১
মিটিং শুরু হবে ঠিক সাড়ে পাঁচটায়। তার আগে গুনে গুনে মোট সাড়ে সাত মিনিট সময়। ওইটুকু সময়ের মধ্যেই গুটিয়ে আনতে হবে সমস্ত প্রতিবাদের সুর-তাল-লয় প্রভৃতি। অনুমতি ততটুকুরই আছে, সেটাই স্ট্রাকচার। এর বেশি হয়ে গেলে বিক্ষোভ, কম পড়ে গেলে অভক্তি। একদম মাপে মাপ, খাপে খাপ। বিপ্লবের প্রাত্যহিক ডোজ। ‘বিকল্প সংস্কৃতি’।
অতএব তড়িঘড়ি গিটারের পিক-আপ লাগানো, হারমোনিয়ামের খাপ খোলা সবকিছুর জন্য বরাদ্দ দেড় মিনিট। গায়কের সুর ভেঁজে নেওয়ার জন্য পাঁচ সেকেণ্ড। তারপর কী আসতে চলেছে তা কেউ জানেনা। গানের গরু বামন হয়ে চাঁদে জমি কিনবে, না হারমোনিয়ামে বাঁধা সুরের সাথে দশ কিলোমিটারের ফারাক রেখে চলবে, তা গায়ক/বাদকও জানেন না।
সুর লাগানোয়, তাল মেলানোয়, বা অন্ততপক্ষে গানের বাণী আত্মস্থ করা নিয়ে কোন আলোচনা সংগঠিত হয়না বিপ্লবের ময়দানে। বিকল্প সংস্কৃতি চর্চার জন্য বরাদ্দ করা হয় সেই ঠিক সাড়ে সাত মিনিটই। যার পর আরম্ভ হয় অশেষ সর্বেসর্বা বার্তালাপের সভা, যা আমাদের বর্তমান সাংস্কৃতিক রাজনীতি চেতনার মতই বেসুরো, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং চূড়ান্ত অনাবদ্ধ, অনাসক্ত।
২
আমার মধ্যবিত্ত জীবনে বিপ্লব করবার সময় নেই। তার ওপর বিদেশে থাকার দরুণ নিজেই নিজের দৈনন্দিনের শ্রমিক-মালিক। স্বভাবতই সারাদিনের শেষে ক্লান্ত। পড়াশোনা করে করে মাথা ঝিমঝিম। ভাবলাম গান শুনি। ইউটিউবে আঙুল চালাতেই কানে ভেসে এলো ইস্কুলে শেখা ক্রিসমাস ক্যারল ‘সাইলেন্ট নাইট হোলি নাইট’। কনভেন্ট স্কুলে পড়ার সুবাদে জীবনে যা কিছু অর্জন করেছি তাঁর মধ্যে একটা প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রতি আমার অদম্য ভালোবাসা। এটা সেভাবে শিলচরে থাকার সময় হয়নি। তখন পাশ্চাত্য সঙ্গীত বলতে বুঝতাম ক্যাসেটের ওপর আবছা লেখা ‘বিটলস’ বা ‘বেঠোফেন’ ওইটুকুই। বা খুব বেশি হলে হ্যারি বেলাফন্টে’র ‘জামাইকা ফেয়ারওয়েল’। ব্যস। নিজের মত করে পাশ্চাত্যের গান শোনা, বোঝা সবই কারমেল কনভেন্টের দরুন। এই গানটাও সেভাবেই শেখা। ইস্কুলে প্রতি বছর ক্রিসমাসের সময় বিশাল আয়োজন হত, আর আমরা দলবেঁধে ক্যারল, ল্যাটিন ভার্স গাইতাম। আজ হঠাৎ কী এমন প্রয়োজন হল এই গান শোনার? যে মহামানবের জন্মমূহুর্তের স্তব এই গান, তাঁর প্রতি কোন অনুরাগ জন্মেছে কি অজান্তে? না তো! তাহলে কী এমন ঘটল বুঝতে পারিনা। আমার কি তবে অবিশ্বাস কম পড়িয়াছে?
ভাবতে ভাবতে প্রশ্ন করি, ধর্মীয় গানে কি তবে শুধুই বিশ্বাসীদের অধিকার? শ্যামাসঙ্গীত, কাওয়ালি, কীর্তন, গসপেল— এসবে আসক্তি কি তবে এটাই প্রমাণ করে যে আমি আসলেই একজন ভেকধারী অবিশ্বাসী? শিউরে উঠি! এত বড় মিথ্যে বলতে এখনও পটু হইনি জানতাম, কিন্ত জুতসই উত্তর না পাওয়ায় যারপরনাই অস্বস্তিতে। সত্যিই তো আমার কীর্তন শুনতে অসম্ভব ভালো লাগে! স্কুলে থাকতে তো অন্তর থেকেই গাইতাম ‘Oh Lord have Mercy on Your servants, Unto you we lift our hands!‘ রেকর্ডিং স্টুডিওতে যখন আদেশ আসে পরিচালকের ‘ডানা, আরেকটু ফিল দিয়ে গানটা গাও’, সেই “ফিল” দেওয়া তো কারমেল কনভেন্টের কয়্যারে গেয়েই রপ্ত করা। আরো একটু এগোলাম ভাবনাকে। রবীন্দ্রনাথের গান। পূজা পর্যায়। ‘বেজে ওঠে পঞ্চমে স্বর, কেঁপে ওঠে বন্ধ এ ঘর, বাহির হতে দুয়ারে কর কেউ তো হানে না।‘ এই পংক্তিগুলি মনে মনে আওড়াই। পলকেই উত্তর পেয়ে যাই প্রশ্নের।
খেয়াল করে দেখলাম, প্রায় সব প্রার্থনাসঙ্গীতই আসলে এক একটা দীর্ঘশ্বাসের মতন। কারো গান হয় অচলায়তন থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে, আবার কেউ জীবনের টানাপোড়েনে বিদ্ধ হয়ে কলম তোলেন। আবার কেউ কেউ ঈশ্বরের রূপের মধ্য দিয়েই বর্ণনা করেন এই পৃথিবীর সমস্ত নান্দনিককে। এবং তাঁর সাহায্যেই আশা রাখেন ভবিষ্যৎ সৌন্দর্য্যের। আসলে এদের সাথে আমার মিল কোন এক অসীম শক্তির প্রতি অন্ধ বিশ্বাসে নয়, আমার মন আর অন্য কোন বিশ্বাসী মন এক হয়ে যায় সুন্দরের প্রার্থনাতেই।
এক বিশিষ্ট দাড়িওয়ালা বুড়ো বহুযুগ আগেই ধর্ম-বিশ্বাসকে বুঝিয়েছিল নিপীড়িতের দীর্ঘশ্বাসের সংজ্ঞায়। একদমই ভুল বলেনি। শুধু ধর্মই নয়, সেই দীর্ঘশ্বাস বারবার তাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে ধর্মের আনুষাঙ্গিক সমস্ত শিল্পরূপেই।
আমার ধর্ম ভালো লাগেনা। বাঁধাধরা, গন্ডী টেনে দেওয়ার পক্ষে আমি কোনদিনই ছিলাম না। কিন্ত আমার ভেতর জুড়ে যে বিশাল আয়তনের এক একটা অচলায়তন রয়েছে, তাকে নাড়াতে পারে সেই নিমাই সন্ন্যাস পালা, আমেরিকান-আফ্রিকানদের গলায় প্রাণ পাওয়া গসপেল, এটা এড়িয়ে যাবার জো নেই।
মনে পড়ছে কলকাতায় একটা বিকেলের কথা। শুভেন্দুজেঠু, মানে শুভেন্দু মাইতি কী একটা কাজে আমাদের বাড়িতে এসেছেন। আর সত্তরের দশকের উত্তাল সময়ের কথা বলছেন। কথার মাঝে মাঝে এসে পড়ছে গানও। এমনই এক দিনের কথা বলতে লাগলেন যখন তিনি একটি গ্রামে গেছেন পার্টির প্রচারে। সেই গ্রামে তখন ঘরের পর ঘর শূন্য। কেউ হয় মিথ্যা মামলায় জেলে, বা কেউ আত্মগোপনে। এমনই এক অনুষ্ঠানে তিনি গাইবেন, যেখানে দর্শক সকলে ঠিক তেমনই ছেলেহারা ঘরের লোকেরা। গান ধরবার আগমূহুর্তে প্রতিটা মুখের দিকে তিনি তাকান। আর কল্পনায় হারিয়ে যাওয়া ছেলেগুলি সবাই হয়ে ওঠে এক একজন সন্ন্যাসী নিমাই, আর তারা এক একটা শচীমাতা-লক্ষ্মীপ্রিয়া-বিষ্ণুপ্রিয়ার প্রতিভূ। জেঠু গান ধরলেনঃ
“বিদায় দে মা, শচীরানী, আমি সন্ন্যাসেতে যাই
তুমি মনরে বুঝাইয়া কইয়ো গো,
মা তুমার নিমাই আর নাই
বিদায় দে মা, শচীরানী, আমি সন্ন্যাসেতে যাই!”
এই গানের গায়কের মনে যেমন তখন কোন অপ্রয়োজনীয় বিশ্বাসের পরিচয় ছিলোনা, তেমনই পুত্রহারা হবার আকুতি বোঝার জন্যে আলাদা করে ধার্মিকও হতে হতনা। বাংলা বিখ্যাত নিমাই সন্ন্যাসের পালা তখন শুধুই একটি মাধ্যম। প্রোপাগান্ডা নয়।
তাই যখন আমি সত্যিই বিধ্বস্ত, শ্রান্ত, দিশেহারা, বিটলস-এর কিংবদন্তী গানের কথার ‘মাদার মেরী’ আমার কানে অবতরণ করলে শান্তিই পাই। সেই ‘মাদার মেরী’-র সাথে কোন পুণ্য সতীর যোগসূত্র নেই। নেই কোন যুগ যুগ ধরে চলে আসা আজগুবি সন্তানপ্রসবের গাঁজাখুরি। সে কারণেই যখন কোন সিনেমার দৃশ্যে ভিয়েতনাম যুদ্ধের আবহে শুনি ‘Let It Be’, এই চিত্রকল্পের সামনে তখন ধর্ম-যুদ্ধ নেহাতই ছেলেমানুষ। প্রার্থনাসঙ্গীত তো তখন রীতিমত স্লোগান! লিখতে লিখতে আবারও বুঝতে পারছি কী ভেবে পিট সীগারের গলায় একটি গসপেল ‘I Shall Overcome’ সব আকুতিকে একত্রিত শক্তিতে পরিণত করার স্বপ্ন দেখে, আর জন্ম নেয় অবিস্মরণীয় অঙ্গীকার ‘We Shall Overcome!’
মানুষের ইতিহাসকে মানুষেরই কবল থেকে দূরে সরিয়ে রাখার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে ধর্ম ও অন্ধবিশ্বাস এতদিন। সফল হয়েছে মানুষের সাথে শিল্পের দ্বন্দ্ব ঘটাতে। আর আমরা তাই এখনও অঙ্গীকারের গান বলতে শুধুই বুঝি হেঁড়ে গলায় আধুনিক কিছু গণসঙ্গীতমাত্র। আর সন্তর্পণে এড়িয়ে যাই যে গান বিশ্বাসের কথা বলে। বুঝতে হবে এই বিশ্বাস অন্ধ করে না, ভরসা জোগায় মোটে। লর্ড বা মাদার মেরীরা এক্ষেত্রে স্রেফ রূপকাশ্রয়।
৩
গণসংগীতের নামোচ্চারণ করলেই যেন লাল ঝাণ্ডা ছাড়া আর কিছু চোখের সামনে আসে না। পেছনে পতপত করে ঝাণ্ডা উড়বে। আর সামনে থাকবে বক্তার মাঠ-কাঁপানো বাণী। গানের প্রয়োজনীয়তা শুধু নেতা আসার আগ অবধি সময় কাটানোর জন্য, ব্যস!
সাংস্কৃতিক সাব-কমিটি বা গণনাট্য থাকে বটে ‘বিকল্প সংস্কৃতি’ চর্চার লক্ষ্যে ব্যস্ত, কিন্তু তা বড্ড ফেডারেল প্রকৃতির। গানের বাণী, সুর, গায়কের গলার দৌড় বা গান-চয়ন— যে যার মত স্বতন্ত্র, উন্মুক্ত— একত্রিত করার মতো কিছু নেই। রাজনীতিও না।
এসব নাহয় মনখারাপী, রাগ-ধরানি কথা। তার চেয়ে বরং আমি একটা স্বপ্নের কথা বলি। এমন স্বপ্ন যেখানে জীবন আর বিকল্প সংস্কৃতি একাকার হয়ে ছিল কখনো।
এই স্বপ্ন আমার ছোটবেলার, যখন আমাদের একটা বড় বাড়ি ছিল শিলচরে। সামনে-পেছনে দুখানা বিশাল উঠোন ফল-ফুলের গাছে ভরা, ছিল অগুনতি মরসুমী আগাছার ঝোপও। সেই বাড়ির বসার ঘর থেকে হাঁক পাড়লে পেছনের ঘরগুলিতে আওয়াজ পৌঁছত না। বাইরের বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গেলে রান্নাঘর থেকে কেউ চিৎকার শুনে বাঁচাতে আসবে, এমন সম্ভাবনা কমই ছিল বেশ। কিন্ত অত বড় বাড়িখানায় মানুষ কেবল ৪-৫জন থাকতাম আমরা। অথচ আমাদের উঠোনের চারপাশের বাগানের মতই ওই বসার ঘরে অস্থায়ী মানুষের সংখ্যা কোনদিনই কম ছিল না, যার প্রভাব পড়ত রান্নাঘরের অনির্বাণ চুলোয় বসানো চায়ের পাত্রে। আমার পরিবার শুধু ওই বাড়িতে থাকত না। আমারও কেবল ওই একটিমাত্র ঠিকানা ছিলনা।
শিলচরে থাকাকালীন আমার বাবা গণনাট্য করত। আর সেই গণনাট্য সম্পর্কিত লোকজনে ছেয়ে থাকত আমাদের বাড়ি-জীবন, দিন-রাত সবকিছু। এতকিছুর পরও কেউ যদি আমায় জিজ্ঞেস করেন যে শিলচর গণনাট্য সঙ্ঘের মূল অফিস কোথায় ছিল, আমি ঠিক বলতে পারব না। আমার স্মৃতিতে শিলচর সঙ্গীত বিদ্যালয়ের হলঘর থেকে শহীদ ভবনের কমিউন, ডিস্ট্রিক্ট লাইব্রেরির মঞ্চ থেকে শংকরী হোটেলের ভেতরের ঘর- সর্বত্র থইথই করত গণনাট্য আন্দোলনের আগুন, স্পর্ধা, প্রশ্ন।
বাবার মুখে শুনেছি কোন এক বারের ভোটের গল্প। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনের দিনেই নাকি সেবার ভোটগণনা। প্রসঙ্গত, গণনাট্যের সাথে জড়িত অনেকেই ছিলেন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। প্রসাদকাকু (কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য), বাবারা সেদিন ‘হে নূতন, দেখা দিক আরবার, জন্মের প্রথম শুভক্ষণ’ গাইতে গাইতে গণনাকেন্দ্রে ঢুকেছিল। গণনাট্য সঙ্ঘের অফিস কোথায় জানিনা, তবে বিকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন যে সেদিন ওই ভোটকেন্দ্রেও হয়েছিল, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
ছোটবেলায় আমার কেবল একটা ঠিকানাই ছিলনা, কারণ রাস্তা-ঘাটে আমার বৃহত্তর পরিবারের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যেত। স্কুলফেরত মাঝেমাঝে দেখতে পেতাম রাস্তার মোড়ে কোথাও বাবা গাইছে, ‘ওরা ভয় পেয়েছে রোবসন!’, পাড়ার রবীন্দ্রজয়ন্তীতে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বিধায়ক হওয়া দীপকজেঠুকে দেখতাম পেছনের কোন সারিতে চুপচাপ বসে গান শুনছেন। আমাদের বেড়ে ওঠার দিনগুলিতে যৌথ খামারের স্বপ্নে বিধায়ক মিশে থাকেন মানুষের ভিড়ে, গানের আসরে, বিজেপি-করা বাপ-মায়ের ছেলেমেয়েরা ‘কাস্তেটারে দিও জোরে শান’-এ গলা মেলায়। মিছিলের সাথে গানের কোন বিরোধ নেই সেখানে।
গণনাট্য সংঘ শিলচরের একখানা শিশু শাখা ছিল, ‘অংকুর’ নামে, যার সাথে জড়িত ছিলাম আমি-সহ আমার বাল্যকালের প্রায় সব বন্ধুরাই। প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে আয়োজিত হত আমাদের বার্ষিক অনুষ্ঠান, সুকুমারজয়ন্তী। অনুষ্ঠানলিপি, মঞ্চসজ্জা, সঞ্চালনা, গান-নাচ-নাটক-আবৃত্তি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কার্ড বিতরণ- সব করতাম আমরা ছোটরাই। আর আমাদের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করত শিলচরের এক বিখ্যাত বেলুনওয়ালা, যার কন্ঠ ও আশ্চর্য ফেরির ডাক তাঁকে আমাদের কাছে হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার প্রতিরূপ করে তুলেছিল। ঘুমন্ত দুপুরে যখন সারা পাড়া নিস্তব্ধ, তখন দূর থেকে ভেসে আসত তাঁর গলা- “সোনা বাবু আও, তাড়াতাড়ি আও, বাপরে বাপ!” আমাদের অথৈ স্বাধীনতায় জ্বলজ্বল করে উঠত ‘অংকুর’ আর গর্বিত বাবা-মায়ের মত গণনাট্যের বাবা-কাকা-জ্যাঠারা প্রশ্রয় দিতেন খুব। এতসব বলছি কারণ, সত্যিকার অর্থে ছোটদের যৌথ খামার হতে পেরেছিল ‘অংকুর’। বড়দের ধারে কাছে ঘেঁষতে দিতাম না আমরা মোটেও। গলা ছেড়ে গাইতাম আমরা ‘আমাদের পাকবেনা চুল গো, মোদের পাকবে না চুল’, বড় হতে তখন আর কেই বা চায়?
আসলে এই বড্ড বেশি বড় হতে চাওয়াটাই আমাদের সবার স্বপ্নের কাল হয়ে যায়। বড় গায়ক, বড় নৃত্যশিল্পী, বড় নেতা- আমাদের অসীম চাওয়ার ব্যপ্তিগুলিকে ধারণ করতে অক্ষম যৌথ খামারের সহজ স্বপ্ন। রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে পড়ে আমাদের সবার সাংস্কৃতিক চেতনা বড্ড তাড়াতাড়ি বড় হতে চায় আজকাল। নিজেকে ছোট করে ভেঙে দিতে আর কেউ চায়না, ছোটদের হাতে, দুর্বল ক্ষমতাচ্যুতের হাতে আস্থা রাখতে সবাই অক্ষম। আর যাঁদের হাতে সত্যিই ক্ষমতা অপার, তাদের আছে অনেক অনেক বক্তব্য শুধু, মাঠ-কাঁপানো গলা, অথচ ঠায় বসে দুটো কথা, দুটো গান শুনবার কান নেই, ধক নেই।
আমার স্বপ্নের গণনাট্যের একটা স্বপ্নালু কান ছিল, বাস্তবে এখন শুধু কিছু অফিস পড়ে আছে।
আমার বাস্তবের রাজনীতির গলায় সুর নেই, শুধু কয়েক পাতা নোটেশান পড়ে আছে।
Shabnam Surita Dana currently works at the Department of South Asian Studies, University of Bonn, Germany as a Doctoral Researcher and Research Assistant. Besides, she is also a passionate singer, columnist and cultural activist in her own right