বুবস এন্ড বিউটি
শিরীষতলার এই জায়গাটি নির্জনই থাকার কথা। অথচ আামাদের চোখের সামনে দুইটা কুকুর সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে একে অন্যের ওপর এভাবে চড়ে বসবে কে জানত!
সামনে-পিছে অসংখ্য কৌতূহলী চোখ সেই দৃশ্য দেখে বিব্রত হচ্ছে। পথচারী নারী-পুরুষের জন্য এই দৃশ্য বিব্রতকর। এরইমধ্যে পথশিশু একটা কোত্থেকে উড়ে আসে যেন। তারপর দৃশ্যটা দেখতে দেখতে ক্ষ্যাপা মুডে তালি দিতে শুরু করে। তার পরনের মলিন ও আধছেঁড়া গেঞ্জিটা উত্তেজনাবশে এক ঝটকায় সে খুলে ফেলে। গেঞ্জিটা ডান হাতে নিয়ে শূন্যে নাড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া আফ্রিকার শিশুদের মতো পা ও কোমর দুলিয়ে নাচতে থাকে।
পাশ থেকে একজন ভদ্রলোক বিরক্ত হয়ে তাকে থামানোর চেষ্টা করে, ‘এত নাচানাচির কী হইছে?’ তারপর নিজের ক্ষোভ ও বিরক্তি গোপন করার কথা ভুলে গিয়ে প্রায় উচ্চস্বরেই বলে ফেলে, ‘চোদনের আর টাইম পাইল না শালার কুত্তা!’
কিন্তু এর ফলে শিশুটির উল্লাসে ভাটা পড়ে না। সে তার আফ্রিকান নৃত্যের তালেও কোনো ছেদ ঘটায় না। কোমরে আটকানো প্যান্ট কিংবা লুঙ্গির বাঁধন শক্ত করতে করতে কোনো কোনো পথচারী কুকুর দুইটার উত্তেজনায় ভাগ বসায়। তাদের মাথায় ঘুরপাক খাওয়া রাজ্যের মানসিক চাপ কুকুরের সঙ্গমদৃশ্য দেখে খানিকটা কমে। শরীর-মন খানিকটা চাঙ্গা করে কুকুরগুলোকে পাশ কাটিয়ে তারা গন্তব্যে ফিরে যায়। আর সালোয়ারের ওপর ওড়না ঠিকটাক মতো আছে কি না দেখতে দেখতে যেসব নারী এই প্রশস্ত রাস্তা দিয়ে এগোচ্ছিল, তারাও এই দৃশ্য দেখে যারপরনাই বিব্রত হতে শুরু করে।
সিআরবি এলাকার এই মোড়ে এমন ঝিকঝাক পরিবেশে এভাবে কারও কারও সন্ধ্যা নামতেই পারে। আমাদের চোখ তারপরও কুকুরের এই সঙ্গমদৃশ্যকে ছাড়িয়ে আটকে যায় এই নির্জনতম এলাকাটির আরও নির্জনতম একটি স্থানে।
মোহগ্রস্ত আর আলো ঝলমল সাইনবোর্ডে যে নামফলকটি চোখে পড়ে, সেই ‘বুবস এন্ড বিউটি’ থেকে একটা সুগন্ধি বাতাস গায়ে এসে ঝাপটা মারে। আফ্রিকান নৃত্যরত শিশুটির সাথে ততক্ষণে আরও দুইটি শিশু আঁতাত করেছে। ইতিপূর্বে ‘বুবস এন্ড বিউটি’ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে চলেছে। শহরের মানুষগুলোর রাতের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে। তাদের চায়ের আড্ডার মুহূর্ত দীর্ঘ হচ্ছে।
আপাতত এই মুহূর্তে দু-জন পথচারীকে দেখা যাচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতেই তারা পরস্পরের সাথে তুমুল তর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে। একজনকে ক্ষোভ ঝাড়তে ঝাড়তে বলতে শোনা যায়, ‘এইটা কি মগের মুল্লক ভাই? কী হইতেছে এসব?’
পরক্ষণেই অন্যজন বাধ সাধে, ‘তাতে আপনার-আমার কী? দেশে আইন-সালিশ সবই আছে। তারা কি কারও গোয়া মারছে?
তাদের আলাপ মূলত চট্টগ্রামের ফুসফুস বলা হয় যে জায়গাটিকে, সেই সিআরবি এলাকার প্রাণ-প্রকৃতিতে নেমে আসতে থাকা সম্ভাব্য বিপর্যয় নিয়ে। জায়গাটি বাংলাদেশ রেলওয়ে কতৃর্পক্ষের। তারা এখানে একটি বিশেষ ধরনের হাসপাতাল নির্মাণ করতে চায়। এর ফলে শতবর্ষী অসংখ্য গাছসহ পুরো এলাকাটি তার সবুজ প্রকৃতি হারাবে। নাগরিকদের বৃহত্তর স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন ও সুবিধাপ্রাপ্তির নিমিত্তে এইটুকু ছাড় দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
দুই পচথারীর একজন অপরজনের ক্ষোভের বিপরীতে এই কথাটাই বোঝানোর চেষ্টা করছে, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য, হাসপতাল এসব সুবিধা তো বাড়াতেই হবে। জায়গা তো আর আসমান থেকে নেমে আসবে না।’
তাদের একজন পুনরায় বিরক্তি দেখায়, ‘তো কী বালটা হবে এখানে? নামটাও দেখেন রাখছে একখান, বুবস এন্ড বিউটি!’
অন্যজন উত্তর দেয়, ‘এই যুগে একটু ড্যাশিং ও ক্রেজি নাম না রাখলে পাবলিক খায় না। হাসপতাল হলেও ওরা তো ব্যবসাই করবে। চ্যারিটি তো না।’
অপরজন প্রত্যুত্তরে আরও বেশি বিরক্তি প্রকাশ করে, ‘বালের যুক্তি দেখান মিয়া। এভাবে চলতে দিলে এদেশের পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতির বারোটা বাজানো কেউ ঠেকাতে পারবে না।’ তারপর পুনরায় বলে, ‘বড়লোকরা শুধু খাওন আর চোদনের মধ্যেই থাকে না। তাদের আরও অনেককিছু লাগে। দেখেন না, কী অবস্থা করতেছে দেশটার। পাহাড় গিলে খাচ্ছে। নদী শেষ করে দিচ্ছে। মানুষের শ্বাস নেওয়র জায়গাগুলোও কব্জা করে ফেলছে’।
এই দু-জন পথচারী পরস্পরের সহকর্মী নাকি এমন বিষণ্ন সন্ধ্যার জগিং পার্টনার, তা বোঝা যাচ্ছে না। হয়তো অন্য কোনো বিশেষ সম্পর্কে পরস্পরের পূর্বপরিচিতও হতে পারে। তকে দু-জনের সম্পর্ক যে বেশ উষ্ণ তা তাদের আলাপেই বোঝা যায়।
বুবস এন্ড বিউটিতে কী কী ঘটে কিংবা কী কী বেচাকেনা হয় বা হবে, তার কোনো ইঙ্গিত তাদের উত্তপ্ত চলমান আলাপ থেকে আন্দাজ করা না গেলেও সঙ্গমরত কুকুর ও আফ্রিকান নৃত্যরত শিশুদের ফূর্তিতে ব্যাঘাত ঘটে না।
সবুর নামের সেই শিশুটি, যে কি না ক্ষ্যাপা নৃত্য দিয়ে সবার বিরক্তি দ্বিগুণ করেছে, সে সোৎসাহে চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘আটকাইয়া গেছে! কুত্তা দুইটা একলগে আটকাইয়া গেছে’!
তারপর সঙ্গী বাকি দুই পথশিশুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মেলে কিছু একটা জানার জন্য অপেক্ষা করে।
সবুরের অন্য দুই সঙ্গীর একজন তাকে বলে, ‘মনে হয় জ্বিনে ধরছে দুইটারে। সামনে আগাইস না।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা। বাকি দু-জনের কানে যে তার পরামর্শ ঢুকেনি, তা বেলালের উৎসুক চেহারার দিকে তাকিয়েই বক্কর বুঝে ফেলে।
সবুরের এক সঙ্গীর নাম বেলাল। অপর সঙ্গীর নাম বক্কর। তারা সারা সন্ধ্যা এভাবে তুমুল হইচই করে কাটাবে। সন্ধ্যার পর ‘ডান্ডি’র ভোজ তাদের জীবনকে রঙিন করে তুলবে।
সবুর এইবার বেলালকে জিজ্ঞেস করে, ‘মাল কত দিয়ে কিনলি রে’?
বেলাল অদৃশ্য কোনো দোকানিকে লক্ষ্য করে ক্ষোভ ঝাড়ে, ‘এক ডিব্বার জন্য ৭০ টাকা খসাইছে খানকির পোলা’।
সবুর তারপরও বেলালকে দুই কথা শুনিয়ে দেয়, ‘চোদনার পোলা, তোর কাছ থেকে খালি বেশি নেয় সবাই। আমরা গেলে তো দুই ডিব্বা আশি টাকা দিয়া পাই।’
কিন্তু ঘটনা তার বাইরেও কিছু আছে। কোনো এক যুগে পাওয়া গেলেও দুই ডিব্বা যে এখন আর আশি টাকায় পাওয়া যায় না, এটা ওরা জানে। কিন্তু দশ টাকা বেশি খসানোর কষ্ট ভুলতেই যে সবুর এমন কথা বলেছে, সে কথা তিনজনই বোঝে।
যে হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে নিয়মিত মাল নেয়, সেই দোকানের ছোকরাটাকে মালিক রহমত কাকা খেদিয়ে দিয়েছে কদিন আগে। তাদেরকেও ভিড়তে দেয় না দোকানের আশেপাশে। ফলে ড্যান্ডির ডিব্বা জোগাড় করতে ইদানীং ভালোই প্যারা নিতে হয়।
তিনজনই গাড়ির টায়ারের টিউবের ফুটো সারানোর কাজে মিস্ত্রীদের ফুটফরমায়েশ খাটে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দোকান থেকে মাল নেয়। এই আঠালো জিনিশ টায়ারের টিউবের ফুটো সারানোর কাজে ব্যবহার হয়। রহমত কাকা তাদের নেশার বিষয়টা জেনে যাওয়ার পর তার দোকান থেকে মাল নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
বাড়তি টাকা খসানোর কষ্টটা সাময়িকভাবে ভুলে দিয়ে তারা তিনজন ডিব্বা থেকে আঠালো হলদু জিনিসগুলো অভ্যস্ত ভঙ্গিতে বের করে নিজেদের কাছে রাখা পলিথিনের ভেতর পরিমাণ মতো ঢোকায়। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এই আঠালো গাম যে ধোঁয়ার মতো উড়তে থাকবে। তারপর তাদেরকে স্বপ্নের রাজ্যে উড়িয়ে নিতে শুরু করবে। সেই উত্তেজনা তিনজনের মধ্যেই সংক্রমিত হতে থাকে।
বেলালের মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বের হয়, ‘কী পিনিকরে’!
বেলাল যখন ওড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর সবুর যখন পুনরায় আফ্রিকান বালকের মতো নৃত্যের তালে তালে মত্ত হওয়ার কথা ভাবছে, তখনও এই নির্জন জায়গাটি ধরে চলাফেরা করতে থাকা বিভন্ন কিসিমের পথচারীদেরকে বিব্রত করার জন্য কুকুর দুইটি তাদের সঙ্গমের আরও গভীরে যেতে থাকে।
যে দু-জন পথচারী, যারা পরস্পরের সাথে অদৃশ্য এক রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে তুমুল তর্কে জড়িয়ে পড়েছিল, তারাও তখনও আলাপের বিষয় থেকে সরে আসেনি। আলো জ্বলমল সাইনবোর্ড থেকে তারা নিজেদের দৃষ্টি ও আলাপ তখনও সরাতে পারেনি।
কেন নগরীর এই ফুসফুসটাকে কেটেকুটে সাবাড় করার তৎপরতা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মাথায় এলো মঞ্জু শেখ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। দুজনের মধ্যে যিনি অপেক্ষাকৃত উচ্চস্বরে ও অধিক কর্তৃত্ব নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন তার নাম মঞ্জু শেখ আর যিনি তার কথার প্রত্যুত্তরে কিছু না কিছু না বলতে তো হবেই, এই ভেবে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তার নাম মামুন আব্দুল্লাহ।
তারা একে অপরের অফিস কলিগ নন, কেবল পূর্ব পরিচিত বললেও ভুল হয়। মূলত দুজনের পরিচয় এই জায়গাটিকে কেন্দ্র করেই। নিয়ম করে প্রায় বছর কয়েক ধরে এই রাস্তাটিতে তাদের এমন আলাপ চলে আসছে। কখনও ভোরে নামাজের পর থেকে একটি ঘন্টা কিংবা কখনও সন্ধ্যার একটু আগে বা পরে তাদেরকে এভাবে কেউ কেউ খবু ব্যস্ত ভঙ্গিতে হাঁটতে কিংবা দৌড়াতে দেখে। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় এই যে নির্মল বাতাসের খোঁজে আসা, বিশুদ্ধ অক্সিজেনের তালাশ করা, সব কি তাহলে উচ্ছন্নে যাবে?
মঞ্জু শেখ একটি সরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। আর মামুন আব্দুল্লাহ পেশায় কলেজ শিক্ষক। নগরের সরকারি একটি কলেজে তিতু হওয়ার পর থেকেই এই জায়গায় তিনি নিয়মিত হয়েছেন। সেই সূত্রেই মঞ্জু শেখের সাথে তার ঘনিষ্টতা। অর্থাৎ দুজন পরস্পরের জগিং পার্টনার বলাটাই যথাযথ। তারা দুজনই কোনো না কোনোভাবে দুইটি রাষ্ট্রীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের খুঁদকুড়ো খেয়ে জীবন নির্বাহ করেন। কিন্তু মানুষের মধ্যে যে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, যেভাবে নিজেদের চেনানোর দায় একজন মানুষ ভেতর থেকে অনুভব করে, সেখানে কার জীবিকা কী, কার ঘাড়ের কয়টি রগ রাষ্ট্রের কাছে বন্ধক থাকে, তা সবসময় নিরূপণ করা যায় না। ব্যক্তির দাসত্বকে বিবেক ও চিন্তা মাঝেমধ্যে টলিয়ে দেয়। ধাক্কা দিয়ে দূরে সারিয়ে রাখে মুহূর্তের জন্য। ফলে কোনো সরকারি অফিসে নিষ্ঠার সাথে ঘুষ গ্রহণ করা লোকটিও রাস্তার জ্যামে আটকে পড়ে দু-চারটি বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশের সাথে সাথে দেশটা রসাতলে গেল বলে পাশের সিটে বসে থাকা চালকের মুখ থেকে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ানো প্রত্যক্ষ করে।
আপাতত সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মঞ্জু শেখ ও সরকারি কলেজের শিক্ষক মামুন আব্দু্ল্লাহর মধ্যে চলতে থাকা উড়ন্ত আলাপচারিতাকে কোনোভাবে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। শিরীষতলার বাতাসে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের দেখা মেলে একথা যেমন সত্য, তেমনি আর কদিন পর প্রকৃতির দেওয়া অক্সিজেনের বদলে এখানে সিলিন্ডারের অক্সিজেন বেচাকেনা হবে, তাদের এই আশঙ্কাও সত্য।
মঞ্জু শেখের গলার স্বর আরও খানিকটা চড়া হয়, ‘ধরেন, কাল বাদে পরশু গোটা জায়গাটা ‘বুবস এন্ড বিউটি’র নামে ওরা দখল করে নিল। বিশাল বিশাল ইট-পাথরের গার্বেজ তৈরি করল। ওষুধের দোকান বসালো। বড়লোকদের গাড়ি রাখার জন্য পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করল। তাতে শহরের সাধারণ মানুষের কোন লাভটা হবে বলেন তো?’
তার কথার প্রত্যুত্তর মামুন আব্দুল্লাহ সহসা দেয় না। তার চোখের সামনে এই সবুজ ও নির্জন জায়গাটা হঠাৎ হাহাকার করতে শুরু করে। অসংখ্য পাখি যেন শতবর্ষী গাছগুলোতে জড়ো হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রশস্ত রাস্তার দুপাশের নির্জনতাকে উপেক্ষা করে তারা কিছু বলতে চাইছে সমস্বরে।
ঔপনিবেশিক আমলের তৈরি এই সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিংকে ঘিরে এখনও টিকে আছে শতবর্ষী অনেকগুলো গাছ। তাদের ভবিষ্যৎ কী হতে যাচ্ছে? অবিভক্ত ভারতের বেঙ্গল এন্ড আসাম রেলওয়ের সদর দপ্তর হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল সিআরবি ভবন। সোয়া একশো বছর ধরে ভবনটিকে পাহারা দিচ্ছে গাছগুলো। তারা কি ফুরিয়ে যাচ্ছে? তাদের আয়ুরেখা কি শেষ হওয়ার পথে?
কলেজ শিক্ষক মামুন আব্দুল্লাহ তার জগিং পার্টনার মঞ্জু শেখের কথার প্রত্যুত্তর না দিয়ে আচমকা থেমে যায়। তারপর মঞ্জু শেখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, ‘বিশ্বব্যাপী ব্রেস্ট ইমপ্লান্টস মার্কেটের সাইজ কত সে বিষয়ে আপনার কি কোনো ধারণা আছে?’
তারপর সঙ্গীর জবাবের অপেক্ষা না করেই বলে, ‘এখনই এটি বিশ্বব্যাপী কয়েক বিলিয়ন ডলারের বাজার। তাও কয়েকটি নির্দিষ্ট দেশ ও অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। কিন্তু আগামী দেড়-দুই দশকের মধ্যে এই মার্কেট বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায় পরিণত হবে। এদেশের এক্সপোর্ট প্রোডাক্ট এখনও যে ডাইভার্সিটির দিকে যেতে পারেনি বলে আপনারা প্রায়শ হাহুতাশ করেন, ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগ নিচ্ছে। ক্ষতি কী?’
নতুন হাসপাতাল তৈরি হলে পুরনো এই হাসপাতালের বিশেষ কোনো পরিবর্তন আসবে না। কারণ এটির সাথে নতুন হাসপাতালের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি লিজ দেওয়া হচ্ছে একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে। এটি হবে ব্যতিক্রমী একটি হাসপাতাল। এখানে মুমূর্ষু রোগীর ভাগ্য ফিরবে না। এখানে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার কোনো সুযোগ থাকবে না।
দু-জনের গলার স্বরে সন্ধ্যার নির্জনতা ভর করে। সিআরবি মোড় থেকে সড়কগুলো টাইগার পাস, কদমতলী ও জিএম সাহেবের বাংলোর দিকে আলাদা আলাদাভাবে বিস্তৃত হয়েছে। দুপাশে শতবছর ধরে এলাকাটিকে আগলে রেখেছে বিশালাকায় গাছগুলো। পাশে খালি জমি। একপাশে রেলওয়ের পুরনো হাসপাতালটি জীর্ণভাবে দাঁড়িয়ে আছে। মলিন ও গরিবি চেহারা নিয়ে কয়েক দশক দরে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রেখেছে হাসপাতালটি।
মঞ্জু শেখের গলার স্বর আরও চড়া হবে কি হবে না, এই ভাবনা নির্জন রাস্তার পাশে চরম মৈথুনে থাকা কুকুর দুইটা কিংবা ড্যান্ডির নেশায় বুদ হতে থাকা তিন পথশিশুর কিছু যায় আসে না।
মানুষ ও পশুর মধ্যে ঘটতে থাকা এই বিব্রতকর ও হাস্যরসাত্মক ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ‘বুবস এন্ড বিউটি’র আলো ঝলমল সাইনবোর্ড পেরিয়ে তারা কোথাও যেতে পারে না।
ছয় একর বিস্তৃত জায়গাটি রেলওয়ে কতৃর্পক্ষ এদেশের বড় একটি পুঁজিপতিওয়ালার কাছে লিজ দিয়েছে। তারা এখানে নারীদের বক্ষবর্ধনের নিমিত্তে একটি পূর্ণাঙ্গ, আধুনিক ও বিশ্বমানের হাসপতাল তৈরি করবে।
মঞ্জু শেখ অনুভব করে তার সামনে-পেছনে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য একটি বিশাল লাইন তৈরি হয়ে গেছে। বিত্তশালী নারী-পুরুষগুলোর গন্তব্য অদৃশ্য ও রহস্যময় এক সাইনবোর্ড লাগানো দালানের দিকে। ওটা একটি হাসপাতাল, যার নাম, ‘বুবস এন্ড বিউটি’।
শতবছরেরও বেশি সময় আগে নির্মিত হওয়া পুরনো হাসপাতাল ভবনটি আচমকা মঞ্জু শেখের চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। তারপর জায়গাটিতে কিলবিল করতে শুরু করে অসংখ্য বিষাক্ত সাপ।
তার মাথার ভেতর ঘুরপাক খেতে থাকে জগিং পার্টনার মামুন আব্দুল্লাহর সেই অমোঘ বাক্য, অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী নারীদের বুবস ও পুরুষদের ক্যান্ডির সৌন্দর্য বর্ধনের বাজার প্রসারিত হতে শুরু করেছে, তাকে ধরার এখনই উপযুক্ত সময়।
নর্থ আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দর্জিগিরি আর খয়রাতি সুবিধা নিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন আয় করলেও আমাদের প্রোডাক্ট ডাইভার্সিটির করুণ ও বেহাল দশা কাটাতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে নিতে হবে কঠিন সিদ্ধান্ত। নারীদের বক্ষের সৌন্দর্যবর্ধন মূলত বৈশ্বিক দৃষ্টকোণ থেকে ভবিষ্যতের একটি আকর্ষণীয় বাজার। ‘বুবস এন্ড বিউটি’ দাঁড়িয়ে গেলে এটি বাংলাদেশি একটা ব্র্যান্ড হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। এটি ফ্রন্টলাইন হাসপাতাল হলেও মূলত এটিকে কেন্দ্র করে রিলেটেড পণ্যের ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে। এই অভিনব বিজনেস আইডিয়াকে কোনোভাবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ হেলায় হারাতে চায়নি। আমাদের দেশের ধনীক শ্রেণিদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের নারীরাও কমমূল্যে এখান থেকে সেবা পাবেন। শুধু তা-ই নয়, এটাকে কেন্দ্র করে তৈরি হবে একটা ইক্যুইপড সাপ্লাই চেই সিস্টেম। বৈশ্বিকবাজারে যে অবারিত দুয়ার খুলে যাবে, তাতে বাংলাদেশের শিল্পপতিররা নিজেদেরকে যুক্ত করতে পারবেন অনায়াসে।
উজ্জ্বল সাইনবোর্ডের আলোতে মঞ্জু শেখ ও তার জগিং পার্টনার মামুন আব্দুল্লাহ যখন দেশের জন্য ফরেন কারেন্সি আর্নিংয়ের অভিনব এই উপায়টি নিয়ে ভাবিত ও ক্লান্ত, তখন দূরে তিন পথশিশু ড্যান্ডির নেশায় বুদ হয়ে নিজেদের বুবস ও ক্যান্ডি উন্মুক্ত করে এক গভীর জগতে প্রবেশ করে।
তাদের এই স্পেস ট্রাভেলিংকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এতক্ষণ ধরে যে দুইটা কুকুর নিজেদের মৈথুনে স্বর্গসুখ অনুভব করছিল, তারাও আচমকা মূল গল্পে প্রবেশ করে।
সবুর নামের পথশিশুটা, যে কি না ড্যান্ডির নেশায় দুই বন্ধুর সাথে বুদ হয়ে আছে, সে আচমকা তার কাছে থাকা গাড়ির টায়ারের টিউব কাটার ধারালো অস্ত্রটা দিয়ে সঙ্গমরত কুকুর দুটোর গোপনাঙ্গ বরাবর কোপ দিয়ে বসে।
তারপরের দৃশ্যটা খুবই ভয়ঙ্কর।
দুইটি স্বর্গসুখ উপভোগরত কুকুর মর্তে্যর এক নেশাগ্রস্ত শিশুর ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিচ্ছিন্ন হতে হতে মানুষের মতো করে চিৎকার করতে থাকে।
তক্কে তক্কে নিজেদের মধ্যে তর্ক করতে থাকা দুই পথচারী মঞ্জু শেখ ও মামুন আব্দুল্লাহর বুকের ভেতরটাও এই গগণবিদারী চিৎকারে কেঁপে ওঠে।
এমন হিংস্র কাজটি করে নেশার গমকে উদ্ভ্রান্ত তিন পথশিশু হু হু করে হাসতে থাকে। তারপর সমস্বরে চিৎকার করতে থাকে, পিনিক, পিনিক!
কয়েকটি শতবর্ষী গাছ থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল টপটপ করে ঝরে পড়ে জায়গাটি ভিজিয়ে দিতে থাকে।
শিরীষতলার নির্জন রাস্তাটি খানিকটা অবহেলা নিয়ে দৃশ্যটির প্রত্যক্ষ করে।
প্রশ্নোত্তর
শুদ্ধস্বর: গল্প লেখার ব্যাপারে আপনার তাড়নার জায়গাটা কোথায়? অর্থাৎ কোন বিষয় এবং ঘটনাগুলো আপনাকে গল্প লেখার জগতে পৌঁছে দিলো?
ফজলুল কবিরী: এ গল্পটা অনেকটা অন্যান্য লেখকদের মতোই। শৈশবেই বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়। এগারো-বারো বছর বয়স থেকেই অসংখ্য বই পাঠের মধ্যে ঢুকে পড়ে। বিচিত্র সব বিষয়ের বই। ধীরে ধীরে পাঠ-রুচিতে পরিবর্তন আসে। কিন্তু পাঠ থামেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালীন নিজেদের সমৃদ্ধ করতে ছোটকাগজের সাথে সম্পৃক্ততা তৈরি হয়। এভাবে গত দুই দশকে একটু একটু করে তৈরি হয়েছে লেখালেখিতে নিজের বলয়।
শুদ্ধস্বর: কীভাবে আপনার ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং অভিজ্ঞতা আপনার গল্পকে আকার দেয়?
ফজলুল কবিরী: ব্যক্তিগত যোগাযোগ শুরুতে যেভাবে একজন লেখককে তাড়িত করে, ধীরে ধীরে সে উত্তেজনা হ্রাস পায়। লেখক হিসেবে গভীর ও বিকল্প ভাবনার জায়গাটাই আমার পছন্দ। ফলে দৈনিক কাগজের ফরমায়েশি লেখা তেমন লেখাই হয়নি। শুরুতে ছোটকাগজেই বেশিরভাগ গল্প ও প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়েবজিনেও লেখার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মূলত আগে লিখি। তারপর ছাপানোর কথা ভাবি।
শুদ্ধস্বর: আপনি কি মনে করেন সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রভাব কথাসাহিত্যের উপর রয়েছে বা থাকা উচিত? আপনার অভিজ্ঞতা এবং পঠনপাঠনের আলোকে বলুন।
ফজলুল কবিরী: যেকোনো বাস্তবতাতেই সাহিত্য সমকালীন রাজনীতি ও নিপীড়নের মুখোমুখি হয়। ফলে শুধু কবিতা, আখ্যান কিংবা দর্শনের ফাঁদ তৈরি করাই লেখকের উদ্দেশ্য নয়। লেখকের থাকে রাজৈনৈতিক প্রজ্ঞা ও নিজস্ব কিছু গল্প। কিন্তু প্রথাগত নয়। সেসব গল্পেও বাক্যের সাথে চরিত্ররা হাঁটে। কিন্তু পাঠকের অভ্যস্ত রুচির মতো নয়। এরা লেখকের মনোজগতে বাস করা আরেকটি জীবনের সাক্ষ্য বহন করে। মাঝেমাঝে লেখক সেসব চরিত্রের সাথে কথা বলেন। বাস্তব জীবনে তাদের সাথে মোলাকাত করেন। সফল চরিত্রগুলো লেখককে ছাপিয়ে পাঠককেও গ্রাস করে সময়ের সাথে সাথে। সমকাল লেখকের ঢাল। ভবিষ্যতের নির্মাণ লেখকের আরাধ্য। যেকোনও রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও অসাম্যের বিপক্ষে লেখকের যে অবস্থান তার রসদ সমাকলীন রাজনীতি ও শাসকদলের বিচ্যুতিকে প্রশ্ন করতে করতেই লেখক খুঁজে থাকেন।
শুদ্ধস্বর: এমন একটি ছোটোগল্প সম্পর্কে বলুন যা আপনাকে কাঁদিয়েছে বা আপনার চিন্তা ও বোধকে প্রচণ্ডভাবে ধাক্কা দিয়েছে।
ফজলুল কবিরী: আমার একটি গল্প আছে। গল্পটির নাম ‘মানুষজন্মের বেড়ি’। ঘাতকের হাতে অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর পর কোনও এক বিষণ্ন বাস্তবতায় গল্পটি লেখা হয়। এটি এখনও আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গল্প নিজস্ব পাঠ ও বিবেচনায়। এর বেশি কিছু আর বলতে চাই না। অনেকই তো বলা হয়। বাড়তি কথা কোনোকিছুই পরিবর্তন করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না একটা জাতি চিন্তা ও দর্শনে স্বচ্ছ ও পরিমিত হতে পারবে।
শুদ্ধস্বর: আপনার গল্প লিখতে আপনি কীভাবে কাঠামো, ভাষা এবং ব্যাকরণ নির্মাণ/ব্যবহার করেন? আপনি কি নিজস্ব ফর্ম গড়তে এবং ভাঙতে অভ্যস্ত?
ফজলুল কবিরী: প্রচল যা কিছু, তার সবকিছুই হয়তো ছুড়ে ফেলার মতো নয়। কিন্তু লেখকের কাজ অভ্যস্ত রুচির বিপরীতে গিয়ে নতুন ভাবনা ও আঙ্গিকের সন্ধান করা। ফলে আমার ছোটোগল্পের প্রায় সবকিছুই নতুন ও অভিনব চিন্তার তালাশ করে গেছে। পাঠকের অভ্যস্ত রুচিকে হটিয়ে, তাদের আরামের জায়গাটিকে বিপর্যস্ত করে, নতুন সত্য ও বাস্তবতার মুখোমুখি করাই আমার সাহিত্যসংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।
শুদ্ধস্বর: আপনার কাছে একটি সার্থক ছোটোগল্পের মূল উপাদান কী?
ফজলুল কবিরী: নতুন চিন্তা। চিন্তাই সাহিত্যের প্রাণভোমরা। চিন্তারও একটা জীবনচক্র আছে। সব লেখক সেটি বুঝতে পারেন না। ফলে তারা গতানুগতিক ফর্ম ও ন্যারেটিভের দাসত্ব করে যান। বাংলাদেশের বেশিরভাগ লেখক সাহিত্যে জীবন-যৌবন শেষ করে দেন পূর্বসূরিদের লেখা ও আঙ্গিকের ঘানি টানতে টানতে। সেইসাথে যেকোনও নতুন স্বাদ ও সুগন্ধিকে নাকে তুলতে-না-তুলতেই হায় হায় করতে থাকেন। সব রসাতলে গেল বলে রব তোলেন। অর্থাৎ সাহিত্যের গতানুগতিক দাসত্বকে এরা এতটাই পূজা করেন যে, নিজেদেরকে অদ্বিতীয় মনে করেন আর সেভাবেই সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করতে প্রবৃত্ত হন।
কিন্তু একটা পুরনো আঙ্গিক নতুন চিন্তাকে সব সময় জায়গা দিতে সক্ষম নয়। ফলে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আঙ্গিক ও বক্তব্যের ধরনে পরিবর্তন জরুরি। যারা এটি সাফল্যের সাথে ধরতে পারেন, তারা মৌলিক লেখক।
শুদ্ধস্বর: লেখকের রাজনৈতিক বোধ কতটা গুরুত্বপূর্ণ? রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক অন্যায্যতার বিরুদ্ধে লেখকের কোন ধরনের ভূমিকা থাকা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
ফজলুল কবিরী: লেখকদের চিন্তা ও দর্শনের স্বচ্ছতাও লেখক হিসেবে নিজেদের পথচলাকে দীর্ঘ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর খামতি লেখকদের বিদায়কে ত্বরান্বিত করে। লেখক হিসেবে সারাজীবন সততার সাথে শাসকদলের ক্ষমতাকে প্রশ্ন করে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে লেখকের নৈতিক অবস্থান আরও শক্ত হয়। অন্যথায় দলীয় আনুগত্য ও দাসত্বকে লেখকরা মেনে নিলে তার ফল খারাপ হয়। সেসব সুবিধাবাদী লেখকরা একটা বিশাল লাইন তৈরি করে যান, যেখানে লেখকদের অসততা ও দলীয় বশ্যতার নিশান উড়ানোকে একটা নির্লজ্জ কাজ হিসেবে দেখা হয় না। বরং এসব মিথ্যার ওপর ভর করে বেড়ে ওঠে পরবর্তী প্রজন্মগুলো।
শুদ্ধস্বর: আপনি এখন কী লিখছেন? আপনার বর্তমান লেখালেখি সম্পর্কে পাঠকদের জন্য কিছু বলুন!
ফজলুল কবিরী: সদ্যসমাপ্ত একুশে গ্রন্থমেলায় একটি দীর্ঘ চিন্তামূলক প্রবন্ধের বই প্রকাশিত হয়েছে। বইটির নাম ‘লেখকের বুদ্ধিবৃত্তিক দায় ও দর্শনের খোঁজে’। বইটি প্রকাশ করেছে ‘দ্বিমত’ প্রকাশনি। এর বাইরে আমারই তিনটি গল্পগ্রন্থ ও একটি উপন্যাস আছে। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন উপন্যাসের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছি। এর বাইরে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন গদ্য ও ছোটোগল্প লেখা হচ্ছে।