বিস্মরণের কাল – বাঙালি মেয়ের সত্যিকার পরিচয় কারা তৈরি করেছিলেন?

Share this:

A Time of Remembrance: Who Created the True Identity of the Bengali Woman? | Yashodhara Ray Chaudhuri

English Summary:

In this article, Yashodhara Ray Chaudhuri recounts the struggle of the initial days of women writing to clear the path for women’s emancipation, especially 1900s to 1920s and 30s. The battles fought by several women intellectuals to dispel the stereotypes of women have been described here with a number of quotations from their writing.

আমরা বাঙালি নারী। আমাদের উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্যে বারো মাসে তেরো পার্বণের অনেক গুলিই ভারি ধুমধাম করে পালন করি আমরা। এই দুহাজার বিশেও, বিশ্বায়ন পরবর্তী পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও, কত না মনোযোগ দিয়ে আমরা জড়ো করি আমাদের সাংস্কৃতিক নানান চিহ্ন। লাল পাড় সাদা শাড়ি । পুরুষ ত্যাগ করেছে তার পাঞ্জাবি, ধুতি, আমরা শাড়িকে ত্যাগ করিনি ।
চিহ্ন আমরা বড় ভালবাসি। বাঙালির ইলিশমাছ চিংড়িমাছ। সরষের তেল। পোস্তবাটা।
তেমনই আবার , বাঙালির মেয়ের শাঁখা সিঁদুর। হিন্দু মহিলারা বিবাহিত হলে ত পরেন। যাঁরা সেভাবে ধর্ম মানেন না তাঁরাও ত পরেন। কেউ কেউ বলেন সুন্দর লাগে। আবার মুসলিম মেয়েরাও সাজগোজের অঙ্গ হিসেবে শাঁখা সিঁদুরকে কখনো কখনো সাদরে গ্রহণ করেন। কেউ কেউ বলেন আমি যে বাঙালি , তাই পরি। এটা আমাদের সাংস্কৃতিক চিহ্ন।
তেমনি, বাঙালি মেয়ের শাড়ি পরাও এক রকমের বাঙালিত্ব জ্ঞাপন। মূলত শাড়ি চলয়াফেরার জন্য অসুবিধার পোশাক। দীর্ঘ এক খন্ড কাপড় এখন ভাল শিল্পের ক্যানভাস। শাড়ির নান্দনিকতা আমরা ভালবাসি। আবার শাড়ি পরা মেয়েদের কেন সুন্দর লাগে তা নিয়ে তা বড় অধ্যাপক মায়াকান্না কাঁদেন। কতিপয় নারীবাদী চেঁচামেচি করলেও, মূলত সবার খুব ভাল লাগে শাড়ির গুণবর্ণনা।
চিহ্নগুলোই কি সব? আর কি আমাদের কোন দায় নেই? পুরনো বাড়ির ভাঙাচোরা ছবি তুলে তার সঙ্গে নতুন গান যোগ করা ছাড়া কি আমাদের অতীতকে উদযাপন করার আর কিছুই নেই ? আমাদের কি দায় নেই, বাঙালির এগিয়ে থাকার যে যে চিহ্নগুলি নিয়ে আমরা গর্ব করে এসেছি কয়েক প্রজন্ম ধরে… সেই সব অর্জনকে ফিরে ফিরে দেখার? সেই যে বলা হত, ওয়াট বেঙ্গল থিঙ্কস টুডে, ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুমরো… সে কথাকে মিথ্যে হতে দেখে আমাদের হায় হায় থামিয়ে উচিত নয়কি, নিজেদের উজ্জ্বল উত্তরাধিকারকে আরো একবার ফিরে দেখা?
অনেক ক্ষয়, হারিয়ে ফেলার পাশাপাশি এই অর্জনগুলিও বাঙালির নিজস্ব। ক্ষয় বলতে সবচেয়ে বড় হারিয়ে ফেলা দেশভাগের আগে পরে বাঙালির শরীর দুইভাগ হবার ট্রমা বা শক…মারাত্মক এক ব্যবচ্ছেদের মধ্যে দিয়ে যে বিভীষিকা সংঘটিত হয়ে গেল বাঙালির মনে ও মননে, তার ফলাফল যে সুদূরপ্রসারী সে কথা ত বলাই বাহুল্য। কিন্তু পাশাপাশি আমাদের অর্জনের মধ্যে রয়ে গেছে গোটা উনবিংশ শতাব্দী জুড়ে চলা রেনেসাঁস অথবা নবজাগরণের গল্পগুলো। যা আজ শুধুই গল্প।
গোটা দুশো বছরের একটা গমনপথ । খুব সোজা ছিল না লড়াইটা। সবচেয়ে বড় লড়াই তো লড়েছিলেন, কয়েকজন প্রগতিশীল, পরিবর্তনকামী পুরুষের সঙ্গে সঙ্গে, বা তাঁদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে গিয়ে, মেয়েরা। আমরা জানি যে দীর্ঘকাল ধরে ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক হিন্দু সমাজ মেয়েদের ঘরের কোণায় ঠেলে রেখেছিল। আর সেই পুরু দেওয়ালের ভেতরকার জমাট বাঁধা অন্ধকারের সঙ্গে লড়াইতে রাম মোহন রায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত গমনপথটুকু আমরা হয়ত সোনার আখরে লিখে রেখেছি…মেয়েদের ইশকুলের প্রবর্তন করার জন্য ইংরেজ বেথুনসাহেবের লড়াই, অথবা ১৮৪৭ এ পিয়ারিচরণ সরকারের বারাসাতে মেয়েদের ইশকুল খোলার কাহিনি, যে স্কুল পরে কালীকৃষ্ণ গার্লস হাই স্কুল নামে বিখ্যাত হয়, এই সবটার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনে রাখতে হবে সেই সব অসংখ্য মেয়েদের, যারা বিদ্যাশিক্ষার দিকে ধাবিত হয়েছিলেন শত বাধা উপেক্ষা করেও, যেমন করে গাছের চারার মুখ অন্ধকার ঘরে একটিমাত্র খোলা জানালা থেকে আসা সূর্যের আলোর দিকে ফেরে… ঘুরে যায়।
আজ যখন আমাদের সকলের কাছেই প্রায় অনায়াসলভ্য শিক্ষা , তখন দুশো বছর আগেকার মেয়েদের বেদনা আমরা কী করেই বা বুঝব। আর সে কারণেই ইতিহাস বিচ্যুত বিস্মৃত আমরা আবার ফিরে যাচ্ছি বিপরীত দিকে… পায়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছি যেন অন্ধকারের দিকেই… সিনেমায়, সিরিয়ালে, পছন্দে অপছন্দে বেছে নিচ্ছি পশ্চাৎপদতাকে… মানসিকতায় গোঁড়া অসহিষ্ণু হয়ে উঠছি।
এই গোঁড়ামি অনেকটা কাটিয়ে দিতে পারে যদি আমরা পড়ি, এক নারীর লেখা আত্মজীবনী। মেয়েদের আত্মকথায় কত ভাবেই না আলো এসে পড়ত এই সমাজের একটা বড় অংশের ওপরে। সে অংশের মুখে প্রায়শই ভাষা থাকত না। বাংলাভাষা এমনই এক ভাষা, যে ভাষার প্রথম আত্মজীবনীই এক নারীর লেখা… রাসসুন্দরী দেবীর “আমার জীবন”। আমরা কৃতার্থ, আমরা ধন্য, এই আত্মজীবনীতে ১৮১০ সালে পুব বাংলায় এক গ্রামে জন্ম নেওয়া মেয়ের কলম কাজ করে গেছে কেবলই নিভৃতে। গৃহের সব কাজ শেষ করে, প্রতিটি অনুপুঙ্ক্ষ সংসারধর্মের কর্তব্যকর্ম করার পর, দিনশেষে, বা মধ্যাহ্নের নীরব নির্জন ক্ষণে খাতা খুলে ছোটবেলায় ভাইয়েদের পাশে বসে পন্ডিত মশায়ের কাছ থেকে শেখা সামান্য অক্ষরজ্ঞানের সমস্তটা উজাড় করে দিয়ে লিখে রাখা মনের কথা। একান্তে সখীদের বলার কথাগুলি… দিনান্তে নিজের আয়নার সামনে বসে নিজেকে বলার কথাগুলি, শব্দে আর অক্ষরে প্রকাশ করে রাখা। এই ত মেয়েদের আত্মকথার পরিসর। তাদের শ্রোতা থাকে না পাঠক থাকে না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেউ জানতেও পারে না তাদের এই লেখার কথা… ভয়ে, সংশয়ে, কুন্ঠায় তারা নিজের এই লেখা কারুকে দেখান না। অন্যেরা হাসবে, মজা করবে ভেবেও হয়ত বা। অন্য মানে শিক্ষিত পুরুষ, অন্য মানে স্বামী শ্বশুর ভাশুর , যাঁরা সমাজে লেখালেখির জন্য নির্বাচিত, ক্ষমতায়িত… যাঁদের কোন বাধা নেই কোথাও, পড়তে আর লিখতে। তাঁদের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি, ব্যঙ্গ বিদ্রূপ, এসবকে উপেক্ষা করে এই যে বিছানার নিচে বা বালিশের তলে রাখা রুলটানা খাতার নিজস্ব জার্নি … একে যখন আমরা ছাপার অক্ষরে পড়তে পাই, অনেক খানিই দেখি অনুল্লেখের তলায় চাপা পড়ে থাকা কথাদের। নীরবতাগুলিই তখন অনেকটা বলে দেয়। বলা কথার থেকে না বলা কথাই তখন সাক্ষ্য দেয় অনেক খানি।
নিজের পরিপার্শ্বকে লিখে রাখেন মেয়েরা এই সব আত্মজীবনীতেই। আবার একইসঙ্গে নিজেকেও লেখেন বইকি। তাই পড়তে হয় নটী বিনোদিনী নামে বিখ্যাতা অভিনেত্রী বিনোদিনী দাসীর “আমার কথা”। অথবা সাহানা দেবীর “স্মৃতির খেয়া”। পড়তে হয় স্টিরিওটাইপের ভিতরে থাকা মেয়েদের কথা, আবার স্টিরিওটাইপ ভাঙতে চাওয়া মেয়েদের কথাও।
সংসারী মেয়েরাই মেয়েদের স্টিরিওটাইপ, তাই বিনোদিনী যখন সংসার হীনতার কথা বলেন, অথবা সাহানা বলেন “সংসার করতে ভাল লাগত না” তখন আমরা পাই ছাঁচভাঙা এক অন্য জগতের কথাই।
অথবা মনীষা রায়ের “আমার চার বাড়ি”, এক অর্থে কোন মেয়ের নিজস্ব বাড়ি খুঁজে পাওয়ার যাত্রা যেন।


সেরকমই পড়তে শুরু করি শোভা ঘোষের “আজো তারা পিছু ডাকে”। ভাবি , হয়ত খুঁজে পাব কোন লুকনো দীর্ঘশ্বাস অথবা নীরবতার ভিতরে নারীজীবনের বেদনার কোন সাক্ষ্য। কিন্তু অন্যভাবে পাই এক ষড়ৈশ্বর্যময় জীবনের কথা। যে জীবনের এক পাশে আছে অসংখ্য অসাধারণ পুরুষ ও নারীর কথা , যাঁরা প্রত্যেকে নবজাগরণের এক অধ্যায়ের নটনটী। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাংলার মননের জগতের ইতিহাসে। বরিশালের বিখ্যাত মনস্বী, মানুষ গড়ার কারিগর মহাত্মা অশ্বিনী দত্তকে পাই, তাঁর ছাত্র দেবপ্রসাদ ঘোষকে পাই… দেবপ্রসাদের পিতা ঋষিতুল্য অধ্যাপক ক্ষেত্রনাথ ঘোষকে পাই। আর পাই শোভা ঘোষের নিজের পিতা ঢাকার নবাববাড়ির ডাক্তার দেবেন্দ্রকুমার বসুঠাকুরের আশ্চর্য ব্যক্তিত্বের কথা। শোভা সেই কতিপয় বালিকাদের একজন, ১৯০৩ সালে জন্ম নিয়েও যিনি ঢাকায় ইডেন স্কুলে শৈশব থেকে ম্যাট্রিক পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। পার্শি প্রিন্সিপাল, মেম দিদিমণিদের কাছে ইংরেজি শিক্ষা , বাংলা শেখা, অর্গ্যান বাজিয়ে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, সেই সময়ের ইডেন ইস্কুলে নবাব বাড়ির জেনানা মহলের কত মুসলিম মেয়ে বোর্খার অন্তরাল সত্ত্বেও আসতে পেতেন, জ্ঞানের আলো গ্রহণ করতেন, সে বিবরণ ও আমাদের বিস্মিত ও মুগ্ধ করে। নারীশিক্ষার যে ছবিটি শোভা ঘোষের কলমে আছে তা এক কথায় অনন্য।
স্বামী ও সংসারের বিষয়ে যখন শোভা লেখেন তাঁর পরিপূর্ণ কর্মময় জীবনের কথা, সে জীবনও কত না সৌভাগ্যময়, কেননা তা ঋদ্ধ লেখাপড়ায়। বিবাহিত কটি মেয়েকে ইস্কুলের ধাপ পেরবার পর কলেজে যেতে উৎসাহিত করা হত? শোভা বেথুন কলেজে সংস্কৃত অংক ও লজিক পড়তে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামীর ইচ্ছায়। এবং পড়াশুনোর ব্যাপারে স্বামীর দিক থেকে উৎসাহ ছাড়া আর কিছু পান নি। যদিও নিজের গৃহিণীপনার কাজে তিনি সমান উৎসাহে লেগে থেকেছিলেন। আলো কিন্তু ক্রমে আসছিল। দেবপ্রসাদের চার বোনের দুই বোন শান্তিসুধা এবং জ্যোতির্ময়ী ব্রাহ্মবালিকা বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন একইসময়ে। এই পরিবারটি যতটাই ব্যতিক্রমী হোক, বরিশালের এই পরিবার অবাস্তব নয়। বরং বলব, এই সময়ের যে লড়াইগুলি আলোকপ্রাপ্ত পুরুষ ও নারীদের লড়া হয়ে গিয়েছিল, তারই ফল আমরা পেয়েছি। দুই প্রজন্মের ব্যবধানে আমাদের কাছে উচ্চশিক্ষার সুযোগ এসেছে অনায়াসে।
অঙ্কের অধ্যাপক, আবার আইনি ডিগ্রিধারী দেবপ্রসাদ স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতেন পড়াশুনো নিয়ে, সাহায্য করতেন তাঁকে পড়া বোঝায়। শিক্ষক ছাত্রীর সম্পর্ক স্থাপন হয়েছিল তাঁদের মধ্যে। পরবর্তীকালে স্ত্রীকে নিয়ে ট্রামে চেপে নানা সভা সমিতিতে যেতেন। ট্রামে তখন মহিলাদের একেবারেই দেখা যেত না, কিন্তু সে বাধাও দেবপ্রসাদ ভেঙেছিলেন বলাই বাহুল্য। শোভার লেখায় পাই ১৯২০-২২ নাগাদ রামমোহন রায় লাইব্রেরির হলে রবীন্দ্রনাথের নিজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বর্ষার নতুন গান শোনাতে এসেছিলেন, যা শুনতে যান শোভা ও দেবপ্রসাদ। “জলচৌকীর উপর গরদের ধুতি পাঞ্জাবী ও উত্তরীয়-পরিহিত আগুনের শিখার মত দীপ্তিমান্‌ রবীন্দ্রনাথ উপবিষ্ট” । শুধু এই বিরল দৃশ্যেরই সাক্ষী ছিলেন না শোভা, গিয়েছিলেন চৌরঙ্গির এম্পায়ার থিয়েটারে রবীন্দ্রনাথের “বিসর্জন” নাটক দেখতেও। প্রায়শ ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে খ্যাতনামা লোকের বক্তৃতা শুনতে যেতেন ।
বিষয়গুলি যতখানি সহজ বলে আজ মনে হয়, ততখানি স্বাভাবিক হয়ত ছিল না সেই সময়ে যখন বাঙালি সমাজের অনেক মেয়েই চিরতরে থাকতেন নিজ শ্বশুরগৃহের চার দেওয়ালে বন্দী। কিন্তু এই যে কিছু কিছু পরিবারের হাতে তখন অনেকখানি পাল্টে যাচ্ছে পৃথিবী, কিছু কিছু মানুষের চোখে যখন স্বপ্ন, দুনিয়াটিকে পাল্টে নিজেদের ইচ্ছেমত গড়ে তোলার , এই মানুষগুলি না থাকলে আজকে আমাদের জীবন হত অন্যরকম।


এরকমই আর এক নারীর কলমে পাই । তিনি শান্তিসুধা ঘোষ। প্রথম মহিলা ঈশান স্কলার। গণিত বিষয় নিজে অধিগত করেছিলেন, তাইই, নারীর বিদ্যাচর্চার প্রসঙ্গে লিখেছিলেন, “গণিতশাস্ত্র অধিগত করবার মত সূক্ষ্ম প্রতিভা তাদের আদৌ নেই, এই জাতীয় একটা অপবাদ নারীজাতি সম্পর্কে ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছি, সেটা আমার কোনোদিনই হজম করতে ইচ্ছে হয়নি। আজ আত্মপ্রত্যয় বশে আই এ পরীক্ষায় অঙ্কে ভালো কয়ায় তার একটা হাতেকলমে পাল্টা প্রতিবাদ করার ইচ্ছে মনে জাগলো।“
এরপর তিনি যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাট্রিকুলেশনের নতুন পাঠ্যতালিকায় জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে ছেলেতে-মেয়েতে বিষয়ভিত্তিক পার্থক্য দেখেন, তাঁর মনে হয়, যে মেয়েদের বেলায় উচ্চশিক্ষা সঙ্কোচের গূঢ় অর্থ কেবল এটাই হতে পারে, যে সমান শিক্ষা আর জ্ঞানলাভের অধিকারী হলে নারীর স্বাধীনতা খর্ব করার উপায় আর সমাজের হাতে থাকবে না।
শান্তিসুধারই একটি প্রবন্ধের বিষয়, ‘বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার’। তিনি কেন বিষয়টি বেছে নিলেন? “কেননা, এ কথা সত্য , যে, আমাদের সমাজে বহু বিবাহিত জীবনে অশান্তির কালো ছায়া স্ত্রীর জীবনকে লক্ষ্যে বা অলক্ষ্যে আচ্ছন্ন করিয়া রহিয়াছে এবং ইহার প্রতিকার প্রয়োজন”
তিনি সওয়াল করেছেন, “নারীকে যদি বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার আইনতঃ কাগজপত্রে দেওয়াও যায়, তবুও তাহা কার্যত সফল হইবে না – যদতিন পর্যন্ত নারীকে সম্পত্তি ও উপার্জনক্ষমতায় পুরুষের সমান সুযোগ না দেওয়া যায়। “
এই শান্তিসুধাই, তাঁর উপন্যাসের এক চরিত্রের মুখ দিয়ে বলান, বিয়ে করলেই মেয়েদের মস্তিষ্ক চর্চার পক্ষে অলঙ্ঘ্য বাধা পড়ে। পৃথিবীতে যত কিছু বড় কাজ, তার খুব কমই বিবাহিত মহিলাদের করতে দেখা যায়। “আইনস্টাইন দরজা ভেজিয়ে নিরালা ঘরে নিজের গণিত গবেষণার বিপ্লব তরঙ্গে যখন দিশেহারা হয়ে থাকেন, তাঁর স্ত্রীকে তো তখন লক্ষ্মী বৌটি সেজে গৃহস্থালীর বন্দোবস্তে মন দিতে হয় – স্বামী তাঁর বিজ্ঞানমন্দির থেকে উঠে এসে কী খাবেন। … আমার খুব বিশ্বাস এর অভাবেই আইনস্টাইন তাঁর প্রথমা গণিতজ্ঞা স্ত্রীকে বরদাস্ত করতে পারলেন না। “
তিনি নিজের প্রবন্ধেও বলেছেন, ‘আমাদের সমাজে নারীর শুধু নারীরূপে কোনো স্থান নাই, সে হয় কুমারী, নয় সধবা, নয় বিধবা।‘
‘শাঁখা- সিঁদুর- ঘোম্‌টা’ নামের একটি প্রবন্ধে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘ স্বীকার করি, এগুলি দেখিতে সুন্দর লাগে… যদি বা তর্কের খাতিরে স্বীকার করিয়া লই, তবে সে সৌন্দর্য্যবৃদ্ধি কুমারীকালে করিলেই বা দোষ কী?কারণ, কুমারীকালে লাল টিপ পরার রীতি আছে…বিবাহ হওয়ামাত্রই এগুলি এক অভিনব রূপ ধারণ করে, অন্যথা করে না, ইহার কোন অর্থ হয়না। বধূবেশে এগুলিকে আমরা যে অনির্বচনীয় শ্রী বলিয়া মনে করি, ইহা আমাদের মনের সংস্কার। ‘…শাঁখা, সিঁদুর, অবগুন্ঠন, ইত্যাদি অশেষ প্রকারের নিদর্শন দ্বারা প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে তাহাকে বিবাহিত জীবন স্মরণ করাইয়া দিবার সূক্ষ্ম কৌশল উদ্ভাবিত হইয়াছে। পতির জীবনের অনুসারেই তাহার সমগ্র জীবন – এই ভাবটি নারীর মনের উপরে দুরপনেয়ভাবে বিস্তার করিতে ইহা বাস্তবিকই একটি অপরূপ মায়াজাল, স্বীকার না করিয়া সাধ্য নাই। …নারীমনকে স্বতন্ত্র মনুষ্যত্ব বিস্মরণ করাইয়া পতিসর্বস্ব করিয়া রাখিবার জন্যই প্রধানতঃ শাঁখা-সিঁদুরাদি প্রথার প্রবল প্রভাবের প্রবর্তন করা হইয়াছিল।‘
অন্য একটি কারণও তিনি তীক্ষ্ণ ধীশক্তিতে শনাক্ত করেছেন।
“অবিবাহিতকালে যে কোনও পুরুষ তাহার প্রতি লোভ করিতে অধিকারী…বিবাহ হইলেই সে গুড়ে বালি পড়ে, আর তাহার কেশাগ্র স্পর্শ করিবার অধিকার নাই, কারণ সে এখন অপরের সম্পত্তি। …। কাজেই কে কুমারী এবং কে সধবা, ইহার অতি পরিস্ফুট পরিচয় নারীর সর্বাঙ্গে না থাকিলে পুরুষের পক্ষে অসুবিধায় পড়িবার সম্ভাবনা – অর্থাৎ লোলুপ হইবার অধিকার আছে কিনা তাহা সে বুঝিয়া উঠিতে পারে না। সুতরাং শাঁখা সিঁদুর প্রভৃতি ট্রেডমার্কের প্রয়োজন একান্তই হইল।“
১৯৩৮ অর্থাৎ আশির বেশি বছর আগের এই লেখা…ভাবতে স্তম্ভিত লাগে না কি?


দ্বিতীয় তরঙ্গের পশ্চিমি নারীবাদ এ বাংলায় বাহিত হয়ে এসেছে কবিতা সিং হের কবিতায়, তারো পরে তসলিমা নাসরিন বা মল্লিকা সেনগুপ্তর শিক্ষিত এবং পরিশীলিত কলমের মাধ্যমে ১৯৯০ এর শুরু থেকে এর বিস্ফার মিলেমিশে গেছে বাজারি গ্রহণযোগ্যতায়। এর ফলে, আমরা ভুলে গেছি, আরো আগে, এই বাংলার জলেমাটিতেই, যে সব মেয়েরা প্রবল লড়াই লড়েছিলেন, কলমের ডগায় তুলে এনেছিলেন মেয়েদের চেতনাকে, সেই কবে, যখন মেয়েরা সত্যি সত্যিই রান্নাঘরের বাঁদী, রাতের অন্ধকারের শয্যাসঙ্গিনী, এবং সন্তানপালিকা মাত্র। এই চিরাচরিত, স্টিরিওটাইপ ভূমিকাগুলির বাইরে গিয়ে, বা যেতে চেয়ে , একদল মেয়ে কিন্তু তখনই শিক্ষায়, স্বদেশচেতনায়, অন্য এক মাত্রায় নিজেদের লেখালেখিকে তুলে নিয়েছিলেন।
ভাগ্যক্রমে, সেই সময়টা ছিল ১৯৪৭ পূর্ববর্তী। তাই হয়ত বা, তাঁদের বয়ানের সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী বা স্বাধীনতা আকাঙ্ক্ষী দেশপ্রেমের দেশাত্মচেতনার বয়ান মিলেমিশে যায়, যাতে তাঁদের কন্ঠস্বরে একটা আলাদা জোর দেখা যায়। উল্লেখ করা দরকার যে এই সময়টাতেই কিন্তু সেই সব মেয়েদের একাংশ স্বক্রিয় ভাবে দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামেও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, এমনকি সশস্ত্র সংগ্রামের দিকেও ঝুঁকেছেন। জেল খেটেছেন।
এঁদের কলম সত্যিই তখন বিপ্লবী, সর্ব অর্থেই। কেননা সেই সমাজে, যেখানে মেনস্ট্রিম বা সংখ্যাগুরু মেয়েদের বই পড়ার, লেখাপড়া করার, লেখালেখি করারও অধিকার প্রায় নেই ( যার প্রমাণ আশাপূর্না দেবী তাঁর সুবর্ণলতায় রেখে গেছেন), তখনই এই মেয়েরা নিজেরা পড়াশুনো করছেন, লিখছেন এবং পত্রিকা সম্পাদনার কাজও করছেন।
তখন মেয়েদের লড়াই শব্দটি এখনকার মত এমন জলে ভেজা পাঁউরুটি হয়ে ওঠেনি। তখনো মানুষের লড়াই কথাটিও ক্লিশে নয়। নিপীড়িত নিষ্পেষিত ভারতবাসী যেমন রাষ্ট্র আর সমাজকে নতুন চোখে দেখছে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে, তেমনি মেয়েদের নিজেদের দেখতে চাওয়াও। বিপ্লবী মেয়েদের কাগজে, কংগ্রেসি মেয়েদের কাগজ, মুসলিম মেয়েদের কাগজ, কমিউনিস্ট মেয়েদের কাগজ, সব ধরণের কাগজই এসেছে, এই সময়কালে।
একেবারে গোড়ায় কারা রচনা করেছেন? মনে করতে পারি আমরা, “পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব” নামে , স্বর্ণকুমারী দেবীর প্রবন্ধ, ১২৯৫ এর বৈশাখে, ভারতী পত্রিকায়। এই প্রবন্ধটি বাংলা আলোচনা জগতে প্রথম পশ্চিমী নারীবাদ এবং নারী আন্দোলনের কথা হাজির করে।
কৃষ্ণভাবিনী দাসের “স্ত্রীলোক ও পুরুষ” নামক প্রবন্ধ, এটিও ১২৯৬ তে প্রকাশিত হয়।
এর বেশ কিছুদিন পরে, বিংশ শতকের বিশ বা ত্রিশের দশকে, জয়শ্রী, মন্দিরা, সওগাত, পত্রিকার আগমন পথ খুলে দেয় অনেক মহিলার লেখার । যাঁদের বিষয়, বিশেষ ভাবেই , নারী বিষয়ক প্রশ্নগুলিকে তুলে ধরা।
সরলা দেবী ১৯৩১ সালে প্রস্তাব আনেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পার্টির ভেতরে পৃথক মহিলা কংগ্রেস তৈরির। তার যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছিলেনঃ “এই কংগ্রেস বঙ্গনারীর আত্মচেতনার মূর্ত বিকাশ, বাংলার পুরুষের আত্মচেতনার সহিত তাহার সম্পর্ক নাই। …বাংলার নারী তাহার জীবনের বিভিন্ন বিভাগে যে বৈষম্যমূলক ব্যবহার পাইয়া আসিতেছে তাহার ফলেই এই আত্মচেতনার উদ্ভব। “
এই সময়ের মেয়েদের দৃষ্টিভঙ্গীর দিকে যদি তাকাই, দেখব আপাতদৃষ্টিতে তাঁরা অনেক বিষয়েই একমত ছিলেন না। বহু বিষয় নিয়ে দুই নারী দুই আলাদা প্রেক্ষিত থেকে আলাদা যুক্তি সাজিয়েছিলেন, এই বিভ্রান্তি বোধ হয় প্রথম যুগের নারী আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পথ খুঁজতে খুঁজতে ধোঁয়াশার ভিতরে হারিয়ে যেতে যেতে পথ গুলিয়ে ফেলা, এ তো খুবই স্বাভাবিক।
যেমন, মেয়েদের শিক্ষা কেমন হবে? তারা কি পুরুষের সমান শিক্ষা পাবে ? না কি তাদের জন্য আলাদা একটা পাঠ্যক্রম তৈরি হবে?… এ বিষয়ে দুই নারীর সম্পূর্ণ ভিন্ন মত ছিল।
মিস আছিয়া মজিদ বলেছিলেন, “আমাদের স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যতালিকায় এমন সমস্ত বিষয়ের অবতারণা করা হইয়াছে যাহা নারীর পক্ষে সম্পূর্ণ অবাস্তব। …অঙ্ক জড়বিজ্ঞান প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিষয়গুলি সাধারণ মেয়েদের পরবর্তী জীবনে কোন কাজেই আসেনা, সুতরাং ঐ সমস্ত বিষয়ে মেয়েরা বৃথা সময়ক্ষেপ করিয়া থাকে। … মেয়েদের মনে স্পষ্ট চিন্তা এবং ধারণা করিবার শক্তি জাগরিত হইলেই যথেষ্ট। …দেশীয় ভাষায় সুন্দভাবে বলিবার ও লিখিবার অভ্যাস করিতে হইবে।“ (১৩৪০)
অন্যদিকে শান্তিসুধা ঘোষ লেখেন, “ অন্তরজীবনের সমৃদ্ধিসাধনের জন্য জ্ঞানের যে সর্বতোমুখী বিস্তারের আবশ্যকতা, মেয়েদের বেলায় তাহাতে এত কার্পণ্য ও কুন্ঠা কেন? মনের সমৃদ্ধির জন্য পুরুষের পক্ষে যে যে পাঠ অবশ্যশিক্ষণীয় বলিয়া বিবেচিত হইতেছে, মেয়েরা তাহা হইতে বঞ্চিত হইতে কোনমতেই রাজি নয়। … ছেলেরা অংক পারে আর মেয়েরা পারে না, অভিজ্ঞতায় জানি, ছেলেদের মধ্যে অঙ্ক সম্বন্ধে এমন নিরেটমূর্খ অনেক আছে, যাহারা কমপালসারি অঙ্ক উঠিয়া গেলে নিঃশ্বাস ফেলিয়া বাঁচিত”। অথচ মেয়েদের জন্য পৃথক পাঠ্যপ্রনালীর চল তো এই সেদিন অব্দিও ছিল। ছোটবেলায় মেয়ে ইশকুলে পড়তে পড়তে দেখেছি “হোম সায়েন্স” নামে একটা বিষয় , ১৯৭৬ সালে মাধ্যমিক বোর্ড তৈরি হবার আগে অব্দি ছিল। ভাগ্যক্রমে কালের গর্ভে চলে গেছে হোম সায়েন্স, কিন্তু আমরা মেয়ে ইশকুলে তখনো সেলাই শিখতাম ওয়ার্ক এডুকেশনে।
ঘুরতে ঘুরতে, বাঁক নিতে নিতে, উঠে এল নারীর বাচন। প্রথম যুগের প্রবাসীতে মেয়েদের নিয়ে নানা প্রবন্ধ লিখেছেন, লিখিয়েছেন তার পুরুষ সম্পাদক। কয়েক দশকের ভেতরেই, মেয়েদের সম্পাদিত মেয়েদের কাগজ “জয়শ্রী” বা “মন্দিরা” কূটতর্কে জড়িয়ে পড়েছে, পুরুষদের বাদ দেবার সম্পাদকীয় নীতি কতটা ঠিক, তা নিয়ে।
জয়শ্রীর জন্ম ১৩৩৮ বাংলা সনে। ‘জয়শ্রী’র পুরুষ বিবর্জিত সাহিত্য নিয়ে প্রতিষ্ঠাত্রী সম্পাদিকা লীলা নাগ লেখেন, “ কোন প্রয়াসের অভিনবত্ব চিরকালই সমালোচনার বিষয়ীভূত হইয়া থাকে। “ মেয়েদের কাগজ বলতেই সাংসারিক ব্যাপার, সেলাই রান্না উলবোনা নয়, এই ধারণা থেকেই জয়শ্রীর জন্ম। লীলা নাগই মৈত্রেয়ী দেবীর মত সদ্য লেখিকাকে নিয়ে আসেন সাদরে।
এর আট বছর পরে আসে মন্দিরা, বিপ্লবী মেয়েদের জেল থেকে বেরিয়ে এসে কাগজ করার প্রেরণায়। কমলা চট্টোপাধ্যায় বা কল্যানী দাসের মত বিপ্লবীদের হাত গড়া এই কাগজ।
১৯৪৮ সালে ঘরে বাইরে পত্রিকা প্রকাশ করেন মঞ্জুশ্রী দেবী। প্রথম সংখ্যার সম্পাদকীয়তে ঘোষিত হয়, কোন জেনানা মহল বানান এই পত্রিকার উদ্দেশ্য নয়, সমান অধিকারই এর একমাত্র লক্ষ্য।
কিন্তু এই কাগজ ছিল অন্যভাবে ব্যতিক্রমী। হকার নয়, যাঁরা লিখবেন তাঁরাই বিক্রি করবেন , নিজেরা বিক্রয় করে পাঠিকাদের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন এই কাগজ, এই ছিল প্রকল্প। নিজেরাই ছাপার কাজ দেখবেন মেয়েরা, বিজ্ঞাপনও আনবেন। একেবারে নিম্নবিত্তদের কাছে পৌঁছতে চান তাঁরা, এক কৃষক মহিলার চিঠি ছেপে তা প্রমাণও করেন। তবে এমন সব নিম্নবিত্ত মেয়েরা অভিযোগ জানিয়ে পত্রিকায় চিঠিও দেন, যে, খাবার তৈরির নির্দেশগুলি ঠিক নিম্নবিত্তের সাধ্যের মধ্যে নয়।
আবার সওগাত নামক পত্রিকার পুরুষ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন দোরে দোরে ঘুরেছিলেন, লেখিকাদের রচনা ও ছবি সংগ্রহের আশায়, ১৩৩৬ সনে। সেই কাগজে বেগম রোকেয়া লেকেহ “ অলংকার না ব্যাজ অফ স্লেভারি”-র মত প্রবন্ধ। একজন ফজিলতুন্নেসা, বোরখা ছেড়ে শাড়ি পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার জন্য ইটপাটকেল সহ্য করেছেন।
এই সবের পরেও আমরা কত সহজেই ভুলে যেতে পারি এই দীর্ঘ সময়টা। আমরা শুধু মনে রাখি রামমোহন বা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-এর অবদান, তাও , মুখ বেঁকিয়ে বলতে শিখিঃ সেযুগের রিফর্ম তো শুধু বউ যাতে প্রেমপত্তর লিখতে পারে, আর ভাল প্রেমালাপ করতে পারে, তাইই, নব্য ইংরিজিশিক্ষিত বাবুদের বিলাসমাত্র!
আমরা ভুলে যাই মধ্যবর্তী এই অসংখ্য বিপ্লবিনী নারীকে, যাঁরা হয়ত কখনো সখনো সমালোচিত হবেন তাঁদের “ডবল স্ট্যান্ডার্ডের “ জন্য, যেভাবে বেগম রোকেয়া কেন স্বামীকে মান্য করতেন তা আলোচিত হয়েছিল, একদা।
এঁদের তৈরি করা পথ দিয়ে হেঁটে গেছে আজন্ম কতটাই না বেশি স্বাধীনতা ভোগ করা আমাদের স্বাধীনতা উত্তর প্রজন্মগুলি।
সেই কারণেই বলছিলাম বাঙালি আত্মবিস্মৃত। আসুন আবার পুরন লেখাগুলি খুলে খুলে পড়ি। অন্তত ভুলে যাব না , যে, কী বিশাল এক অগ্রগতি সম্ভব করে গিয়েছিলেন আমাদের ঠাকুমা দিদিমারা। যাঁদের নিকেলের চশমা চোখে দিয়ে রামায়ণ মহাভারত পড়ার স্মৃতিটুকুই সব নয়… তার চেয়ে আরো অনেক জরুরি তাঁদের মধ্যেকার সেই সব আগুনের স্ফুলিঙ্গ, যে স্ফুলিঙ্গের ভূমিকা আজো অম্লান। সংসারকে ধারণ করে, রীতিমত গৃহিণীপনা করেও, তাঁরা নিজেদের স্বায়ত্ত হারান নি, বরং নিজেদের স্বায়ত্তের জন্য অনুক্ষণ চেষ্টা করেছেন।

Yashodhara Ray Chaudhuri is a poet hailing from Kolkata, West Bengal, India. Since 1993, she has published over 12 collections of poetry and short stories. She was awarded the Krittibas Puroskar in 1998 established by Sunil Gangopadhyay and also the Anita Sunilkumar puraskar instituted by Bangla Akademy in 2006. She studied philosophy from Presidency College, Kolkata and joined Indian Audit and Accounts Service in 1991. She is also a translator of French.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

শুদ্ধস্বর
error: Content is protected !!