর্মের সামাজিক উপযোগিতা শেষ হয়ে যায় না। এমনকি সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে কারোর (সে যে-ই হোক না কেন) ধারণার অসারতা প্রকাশিত হয়ে পড়লেই যে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা (থেকে থাকলে) নাই হয়ে যায়, তা-ও কিন্তু নয়।
খ.
‘সাহিত্য বা দর্শনের তুলনায় বিজ্ঞান বিষয়ক কোনো বই সাধারণত টিকে থাকে না। অন্তত দীর্ঘকাল টিকে থাকে না। আর বিরল ক্ষেত্রেটিকলেও পাঠকের নাগালের মধ্যে থাকে না। তার কিছু কারণ আছে। এমন বইয়ের বিষয়বস্তু হয়ে থাকে অত্যন্ত বিশেষায়িত, ব্যবহারকরা হয় প্রচুর প্রায়োগিক পরিপদ, পরিভাষা সারণি, কখনও কখনও গাণিতিক পদ্ধতি প্রভৃতি। আর আধুনিক বিজ্ঞানীরা সাধারণতবই-ই লেখেন না, লেখেন প্রবন্ধ। প্রায়শ এসব প্রবন্ধেরও লেখক হন একাধিক ব্যক্তি। তাঁরা লেখেন তাঁদের গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে।অর্থাৎ বিষয়টি সম্পর্কে বিশেষভাবে ওয়াকিবহাল ব্যক্তিবর্গ কেবল অনুরূপ ওয়াকিবহাল ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যেই লেখেন। আরো কিছু কারণে বিজ্ঞানীদের লেখার পাঠক হয় অত্যন্ত সীমিত সংখ্যক। ফলে বিজ্ঞানীদের লেখা প্রায়ই কালোত্তীর্ণ হয় না। কিন্তু ডারউইনের প্রজাতির উৎপত্তি এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এটি লেখা হয়েছিল সাধারণ পাঠকদের উদ্দেশ্য করে, গাণিতিক পদ্ধতি ও পরিভাষার দুর্লঙ্ঘ্যবাধা পরিহার করে; অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায়, মানুষের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে। সম্ভবত এ কারণেই প্রজাতির উৎপত্তিএখনও যেকোনো পাঠক যে কোনো রকম অসুবিধার সম্মুখীন না হয়ে পাঠ করতে পারেন’ [প্রজাতির উৎপত্তি, অনু. ম. আখতারুজ্জামান, অনুবাদকের কথা]।
উপরের বক্তব্যটি সত্য হলেও জনপ্রিয় বিজ্ঞানকারদের খপ্পরে পড়ে ডারউইনের বক্তব্যের কী হাল হয়েছে দেখুন!
‘বিবর্তন হচ্ছে বস্তুর একত্রীকরণ ও তার আনুষঙ্গিক গতির বিকিরণ। এসময় বস্তু একটি অনির্দিষ্ট, শিথিল সমস্বত্ব অবস্থা থেকে নির্দিষ্ট, সুসংহত অসমস্বত্ব দশায় গমন করে। এ সময় ধরে রাখা গতিতে একটি বিশেষ রূপান্তর ঘটে’ [হাবার্ট স্পেনসার]।
—এটা হচ্ছে স্পেনসার কর্তৃক ডারউইনের বিবর্তনবাদ বিশ্লেষণ। কি পাঠক, কিছু বুঝলেন? এছাড়াও তিনি ডারউইনের জীবন সংগ্রাম(Struggle for life)-এর পরিবর্তে যোগ্যতমের উদ্ধর্তন (Survival of the fittest) ব্যবহার করেছেন। জীববিজ্ঞানীরা এটি সমর্থন করেননি মোটেই। এছাড়াও এই পণ্ডিতের আরেকটি কাণ্ড হচ্ছে সামাজিক ডারউইনবাদ-এর প্রচলন। এর মূলকথা হল সমাজেও নির্মমভাবে Struggle for existence ঘটে এবং এর ফলে যোগ্যতমই টিকে থাকে। কিন্তু বাস্তবে ডারউইন এরকম কথা বলেননি। এই মতবাদের পরিণতি হচ্ছে বর্ণবাদ, ফ্যাসিবাদ। এইবার বুঝুন অবস্থা!
এই কৃতবিদ্য পণ্ডিতের আরো কাজের কথা শুনবেন—
তিনি বিবর্তনবাদে অনিবার্যতা তত্ত্বের উদগাতা। কিন্তু ডারউইনের মতে বিবর্তনের অনিবার্যতা বলে কিছু নেই। তিনি আরো উদগিরন করেছেন উচ্চতর-নিম্নতর জীবের ধারণা। কিন্তু ডারউইন বলেন যোগ্যতর অযোগ্যতর জীবের কথা।
এমনকি কার্ল মার্কস পর্যন্ত ডারউইনের বিবর্তনবাদকে যথোপযুক্তভাবে উপস্থাপন করেননি। তিনি তাঁর নিজের শ্রেণিসংগ্রাম ধারণাকে ডারউইনের বিবর্তন প্রক্রিয়ার জীবনসংগ্রাম-এর সাথে তুলনা করেছেন। কিন্তু সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানেই বোঝা যায়, শ্রেণিসংগ্রাম আর জীবনসংগ্রাম সর্বাংশে এক নয়।
(ডারউইনের বিবর্তনবাদের অতিসরলীকরণ, ভুল ব্যাখ্যা ইত্যাদি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন ম. আখতারুজ্জামানকর্তৃক The Origin of Species -এর বাংলায় অনূদিত গ্রন্থের ভূমিকা থেকে । প্রকাশক : বাংলা একাডেমি)
অবশ্য ডারউইনও পরবর্তীকালে প্রজাতির উৎপত্তির ভিন্ন সংস্করণগুলোতে ল্যামার্কের অর্জিত চারিত্রের বংশানুসৃতি তত্ত্বের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। এমনকি কিছু কিছু জায়গায় তিনি সৃষ্টি এবং স্রষ্টার প্রসঙ্গ পর্যন্ত টেনে আনেন। ‘জীবন সংক্রান্ত এ দৃষ্টিভঙ্গি মহিমাময়। এরআছে বহুবিধ শক্তি। মূলে (স্রষ্টা কর্তৃক) ফুঁ দিয়ে কিছু সংখ্যক ফর্মে বা একটিতে প্রবেশ করিয়ে দেবার পর থেকে………..’ (অক্সর্ফোডসংস্করণ, পৃষ্ঠা-৩৯৭)।
উদ্দেশ্যবাদী বিবর্তন
প্রচলিত ধর্মের সাথে সংঘাতের পর বিবর্তনবাদ যখন শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে গেল তখন একদল ধর্মীয় চেতনাসম্পন্ন দার্শনিক, বৈজ্ঞানিকরা তাদের ধর্মবোধের সাথে বিবর্তনের সমন্বয় করতে সচেষ্ট হলেন। তাঁরা বললেন, ‘ধর্মশাস্ত্রে সৃষ্টির যে আখ্যায়িকা আছে, তার সাথে বিবর্তনের বিরোধ নাই, যান্ত্রিকতাবাদেরই বিরোধ’[তত্ত্ববিদ্যাসার (সৃষ্টি ও বিবর্তন), গোবিন্দ চন্দ্র দেব ]। তাঁরা আরোবললেন, যান্ত্রিকতাবাদ দিয়ে প্রাণের স্বভাব সঠিক বিশ্লেষণ করা যায় না, তাই একে বিশ্লেষণ করার জন্য প্রয়োজন উদ্দেশ্যবাদী বিবর্তন—যা কিনা ধর্মসম্মত বিবর্তন। তাঁরা বলতে চাইলেন—এ বিবর্তন অচেতন প্রকৃতির দৃষ্টিকোণ থেকে যান্ত্রিক হলেও আসলে (চেতনেরদিক থেকে) উদ্দেশ্যমূলক। অবশ্য অতি প্রাচীন সাংখ্য দর্শনেও এইরূপ কথাই বলা আছে। কেউ কেউ আবার নৈতিক উদ্দেশ্যেরকথাও তুললেন (যেমন : ড. মার্টিনো)। তাঁরা বিবর্তনে অবরোহী যুক্তির প্রয়োগ ঘটালেন এবং শুভ প্রেরণার ব্যাখ্যায় বললেন, ‘বিশ্বসৃষ্টির আগে স্রষ্টার সামনে নানারকম সৃষ্টি পরিকল্পনা ছিল। আমরা যে দুনিয়ায় বাস করছি, তা এই পরিকল্পনাগুলোর ভিতরসর্বোত্তম বলেই সৃষ্টিকর্তা শুভ প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ জগৎ সৃষ্টি করেছেন [লাইবনিজ]।’ এ জগৎ ও জীবন স্রষ্টার ইচ্ছায়অযান্ত্রিকভাবে বিকশিত হচ্ছে। অবশ্য এদের মধ্যে আবার কেউ কেউ উদ্দেশ্যবাদকে বাহ্যউদ্দেশ্যবাদ এবং আন্তঃউদ্দেশ্যবাদ-এ ভাগকরে তদনুযায়ী ব্যাখ্যায় সচেষ্ট হয়েছেন। আবার কেউ কেউ চেয়েছেন এর সমন্বয়। যেমন: হেগেল।
দার্শনিক মতে বিবর্তন
জীবজগতের বিবর্তন ডারউইন ব্যাখ্যা করছেন অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে। এর প্রত্যুত্তরে ধর্মপ্রভাবিত বৈজ্ঞানিক,দার্শনিকরা দিয়েছেন বুদ্ধির সাহায্যে, অবরোহী যুক্তির প্রয়োগ—উদ্দেশ্যবাদী বিবর্তনের মাধ্যমে। কিন্তু নির্মোহ দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবর্তন কেমন?
জড়ের সাথে প্রাণের এবং প্রাণের সাথে মনের পার্থক্য হচ্ছে দার্শনিকমতে যথাক্রমে গুণগত পার্থক্য এবং প্রকরণগত পার্থক্য। গুণগত বৈশিষ্ট্য যখন প্রকরণগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয় তখন সেখানে একধরনের অভিনব উৎপত্তি ঘটে। এটাই সংক্ষেপে অভিনব উৎপত্তিবাদ।
দার্শনিক মতে দেশের (Space) স্বভাব স্থিতি আর কালের স্বভাব গতি। এই দেশ ও কাল মিলে জগৎ গঠিত বলেই জগতের স্বভাব হলগতিশীলতা। এই গতিশীলতা থেকেই বিবর্তনের শুরু। বিবর্তনের প্রথম ধাপে গতিশীল দেশ-কাল থেকেই জড়ের উদ্ভব। এই জড়ত্বদেশ-কালে আগে থেকে ছিল না। অনেকটা দার্শনিক মতে অসৎ থেকে সৎ-এর উৎপত্তি হওয়ার মতো ব্যাপার। ক্রমান্বয়ে—
জড়→প্রাণ→ মন→ চৈতন্য।
বিবর্তনের যান্ত্রিকতাবাদ অতীত দ্বারা বর্তমানকে আর উদ্দেশ্যবাদ ভবিষ্যৎ দ্বারা বর্তমানকে নিয়ন্ত্রণ করে। উভয় মতবাদের এইনিয়ন্ত্রণ কৌশল লক্ষ করে বের্গস চেয়েছেন বুদ্ধির দাসত্ব এবং অভিজ্ঞতার আধিপত্য থেকে মুক্তি লাভ করে স্বজ্ঞার সহায়তায় গভীর অভিনিবেশের সাথে জীবন এবং জগতের বিবর্তনকে দেখতে। হেগেল চেয়েছেন তাঁর ডাই-ইলেকট্রিকের সহায়তায় একে ব্যাখ্যা করতে।হয়তো বৈদান্তিকেরা প্রকৃতির এই উদ্দেশ্যহীন স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীন অভিব্যক্তিরই নাম দিয়েছিলেন ‘লীলা’।
কভার: The Evolution of Art by Ranischen via Deviantart
Ahmed Lipu is an author. The topic of interest in Philosophy. Published Books: Byaktikotay Nyorbyaktik(2011), Darshan(2017), Byakto : Bibidho Phenomena’r Darshonik Parzalochona(2018), Yugolsandhi : Muldhara-Bikalpodhara(2019)