মধুমালার যাপনচিত্র

Share this:

মধুমালার যাপনচিত্র

ছোট লাইনের ট্রেনে চেপে প্রতিবছর চৈত্রের শেষে বর্ধমান থেকে আমারুণ যাওয়া ছিল জীবনের একমাত্র অ্যাডভেঞ্চার! স্কুলে কতদিন অনুপস্থিত, সেসব হিসেব রাখার অভ্যাস তখনও তৈরি হয়নি মধুমালার। বাড়িতে বেশ কিছুদিন ধরে হাঁকডাক চলত। মধু ভাবত আবার সেই গরুর গাড়ি চেপে রাতের অন্ধকারে আর একটা দেশে পৌঁছে যাবে ও। ওটা যে দেশ নয়, আর একটা জেলা মাত্র, এসব দূরত্বের ধারণাও ছিল না। মনে মনে কত প্রস্তুত! তাজ্জুদিন বাসে চেপে আহমদপুর পৌঁছানো। তারপর মানুষের দশগুণ জিনিসপত্র কীভাবে যে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছত, সে এক ঝকমারির গল্প। মধু এখন ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটেও কেবিন ব্যাগে সারতে চায় যাত্রা। ভাবে নিজেকে আরও একটু সংকুচিত করে ফেলতে পারলে বেশ হয়! এত প্রয়োজন কেন জীবনে? মানুষের হাত-পা-সহ হেঁটে চলে বেড়াবার মতো শরীরটার এত কী লাগে! তবু মাঝেমাঝে একটু বেশিদিনের ট্রিপ হলে লাগেজ গোছাতে হয়। ওষুধ-বিষুধ তরল হলে লাগেজ ছাড়া গতি নেই। অথচ সেই স্কুলের নিচু ক্লাসের দিনগুলোয় অত জিনিসপত্র নিয়ে জার্নি করার মোহ ছিল আলাদা।

বসন্ত পঞ্চমীর দোল নয়, বৈশাখের শেষ ঠাঠা রোদ্দুরে গুড় ভেজানো জল যখন শরবত নামে গলার নিচে নামত ধীরে ধীরে, সে ছিল অমৃতের আর নাম। শরবতে গোলমরিচের গুঁড়ো মেশানোর রেসিপি, সেই তখন থেকে মধু টের পেয়েছিল মিষ্টি তখন বেশি আস্বাদের যখন তাতে সামান্য হলেও ঝাল বা ঝাঁঝ মিশে থাকে। মধু নিজের ড্রিংক্সে তাই মাঝেমাঝে একটু বেশি মাত্রায় মেশায় কাঁচা লঙ্কার জুলিয়ন কাট। কিন্তু তখন আমারুণের রোদ্দুর যে জ্বালা-পোড়া অনুভূতি দিত আর তাতে নেমে আসত মিষ্টি জলের স্নিগ্ধতা, তা আজ হাজার খুঁজেও মেলে না। প্রতিবার গলার ভিতরের ঝিল্লি হাতড়ে মধু সেই স্বাদটা ফিরে পেতে চায়। আশ্চর্য এক অমিল চাওয়া যেন সে। যারে যায় না পাওয়া, তারি হাওয়া লাগে– কেন যে মধুর গায়? মধুও জানে না। বর্ধমানের বাজার ঘেঁটে কত কী যে আরও কিনে আনত বাবা। আর ওরা তখন মায়ের পেটের কাছে লেপটে বসে পাহারা দিত সঙ্গে আনা ব্যাগ-পত্র। শুধু ব্যাগ তো নয়। কেরোসিন স্টোভ, কেরোসিনের জেরিক্যান, বালতি-মগ, প্রেসারকুকার, শালপাতার বান্ডিল, হ্যাসাক বাতি গোটা কয়েক, আরও কত যে শস্য সঙ্গে নিয়ে ওরা আহমদপুর থেকে বর্ধমানে এসে পৌঁছত। মধু প্রতিবার ভাবত সবকিছু নিয়ে ওরা কিছুতেই নামতে পারবে না প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ছাড়ার আগে। হয় বাবা ভিতরেই থেকে যাবে, নইলে কয়েকটা লাগেজ! খাবার জলের বড় একটা পাত্র, যার পেট চিরে বেরিয়ে আসত একটা কল। সেই কল ঘোরালেই জল পড়ত ঝরঝর করে। জল খোয়ার থেকে সেই জল পড়ার ধারাটি দেখার, মজাই ছিল আলাদা। মায়ের চোখের আড়াল হলেই সেই কল খুলে জল পড়া দেখত মধু আর অবিন, দুই ভাইবোন। আর তেষ্টা পেলে যখন আর একটুও জল মজুত থাকত না ওই কন্টেনারের পেটের ভিতর, তখন মায়ের বকুনির মাত্রা চড়োত। বাবা বাজারসেরে ফিরে আবার জলের ক্যান ভরে আনত প্ল্যাটফর্মের কল থেকে। মধু নিজেকে ঝট করে এসব ভাবনার তার কেটে দেখে নিতে চায় আয়নায়। দেশের কোথাও বাড়ির বাইরে গেলে খনিজ-জল ছাড়া এক ফোঁটাও ঠোঁটের ওপার করে সে। অথচ তখন কেমন সব আকাড়া দিন ছিল। জল, তো জলই! তার আবার নাম-গোত্র হয় নাকি! প্রথমবার ভিয়েনা পৌঁছে হোটেলে খাবার জল আলাদা করে খুঁজে বকা খেয়েছিল বিস্তর। ওয়াশরুমের জল খেতে হবে ভেবে চুপ করে বসেছিল মিনিটদশেক। কিন্তু ঔপনিবেশিক চিন্তাচেতনা নানা টানাপোড়েনে ভিতরে ভিতরে সায় দিয়েছিল, সাহেবরা তো আর স্বাস্থ্য বিষয়ে মধুর থেকে কম অসচেতন হতে পারে না। তাই, ছোট গ্লাসে সামান্য জল ভরে নিয়ে গলার ওপাশে পাচার করেছিল মধু।

ট্রেন মধুর জীবনে যেন একটা মেটাফর! ছোট লাইন মানে ন্যারো-গেইজ লাইনের ট্রেন ছিল জীবনে থিতু দিনগুলির ভিতর আশ্চর্য একটা চলা-চলা খেলা! যে চলেছি, কিন্তু আশেপাশে সবাই আমার সঙ্গে হাত ধরে ধরে চলছে! বাড়ি-ঘর, দোকানপাট, জমি-জমা, গাছপালা, গরু-বাছুর ছাগলছানা সবাইকে ছুঁয়ে আছে যেন মধু। হাতে গন্ধ সেঁটে যেত মধুর। সবুজ গন্ধ মেখে থাকা সবজিগুলো কেমন ভালোবাসা মাখা। আমারুণে পৌঁছলে তো যেন পুরো গ্রামটাই একটা মেটাফর। বড় বড় দিঘির আর ছোট ছোট ডোবার জল গাঢ় সবুজ। দিনরাত গাছের ছায়া বুকে জাপটে রেখে কেমন মায়া মায়া ভাব! মিটার-গেইজের সঙ্গে পরিচয় আরও একটু। তখন মধু আর অবিন কিছুটা বড়। পাহাড় দেখার সেই বিস্ময় যেন আজও চোখে লেগে আছে শীতের পিঁচুটির মতো। দু-আঙুল দিয়ে রগড়ে রগড়ে চোখ লাল। জ্বালা ধরা ভাব। গত কিছুদিন আবার সেই ভাবটা বারবার ফিরে ফিরে আসছে। রাত্রি বলেছে– আই থিঙ্ক ইউ গট ক্যাটারাক্ট। ডাক্তারের কাছে যাও।

মধু এখনও কথায় কথায় ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না। না কি ভয় পায়? ছোট্ট একটা ফুসকুড়ি থেকে বেমালুম একটা বড়সড়ো নামওয়ালা অসুখের ফিরিস্তি শুনতে হতে পারে বলে ভিতরে ভিতরে কুঁকড়ে থাকে। দু-একজন বন্ধু আছে যারা ডাক্তারি করে, তাদের কাছে সাজেশন নিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছে প্রায় একযুগ। কিন্তু মাঝামাঝে মনে হয়, এটা ঠিক হচ্ছে না। প্রপার চেক-আপ প্রয়োজন। ভাবতে ভাবতে চোখ আবার টনটন করে ওঠে।

অবিনের সঙ্গে দেখা হয়নি সাত বছর। দু-বছরের ছোট, পিঠোপিঠি ভাইবোন মধু আর অবিন। প্রতিদিন এক সঙ্গে ঘুম ভেঙে ওঠা থেকে শুরু করে মায়ের তম্বি শুনতে শুনতে বড় হওয়া মানুষ দুটো কীভাবে যে গোলার্ধে ভাগ হয়ে গেল। আমেরিকা আর আফ্রিকায় অবিন কুড়ি বছরে ঠাঁই বদলেছে বারদশেক। তবু একটা সময় বছরে, দু-বছরে দেখা হতো। তারপর এতগুলো বছর কীভাবে কেটে গেল একবারও দেখা না হয়ে! দুজনের চুল পঁচিশ শতাংশ সাদা। ছবিতে, ভিডিও কলে এখনও সেই এক গল্প মাসে এক-দুবার। টাইম জোনটাই বদলে গেছে। রাতদিন আলাদা ওদের। মধু ভাবে আর একবার ঠিক চলে যাবে ভাতার ব্লকের আমারুণে। কিন্তু সেই ট্রেন লাইনটাই নাকি উপরে তুলে ফেলে দেওয়া হয়েছে অনেকদিন হলো। এখন ইলেকট্রিক ট্রেন চলে। হু করে পেরিয়ে যায় গ্রামগুলোর আধা-শহর কিংবা মফস্বলী শরীর স্পর্শ করে। স্পর্শও ঠিক করে না আর। গতি বেড়েছে বলেই ছোঁয়াটা যেন আর তেমন নেই। আমারুণ গ্রামটাও প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার পাকা রাস্তায় মাত্র কিছু সময়ে দৌঁড়ে পৌঁছে যাওয়ার মতো। সেই সময়, দুপুর গড়িয়ে যে ট্রেনে উঠত মধু-অবিন মা-বাবার সঙ্গে, মোটামুটি একটা কামরার অর্ধেক জুড়ে, সেই ট্রেনটা যেন কোনো তাড়াই ছিল না। চললে হয়, না-চললেও হয় ভাব! আমারুণ পৌঁছাতে সন্ধ্যে প্রায়। ট্রেনের কামরার বাকি সব লোকজন দায়িত্ব নিয়ে একটা একটা করে মোট নামিয়ে দিত স্টেশনে। প্ল্যাটফর্ম তখনও এবড়ো-খেবড়ো। সেই ছোট ট্রেনেরও দুতিনটে সিঁড়িতে পা ঝুলে ঝুলে নামত মধু আর অবিন। গার্ড সাহেব বলত যাকে বাবা, তিনি সস্নেহে অপেক্ষা করতেন শেষ মোটা কামরার ভিতর থেকে কেউ ঝপাং করে ঠেলে ফেলে দেওয়া পর্যন্ত। তারপর আবার সেই বাঁশি বাজিয়ে, সবুজ পতাকা নেড়ে ট্রেনটা নড়ে উঠত চিড়িয়াখানার কোনো প্রয়োজন নেই। মধু ভাবে, তবে কি এখন ওর জীবনটাও তেমন? কোনো তাড়া নেই। নাকি তাড়াগুলোকে অস্বীকার করতে শিখেছে ও!

এক কাপ চা ছাড়া খুব একটা কিছু প্রয়োজনীয় মনে হয় না এক একদিন! ট্রেনে চড়া হয় না অনেকদিন। বইয়ের সার ঘেটে কয়েকটা রেলগাড়ির বই-এ আঙুল চালাতে চালাতে কেমন যেন সার সারত স্লিপারগুলো ভিজতে ভিজতে কেমন নরম-আঁঠালো হয়ে উঠত। শেওলার হালকা সবুজ মিহি নরম শরীর জেগে উঠত সেই কেঠো শরীরে। জ্যান্ত মনে হতো সবটা। রেলগাড়ি পেরিয়ে যাওয়ার পর গরম হয়ে ওঠা লাইনে পায়ের গোড়ালি লাগলে ছ্যাত করে পুড়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হতো। ঠান্ডা-গরম চিনতে চিনতে মধু বড় হয়ে গেল একদিন। তখন শুধু হেঁটে যেতে ইচ্ছে করত ওই লাইন বরাবর। অথচ কাউকে একটা চাইত ভিতরটা। মন শুধু নয়। শরীরটাও কেমন কুমুর মতো হয়ে যেত। কারও একটা শক্ত পাঞ্জা, আঙুলের বেড় বড্ড পেয়ে বসত। অবিন তখন সাইকেল নিয়ে সারা পাড়া এফোঁড়-ওফোঁড় করত। ফুটবল, ক্রিকেট ছাড়া আর কিছুতেই মন ছিল না ওর। মধু যে কিছুই পারে না বই ঘাঁটা ছাড়া, সেদিকে কোনো নজর ছিল না ওর। বাব-মা শুধু পরীক্ষার নম্বরের গ্রাফ নিয়ে মগ্ন তখন। মধু নিজেকে নিয়ে কী করবে কিছুতেই ঠিক করতে পারত না। স্কুলের রাস্তায় সামনের দিকটা কেঁপে ওঠা বেড়ে যেত যখন, তখন কেমন ভয় পেত মধু। সেই ভয়টা সেবার ফিরে পেয়েছিল ব্ল্যাকফরেস্ট দেখতে গিয়ে। সারসের পা ডোবানো হ্রদের জলে নিজের ছায়া খুঁজতে খুঁজতে চমকে উঠেছিল মধু স্টিম ইঞ্জিনের হুইসেল শুনে। মনে হয়েছিল গত জন্মের কথা। ভকভক্‌ করে কালো ধোঁয়ার নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে চার বগির একটা রেলগাড়ি ঘন জঙ্গলের ভিতর থেকে এমনভাবে বেরিয়ে আসছিল, মনে হচ্ছিল রূপকথার গল্পের শরীর থেকে নড়চড়ে কিছু একটা জীবন্ত শরীর ঘাড় নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে আসছে। বইয়ের পাতা থেকে এক্ষুনি সেটা চড়ে পড়বে মধুর গায়ে। সারা শরীরে আবার একটা রোমাঞ্চ, আবার একটা শিরশিরে ভাব টের পেয়েছিল মধু। জার্মান গাইড গল্প শোনাচ্ছিল একটা বড় টুরিস্টটিমকে। কবে এই ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছিল, কত কী ঘটনা, কাঠের তৈরি ট্রেনের বগি আর কালো জঙ্গলের মোহ, আরও কত কী! মধু সারসটাকে জড়িয়ে ধরতে গলা জলে নেমে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে করতেই ঝেপে বৃষ্টি নেমেছিল সেদিন। দশ হাত দূরের সবকিছু অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল নিমেষে। মধু আচমকাই দৌড় লাগিয়েছিল মাঠ ভেঙে। আপাং-র কাঁটার মতো, চোর কাঁটার মতো জংলা পায়ে জড়িয়ে ধরছিল। মনে হচ্ছিল, ওই কালো ধোঁয়াওয়ালা ট্রেনটায় চড়ে বসতে পারলে বেশ হতো। অবিনের সঙ্গে অনেক বছর আগে একবার চড়েছিল হেরিটেজ ট্রেনে। ইয়ুংফ্রা গিয়েছিল সেবার ওরা।

হ্যারি গোল্ডিং-র ওয়ান্ডার বুক অফ্‌ রেল ওয়েজ ফর বয়েজ অ্যান্ড গার্লসের অ্যাবার্ডিন এক্সপ্রেসের ছবি দেখিয়েছিল অবিন। অবিনের সঙ্গে গতির একটা আশ্চর্য সম্পর্ক। থেমে থাকা যেন ওর নয়। মধু যেমন সারা পৃথিবীর বেশ কিছুটা ঘুরে দেখেও মনে মনে থেমে থাকা একটা মানুষ। ঘটনায়, দৃশ্যে, সময়ে- মধু যেন চলে না শুধু। ভাবে অনেকটা বেশি। এক দৃশ্য থেকে হাজার দৃশ্যের জন্মকথা লিখে চলে ও মনে মনে। মাথার ভিতর হার্ডডিস্কে তুলে রাখে মুহূর্তকে। পঞ্চাশে ঘটনায় ছায়া খোঁজে পাঁচ বছরের। পঁচিশের, পঁয়ত্রিশের, বিয়াল্লিশের। অবিন শাসনের সুরে বলে– ভুলে যা ওসব! ভুলতে পারাটাও একটা আর্ট। মানুষের জীবন কিংবা মনন তার সমস্ত কিছুকে জমিয়ে রাখার আড়ত নয়। মধু বলে– জানি। কিন্তু আর্কাইভ তো! অবিন ফেইড আউট করে এসব শব্দ উচ্চারিত হলেই। ওর সামনে তখন বারোটা প্রজেক্ট, একশো কুড়িটা সেশন, দশ সেট ফ্লাইট বুকিং। আর্কাইভে ঢুকে পড়ার মতো সময় থাকে না ওর। মধু চুপ হয়ে যায়। কেন এখনও এসব বলে অবিনকে? নিজেকেই দুষতে থাকে ও! আসলে জীবনটা কি সেই সাপটার মতো? যে নিজের লেজটাই মুখে পুড়ে গোলাকার হয়ে বসে থাকে! লিনিয়ার কিছু নয়! বৃত্তাকার মাত্র! ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে ‘গ্রেট বেয়ার’- এর ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে যাওয়া গ্লস্টারশায়ারের সেভার্ন টানেল। তারপরই এসে পড়ে আমেরিকার নিউ মেক্সিকোর রিও গ্রান্ডের নদীর ওপর দিয়ে অবলীলায় পেরিয়ে যাওয়া এঞ্জিনের ছবি। এসব কি তবে ছবিদের না থুড়ি স্মৃতির মন্তাজ? নাকি জাম্পকাট! জীবনটা মধুর কাছে যেমন পাড়া, গলি, তস্য গলির ওপারে হঠাৎ স্টেট হাইওয়ে হয়ে ন্যাশনাল হাইওয়ের হুহু একশো, একশো-কুড়ি মেইল-এক্সপ্রেস ট্রেনের ঘুমভাঙা ভোরের মতো মায়াময় দিনগুলো আর কখনও ফিরে আসেনি বলেই হয়তো স্মৃতির জাদুঘরে বন্দি থাকতে হয় ওকে। এক সঙ্গে ল্যুভর দেখা হয়নি বলে গনগনির দুপুরটাকে ফিরে পেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কোনো উদ্যোগ আর নেওয়া হয় না। শুধু ইচ্ছেটা বুকের পাঁজরে কোভিড পরবর্তী প্যাঁচের মতো জমাট বেঁধে থাকে। আর থেকে যায় দিন পেরোনোর ক্লান্তির গায়ে সেঁটে। হালকা চাদরের মতো মাঝরাত্তিরের ঘুমে। কিংবা ঘুম ভেঙে পায়ের কাছ থেকে গলা পর্যন্ত টেনে নিতে চায় মধু এইসব ব্যথা আর শুশ্রূষাগুলোকে। অবিনকে এসব বোঝানো কঠিন। সময়ও নেই ওর শোনার!

‘মার্গ’ ভ্যানগগের তারাভরা রাতের আকাশটাকে কভার পেজে বসিয়েছে নিখুঁত। ভিতরে তার আরও বেশ কিছু পৃথিবী বিখ্যাত ছবি। ভারতীয় ছবিও নেহাত কম না। বারোমাসের তারিখের পাতাগুলোর ভাঁজে ভাঁজে ছবির শরীরগুলো এত মসৃণ, আঙুল চালাতে দারুণ লাগে। স্টলে দেখেই কিনেছে মধুমালা। কিন্তু কাউকে না দিতে পারলে কি শান্তি আছে? এসব আশ্চর্য অনুভূতি শুধু নিজের কাছে রাখলে কেমন পাগল পাগল লাগে। দিলে মনে হয়, ভাগ দিলুম। সুন্দর আরও সুন্দর হলো। অবিন এসবকে বলে– ফাস্‌! আমি, মী, আই– ওর কাছে খুব বড়। অবিন তাহলে এত কাজ করে কীভাবে? মধু প্রশ্ন করে মাঝেমাঝে। টারগেট শুধু আমি– কীভাবে সম্ভব? নিজেরই বুকের চাতালে গুলি ছুঁড়ে ছুঁড়ে চাঁদমারি কি সম্ভব? যদি তাই হবে, তবে অবিনও খুব বড় একজন শিল্পী! হো হো করে হেসে ওঠে অবিন দু-বছরের দিদির কথা শুনে। ভিডিও কলের পর্দা মুহূর্তে ছিঁড়ে-ফেটে সেই হাসির আওয়াজ হাজার হাজার কিলোমিটার দূরত্বকে নস্যাৎ করে দেয়। কখনও মধুকে দিদি ডাকেনি যে ভাই, সে বলে ওঠে– ইউ আর রিয়েলি ইনকরিজিবল্‌। অবস্টিনেট সিস্‌! মধু শুনতে পায় বেনারসের সন্ধ্যের আরতর ঘণ্টা, কাঁসর, ঢোল, করতালের অর্কেস্ট্রা। আর চোখে ভেসে ওঠে বহুস্বর প্রদীপের জ্বলে ওঠা বুকের আলোর কাঁপুনি, নাকে এসে ঢোকে ঘিয়ের পোড়া গন্ধ। নৌকাটা দুলে উঠলে সমস্ত পৃথিবীটাও যেন দুলে ওঠে ওদের। অবিন শক্ত করে একহাতে বাবার কবজি আর এক হাতে নৌকার কাঠ আঁকড়ে ধরে। এসব কি তবে এ জন্মের কথা নয়। গত জন্ম কিংবা হাজার বছর আগেও কোনো জন্মের স্মৃতিকথা? মধু কি তবে সত্যিই আর বেঁচে নেই। মৃত্যুর পর ঘুরে বেড়াচ্ছে গোদাবরী নদী পেরোনোর ঝমঝম আওয়াজ আর স্লিপার কোচের জানলায় চোয়াল চেপে জলের সবজে-কালো রঙ দেখা, দু-একটা ছোট নৌকায় জেলেদের মাছ গুঁজে রেখে গুণ টেনে চলা– এসব আসলে অনেক অনেক জন্মের ছবিঘর! সেখানে তুঙ্গভদ্রার তীরে হাম্পি ছিল চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর রাজধানী। হঠাৎ সেখান থেকে ছবিটা আচমকা চিলাহাটি, হলদিবাড়ির দিকে এসে পড়লে মনে হয়, বইয়ের কতগুলি পাতা জোরালো হাওয়ায় উড়ে গেছে। কিংবা কেউ কেটে নিয়েছে পাতাগুলি নিজের প্রয়োজনে। পরম্পরা থাকা আর না থাকাও তো আসলে জীবন। স্টেপজাম্প সেখানে অসম্ভব কিছু নয়। অবিন এসব আবর্তে ঢুকবে না জেনে মধু যেন আরও বেশি করে তলিয়ে যেতে থাকে পরতে পরতে।

শিলাবতী নদীর ভাসা ব্রিজের গল্প শুনতে শুনতে মধুর মনে হয় এখনও এভাবে মানুষ বাঁচে। কংক্রিটের প্রয়োজন কেন তবে? এত শক্তপোক্ত করা কি প্রয়োজন ছিল পৃথিবীটাকে? বাড়ি-ঘরদোর সব আকাশ ছুঁই ছুঁই, না হলে কি হতো না? না হতো না। মধুর ভিতর থেকে কেউ যেন কথা বলে ওঠে। মানুষ আড়ে– দৈর্ঘ্যে যত ফুট, ইঞ্চি, সেন্টিমিটার হোক না কেন, তার কাজ এইসব হিসেবের পারমুইটেশন, কম্বিনেশন থেকে অনেক গুণ বড়। তার সীমাহীন ভাবনাকে সে বাস্তব করে তুলতে চায়। তাই সে আকাশপথে জাহাজ ছোটায়, জলের শরীরে ডুব দিয়ে হারাতে চায় গভীরতাকে। মেদিনীপুরের মানুষের মতো এখনও নৌকা জুড়ে জুড়ে কাঠের পাটাতনে পা রেখে নদীর প্লাবতাকে কাজে লাগিয়ে এক তীর থেকে আর তীরে পৌঁছানোর তারিকা সবার হতে পারে না। জল বেড়ে গেলে নৌকার সংখ্যা। পাটাতন বাড়ে সমানুপাতিক হারে। মধু ঠিক করে আগামী বর্ষায় দেখে আসবে শিলাবতীর ভরন্ত শরীর। যদিও জল তখন আগ্রাসী থাকে কয়েকটা দিন। আশেপাশে ঘরেদোরে ঢুকে পড়ে গেরস্তকে সন্তস্ত্র করে তোলে। বাসস্ট্যান্ড নাকি হয়ে যায় নৌকাস্ট্যান্ড! পাকা বাড়ির দেওয়ালে জলের দাগ দেখে মেপে নেওয়া হয় গত বছরের বন্যার স্পর্শ। বাঁশের সাঁকো তো দুই বাংলায় এখনও অনেক। এপাড়া-ওপাড়া যাতায়াত করতে সেটিই ভরসা। এমন পলকা জীবন অবশ্য মধুর ছিল না কোনোকালে। হবেও না হয়তো। তবু ওজন নিয়ে স্পর্শকাতরতা ছেড়ে যায় না ও-কে। লাগেজের ওজন মাপতে নানা ধরনের যন্ত্র যখন মুখ ভেংচায় তখন মধু নিজেকেই বকে। গায়ত্রীদির জিনিস গোছাতে গিয়ে কিছুটা শিখেছে কীভাবে মিনিমালিস্ট হওয়া যেতে পারে। আজকাল তাই ফুরফুরে লাগে কিছুটা। বই খাতা ছাড়া ওজন নিয়ে ভাবার মতো কিছু আর বহন করে না তেমন। মাঝামাঝে ভাবে মাথা থেকে ভাবনাগুলো তাড়াতে পারলে আরও কিছুটা হালকা হওয়া যেত! হয় না। কিছুতেই হয় না। অবিন কি পারে? কে জানে! মধু ঠিক জানে না। বাবাকে আগুনে শুইয়ে এসে একমুঠো শরীরটাকে জলে ভাসিয়ে দিতে দিতে মনে হয়েছিল, এটাই তো আসল! হয়তো হ্যাঁ। হয়তো না। বড় বড় মাল্টিস্টোরির দেওয়ালে ডানাওয়ালা পরীর মতো যে সমস্ত পেন্টিংস্‌, সেগুলোকে কেমন অপার্থিব মনে হয়। মনে হয় যা হয়নি, যা হবে না, আমরা সেটাই করতে চাইব। আর পারব না। আবার ও হেরে যাব। উঠে দাঁড়াব। কিন্তু শেষ ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার আগে কিছুতেই প্ল্যাটফর্মে পৌঁছতে পারব না। শেষ বগিটার সবুজ আলোকে লক্ষ করে ছুঁটতে ছুঁটতে নাকাল হতে হবে মধুকে। অবিনকেও হয়তো। কিংবা অবিন আগে পৌঁছলে কৌশলে চেইন্‌ টেনে ট্রেনটাকে রুখে দেবে কোনওদিন। তবু কি মধু পৌঁছাবে কোথাও? মাথার মধ্যে তুফান মেইলের গল্পগুলোকে সাজাতে সাজাতে আর একটা নদীর পাশে এসে দাঁড়াতে হবে তাকে। সেই নদীটার নাম কি ক্ষিরাই? নাকি সেইন্‌? দানিয়ুবও হতে পারে। কিংবা ব্রহ্মপুত্র, কীর্তনখোলা, ধানসিঁড়ি বা কোপাই! ময়ূরাক্ষীর তিলপাড়া বাঁধের নিচে শুয়ে থাকা শরীরটার ছায়া মধ্যেই কাঁসাইকে মিলিয়ে দেওয়ার কাজ চলবে মধুমালার জীবনে জীবনে। অবিন দু-হাত দূরে দাঁড়িয়ে দেখবে। কোনো নিষেধ থাকবে না। মধু এক জীবন পেরিয়ে অন্য জীবনে যাতায়াত করবে নিয়তির মতো।

 

প্রশ্নোত্তর

শুদ্ধস্বর: গল্প লেখার ব্যাপারে আপনার তাড়নার জায়গাটা কোথায়? অর্থাৎ কোন বিষয় এবং ঘটনাগুলো আপনাকে গল্প লেখার জগতে পৌঁছে দিলো?

স্বাতী গুহ : আমার কথা শুনতে চায় বা সময় নিয়ে ভাবনাগুলোকে নিয়ে আলোচনা চালানো যায়, এমন মানুষের বড় অভাব। তাই আমাকে লিখতে হয়। যে কথা বলতে চাই কিংবা শুনতে চাই- সেসবই হয়তো লিখে রাখি। বিষয় বা ঘটনার কথা আলাদা করে বলা খুব মুশকিল। বরং বলা যায়, প্রতিদিনের যেকোনো ঘটনাই গল্পের সূত্র হয়ে উঠতে পারে। কোনো একটা দৃশ্য, একটা ভাবনা, একটা শব্দ বা স্বাদ- গল্পকে উসকে দেয় ।

শুদ্ধস্বর: কীভাবে আপনার ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং অভিজ্ঞতা আপনার গল্পকে আকার দেয়?

স্বাতী গুহ : ব্যক্তিগত যোগাযোগ তো গুরুত্বপূর্ণ। মানুষকে চেনা বা মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বিশেষ থেকে নির্বিশেষ হয়ে ওঠে। অভিজ্ঞতা মাথার ভিতরে থিতিয়ে থাকতে থাকে লেখার সময় উঠে আসে অনর্গল। এক ঘটনা থেকে আরও অনেক ঘটনার পরম্পরায় তৈরি হয় জীবনের একটা পূর্ণ রূপ। কিংবা পূর্ণের দিকে পৌঁছানোর তাগিদ বলা চলে।

শুদ্ধস্বর: আপনি কি মনে করেন সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রভাব কথাসাহিত্যের উপর রয়েছে বা থাকা উচিত? আপনার অভিজ্ঞতা এবং পঠনপাঠনের আলোকে বলুন।

স্বাতী গুহ : মানুষ যেকোনো পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ভাবধারার দ্বারা প্রভাবিত। আসলে জীবনে অরাজনৈতিক বলে কিছু সম্ভব নয়। অবশ্য ব্যক্তিগত বিশ্বাসে রাজনীতি শব্দটিতে আপত্তি আছে। রাজা নেই- তবু রাজনীতি আছে! অথচ মানুষ আছে- মানুষের নীতি বা মানবনীতি থাকার কথা। কথাসাহিত্য কেন মানুষের যেকোনো সৃষ্টিশীলতা তার সমসাময়িক পরিস্থিতিকে অগ্রাহ্য করে গড়ে উঠতে পারে না। সরাসরি লড়াই বা শ্রেণি বৈশিষ্ট্য সোচ্চার না হলেও লেখক তার নিজস্ব অবস্থান থেকেই নির্মাণ করেন ঘটনা, চরিত্র, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, ভাষা-বয়ান। লেখকের দেখার চোখ কিংবা রচনার ধরন সমসময়কে ধরে রাখে রচনার ভিতর-বাহিরে।

শুদ্ধস্বর: এমন একটি ছোটোগল্প সম্পর্কে বলুন যা আপনাকে কাঁদিয়েছে বা আপনার চিন্তা ও বোধকে প্রচণ্ডভাবে ধাক্কা দিয়েছে।

স্বাতী গুহ : একটি নয়। অনেক গল্প তেমন। যদি নাম বলতেই হয়, তবে রবীন্দ্রনাথের- ‘শাস্তি’র কথা কিছুতেই ভুলতে পারি না।

শুদ্ধস্বর: আপনার গল্প লিখতে আপনি কীভাবে কাঠামো, ভাষা এবং ব্যাকরণ নির্মাণ/ব্যবহার করেন? আপনি কি নিজস্ব ফর্ম গড়তে এবং ভাঙতে অভ্যস্ত?

স্বাতী গুহ : আমার মনে হয় প্রতিটি লেখা তার নিজের তাগিদেই কাঠামো, ভাষা ইত্যাদি তৈরি করে নেয়। লেখককে তাই একটি গল্প লেখার জন্য অনেক সময়ই বেশ কিছুটা অপেক্ষা করতে হয়। গল্পের বীজ মাথায় নিয়ে রাস্তা পেরোতে হয় অনেকটা। ঘুমের মধ্যে, ঘুম না-আসার অসহ্যতায় ছটফটও করতে হয়। ঠিক কীভাবে, কী ভাষায় কোনো একটি বিশেষ গল্প লেখা হবে তা হয়তো নিয়ন্ত্রণ করে গল্পের ভিতরের প্রাণ, যা কখনও ঘটনা, কখনও চরিত্র, কখনও ভাবনা। গল্পের চলন তেমন হয় যা তার ভিতরের কথাকে প্রকাশ করার জন্য প্রয়োজনীয়।

আমি চেষ্টা করি যে বিশেষ ফর্ম গড়ি বা ভাঙি, তেমন মনে হয় না। আমার গল্পে যে কথা শব্দের শরীরে জেগে ওঠে তা নিজের শক্তিতে কখনও কখনও অন্যরকম হয়ে ওঠে। বিশেষ করে-চরিত্রের সংলাপে পুরো গল্প বলা হয়ে যায় কখনও। কোনো ন্যারেশন বা ব্যাখ্যা থাকেই না। শুধু সংলাপ চলে একের পর আর এক। বাক্যও খুব সংক্ষিপ্ত কখনও কখনও। এক শব্দের সংলাপ আদান-প্রদান চলতে থাকে টানা। মেটাফরের ব্যবহার হয়তো কিছুটা বেশি হয় কোনো ক্ষেত্রে। তবে অনেকটা অপেক্ষা করতে হয় একটা গল্পের শুরু করার আগে। খুব কম ক্ষেত্রে দ্রূত গল্প এসেছে শব্দের শরীরে।

অবশ্য গল্পটা মাথার কোষে কোষে চারিয়ে গেলে, লিখতে সময় লাগে না বেশি। এ ব্যাপারে আমি অজ্ঞাত কোনো শক্তির বশ। নিজেই টের পাই না কখন লেখা হয়ে গেল। অনেকদিন পর পড়লে নিজেই আশ্চর্য হই! এ লেখা আমিই লিখেছি বলে বিশ্বাস হয় না! কিন্তু আবার মাসের পর মাস একটিও শব্দ লেখা হয় না। খিদে পায় না। ঘুম আসে না। লেখাও আসে না।

শুদ্ধস্বর: আপনার কাছে একটি সার্থক ছোটোগল্পের মূল উপাদান কী?

স্বাতী গুহ : একটি উপলব্ধি। শরীর কিংবা শরীরবিহীন। একটা নাছোড় যন্ত্রণা, যা আসলে ভালোবাসা!

শুদ্ধস্বর: লেখকের রাজনৈতিক বোধ কতটা গুরুত্বপূর্ণ? রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক অন্যায্যতার বিরুদ্ধে লেখকের কোন ধরনের ভূমিকা থাকা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?

স্বাতী গুহ : লেখক স্পর্শকাতর মানুষ। তার তথাকথিত রাজনৈতিক বোধই তাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয় বলে আমার বিশ্বাস।

লেখক অস্ত্র ধরবেন কিনা কিংবা তা তার শক্তিতে কুলোবে কিনা প্রশ্ন সাপেক্ষ বা বলা যায় সুযোগ সাপেক্ষ। যাবতীয় অসাম্যই তো তাকে বাধ্য করে কোনো এক কল্পিত বা পরিকল্পিত সাম্যের দিকে কিছুটা হলেও হেঁটে যেতে। যে পথে যাওয়া হয়নি কিংবা হতে পারত, তার চিহ্নগুলো তো ধরা থাকে লেখার শরীরে।

শুদ্ধস্বর: আপনি এখন কী লিখছেন? আপনার বর্তমান লেখালেখি সম্পর্কে পাঠকদের জন্য কিছু বলুন!

স্বাতী গুহ : অফিসের গুচ্ছ গুচ্ছ নোটশিট, চিঠি-চাপাটি! তার মাঝে কখনও কখনও একটা দুটো গল্প বা ব্যক্তিগত গদ্য। কিছু পড়াশুনো করে লেখা প্রবন্ধ। তাও পেশার চাহিদায় বেশিটা।

অনেক বছর ধরে একটা বড় উপন্যাস লেখা শুরু করেছি। জানি না কবে শেষ

হবে। আমার পাঠক আমার চেনাশোনা কিছু বন্ধুরা। আজকাল তারাও সংখ্যার ক্রমহ্রাসমান। তাই আমার কিছু বলার নেই।

আমার বেশিরভাগ লেখাই আমার নিজের সঙ্গে কথা বলা বা সহবাস করা। তা কখনও খুব আনন্দের। কখনও ভয়ংকর যন্ত্রণার। কেউ সহযাত্রীর মতো পাশে আছে টের পেলে ভালো লাগে। এই আরকি!

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

শুদ্ধস্বর
error: Content is protected !!