সাক্ষাৎকার
শুদ্ধস্বর: আপনি কবিতার মাধ্যমে কী আবিষ্কার করার এবং বোঝানোর চেষ্টা করে থাকেন?
সৈকত আমীন: দিনশেষে যতটুকু বুঝেছি, আসলে নিজের সঙ্গে বলা কথাগুলোই হচ্ছে কবিতা। কবিতার মাধ্যমে নিজেরে ছাড়া আর কিছুই আবিষ্কার বা বোঝানোর চেষ্টা তেমন একটা করিনি। কিন্তু, এখানে একটা ‘কিন্তু’ আছে। এইযে আমি কিংবা আমরা, যারা একই সময়ে একই গ্রহে জীবনযাপন করছি, দৃশ্যালোকে প্রত্যক্ষ করছি এই মহাবিশ্বের বিস্ময়কর ঘটনাপুঞ্জ-সেই সব ঘটনা ঘিরেই তো আমরা! তো নিজেরে বোঝাতে গিয়ে, নিজের অনুভূতি বোঝাতে গিয়ে বেশিরভাগ সময় যেটা বুঝিয়ে ফেলি তা শেষপর্যন্ত মূলত সময়ের স্রোত। একটা বিপরীত ঢেউ।
শুদ্ধস্বর: আপনি বর্তমান বিশ্বকে কীভাবে ব্যাখ্যা করেন এবং বর্তমান ঘটনাগুলো আপনাকে লেখার ক্ষেত্রে কীভাবে ভূমিকা রাখে?
সৈকত আমীন: চোখ বন্ধ করে যখন পুরো পৃথিবীটাকে একবার ভাবার চেষ্টা করি, মনে হয় একটা ল্যাবের দিকে তাকিয়ে আছি। আমরা সকলেই যেন গিনিপিগ। আমাদের বাঁচা মরা, বন্দিত্ব কিংবা স্বাধীনতা, প্রেম থেকে প্রজনন সবকিছুই এখানে নিয়ন্ত্রিত। একটা এক্সপ্রিমেন্ট চলছে আমাদের উপর। তবে এ এক্সপ্রিমেন্টের নির্দিষ্ট কোনো ফলাফল নেই ধ্বংসের দিকে এগোনো ছাড়া। ল্যাবের নিয়ন্ত্রকরাও একই নিয়তির দিকে এগোচ্ছে আমাদের সাথে, যেহেতু তারাও আমাদের মতো, একই প্রজাতির, একইরকম গিনিপিগ নিজেদের ভুল নিরীক্ষার।
সত্যি বলতে যেই কবিতাটা লেখার জন্য কবিতা লেখা শুরু করেছিলাম, তা তো আর কোনোদিন লিখতে পারিনি, সেই একটা কবিতা লেখার চেষ্টায় যত কবিতা লেখা হয়েছে তা মূলত সময়ের প্রতিবিম্ব। যখন কোনো কিছুকে আমরা ধারণ করতে শুরু করি, তখন বিষয়টা খুব আপন হয়ে যায়। এমন একটা সময়ে আমি বাস করছি, ধারণ করছি, যেখান থেকে যন্ত্রণা ছাড়া পাওয়ার মতো কিছু নেই। কোনো যন্ত্রণা মানসিক, কোনো যন্ত্রণা মানবিক, কোনো যন্ত্রণা অস্তিত্বের আর এসব যন্ত্রণা গিয়ে ঠেকেছে রাজনৈতিক যন্ত্রণায়। এ-জন্যই বোধহয় আমার কোনো সুখের কবিতা নেই। সব কবিতাই যন্ত্রণার প্রতিবিম্ব।
শুদ্ধস্বর: কোন সাহিত্য-ফিকশন বা নন ফিকশন-বা কোন লেখক/লেখকরা আপনার নিজের লেখাকে প্রভাবিত বা অনুপ্রাণিত করেছেন? কারা এবং কীভাবে?
সৈকত আমীন: ভাষা নিজেই প্রভাবিত হওয়ার মতো একটা বিষয়। একেবারে জন্মলগ্ন থেকে আমরা কিভাবে চলব, কীভাবে বলব, কোন অনুভূতিতে কোন ভঙ্গি প্রকাশ করব-এর সবটাই আমরা নির্ধারণ করেছি পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে। লেখালেখিও তার বাহিরের কিছু নয়।
মোটাদাগে এই পৃথিবীর অস্তিত্ববাদী লেখকেরা আমার লেখায়, চিন্তায় বিশাল প্রভাব রেখেছে। জীবনরে দেখার অস্তিত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গির ওপর দাঁড়িয়ে আছে আমার চিন্তার মহাজগৎ। আর সেই জগতটাকে সাজিয়েছে এই পৃথিবীর রাজনৈতিক কবিরা। কবিতায় আমি নবারুণ ভট্টাচার্য, পাবলো নেরুদা, মাহমুদ দারবিশ, নিকানোর পাররা, চার্লস বুকওয়াস্কি, মায়াকোভস্কি, হুমায়ূন আজাদ, আবুল হাসান, জীবনানন্দ, কালপুরুষ‘সহ অনেকের দ্বারাই প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত। তাঁদের শব্দ ছুড়ে দেওয়ার তীব্র রক্তিম কৌশল আমার কবিতাকে সরাসরি আঘাত করে। আর কবিতার বাহিরে কাফকা, কাম্যু, বোর্হেস, মার্কেজ, দস্তয়ভস্কি, শোপেনহাওয়ার, কিয়ের্কেগার্ড, সার্ত্রে এবং বিশেষ করে মার্কস ও নিটশের প্রভাব আছে আমার লেখনিতে। অস্তিত্বের অজনপ্রিয় অবস্থান উন্মোচন করায় তাঁদের যে-দক্ষতা, সেটা আমাকে বরাবরই আক্রান্ত করেছে।
শুদ্ধস্বর: কীভাবে আপনার ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং অভিজ্ঞতা আপনার কবিতাকে আকার দেয়?
সৈকত আমীন: যা আমি যাপন করিনি, প্রত্যক্ষ করিনি কিংবা যার অভিজ্ঞতা পরোক্ষভাবেও আমার হয়নি কোনোদিন, তা শুধু লেখায় কেন! আমার তো ধারণা কল্পনাতেও তার প্রয়োগ সম্ভব নয়। আমার কবিতাকে আকার দেয় আমার জীবন। আমার যাপন। সে যাপন আবার আমার একার নয়, সে যাপন মূলত এই সময়ের।
শুদ্ধস্বর: আপনার কবিতার বক্তব্য উচ্চারণ করতে আপনি কীভাবে কাঠামো, ভাষা এবং ব্যাকরণ নির্মাণ/ব্যবহার করেন? আপনি কি নিজস্ব ফর্ম গড়তে এবং ভাঙতে অভ্যস্ত?
সৈকত আমীন: সত্যি বলতে নিজের সঙ্গে বলা কথাগুলো (কবিতা) যাকে বা যাদের উদ্দেশ্য করে বলতে চাচ্ছি, খেয়াল রাখি তার কাছে যেন সহজে পৌঁছোয়, সেভাবেই নির্মাণ করি ভাষার সেতু, ব্যাকরণ ও বক্তব্য। যা শাশ্বত কিছু নয়। বারবার নির্মাণ হয়, ভাঙে, রূপ বদলায়,আবার নির্মিত হয় সময়ের প্রয়োজন অনুসারে।
শুদ্ধস্বর: রাজনৈতিক কবিতা এবং সাধারণ কবিতার মধ্যে সাহিত্য ও শৈল্পিক মূল্যবোধের দ্বন্দ্ব এবং সংহতি সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
সৈকত আমীন: নান্দনিকতা কিংবা শিল্পের নির্দিষ্ট কোনো মান মানুষ আজও নির্ধারণ করতে পারেনি। এ তাঁদের ব্যর্থতা নয়, বরং সৌন্দর্য। শিল্প বলতে আমি যা বুঝি তা মূলত দৈনন্দিনের বাহিরের কিছু। যেখানে আমি নিজেকে খুঁজে পাই, খুঁজে পাই এবং শান্তি লাগে। এক কথায় অনুভূতির কম্ফোর্টজোন আরকি! এখন যদি রাজনৈতিক সাহিত্যের আলাপ আসে, আমি প্রথমে বোঝার চেষ্টা করি অরাজনৈতিক সাধারণ সাহিত্য আসলে কোনটা! দিনশেষে শেক্সপিয়রের প্রেমের ট্রাজেডি রোমিও জুলিয়েটকেও ভয়াবহ এক রাজনৈতিক আখ্যান মনে হয় আমার কাছে। অথবা ধরা যেতে পারে নকশী কাঁথার মাঠের কথা। জসিম উদ্দীন সচেতনভাবে সেটাকে রাজনৈতিক রূপ দিতে চান আর না চান, সেটাও শেষপর্যন্ত একটা আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক জৈবিক ভূগোলের মানচিত্র। তবে মূল্যবোধের জায়গায় আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি-কোন সাহিত্য আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সংঘাতগুলো নিয়ে আলাপ করছে, আর কোন সাহিত্য আমাদের দূরে রাখছে সেই সংঘাত মোকাবেলার করার পথের থেকে। এখানেই দ্বন্দ্বটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মন জাগানো ও মন জোগানোর দ্বন্দ্ব। মূল্যবোধের জায়গায় এখানে মন জোগানোর সাহিত্য মার খেয়ে যায়, শৈল্পিক বিচারেও বেশিদিন টিকে থাকে না। যেহেতু মন জোগানোর নিত্যনতুন কলা রোজ রোজ আবিষ্কার করা যায় কিন্তু মন জাগানোর মতো কণ্ঠ রোজ রোজ উচ্চারিত হয় না ইতিহাসে।
শুদ্ধস্বর: আপনার কবিতা কি জাতীয় সীমানা অতিক্রম করে বলে আপনার ধারণা? এটি অন্যান্য জাতীয়তা বা ভাষাগোষ্ঠীরকাছে আবেদন রাখতে পারে বলে কি আপনার মনে হয়? তাহলে কীভাবে?
সৈকত আমীন: এই পুঁজিবাদী বিশ্বের দূষিত নিশ্বাস যারা নিচ্ছি তারা প্রত্যেকেই আসলে বৈশ্বিক সন্তান। সন্তান একই শোষণের। অনুভূতি প্রকাশের ধরণে আমাদের তারতম্য থাকতে পারে, তবে যন্ত্রণাগুলো আসলে একই। আর সে-কারণেই হয়তো এই ছোট্ট একটা শহরের ছোট্ট একটা ঘরে বসে বর্ণবাদ নিয়ে যখন লিখতে বসি, কবিতায় ভারতের রোহিত ভেমুলার কথা যেমন চলে আসে, তেমনই চলে আসে আমেরিকার জর্জ ফ্লয়েডের কথা। থানচির ক্ষুধা নিয়ে লিখতে বসলে চলে আসে সুদান, সোমালিয়া ইয়েমেন ও ইথিওপিয়ার কথা। জাতিগত সংঘাতের কথা লিখতে গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামের কথার সঙ্গে চলে আসে ফিলিস্তিন, কাতালান, আরকানের কথা। ক্রাইসচার্চের জন্য যখন কবিতায় আমার ব্যকুলতা প্রকাশ পাচ্ছে একই কবিতায় প্রকাশ পাচ্ছে সার্লে হেব্দোর প্রতি সহমর্মিতা। উচ্চারণগুলো শেষপর্যন্ত একজন জাতিহীন, ধর্মহীন, নির্দিষ্ট পরিচয়হীন বৈশ্বিক কবির। যে-কারোরই নয় এবং একই সঙ্গে সবার ভাষা। যে-ভাষা আপন করে নেওয়ার সুযোগ সকলের জন্যই উন্মুক্ত। এবং কেউ-না-কেউ তা আপন করে নেবেই। প্রত্যেককেই নিতে হয়েছে, নিতে হয়।
শুদ্ধস্বর: আপনি কি মনে করেন কবিতার সংক্রাম দিয়ে মানুষের ইতিহাস পালটানো সম্ভব? আপনার জবাবের পক্ষে বলুন।
সৈকত আমীন: মানুষের ইতিহাসের তুলনায় কবিতার যাত্রা খুবই কম সময়ের। এমনকি শিল্পের ইতিহাসেও কবিতা খুবই নতুন এক সংযোজন। এবং সম্ভবত সবচেয়ে বৈপ্লবিক সংযোজন। কবিতা সভ্যতার সমসায়িক এক বিস্ময়। কবিতা মানুষের ইতিহাস পালটাতে পারবে কি-না তার উত্তর দেবার আগে মানুষের ইতিহাসের দিকে যদি একবার তাকাই, দেখব দার্শনিক প্লেটোর জামানা থেকে আজপর্যন্ত যে-শিল্পীদের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্মমতা নেমে এসেছে-তারা মূলত ভাষাশিল্পী। কবি। দার্শনিক থেকে শুরু করে ধর্ম প্রবক্তা, রাজা, সেনানায়ক, আমলা ও রাজনৈতিক নেতাসহ সকলেই কবিদের বিরুদ্ধে বারবার অবস্থান নিয়েছেন ইতিহাসে। হত্যা করেছেন। আঙুল কেটে দিয়েছেন, জিভ কেটে দিয়েছেন, দেশান্তরী করেছেন, জেলে ভরেছেন। কবিদের উপরে পৃথিবীতে যতটা অত্যাচার হয়েছে, শিল্পের অন্য কোনো মাধ্যমের প্রতিনিধিদের ওপর তার সিকিভাগও হয়নি। যার অন্যতম কারণ কবিতা কেবল ইতিহাস ধারণ ও বাহনই করে না, কবিতা ইতিহাস নির্মাণ করে।
আমরা কনফুসিয়াসের কবিতার কথা বলতে পারি, অথবা বলতে পারি মায়াকভস্কি কিংবা নাজিম হিকমতের কবিতার কথা। তাঁদের প্রত্যেকেরই কবিতাই আমাদের মনে একটা নতুন জগতের, নতুন জীবনের দুয়ার উন্মোচন করেছে, আর সেই দরজার দিকে যখন আমরা পা মেলেছি, তখন থেকেই নির্মিত হওয়া শুরু হয়েছে নতুন ইতিহাস। আমার আশ্চর্য সুন্দর লাগে, যখন দেখি কবিতার চিন্তাগুলো একবিংশ শতাব্দীতে এসেও মানুষকে তীব্রভাবে আক্রান্ত করে, মুহূর্তের মাঝে মহামারীর মতো ছড়িয়ে যায়, কৈশোর থেকে শুরু করে নিশ্বাস ত্যাগ করার আগে পর্যন্ত এখনো মানুষ প্রেমে ও দ্রোহে প্রয়োজন বোধ করে কবিতার, আমি মুগ্ধ হই। এই ব্যস্তজীবনে এসেও মানুষ লাইন ধরে বইমেলায় ঢোকে, টাকা খরচ করে বই কেনে, অপরকে উপহার দেয়, সংগ্রহ করতে উৎসাহী করে, কবিতা পড়ে এখনো মানুষের চিন্তা বদলায়, জীবন বদলায়। এ-অবস্থায় মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না, মানুষের চিন্তা আবার ইতিহাস বদলাবে, কবিতা মানুষের ইতিহাস বদলাবে।
কবি বন্ধু মউদুদ তন্ময়ের কয়েকটা লাইন দিয়ে এ-প্রশ্নের উত্তর শেষ করি-
সময় আসবে কবিতারও
কবিতা মানুষের মুখে খাবার দেবে
কবিতার সংবিধানে
কবিতা দেশ চালাবে।
____________________________________
কবিতা
ফ্যাসিবাদ
শীতের রাতে ওরা আপনার
পোশাক ছিনিয়ে নিয়ে বলবে-
সুখী মানুষের জামা থাকতে নেই।
মুখের থেকে খাবার কেড়ে নিয়ে বলবে-
ক্ষুধা’ই পরম সত্য।
বাস্তুহারা করার পর ফতোয়া জারি করবে-
সন্ন্যাসের নাম’ই প্রকৃত জীবন।
আর সকল সুখ কেড়ে নিয়ে বলবে-
জগতে দুঃখ’ই চিরন্তন।
এভাবে সব কিছু হারাবার পর
আপনার থেকে যাবে কেবলই আপনার ভাষা,
যা দিয়ে যায়না করা চিৎকার ছাড়া আর কিছুই।
মানে চিৎকার করাই এখানে
নির্মম নিয়তির শেষ আশ্রম,
সুতরাং চিৎকার করুন
সব কিছু হারাবার আগেই।
যেহেতু ফাঁকা রাস্তায় একা চিৎকারে
নিজের প্রতিধ্বনি ছাড়া
ফিরে আসবে না আর কিছুই।
বিশ্বজিৎ
প্রতি বছর যত জোড়া জুতো বানানো হয়
জানো! পৃথিবীতে ততগুলো পাও নেই
তবু মানুষ খালি পায়ে হাঁটছে।
যদিও এ নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত নই,
যেহেতু বিশ্বজিতের লাশ তখনো সৎকার হয়নি
আর ক্যাম্পাসজুড়ে অসৎ শিক্ষকেরা রায় দিয়েছে ধর্ষকের পক্ষে
ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাথার ওপর।
কিন্তু জানো! যারা এখন হাঁটছে খালি পায়ে,
রাতে তারা জুতোর দোকানের সামনে ঘুমোবে,
খালি গায়ে।
বিশ্বজিৎ তাদের জন্য আর কখনওই পোশাক বানাবে না,
বিশ্বজিতের শার্ট নিয়ে কোনো দিন মিছিল হবে না।
বিশ্বমানচিত্র
(কালপুরুষ, আপনাকে)
আচ্ছা আপনার সাথে আমার কোথায় দেখা হয়েছিল বলুন তো!
মিছিলে?
বইয়ের দোকানে!
পানশালায়!
গোরস্থানে?
পতিতালয়!
অভ্যাস নেই।
কিন্তু আমরা কি নিয়ে কথা বলছিলাম?
মার্কিনিদের চতুর স্বভাব
আফ্রিকা জুড়ে ভাতের অভাব
কাতালুনিয়ায় কৃষ্ণচূড়া
টকটকে লাল
সিরিয় শিশুর নিখোঁজ আঙুল
আরববিশ্বে রক্তপাত
রক্ত ধুয়ে ব্লেল্ডের কাটা
মানচিত্র,
ফিলিস্তিনে নিখোঁজ জাতক
ঘরকুনো ব্যাঙ
জাতিসংঘ
ইয়েমেনি নারী
শরীরজুড়ে যুদ্ধের ক্ষত
কাপুরুষ বাপ?
আচ্ছা, লাশকাটা ঘর?
হাসপাতালে? চায়ের দোকান!
দীর্ঘকাল পর মনে হলো আমি নিজের দিকেই চেয়ে আছি।
শূন্যে দুলছে পা, সিলিঙে ঝুলছে লাশ
একটু পর পর লাশটা আমার কাছে সিগারেট খেতে চায়।
আচ্ছা বিশ্বমানচিত্র!
আপনার গোল্ডলিফ চলে?
তৃতীয় বিশ্বের কবিতা
আমাকে যদি স্বাধীনতার কথা জিজ্ঞেস করেন
আমি প্রথমেই বলব ভাত,
যদি জিজ্ঞেস করেন জীবিকার কথা
আমি আবারও বলব ভাত,
যদি সভ্যতা ও মানুষের কথা জিজ্ঞেস করেন
আমি বলব-পরম করুণাময় ও
অশেষ দয়ালু মহান কৃষকের নামে শুরু।
আপনি এথেন্সের দার্শনিকদের কথা বলতে পারেন
এবং দেখাতে পারেন ইউরোপ জুড়ে রেনেসাঁর স্মৃতি।
আমি তবু মগজ আর পাকস্থলীর বিতর্কে
পা না রেখেই বলব-ভাত।
যেহেতু মহামতি প্লেটো সক্রেটিস ভিঞ্চি আর দেকার্তে
সকলেই পাকস্থলীতে পুষেছে মগজ
আর পৃথিবীর মাতৃভাষা আজও ক্ষুধা।
ক্ষুধার প্রশ্নে পৃথিবীতে যুদ্ধ হয়েছে ঢের
বুলেটের ভারে কোনও দিন মেটেনি পেটের জ্বালা
যুদ্ধে বিজয়ী পতাকা জিতেছে ফের
তবু কৃষকের সামনে একই শূন্য ভাতের থালা।
অতএব,
যতদিন ভাত দিতে পারছেন না
কীসের স্বাধীনতা কিসের জিন্দাবাদ?
ততদিন আমার সকল চিৎকার হবে ভাত,
ততদিন আমার সিনেমার নাম হবে
‘ভাত দে হারামজাদা’
ততদিন আমার কবিতার নাম হবে
‘ভাতের ভূগোল’
এস এম সুলতান ততদিন আঁকবেন
পরিপুষ্ট ভাতের ছবি,
আর যতদিন ভাত দিতে পারছেন না
আপনার পতাকা পোস্টকার্ড ও সংবিধান
ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলুন
তৃতীয় বিশ্বের জনপদে জ্বালানির বড়ো অভাব,
দরিদ্র চুলোয় কিছু লাকড়ির খরচ বেঁচে যাবে।
টেকনাফ থেকে যশোর রোড
যেখানেই পা রাখো তুমি,
সে দেশ তোমার নয়।
যেদিকেই তাকাও দুচোখে,
সে দৃশ্য তোমার নয়।
যাকেই স্পর্শ করো তুমি ,
সে মানুষ তোমার নয়।
যতই সেলাই করো তবু,
এই পতাকা তোমার নয়।
বলো হে শরনার্থীবেশী মানুষ,
কোথায় তোমার দেশ,
কোন পাহাড়ের ধারে?
কোন পাখির নীড় আর
কোন সাগরের তীরে?
কোন মানুষের শরীরে
আজন্ম তুমি খুঁজে বেড়াও তারে?
বলো, কোথায় তোমার দেশ,
যে তোমার লাশ বইতে পারে?
পৃথক পৃথিবীর পথে
সে নামাজ পড়তো
আমি মার্ক্স পড়তাম।
প্রতি মোনাজাতে আল্লাহর কাছে
আর্জি করতো সে আমার দীর্ঘায়ুর,
আর ‘গুলি কর শুয়রের বাচ্চা’ বলে-
আমি বন্দুকের সামনে দাঁড়াতাম,
সে আমারে চাইতো
আমি মানুষের মুক্তি চাইতাম।
খামখেয়ালির সব চিঠির খামে
আমার ঠিকানায় ‘মিছিল’ লিখতো সে,
আর মিছিলের পায়ে পায়ে
আমি বুঝি ইতিহাস লিখতাম!
একসাথে বাঁচতে চাইতো সে
আমি এক ছাদের পৃথিবী চাইতাম।
আর দেরি হলে পরপুরুষ নিয়ে যাবে তাঁরে
যতই করুক চেষ্টা দেখতে পাবেনা আমারে,
এই অভিযোগে কান্না চেপে তাকিয়ে থাকতো সে
আর সকল পুরুষ’ই পর-এই বলে আমি হাসতাম।
প্রচণ্ড হাহাকারে তিনবার কবুল পড়তো সে
প্রচণ্ড চিৎকারে আমি সুকান্তের কবিতা পড়তাম।
অভিন্ন গ্রহ তবু পৃথক জগতে দু’জনের বাস
কোথাও নেই ভালো কেউ নিজের জীবনে আজ,
সে আমারে ভালোবাসতো
আমি কি তাঁরে কম বাসতাম?
সে নামাজ পড়তো
আমি মার্ক্স পড়তাম।
মৃত্যুর দর্শন
অনেকবার আমি ভেবে দেখেছি
মৃত্যুর জন্য কাউরে দায়ী করা যায় কিনা!
কিন্তু আমি কারে দায়ী করবো?
সিরিয়ায় অবিস্ফোরিত গ্রেনেডের বুকে
এক নারী নিয়মিত করে যাচ্ছে গোলাপের চাষ,
আমি কি তাঁরে দায়ী করবো?
অথবা দায়ী করা যেতে পারে
সেই সকল মানুষরে
মানুষের থেকেই স্বাধীন হতে চাইছে যারা।
দায়ী করা যেতে পারে
আব্দুল করিম মিয়া’রে
পৃথিবীটা একদিন বাউলের হবে
এমন সুখ স্বপ্ন’ও দেখেছেন তিনি।
অথবা মৃত্যুর জন্য নিশ্চিতভাবে
মা’রেই দায়ী করা যেতে পারে আমার।
জন্ম দিয়ে ঠেলে দিয়েছেন তিনিই
অবধারিত মৃত্যুর দিকে।
আমি অনেকবার ভেবে দেখেছি,
মৃত্যুর মুখে ব্যর্থ এই পৃথিবীর সকল দর্শন,
দার্শনিকদের এই ব্যর্থতারেই
মৃত্যুর জন্য দায়ী করা যায় কিনা
আমি জানি না।
যাবতীয় মৃত্যুর দর্শন সংক্রান্ত আলাপ
নিয়ে ভাবতে ভাবতে
মহল্লার চায়ের দোকানে নীরবে বসে ছিলাম
কোনো বিমূর্ত দুপুরে আমি,
ঠিক তখনি সারা গায়ে ধুলো যার
আর নাক দিয়ে ঝরছে পানি
এমন হাফপ্যান্ট পরা এক শিশু
এসে রুটি খেতে চাইলো আমার কাছে,
আমি রুটি কিনে দিলাম,
কয়েক কামড়ে সমস্ত রুটি গিলে খেলো সে
যেন এতটাই ক্ষুধা তার ধারে
হাতে পেলে সমস্ত জীবনরেই গিলে খেতে পারে
তবু চোখ বড় করে
বিলুপ্তপ্রায় সরল হাসিমুখে
আমার কাছে আবদার করলো সে আরেকপিস রুটির-
‘ক্ষুধা যায় নাই মামা, আরেকটা রুটি দিবেন?’
আমি জানি না মৃত্যুর জন্য
তাঁর এই প্রশ্নরে দায়ী করা যায় কিনা!
শুধু বুঝি তাঁর সেই হাসির বিনিময়
রোজ দশবার জাতিসংঘ’রে কেনা যায়।
ছিনতাই
বিহ্বল রাত্রির মাঝখান দিয়ে
উদ্দেশ্যহীন হেঁটে যাচ্ছি কোথাও,
আমার দু’পায়ে হাঁটছে গন্তব্যহীন
পৃথিবীর শরণার্থীবৃন্দের শোকযাত্রা,
কোমরে ঝুলে আছে মৃত রোহিঙ্গা শিশু
পকেট ভরা অজ্ঞাতনামা কবরের মাটি
আর আমার দুহাতে যিশুর ক্রুশের ভার।
বুক ছেয়ে আছে ক্রাইস্টচার্চের বুলেটে
দু’কাঁধে চেপে আছে দুর্ভিক্ষের ছাপ
এবং
এবং
চোখ জুড়ে রক্তের গন্ধ ভরা কাশ্মীরের জল।
আর আমার মাথা
অনেক আগেই বিক্রি হয়ে গেছে
গণতন্ত্রের সেমিনারে।
এমন নির্জন রাত্রির মাঝখান দিয়ে
তবু কেউ একজন রুখে দাঁড়াচ্ছে
আমার পথ।
সহসাই সামনে রিভলবার তাক করে বলছে-
‘সাথে যা আছে সব দিয়ে ভাগ মাদারচোদ’
আমি হাসছি,
আড়াইহাজার বছর ধরে অস্ত্রের সাথে পরিচয়
তবু
এই প্রথম মনে হচ্ছে-
বিনাপ্রশ্নে অস্ত্রের মুখোমুখি
মহাস্বস্তিতে সাথে যা আছে সব
আমি দিয়ে দিতে প্রস্তুত।
সত্যিই কি প্রস্তুত?
ধর্ম
আমি শয়তানকে প্ররোচিত করেছিলাম
সেজদা না দিতে।
আমি ঈশ্বরকে প্ররোচিত করেছিলাম
শয়তান বানাতে।
শান্তির কথা বলতে চেয়েছিলাম
মূলত আমরা শান্তির কথা বলতে চেয়েছিলাম।
আমরা বলতে চেয়েছিলাম
চিলেকোঠার নিঃসঙ্গ প্রেমিকের
উপর শান্তি বর্ষিত হোক,
বেতন না পাওয়া পাটকল শ্রমিকের
উপর শান্তি বর্ষিত হোক,
আমরা বলতে চেয়েছিলাম,
পৃথিবীর সব নিপীড়িত নারীর
উপর শান্তি বর্ষিত হোক,
পাহাড়ে পোড়া আদিবাসী বাড়ির
উপর শান্তি বর্ষিত হোক,
নিখিল তালুকদারের ধানে শান্তি বর্ষিত হোক,
শরিয়ত বয়াতির গানে শান্তি বর্ষিত হোক,
হালদা নদীর মাছেদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক
সুন্দরবনের গাছেদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক,
আমরা বলতে চেয়েছিলাম
কিশোরের কার্টুনে আর
দিদারের ফেস্টুনে শান্তি বর্ষিত হোক,
আহমেদিয়া শিশুর কবরে
আর আমাদের দৈনিক খবরে শান্তি বর্ষিত হোক।
প্রকৃত প্রস্তাবে এগুলোই ছিল
আমাদের প্রধান অপরাধ।
ততক্ষণে কাজলের কারাবাসে,
পথে বৃদ্ধা মায়ের লাশে
আমাদের কথা লুটপাট হয়ে গেছে,
চেতনার ফাঁকা বুলিতে,
বুকে দুঃশাসকের গুলিতে
আমাদের সুখ গুম হয়ে গেছে,
পাপিয়া-শাহেদ আর সম্রাটে,
ইয়াবা বদি আর
মানবতার মাদারের গদির সন্ত্রাসে
বোবা করে দেওয়া আইনে
আমাদের কথা বন্দী হয়ে আছে,
আমাদের স্বাধীনতা ক্ষমতার হাতে খুন হয়ে গেছে।
সময় এসেছে আজ,
যারা কথা কেড়ে নিয়ে
আমাদের বোবা করে দিতে চায়,
গণ চিৎকারে গণ ধিক্কারে
ফাটিয়ে তাদের কানের তালা,
আমাদের কথা আমরা বলবো
ভেঙে সকল আইনের বন্দীশালা।
“My freedom is to be
Whatever they don’t want me to be”
নাগরিকতার অপরাধ
(সংক্ষিপ্ত)
তোমার গর্ভে জন্ম না নেওয়ার অপরাধ
১৮ বছরের পর থেকে আমায় শুনতে হচ্ছে নাগরিকতার অপবাদ।
নাগরিক মানে সংবিধানে নতুন গণতন্ত্র নূর হোসেনের লাশ
মিসিং কল্পনা চাকমার ভাই
উন্নয়ন মার্কা গণতন্ত্রের পেট্রোলে পুড়ে রমেল চাকমার ছাই
শেফালি! আমি স্পার্টার বিদ্যালয়ে রণনীতি শিখিনি
দ্বিজেন টুডু’র এক চোখে বুলেটের দগদগে ক্ষত
অপর চোখে আপোষহীনতার আগুন দেখে আমি ভয় পাই
সুভাষিত গণতন্ত্রের থেকে পালাতে তোমার কাছে যাই
আমি তোমার দাড়ে সেজদাহ করতে চাই,
তোমার আরো ভিতরে ঢুকতে যাই, মনে পড়ে যায়
সঙ্গমসঙ্গী হিসেবে আমি পাকা খদ্দের নই, যোগ্যতা হারাই,
তোমাকে লিখে কবি হিসেবে অযোগ্যতার কলঙ্ক
ঘুচাবো বলে কলম হাতড়ে বেড়াই
নো ম্যানস ল্যান্ডে কবরের বায়না করি
দিনে ৫ ওয়াক্ত আত্মহত্যার কবিতা গ্লুমি সানডে পড়ি
হেমলক চাষ করি তোমার ঠোঁটে
বিএসএফ বন্দুক তাক করে করে রাখে আমার বুকে, প্রহর গোনে-
ফেলানীর দেহে বেয়নেটের দাগ আমি আর দেখতে পাই না (কে এই ফেলানী?)
অভিজিৎ-এর রক্তে আমার আর হাত ভেজে না (কে এই অভিজিৎ?)
তনুর ধর্ষণ, আর্তনাদ আর আমার কানে পৌঁছে না (তনু টা আবার কে?)
আমার হৃদয় গ্রাস করে ফেলে থানচির ক্ষুধা
আমার মস্তিষ্ক অবশ করে রাখে ইথিয়োপিয়ার শিশু
ও তাঁর প্রার্থনা শুনতে নারাজ ব্যর্থ ভগবান, ক্রুশবিদ্ধ যিশু।
শেষ রাতে ইমামের মেকি মুনাজাতে সংহতি ঘোষণা করে মুয়াজ্জিন
তার রিহার্সেল করা করুণ সুরে উন্মাদ হয়ে যায় পৃথিবীর সমস্ত পাখি
ভোরের আকাশ জুড়ে উড়ে উদ্ভট আচরণ করে
মানুষের ইমারতের জানালায় অভিযোগ জানিয়ে নিয়মিত ডাকাডাকি করে
ল্যাম্পপোস্টের তারে ঝাক ঝাক কাক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মরে
রাতে আবার পুনরায় নো ম্যানস ল্যান্ডে আমার বায়না করা কবরের উপর
লক্ষ্মী পেঁচার সমাবেশ বসে,
আমি আল্টিমেটাম দেই পেঁচাগণ গোস্বা ঘোষণা করে।
শেফালি! আমি আর ঘুমোতে পারি না
পৃথিবীর মাতৃভাষায় আমি আর কাঁদতে পারি না
মূলদ সংখ্যাবিশিষ্ট সুরে মা গাইতে পারতো ঘুম পাড়ানির গান
মদ ও পাউরুটি কিনেছিলাম মায়ের কাফন বেচে
সেই অদ্ভুত নারীর কবরে দাবিহীন ফলক ছাড়া আর কীইবা বাকি আছে?
পাউরুটিতে কামড় দিয়ে মদের গেলাসে দেখি,
সভ্যতার যাবতীয় প্রেম সব শালা ষোলোআনা মেকি।
বহু রাতের ঘুম জমে আছে।
আরো ছয় অথবা নয়টা মাস
মাতৃগর্ভে ঘুমাতে পারা দরকার.
কতকাল পর আমাদের দেখা হলো
তোমার গর্ভে কী কিছুটা যায়গা ইজারা হবে বলো!
মহাবিশ্বের শাশ্বত অন্ধকারে আমার যে খুব ঘুমানোর প্রয়োজন।
বলো, শেফালি বলো
তুমি আমায় গর্ভে ধরলে না কেন?
তোমার গর্ভে জন্ম না নেওয়ার অপরাধ
১৮ বছরের পর থেকে আমায় শুনতে হচ্ছে নাগরিকতার অপবাদ।
আমি যিশু, কিংবা?
আমি যিশু কিংবা তার অনুসারী নই, তবু
তনু অথবা অভিজিৎ
ফেলানী আর বিশ্বজিৎ
কিশোর কিংবা মুশতাককে লিখতে বসে
প্রতি বর্ণমালায় পৃথিবীর প্রতি প্রান্তরে-
মানুষের যত পাপে
আমি আজো দেড়-হাজারবার ক্রুশবিদ্ধ হই।
অথচ আমি যিশু,
কিংবা?
কালো মানুষের গান
কবর থেকে ফিরে এলাম,
কালো মানুষের কবরে ঢোকে না
শান্তির সাদা ফেরেশতা’রা।
জর্জ ফ্লয়েড,
যে হাটু তোমার কাঁধে চেপে আছে
আমার এ পৃথিবী’ও তার তলানিতে পড়ে আছে বহুকাল।
আমি বিশ্ব সম্প্রতির সমাবেশে
অনেক প্রতিশ্রুতি অনেক দুঃখ প্রকাশ শেষে
ফিরে দেখেছি-
অবৈধ টাকার নাম আজ’ও কালো টাকা
সবচেয়ে ভয়াবহ রাতের নাম তবু কালো রাত
সবচেয়ে নিষ্ঠুর আইনের নাম তবু কালো আইন
সবচেয়ে শোকের দিনে ওরা ধারণ করে বুকে কালো ব্যাচ
ক্ষতিকর সব জাদুর নাম এখনো কালোজাদু
অশুভ সকল কিছুর প্রতীক আজ’ও কালো বিড়াল।
জর্জ ফ্লয়েড আমার’ও নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়,
কুরানে নেই যথেষ্ট কালো নবী
পুরাণে নেই যথেষ্ট কালো ভগবান
বাইবেলে নেই কালো ঈশ্বর কোনো
অথচ গ্রামের সবচেয়ে গরীব
মানুষটার নাম আজ’ও কালাচান।
জর্জ ফ্লয়েড আমার’ও নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়,
হিজড়া পল্লীতে আগুন ধরে গেলে আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়,
দলিত শিশুকে স্কুল থেকে বের করে দিলে আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়,
আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় রোহিত ভেমুলার চিঠি পড়ে
আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় আদিবাসী উচ্ছেদের খবরে,
আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় নিশ্বাস নিতে গেলেই
আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় আমার নিশ্বাসে ট্যাক্স বসালে।
সহস্রাব্দ ধরে লেখা আমাদের অপমানের ইতিহাস
সহস্রাব্দ ধরে আমরা হয়েছি শুধু সাদা ক্ষমতার কৃতদাস।
জর্জ ফ্লয়েড, আমার’ও নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়,
আমি কথা বললেই ওরা আইন দেখাবে
প্রতিবাদে পথে নামলেই নিয়মতান্ত্রিক সভ্যতা শেখাবে
হত্যার বিক্ষোভে হত্যাকারীরাই আমাকে সন্ত্রাস বানাবে,
ধর্মগ্রন্থের দোহাই দিয়ে সম্প্রীতির বুলি শোনাবে,
অথচ আমাদের কবরের উপর
খেলে যায় যারা
নিয়মিত সম্প্রীতির আজব ধাঁধা,
ওরা একবারও চেয়ে দ্যাখেনি কোনোদিন,
কালো মানুষের কবরের এপিটাফ
আজ’ও ধবধবে সাদা।