অনুবাদকের ভুমিকা: ভাষাকে সভ্যতার ইতিহাস ও নিদর্শনের স্মারক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এটা অনস্বীকার্য যে সময়ের সাথে সাথে ভাষার গতিবিধি পরিবর্তিত হয়। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে ভাষার এসব পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে উঠে। তাই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা বুঝতে হলে ভাষা বিশ্লেষণ খুবই কার্যকরী একটি পদক্ষেপ। বাংলা ভাষা কোন পথে অগ্রসর হচ্ছে তা নিয়ে আমাদের এখানে অল্প-বিস্তর আলোচনা চালু আছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত বাংলা ভাষার দৈন্যতা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠছে। যারা ভাষা নিয়ে কাজ করেন তারা এটি একবাক্যে স্বীকার করবেন যে বাংলা ভাষা ঠিক পথে এগুচ্ছে না। প্রচলিত বাংলায় আমরা এমন কিছু শব্দের ব্যবহার দেখতে পাই যেগুলোর অর্থ আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। এই ক্ষেত্রে আমাদের রাজনৈতিক ভাষ্যগুলো বিশেষভাবে লক্ষনীয়। যেমন, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে আমাদের এখানে ‘সীমিত পরিসরে লকডাউন’ কথাটির ব্যবহার অহরহ হয়ে আসছে। কিন্তু লকডাউন কেমন হবে এ সম্পর্কে এটি আমাদেরকে স্পষ্ট কোনো ধারণা দেয় না। একইভাবে ‘বিরোধীদলীয় চক্রান্ত’, ‘মানহানি/কটুক্তি’, ‘উন্নয়নের জোয়ার’ – এই শব্দগুলোর নির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা আমাদের কাছে নেই। তাও এই শব্দগুলোই মোটাদাগে আমাদের রাজনৈতিক ভাষ্য। ভাষার এই অস্পষ্টতা ও ফাঁপা রাজনৈতিক ভাষ্যের দীর্ঘ ইতিহাসকে ভালো করে বুঝে উঠার তাড়না থেকেই অরওয়েল এই প্রবন্ধটি অনুবাদ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি।
এই প্রবন্ধে অরওয়েল ভাষাকে বাস্তবতার নির্দেশক হিসেবে বুঝতে চেয়েছেন। তিনি মূলত ইংরেজি ভাষা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই আলোচনাকে আমরা মোটাদাগে দুইভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথম ভাগে অরওয়েল তথ্য উপাত্ত সমেত ইংরেজি ভাষার অবক্ষয়ের দিকগুলো উপস্থাপন করেছে। ভাষা কী কারণে অবক্ষয়ের দিকে এগোয় সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা আছে এই ভাগে। দ্বিতীয় ভাগে তিনি রাজনৈতিক ভাষার সরূপ উন্মোচন করেছেন। যে রাজনীতি ধোঁয়াশাপূর্ণ ভাষ্যকে অবলম্বন করে সে রাজনীতিও ধোঁয়াশাপূর্ণ। অর্থাৎ যে রাজনৈতিক ভাষ্য অস্পষ্ট সে রাজনীতি জণগণের চোখে ধুলা দেয়ার রাজনীতি। সে রাজনীতি উদ্দেশ্য কখনোই সৎ নয়। আর এই অসততাপূর্ণ রাজনীতিই ভাষাকে স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হতে বাঁধা দেয়। অরওয়েলের ভাষায়, স্পষ্ট ভাষার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো অসততা।
অরওয়েল আলোচনা এখানেই করেন শেষ করেন নি। এই প্রবন্ধের শেষভাগে অরওয়েল দেখাতে চেয়েছেন ভাষাকে কীভাবে এই জরাজীর্ণ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করা যায়। ব্যক্তি পর্যায়ে ছোট ছোট প্রয়াস ভাষাকে অস্পষ্টতার বেড়াজালে বন্দী করে রাখার বিশাল কর্মযজ্ঞে কার্যকরী আঘাত হানতে পারে। স্বাধীনতা মাত্রই নিজেকে পরিপূর্ণরূপে প্রকাশ করার নামান্তর। তাই এই জরাজীর্ণ পরিস্থিতি থেকে ভাষাকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্খারই প্রতিফলন।
মূল লেখা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৬ সালে Horizonএ। THE ORWELL FOUNDATION এর ওয়েবসাইটে সংরক্ষিত লেখা থেকে এই বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে। www.orwellfoundation.com/the-orwell-foundation/orwell/essays-and-other-works/politics-and-the-english-language/?fbclid=IwAR1U8AFLTevcNyNSASGLnX4JYLQcRNdvYIMIu9IFfuxdL3VmJg99GZYLuMI
অনুবাদ: শুভম ঘোষ
ইংরেজি ভাষা ভুল পথে অগ্রসর হচ্ছে—অধিকাংশ মানুষ, অন্তত যারা এই বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামান তারা অবশ্যই এটি স্বীকার করবেন। কিন্তু সাধারণত এটি ধরেই নেওয়া হয় যে সচেতনভাবে এই বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই। প্রচলিত ধ্যানধারণা অনুযায়ী আমাদের সভ্যতা ক্ষয়িষ্ণু এবং তাই আমাদের ভাষাও অনিবার্যভাবে অবক্ষয়ের দিকে অগ্রসর হবে। এই যুক্তি ভাষার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে যে কোন তৎপরতাকে আবেগতাড়িত সেকেলে ধারণা হিসাবে চিহ্নিত করে, যেমন বৈদ্যুতিক বাতির বদলে মোমবাতিকে বা উড়োজাহাজের বিপরীতে ঘোড়ার গাড়িকে বেছে নেওয়ার মত ব্যাপার। এই যুক্তির অন্তরালে অবচেতনভাবে যে বদ্ধমূল ধারণাটি নিহিত আছে তা হলো ভাষা তার স্বাভাবিক গতিতে আগায় এবং এটি এমন কোনও উপকরণ নয় যা আমরা নিজেদের প্রয়োজনে পরিমার্জন করতে পারি।
এখন এটি স্পষ্ট যে একটি ভাষার অধঃপতনের পেছনে অবশ্যই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ আছে, এর দায় শুধুমাত্র কোনও একজন লেখকের বাজে প্রভাবের উপর বর্তায় না। কিন্তু কোনওকিছুর প্রভাব সমস্যার মূল উৎসকে আরও শক্তিশালী করার পেছনের কারণ হয়ে উঠতে পারে এবং পূর্বের চেয়ে বেশি মাত্রায় একই সমস্যার পুনরুৎপাদন করে, যা অনির্দিষ্টকাল চলতেই থাকে। নিজেকে পরাজিত মানুষ ভেবে একজন ব্যক্তি মদ্যপান করতে পারে এবং ফলশ্রুতিতে সে সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত হয়ে যায় কারণ সে তখন মদ্যপ। ঠিক একই ঘটনা ঘটছে ইংরেজি ভাষার সঙ্গে। ভাষা নোংরা ও অনুপযোগী হয়ে যায় কারণ আমাদের চিন্তাভাবনা আড়ষ্ট এবং একইসাথে ভাষার এই অসারতা আমাদেরকে আড়ষ্ট চিন্তাভাবনা করতে সাহায্য করে। মূল বিষয়টি হলো এই প্রক্রিয়াটি পরিবর্তনযোগ্য। ইংরেজি ভাষার আধুনিক রূপ, বিশেষ করে লেখ্য রূপ বাজে অভ্যাস দ্বারা পরিপূর্ণ যা অনুকরণ-প্রবণতার কারণে ব্যাপকহারে বিস্তার লাভ করেছে, কিন্তু তা এড়ানো সম্ভব যদি কেউ এর বিপরীতে প্রয়োজনীয় পরিশ্রমটুকু করতে রাজি থাকে। কেউ যদি এই বাজে অভ্যাসগুলো বর্জন করতে পারে তবে সে আরও নিখুঁতভাবে চিন্তা করতে পারবে এবং স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে পারাটা রাজনৈতিক পুনরুত্থানের পথে প্রথম পদক্ষেপ। তাই ইংরেজি ভাষার বাজে দিকগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাওয়া কোনও পণ্ডশ্রম নয় এবং তা শুধুমাত্র পেশাদার লেখকের মাথাব্যথার বিষয় নয়। আমি এই বিষয়টিতে কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে আসব এবং আশা করি এখন পর্যন্ত যা যা বলেছি ততক্ষণে তা আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। আপাতত ইংরেজি ভাষার বর্তমান লেখ্যরূপের পাঁচটি নমুনা দেখা যাক।
নিম্নোক্ত পাঁচটি অনুচ্ছেদ তুলে আনার কারণ সেগুলোর মানের স্থূলতা নয়, আমি চাইলে এর চেয়েও খারাপ মানের উদ্ধৃতাংশ তুলে আনতে পারতাম। কিন্তু এই পাঁচটি অনুচ্ছেদ বেছে নেওয়ার পিছনে মূল কারণ হচ্ছে এগুলোর প্রত্যেকটি আলাদা মানসিক প্রতিবন্ধকতার চিত্র তুলে ধরে যেগুলোতে আমরা এখন ভুগি। মানের বিচারে এই অনুচ্ছেদগুলো হয়তো মাঝারি মানের চেয়ে ক্ষানিকটা স্থূল, তবে প্রতিনিধিত্বশীল দৃষ্টান্ত হিসেবে এগুলো বেশ যুতসই। আমি এগুলোর গায়ে ক্রমিক সংখ্যা বসিয়ে দিয়েছি যাতে করে পরবর্তী পর্যায়ে প্রয়োজন পড়লে সে অনুযায়ী উল্লেখ করতে পারি—
- I am not, indeed, sure whether it is not true to say that the Milton who once seemed not unlike a seventeenth-century Shelley had not become, out of an experience ever more bitter in each year, more alien (sic) to the founder of that Jesuit sect which nothing could induce him to tolerate.
Professor Harold Laski (Essay in Freedom of Expression).
- Above all, we cannot play ducks and drakes with a native battery of idioms which prescribes egregious collocations of vocables as the Basic put up with for tolerate, or put at a loss for bewilder.
Professor Lancelot Hogben (Interglossia).
- On the one side we have the free personality: by definition it is not neurotic, for it has neither conflict nor dream. Its desires, such as they are, are transparent, for they are just what institutional approval keeps in the forefront of consciousness; another institutional pattern would alter their number and intensity; there is little in them that is natural, irreducible, or culturally dangerous. But on the other side, the social bond itself is nothing but the mutual reflection of these self-secure integrities. Recall the definition of love. Is not this the very picture of a small academic? Where is there a place in this hall of mirrors for either personality or fraternity?
Essay on psychology in Politics (New York).
- All the ‘best people’ from the gentlemen’s clubs, and all the frantic Fascist captains, united in common hatred of Socialism and bestial horror at the rising tide of the mass revolutionary movement, have turned to acts of provocation, to foul incendiarism, to medieval legends of poisoned wells, to legalize their own destruction of proletarian organizations, and rouse the agitated petty-bourgeoise to chauvinistic fervor on behalf of the fight against the revolutionary way out of the crisis.
Communist pamphlet.
- If a new spirit is to be infused into this old country, there is one thorny and contentious reform which must be tackled, and that is the humanization and galvanization of the B.B.C. Timidity here will bespeak canker and atrophy of the soul. The heart of Britain may be sound and of strong beat, for instance, but the British lion’s roar at present is like that of Bottom in Shakespeare’s A Midsummer Night’s Dream – as gentle as any sucking dove. A virile new Britain cannot continue indefinitely to be traduced in the eyes or rather ears, of the world by the effete languors of Langham Place, brazenly masquerading as ‘standard English’. When the Voice of Britain is heard at nine o’clock, better far and infinitely less ludicrous to hear aitches honestly dropped than the present priggish, inflated, inhibited, school-ma’amish arch braying of blameless bashful mewing maidens!
Letter in Tribune.
এখানে প্রত্যেকটি উদ্ধৃতাংশেরই নিজস্ব ভুল ত্রুটি আছে, তবে এড়ানো যায় এমন কর্দযতা ছাড়াও দুটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য সবগুলোতে বিদ্যমান। প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উপস্থাপিত চিত্রকল্পের অমসৃণতা এবং অন্যটি হচ্ছে উপস্থাপিত ভাষ্যের অস্পষ্টতা। লেখকের কাছে হয়তো কোনও অর্থ আছে এবং তিনি তা ঠিকঠাক প্রকাশ করতে পারছেন না অথবা অসাবধানতাবশত একটা জিনিস বলতে গিয়ে তিনি ভিন্ন কিছু বলে ফেলেছেন, নয়তো তার লেখা শব্দগুলো অদৌ কোনো অর্থবহ ভাষ্য তৈরি করছে কিনা সে ব্যাপারে তিনি ভাবলেশহীন। এই অস্পষ্টতা ও চূড়ান্ত অক্ষমতা আধুনিক ইংরেজি গদ্যের সর্বাধিক চিহ্নিত বৈশিষ্ট্য এবং রাজনৈতিক লেখারগুলোর ক্ষেত্রে তা বিশেষভাবে লক্ষনীয়। তাই, যখনই কোনও বিষয়ের উপর ভাষ্য উপস্থাপন করা হয়, তখনই এর মূর্ত চিত্র গলে বিমূর্ত চিত্রকল্পে রূপ নেয় এবং ফলে ভাষ্যটিতে অর্থের অস্পষ্টতা ও অহেতুক বাগাড়ম্বর শব্দের ব্যবহার আছে কিনা সে বিষয়টি ভাবতে কেউ সক্ষম হয় না। অর্থের ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছে এমন শব্দের সংখ্যা গদ্যে দিনদিন কমে আসছে এবং পূর্বনির্ধারিত একটা ছকে যত বেশি পারা যায় ততগুলো ফ্রেইজ একসাথে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। গদ্যশৈলীর এই বেহাল দশা নির্মাণ করার জন্য যেসব কৌশল অবলম্বন করা হয়, নিচে আমি টিকা ও উদাহরণসহ সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছি।
মৃতপ্রায় রূপক (Dying metaphor)। সদ্য উদ্ভাবিত একটি রূপক দৃশ্যকল্প তৈরির মাধ্যমে আমাদেরকে চিন্তা করতে সহায়তা করে, অপরপক্ষে ব্যবহারিক দিক থেকে ‘মৃতপ্রায়’ একটি রূপক (যেমন, iron resolution) কার্যকারিতার বিচারে একটা সাধারণ শব্দে পরিণত হয় এবং এটিকে তার স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেই ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এই দুই শ্রেণির রূপকের মধ্যে জরাজীর্ণ রূপকের একটি বিশাল স্তূপ আছে যেগুলো দৃশ্যকল্প তৈরির সকল ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে এবং এসব রূপক ব্যবহৃত হওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে সেগুলো আমাদেরকে নিজেদের প্রয়োজনে নতুন ফ্রেইজ বা বাক্যাংশ উদ্ভাবনের পরিশ্রম থেকে বাঁচিয়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, Ring the changes on, take up the cudgels for, toe the line, ride roughshod over, stand shoulder to shoulder with, play into the hands of, no axe to grind, grist to the mill, fishing in troubled waters, on the order of the day, Achilles’ heel, swan song, hotbed ইত্যাদি। এগুলোর বেশিরভাগেরই অর্থ না জেনে ব্যবহার করা হয় (যেমন ধরুন, ‘rift’ বলতে কী বুঝায়?) এবং অপ্রাসঙ্গিক রূপকের অহরহ ব্যবহার স্পষ্ট ইঙ্গিত করে যে লেখক কী লিখছেন সে ব্যাপারে তিনি একেবারেই আগ্রহী নন। এখনকার সময়ে কিছু রূপকের অর্থ তার মূল অর্থ থেকে বদলে দেওয়া হয়েছে এবং যারা এগুলো ব্যবহার করছেন তাদের সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণাও নেই। যেমন ‘toe the line’ কে এখন ‘tow the line’ লেখা হয়। আরেকটা উদাহরণ হচ্ছে ‘The hammer and the envil’। এটি এখন এমনভাবে ব্যবহৃত হয় যেখানে সবসময় ‘anvil’ কে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে একটা ‘anvil’ই সবসময় ‘hammer’ কে ভেঙে ফেলতে পারে, কখনও এর বিপরীত ঘটনা ঘটে না, যদি একজন লেখক নিজে কী লিখছেন সে ব্যাপারে সচেতনভাবে চিন্তা করেন, তবে তিনি রূপকটির বিকৃত অর্থ এড়িয়ে যেতে পারবেন।
Operators, or verbal false limbs (একটি ভাষ্য অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘায়িত করার অস্ত্র)। এগুলো যথার্থ ক্রিয়াপদ এবং বিশেষ্য খুঁজে বের করার পরিশ্রম থেকে বাঁচিয়ে দেয় এবং একই সাথে তা অতিরিক্ত পদাংশ ব্যবহারের মাধ্যমে বাক্যের গঠনে এক ধরনের প্রতিসাম্যতা নিয়ে আসে। এই ধরনের বাক্যাংশগুলো হলো, render inoperative, militate against, prove unacceptable, make contact with, be subject to, give rise to, give grounds for, have the effect of, play a leading part (role) in, make itself felt, take effect, exhibit a tendency to, serve the purpose of ইত্যাদি। এগুলোর মূল কাজ হচ্ছে সাধারণ ক্রিয়াপদগুলোকে (simple verb) বাদ দিয়ে দেওয়া। যার ফলে break, stop, spoil, mend, kill এর মত সাধারণ ক্রিয়াপদকে বিশেষ্য বা বিশেষণের সমন্বয়ে জটিল ফ্রেইজে পরিণত করা হয় এবং prove, serve, from, play, render-এর মত সর্বত্র ব্যবহার উপযোগী (general-purposes verbs) ক্রিয়াপদের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়। উপরন্তু যেখানে প্রত্যক্ষ ভাষ্য (active voice) ব্যবহার করা যায় সেখানে পরোক্ষ ভাষ্য (passive voice) ব্যবহার করা হয় এবং ‘genurd’ এর পরিবর্তে শব্দটিকে বিশেষ্য রূপ প্রদান করা হয় (যেমন, by examining এর বদলে by examination of ব্যবহার করা হয়)। এভাবে ‘ize’ ও ‘de’ যুক্ত করে শব্দ গঠনের মাধ্যমে ক্রিয়াপদের ব্যবহারের পরিসর আরও ছোট করে নিয়ে আসা হয়েছে। ফলস্বরূপ বাক্যটি সুগঠিত হওয়ার কারণে অসার একটি ভাষ্য বেশ সমৃদ্ধ দেখায় । অতি সাধারণ ‘conjunction’ এবং ‘preposition’ গুলো ‘with respect to, having regard to, the fact that, by dint of, in view of, in the interests of, on the hypothesis that’ এর মত জটিল বাক্যাংশ দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়। এটি করার মাধ্যমে একটা অসার ভাষ্যকে বিপর্যস্ত পরিণতি থেকে রক্ষা করা হয় এবং বাহ্যিকভাবে ভাষ্যটি খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।
বাগাড়ম্বরপূর্ণ শব্দ চয়ন (Pretentious diction)। একটি সাধারণ বক্তব্যকে phenomenon, element, individual (as noun), objective, categorical, effective, virtual, basic, primary, promote, constitute, exhibit, exploit, utilize, eliminate, liquidate এর মত ভারী শব্দ দ্বারা সুসজ্জিত করে এমন একটি আবহ তৈরি করা হয় যা ত্রুটিপূর্ণ একটি বক্তব্যকে বৈজ্ঞানিকভাবে নিরপেক্ষ বক্তব্য হিসেবে সামনে তুলে ধরে। Epoch-making, epic, historic, unforgettable, triumphant, age-old, inevitable, inexorable, veritable এর মত বিশেষণ ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক রাজনীতির নোংরা তন্ত্রকে মর্যাদাপূর্ণ করে তোলা হয়, যেখানে লেখালেখির মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় যুদ্ধকে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের মোড়কে মহমান্বিত করে তোলা। সেক্ষেত্রে realm, throne, chariot, mailed fist, trident, sword, shield, buckler, banner, jackboot, clarion এর মত শব্দ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিদেশি শব্দ ও অভিব্যক্তি যেমন cul de sac, ancien régime, deus ex machina, mutatis mutandis, status quo, Gleichschaltung, Weltanschauung ইত্যাদির ব্যবহার অসার ভাষ্যকে উন্নত সাংস্কৃতিক ভাবধারার মোড়কে মুড়ে দেয়। প্রয়োজনীয় সংক্ষিপ্ত বাক্যাংশ(abbreviatio) i.e., e.g. এবং etc. ছাড়া বর্তমান ইংরেজি ভাষায় বিদ্যমান অসংখ্য বিদেশি ফ্রেইজের কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই। বাজে লেখকগণ, বিশেষ করে বৈজ্ঞানিক, রাজনৈতিক ও সমাজতাত্ত্বিক লেখকেরা এমন এক মোহে আবিষ্ট হয়ে থাকেন যেখানে ল্যাটিন বা গ্রিক শব্দগুলোকে এঙলো-স্যাক্সন শব্দের চেয়ে বেশি সমৃদ্ধ মনে করেন, ফলে expedite, ameliorate, predict, extraneous, deracinated, clandestine, sub-aqueous এর মত অসংখ্য অপ্রয়োজনীয় শব্দ এঙলো-স্যাক্সন শব্দের বিপরীতে ইংরেজি ভাষায় স্থান পেয়ে গেছে। মার্ক্সিস্ট লেখাপত্রগুলোতে এমন কিছু অর্থহীন শব্দ পাওয়া যায় (যেমন, hyena, hangman, cannibal, petty bourgeois, these gentry, lackey, flunkey, mad dog, White Guard, etc.) যেগুলো বেশিরভাগই রুশ, জার্মান বা ফরাসি ভাষা থেকে অনূদিত, কিন্তু একটি ভাষায় কোন নতুন শব্দ মুদ্রণের স্বাভাবিক পদ্ধতি হচ্ছে ঐ শব্দের গ্রিক বা ল্যাটিন মূল অনুসারে যথাযথভাবে affix যোগ করা এবং প্রয়োজনানুসারে -ize যোগ করে বাক্য গঠন করা। যুতসই ইংরেজি শব্দের খোঁজ করার চেয়ে deregionalize, impermissible, extramarital, non-fragmentatory এর মত শব্দ ব্যবহার করা সহজ। যার মূল কাজ কেবল অসার আত্মতুষ্টির ঢেঁকুর তোলা ও অস্পষ্টতার পালে হাওয়া দেওয়া।
অর্থহীন শব্দ (Meaningless words)। এক ধরনের লেখাপত্রের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সাহিত্য ও চিত্রকর্ম সমালোচনায় বিশালকার অনুচ্ছেদ লেখার ঘটনা খুবই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে, যেগুলোর অধিকাংশই কোনও অর্থ তৈরি করতে পারে না(ii)। চিত্রকর্ম সমালোচনার ক্ষেত্রে শুধু পাঠকদের ও দর্শকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে romantic, plastic, values, human, dead, sentimental, natural, vitality ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়, যেগুলো সম্পূর্ণভাবে অর্থহীন কারণ সেগুলো চিত্রকর্মের কোনও নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে না। একজন ক্রিটিকের ‘The outstanding feature of Mr. X’s work is its living quality’ -এই বাক্যটির তুলনায় অন্য একজন ক্রিটিকের লেখা ‘The immediately striking thing about Mr. X’s work is its peculiar deadness’ বাক্যটি পাঠকের কাছে সাধারণভাবেই একটি ভিন্ন ভাষ্য হিসেবে প্রতীয়মান হবে। যদি এখানে living এবং dead এর মত অসার শব্দের পরিবর্তে white and black ব্যবহার করা হতো তখন সে পাঠকের কাছেই মনে হতো ভাষাটি ঠিকঠাক ব্যবহার করা হয়নি। এভাবে অনেক রাজনৈতিক শব্দের অপব্যবহার হচ্ছে। যেমন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত কোনওকিছু’ বুঝানো ছাড়া বর্তমানে ফ্যাসিজম শব্দটির কোনো অর্থ নেই। Democracy, socialism, freedom, patriotic, realistic, justice ইত্যাদি শব্দগুলোর প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা অর্থ আছে এবং একটির সাথে আরেকটি গুলিয়ে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। ‘Democracy’ শব্দটির ক্ষেত্রে সর্বসম্মত কোনও সংজ্ঞা না থাকলেও শব্দটিকে নির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করতে গেলে সবদিক থেকে বাঁধা আসে। পৃথিবীর সর্বত্রই এমন মনোভাব প্রচলিত আছে যে, কোনও দেশকে ‘democratic’ বলার মানেই ঐ দেশটির প্রশংসা করা, তাই সব ধরনের রেজিমের ঝান্ডাধারীরা দাবি করেন যে এটাই গণতন্ত্র এবং তারা এটি ভয় করেন যে তাদেরকে শব্দটির ব্যবহার বন্ধ করতে হবে যদি সেটি নির্দিষ্ট কোনও অর্থ অর্জন করে ফেলে। এই ধরনের শব্দগুলোকে সচেতনভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। যে এই শব্দগুলো ব্যবহার করছে সে শব্দের জন্য তার কাছে নিজস্ব একটি অর্থ আছে কিন্তু সে তার শ্রোতাদের একই শব্দের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বার্তা প্রেরণ করছে। তাই রাজনৈতিক বক্তব্য যেমন ‘Marshal Pétain was a true patriot’, ‘The Soviet press is the freest in the world’, ‘The Catholic Church is opposed to persecution’ -এগুলো পাঠকদেরকে মিথ্যে আশ্বাস দেওয়ার নিমিত্তেই ব্যবহার করা হয়। একাধিক অর্থ বহন করে এমন আরও কিছু শব্দ আছে যেগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, যেমন class, totalitarian, science, progressive, reactionary, bourgeois, equality ইত্যাদি।
এতক্ষণ যেহেতু আমি ভাষার প্রতারণা ও বিকৃতিকরণের একটি বর্ণনামূলক তালিকা তৈরি করেছি, এখন আমি এই ধরনের লেখালেখির আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি। এবারের বাক্যটি স্বাভাবিকভাবেই কাল্পনিক হতে হবে। আমি ঝরঝরে ইংরেজি ভাষায় লেখা একটি বাক্য আধুনিক ইংরেজির জনঘ্যতম রূপে অনুবাদ করছি। নিচে ‘Ecclesiastes’-এর বহুল পরিচিত একটি পঙক্তি দেওয়া হলো—
“I returned and saw under the sun, that the race is not to the swift, nor the battle to the strong, neither yet bread to the wise, nor yet riches to men of understanding, nor yet favour to men of skill; but time and chance happeneth to them all.”
আধুনিক ইংরেজিতে অনুবাদ করার পর—
“Objective considerations of contemporary phenomena compels the conclusion that success or failure in competitive activities exhibits no tendency to be commensurate with innate capacity, but that a considerable element of the unpredictable must invariably be taken into account.”
এটি একটি ব্যঙ্গাত্মক অনুবাদ, তবে একেবারে গুরুত্বহীন নয়। এই যেমন উপরের ৩নং বিবৃতিতে একই ধরনের অনেকগুলো শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। দৃশ্যতই আমি পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করিনি। অনূদিত উদ্ধৃতাংশের শুরুর অংশ এবং শেষ অংশ মূল লেখার প্রায় কাছাকাছি অর্থ প্রকাশ করছে, কিন্তু মধ্যের অংশটায় মূল লেখার ‘battle, race, bread’-এর মত স্পষ্ট অর্থবহ শব্দগুলোকে অনুদিত অংশে ‘success or failure in competitive activities’-এর মত ধোঁয়াশা সৃষ্টিকারী ফ্রেইজ দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়েছে। এমনটা হওয়ারই ছিল, কারণ যে ধরনের লেখক নিয়ে আমি আলোচনা করছি, সেসব আধুনিক লেখকের মধ্যে এমন একজন লেখকও নেই যে ‘objective considerations of contemporary phenomena’-এর মত বাক্যাংশ ব্যবহারের সক্ষমতা রাখে এবং সে কখনও তার চিন্তাগুলো এতটা পূর্ণাঙ্গভাবে ও স্পষ্ট করে প্রকাশ করতে পারবে না। আধুনিক গদ্যের প্রবণতা মূর্ত-চিন্তা বিমুখী। এখন দুটো বাক্যকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখুন। প্রথমটিতে ৪৯টি শব্দ আছে তন্মধ্যে ৬০টি পদ(syllable) বিদ্যমান এবং প্রায় সবগুলো শব্দই আমরা নিত্যদিনের প্রয়োজনে ব্যবহার করে থাকি। দ্বিতীয় বাক্যটির ৩৮টি শব্দে ৯০টি পদ বিদ্যমান—
যার মধ্যে ১৮টি শব্দ ল্যাটিন থেকে এসেছে এবং গ্রিক ভাষা থেকে একটি। প্রথম বাক্যটিতে ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্যকল্প আছে এবং মাত্র একটি ফ্রেইজ আছে(‘time and chance’) যেটাকে অস্পষ্ট বলা যেতে পারে। দ্বিতীয় বাক্যটিতে মনযোগ আর্কষণ করে এমন একটিও বাক্যাংশ নেই এবং এটিতে ৯০টি পদ থাকা সত্ত্বেও বাক্যটি মূল বাক্যের অর্থের আংশিক প্রকাশ ঘটাতে পারছে। তবুও সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় এ ধরনের (দ্বিতীয় বাক্য) বাক্যগুলো আধুনিক ইংরেজি ভাষায় স্থান করে নিচ্ছে। আমি বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করতে চাই না। এই ধরনের লেখাপত্র এখনও সার্বজনীন নয় এবং সবচেয়ে বাজেভাবে লিখিত পৃষ্ঠার ক্ষেত্রেও কোথাও কোথাও সরল ও স্পষ্টতার আর্বিভাব হবেই। তারপরও আমাকে অথবা আপনাকে মানব জীবনের দ্যোদুল্যমান ভবিষ্যত নিয়ে যদি কয়েকটা লাইন লিখতে বলা হয় তবে আমরা বোধহয় এমন কিছুই লিখব যা Ecclesiastes এর পঙক্তিটির বিপরীতে আমি যে কল্পিত বাক্যটি লিখেছি তার ধারেকাছে কিছু একটা হবে।
আমি দেখাতে চেষ্টা করেছি যে আধুনিক লেখাপত্র তার সর্বোচ্চ জ্বরাজীর্ণ অবস্থায় অর্থের খাতির শব্দ নির্বাচন করে না এবং এগুলোর দ্বারা তৈরি দৃশ্যকল্প মূল উদ্দেশ্য বাক্যের অর্থকে স্পষ্টভাবে করা নয়। অনেকগুলো দীর্ঘ শব্দের লহর একসাথে জোড়া দিয়ে সম্পূর্ণ ফাঁপা দম্ভের সাথে একটি ভাষ্য উপস্থাপন করা হয়, যে ভাষ্যটি আদতে তার আগেই কেউ গুছিয়ে বলে গেছেন। এই ধরনের লেখালেখি করার ক্ষেত্রে অনত্যম আকর্ষণ হচ্ছে যে এভাবে লেখা সহজ। এটি অধিকতর সহজ ও সময় সাশ্রয়ী হয়ে ওঠে যদি আপনি একবার ‘I think’ এর পরিবর্তে ‘In my opinion it is not an unjustifiable assumption that’ বলার অভ্যাস করে ফেলতে পারেন। যদি আপনি প্রচলিত ফ্রেইজ ব্যবহার করেন তবে তা শুধুমাত্র উপযুক্ত শব্দ খোঁজার পরিশ্রমই লাঘব করে না, বরং তখন আপনাকে বাক্যের ছন্দ-তাল এগুলো নিয়েও ভাবতে হবে না কারণ প্রচলিত বাক্যাংশগুলো এমনিতেই কম বেশি সুরেলা ও শ্রুতিমধুর হয়। যখন তাড়াহুড়ো করে আপনাকে বাক্য নির্মাণ করতে হয়, যেমন শ্রুতিলেখনের সময় বা উন্মুক্ত বক্তৃতা দেয়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই আমরা এই ফাঁপা ও ‘ল্যাটিনাইজড’ পদ্ধতিতে বাক্য নির্মাণ করে থাকি। ট্যাগের (Tags) ব্যবহার, বিশেষ করে ‘like a consideration which we should do well to bear in mind or a conclusion to which all of us would readily assent’-এর মত ট্যাগের ব্যবহার অনেকগুলো বাক্যকে পূর্ণ শক্তি নিয়ে তার ক্রিয়াশীল গদ্যে আঘাত করা থেকে বাঁচিয়ে দেয়। ক্লিশে রূপক, উপমা ও ইডিয়ম ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার মানসিক পরিশ্রম অনেকটা লাঘব করে ফেলেন। এটি করতে গিয়ে আপনি শুধু পাঠকের কাছে নয়, আপনি নিজের কাছেও বাক্যের অর্থ অস্পষ্ট করে ফেলেন। এটি মিশ্র রূপকের কারসাজি। একটি রূপকের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে চিত্রকল্প তৈরি করা। যখন ব্যবহৃত অসামঞ্জস্যপূর্ণ উপমাগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয় তখন এটি ধরেই নেয়া যেতে পারে যে লেখক এমন একটি রূপকের বর্ণনা দিয়েছেন যা তিনি নিজেও স্পষ্টভাবে কল্পনা করতে পারছেন না। উদাহরণস্বরূপ এই বাক্য নেওয়া যেতে পারে—“The Fascist octopus has sung its swan song, the jackboot is thrown into the melting pot”। অন্যকথায়, তিনি বিষয়টি নিয়ে চিন্তাই করছেন না। প্রবন্ধের শুরুতে আমি যে উদাহরণগুলো দিয়েছি সেগুলো লক্ষ্য করুন। প্রফেসর লাস্কি(1) ৫৩টি শব্দের মধ্যে ৫টি না-বোধক শব্দ ব্যবহার করেছেন। এগুলোর মধ্যে একটি অতিরঞ্জিত যা পুরো রচনাটির অর্থ অস্পষ্ট করে ফেলেছে এবং একইসাথে তিনি ‘akin’-এর পরিবর্তে ‘alien’ শব্দটি ব্যবহার করে বাক্যের অর্থে তালগোল পাকিয়েছেন। সর্বোপরি অনেকগুলো অযাচিত, জবড়জং বাক্যাংশ একসাথে জুড়ে দিয়ে বাক্যটির অর্থের অস্পষ্টতার মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রফেসর হোগবেন (2) নেটিভ ইডিয়মের ব্যবহারবিধি প্রসঙ্গে খেলার ছলে পরামর্শ দিচ্ছেন এবং তিনি ‘put up with’-এর মত দৈনন্দিন ফ্রেইজকে খারিজ করে দিচ্ছেন ঠিকই কিন্তু নিজের ব্যবহৃত ‘egregious’ শব্দটির অর্থ অভিধানে দেখে নিতে আগ্রহী নন। (3) যদি কেউ এই রচনাটি নৈর্ব্যক্তিকভাবে বিচার করে, তবে সেটা এককথায় অর্থহীন হিসাবে প্রতীয়মান হয়। কেউ হয়তোবা পুরো প্রবন্ধটি পড়লে এর অর্থ উদ্ধার করতে পারবেন। (4)-এ লেখক কি লিখতে চেয়েছেন তা হয়তো কম-বেশি তার জানা আছে কিন্তু একত্রে অনেকগুলো অপ্রাসঙ্গিক ফ্রেইজের গাঁথুনি তার অর্থের শ্বাসরোধ করেছে। এটা অনেকটা চা পাতা জমে সিঙ্কের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত ব্যাপার। (5)-এ মোটামুটিভাবে পুরো রচনা জুড়েই শব্দ ও বাক্যের অর্থ একে অপরকে সঙ্গ দিয়েছে। এই ধরনের লেখালেখি যারা করেন, সাধারণত তাদের লেখার ভাবার্থ অনেকটা আবেগতাড়িত হয়; তারা একটি জিনিসের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করে অপরটির প্রতি তাদের সমর্থন জানান। কিন্তু তারা কেন সমর্থন করছেন বা কী বলছেন সে ব্যাপারটি বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করতে ইচ্ছুক নন। প্রতিটি বাক্য লেখার ক্ষেত্রে একজন লেখকের অন্ততপক্ষে চারটি আত্ম-জিজ্ঞাসা থাকবে—
- আমি কী বলতে চাচ্ছি? কোন্ কোন্ শব্দ আমার মনের ভাবটি প্রকাশ করবে? কী কী চিত্রকল্প ও ইডিয়ম বাক্যের অর্থ স্পষ্টভাবে তুলে ধরবে? দৃশ্যকল্পটি কি পাঠকের মনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারবে? তিনি সম্ভবত নিজেকে আরও দু’টি প্রশ্ন করবেন—আমি কী এটি আরও সংক্ষেপে প্রকাশ করতে পারি? আমি কি এখানে এমন কিছু বলেছি যা অপ্রাসঙ্গিক ও অপ্রয়োজনীয়? কিন্তু কেউ এই পরিশ্রমটুকু করতে বাধ্য নন। আপনি ঢিলেঢালা মনোভাব নিয়ে অসংখ্য প্রচলিত ফ্রেইজ একত্রে জুড়ে দিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করার যাবতীয় প্রক্রিয়াটি এড়িয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার বাক্যটি গঠিত হবে, একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত এই ফ্রেইজগুলো আপনার মনোভাবও প্রকাশ করবে, এমনকি প্রয়োজনে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদনও করবে তবে আপনার নিজের চিন্তাকেই আংশিকভাবে আপনার কাছ থেকে গোপন রেখে। ঠিক এখানেই অসার, অস্পষ্ট, চাতুর্যপূর্ণ ভাষা ও রাজনীতির মধ্যকার গভীর সম্পর্ক স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
রাজনৈতিক লেখাপত্র নিম্নমানের হয়- আমাদের সময়ে এই বক্তব্যটি অনেকাংশেই সত্য। যেসব ক্ষেত্রে এই বক্তব্য মিথ্যা হয়ে যায় সেখানে দেখা যায় লেখক কোনও না কোনওভাবে সংগ্রামী মনোভাব পোষণ করছেন, একান্ত ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করছেন এবং তিনি প্রচলিত অর্থে কোনও ‘পার্টি লাইনা’র নন। গোঁড়ামি যে রঙেরই পোষাক পরে থাকুক তা সবসময়ই নিষ্প্রাণ ও চাতুর্যপূর্ণ। দল ভেদে রাজনৈতিক বক্তব্য ভিন্ন ভিন্ন হলেও বুকলেট, প্রতিনিধিত্বশীল প্রবন্ধ, ইশতেহার বা সচিবালয়ের অধীনস্হ কোনও বক্তা- যে জায়গা থেকেই বক্তব্য আসুক না কেন তা সবসময়ই একই রকম হয়। কেউই এখানে সুবিবেচিত, প্রাণবন্ত কোনও বক্তব্য খুঁজে পাবে না। যখন কেউ কোনো প্রচার মাধ্যম থেকে ‘bestial atrocities, iron heel, blood-stained tyranny, free peoples of the world, stand shoulder to shoulder’-এর মত মুখস্থ, অনুভূতি বিবর্জিত শব্দগুলো বারবার শুনতে থাকে তখন তার মনে হতেই বক্তা মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করছেন না বরং মানুষ এখানে পুতুল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটা এমন একটা অনুভূতি যা মুহূর্তেই শক্তি সঞ্চয় করে বক্তব্য প্রদানকারীর প্রকৃত প্রবণতার দিকে আলোকপাত করে। এই অনুভূতি বক্তব্য প্রদানকারীকে নির্জীব, দলকানা ও ফাঁপা একটি সত্তা হিসেবে সামনে তুলে ধরে। এই বিষয়টি একেবারেই সাধারণ কোনো ব্যাপার নয়। যে বক্তা এরূপ নির্জীব বক্তব্য প্রদান করছেন তাকে এমন যান্ত্রিক আচরণ করবার জন্য নিজেকে অনেকটা পরিবর্তন করতে হয়েছে। স্বর তার গলা থেকে বেরিয়ে আসছে ঠিকই কিন্তু তার মস্তিষ্ক তখন অকেজো হয়ে আছে। নিজের ভাব প্রকাশের জন্য শব্দ খুঁজে বের করার কাজে মস্তিষ্ক যেমনটা সচল থাকে এখানে তা হচ্ছে না। বিষয়টি অনেকটা চার্চে গিয়ে স্তুতির প্রত্যুত্তরে বুলি আওড়ানোর মত। এতে ব্যক্তির বোধশক্তি লোপ পায় এবং তা অবশ্যই রাজনৈতিক আনুকুল্যে কাজ করে থাকে।
আমাদের সময়ে, মোটাদাগে সকল রাজনৈতিক বক্তব্য ও রাজনৈতিক লেখাপত্র অনস্বীকার্য সব ঘটনাকে আড়াল করার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। ব্রিটিশদের ভারত শাসন, রাশিয়ায় লোকজনকে দেশান্তরিত ও নির্বাসিত করার কৌশল, এমনকি জাপানে পারমাণবিক বোমা ফেলার মত ঘটনাকেও সমর্থন করা যেতে পারে কিন্তু তা শুধুমাত্র পক্ষে বিপক্ষে নির্মোহ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমেই হতে হবে। কিন্তু এসব বিষয়ে যুক্তিতর্কের সম্মুখীন হওয়া বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের জন্যই নিদারুণ যন্ত্রণার। এবং বলা বাহুল্য, এই যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিক দলগুলোর মূল উদ্দেশ্যের মধ্যে পড়ে না। তাই রাজনৈতিক ভাষা অবধারিতভাবে চটকদার, ছলচাতুরীপূর্ণ এবং অস্পষ্ট হতে বাধ্য। অরক্ষিত গ্রামগুলোর উপর নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করে গ্রামবাসীকে তাদের নিজস্ব ভূমি হতে উচ্ছেদ করা, তাদের উপর ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়া বা গ্রাম্য বাজারগুলো আগুনে পুড়িয়ে ছাই করার মত ঘটনাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে শান্তিপ্রতিষ্ঠার(Pacification) মিশন হিসেবে। লক্ষ লক্ষ কৃষকের খামার হাতিয়ে নিয়ে, নিঃস্ব অবস্থায় তাদেরকে অন্যত্র পাড়ি জমাতে বাধ্য করার নাম দেওয়া হয়েছে জনসংখ্যা স্থানান্তরিতকরণ বা প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ (rectification of frontiers)। বছরের পর বছর ধরে লোকজনকে বিনা বিচারে জেলে বন্দি রাখা বা তাদের পিঠ পিছে গুলি চালিয়ে হত্যা করা অথবা আর্কটিকের অস্বাস্থ্যকর স্যাঁতস্যাঁতে কাঠের ঘরে নির্বাসনে পাঠানো-এসব কর্মকাণ্ডকে অলংকৃত করা হচ্ছে অনির্ভরযোগ্য বা বিপদজনক উপদান দূরীকরণ (elimination of unreliable elements) বলে। কারও কাছে বাস্তবতার যে জ্বলজ্যান্ত চিত্র দৃশ্যমান হচ্ছে সেটি এড়িয়ে গিয়ে বাস্তবতাকে ভিন্নভাবে দেখাতে হলে এসব ফ্রেইজ ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে কতিপয় ইংরেজ প্রফেসরকে উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যেতে পারে যারা রাশিয়ায় স্বৈরশাসনকে সমর্থন করেছেন। ‘যদি বিরোধীদের হত্যা করে ভালো ফলাফল আসে তবে আমি সে হত্যাকাণ্ড সমর্থন করি’-একথা তারা সরাসরি বলতে পারবেন না। তারা হয়তো এরকম কিছু বলবেন—
“While freely conceding that the Soviet régime exhibits certain features which the humanitarian may be inclined to deplore, we must, I think, agree that a certain curtailment of the right to political opposition is an unavoidable concomitant of transitional periods, and that the rigours which the Russian people have been called upon to undergo have been amply justified in the sphere of concrete achievement.”
সরাসরি কিছু না বলে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলার এই ফাঁপা রীতিটাই বাকপটুতার একটা ধরন। এলোমেলো অনেকগুলো ল্যাটিন শব্দ মূল বিষয়বস্তুকে মোলায়েম তুষারের চাদরে ঢেকে দিচ্ছে, আদতে এগুলো মূল্য ভাষ্যটিকেই অস্পষ্ট করে তুলেছে। স্পষ্ট ভাষার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো অসততা। যখন কারও মনে ভাষ্য এক আর তার উপস্থাপিত ভাষ্য আরেকটা হয় তখন অপ্রয়োজনীয়, দীর্ঘ, দুর্বোধ্য ইডিয়মের দরকার পড়ে। যেমন করে ক্যাটলফিস বারবার তার রঙ বদলায়, এই বিষয়টাও ঠিক তেমনি। আমাদের সময়ে এমন কিছু নেই যা রাজনীতির বাইরে। সব বিষয়ই রাজনৈতিক এবং এখানে রাজনীতি নিজেই একটা মিথ্যার ভাণ্ডার, ছলপূর্ণ, ঘৃণা সঞ্চারণের অস্ত্র। যখন পরিস্থিতিই এমন তখন ভাষাকে অবশ্যই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমার ধারণা, স্বৈরশাসনের ফলে জার্মান, রুশ ও ইতালিয় ভাষার প্রত্যেকটি গত দশ বছরে ভয়াবহ অবনতির সম্মুখীন হয়েছে যদিও বিষয়টি পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত করবার জন্য উপযুক্ত জ্ঞান আমার নাই।
কিন্তু চিন্তা যদি ভাষাকে কলুষিত করে তবে ভাষাও চিন্তাকে কলুষিত করতে পারে। প্রচলিত রীতি ও অনুকরণের মাধ্যমে ভাষায় এমন কদর্য ব্যবহার ছড়িয়ে পরতে পারে, এমনকি যাদের এ সম্পর্কে ভালো বোঝাপড়া আছে তারাও এর বাইরে নন। ভাষার যে ত্রুটিপূর্ণ ব্যবহারের কথা আমি বলছি তা অনেক ক্ষেত্রেই সুবিধাজনক। এটা মনে রাখা ভালো যে বাগাড়ম্বরপূর্ণ ফ্রেইজগুলোর ব্যবহার কোনো ভালো কিছু বয়ে না আনলেও তা অনেককেই প্রলুব্ধ করতে পারে। এই প্রবন্ধটি পুনরায় পড়লে আপনি নিশ্চিতভাবে এটা দেখতে পাবেন যে আমি এখানে যে ত্রুটিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি, আমি নিজেই বারবার ঠিক একই ধরনের ত্রুটির আশ্রয় বারবার নিচ্ছি। আজকে সকালের ডাকে আমি একটি পুস্তিকা পেয়েছি যেখানে জার্মানির বর্তমান পরিস্থিতির বর্ণনা রয়েছে। লেখক নিজের দায়বদ্ধতা থেকে এই লেখাটি লিখেছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। আমি পৃষ্ঠার ক্রম বজায় না রেখেই বইটি একবার উল্টালাম এবং সেখানে আমার দেখা প্রথম বাক্যটি হলো—
‘(The Allies) have an opportunity not only of achieving a radical transformation of Germany’s social and political structure in such a way as to avoid a nationalistic reaction in Germany itself, but at the same time of laying the foundations of a co-operative and unified Europe.’
আপনি দেখেন, তিনি এই লেখাটি লেখার জন্য তাড়না অনুভব করেছেন, সম্ভবত তার মনে হচ্ছে তার নতুন কিছু বলার আছে তাও তার বাক্যে শব্দগুলো একই পরিচিত ছাঁচে মেঘের মত একের পর এক ভিড় জমিয়েছে, সৈন্যদলের ঘোড়া রণশিঙ্গার আওয়াজ শুনে প্রতিবার যেমন একই প্রতিক্রিয়া দেয় এই বিষয়টিও ঠিক তেমনই। কারও মস্তিষ্ক ও চিন্তাভাবনা এসব প্রচলিত ফ্রেইজ থেকে দখলমুক্ত করতে সবসময় এর বিপরীতে একটি সচেতনতার দেওয়াল তৈরি করা দরকার। কারণ এই ধরনের শব্দগুচ্ছ মস্তিষ্কের একটা অংশকে অসার, অনুভূতিহীন করে তুলে।
আমাদের ভাষার এই অসুখ নিরাময়যোগ্য- একথা আমি আগেই বলেছি। যারা দ্বিমত পোষণ করেন তারা যদি আসলেই কোনও যুক্তি উপস্থাপন করেন তাহলে তারা হয়তো বলবেন যে ভাষা সামাজিক পরিস্থিতিকেই প্রতিফলিত করে, তাই সরাসরি শব্দের ব্যবহার ও ভাষার কাঠামোতে পরিবর্তন এনে আদতে কোনো লাভ হবে না। ভাষা নিয়ে আমাদের সাধারণ বোঝাপড়ার বিবেচনায় হয়তো এই বক্তব্যটি সত্য মনে হতে পারে তবে বিস্তারিত বিশ্লেষণে গেলে দেখা যাবে এটি পুরোপুরি সত্য নয়। নিষ্প্রাণ, ম্যাড়ম্যাড়ে শব্দগুচ্ছ ও অভিব্যক্তিগুলোর প্রায় সবক্ষেত্রেই বিলুপ্তি ঘটেছে এবং তা কোনো বিবর্তনের শর্ত মেনে হয় নি বরং গুটিকয়েক লোকের সচেতন প্রয়াসে এটা সম্ভব হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এর জ্বলজ্যান্ত দুটি উদাহরণ হলো ‘explore every avenue’ এবং ‘leave no stone unturned’। কয়েকজন সাংবাদিকদের এই দুটি ফ্রেইজের প্রতি ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এগুলোর ব্যবহার বন্ধ হয়েছে। এরূপ অসংখ্য অসার রূপকের একটা তালিকা করা যাবে যেগুলো থেকে একইভাবে মুক্তি পাওয়া সম্ভব কেবল যদি যথেষ্ট পরিমাণ মানুষ এই ব্যাপারে সচেতন হয়। একই উপায়ে ‘not un'(iii) কাঠামো দ্বারা গঠিত শব্দগুচ্ছগুলোও পরিহার করা সম্ভব। গ্রিক ও ল্যাটিন শব্দের ব্যবহার কমিয়ে বিদেশি শব্দগুচ্ছ ও ত্রুটিপূর্ণ বৈজ্ঞানিক শব্দগুলোকে দূরে রাখতে হবে। প্রকৃতপক্ষে অনুমাননির্ভর সবকিছুকে প্রচলিত ধারায় কুরুচিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। কিন্তু এই সবগুলোই গৌণ বিষয়। ইংরেজি ভাষার পুনরুদ্ধার কার্যক্রম অনেক কিছুই দাবি করে, তাই কী কী জিনিস এই ভাষা দাবি করে না সেসব কথাবার্তা দিয়েই আলোচনা শুরু করা উত্তম।
এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হলে প্রথমেই বুঝতে হবে যে ভাষার ক্ষেত্রে ঐতিহ্য, আভিজাত্য, প্রাচীন দুর্বোধ্য শব্দ বা ভাষ্য অথবা ‘standard english’-এর কাঠামো আঁকড়ে ধরে রাখার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। বরং এই সংশোধনী প্রক্রিয়ার মূল বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে সেসব শব্দ ও ইডিয়মকে বর্জন করা যেগুলো বর্তমানে গুরুত্বহীন ও অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। এখানে শুদ্ধ ব্যকরণবিধি বা আদর্শ বাক্য কাঠামোর মত ব্যাপারগুলো একেবারেই বিবেচ্য নয়। যদি কেউ কোনও বাদ(Americanism) বা আদর্শ গদ্য রীতির আশ্রয় না নিয়েও তার বক্তব্য স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করতে পারে তখন বাকি বিষয়গুলো অপ্রয়োজনীয় হয়ে পরে। এখানে বাক্যের সারল্য, কপটতা বা বাক্যের ভাষা কথ্য ভাষার কাছাকাছি হলো কিনা সেগুলোও বিবেচ্য নয়। যদি কেউ সহজ, সরল, নাতিদীর্ঘ শব্দ দিয়ে তার ভাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারে তবে ল্যাটিন শব্দের পরিবর্তে স্যাক্সন শব্দগুলোকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হলো কিনা সে বিবেচনাও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে অর্থকে তার প্রয়োজনীয় শব্দের সন্ধান করতে দেয়া এবং শব্দ দ্বারা নিজের চিন্তাকে প্রভাবিত না করা। গদ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বাজে প্রবণতা হচ্ছে শব্দের কাছে বশ্যতা স্বীকার করা। যখন আপনি কোনও নির্দিষ্ট বস্তুকে কল্পনা করেন তখন আপনার বিবেচনায় কোনো শব্দ থাকে না এবং আপনি যদি কল্পিত বস্তুটি বর্ণনা করতে চান তবে আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত শব্দ খুঁজতে থাকেন যতক্ষণ না উপযুক্ত শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। আবার আপনি যখন বিমূর্ত কিছু কল্পনা করেন তখন শুরু থেকেই আপনি শব্দের দিকে ঝুঁকে থাকেন এবং আপনি যদি সচেতনভাবে এই প্রবণতা প্রতিহত না করেন তবে প্রচলিত শব্দের মিছিল কালো মেঘের মত আপনার চিন্তাকে গ্রাস করে ফেলবে। শব্দগুলো আপনার জন্য কল্পনা করার কাজটা করে দিবে ঠিকই কিন্তু সেগুলো আপনার মূল চিন্তাকে আড়াল করে অস্পষ্ট একটি দৃশ্যকল্প তৈরি করবে এবং কখনপ কখনও আপনার চিন্তার মূল অর্থটিই বদলে দিতে পারে। তাই যতক্ষণ সম্ভব শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থেকে কারও ভাবনা বা উপলব্ধিকে স্পষ্টভাবে বোঝার চেষ্টা করাই উত্তম। এভাবে কেউ শব্দের উপর নির্ভরশীল না হয়ে অর্থের সাপেক্ষে পছন্দমত শব্দ বা ফ্রেইজ বেছে নিতে পারে এবং তার ব্যবহৃত শব্দ অন্যের কাছে কেমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করবে তা পুনরায় বিবেচনা করতে পারে। এই মানসিক পরিশ্রমটুকু সকল অস্পষ্ট-মেকি দৃশ্যকল্প, অনুমাননির্ভর ফ্রেইজ, অপ্রয়োজনীয় পুনরাবৃত্তি অর্থাৎ এককথায় অর্থের অস্পষ্টতা থেকে মুক্তি দিবে। কিন্তু একজন ব্যক্তি স্বভাবিকভাবেই একটা শব্দ বা শব্দগুচ্ছের প্রভাব সম্পর্কে দ্বিধান্বিত থাকতে পারেন এবং যখন তিনি তার সহজাত বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সে সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হোন তখন কিছু নিয়ম অনুসরণ করা প্রয়োজন। আমার মতে নিম্নোক্ত নিয়মগুলো এ সমস্যার অনেকটাই সমাধান করবে—
- আমরা ছাপা কাগজপত্রে যেসব রূপক, উপমা বা বাক্যালংকার দেখি সেগুলো কখনও ব্যবহার করা যাবে না।
- যে অর্থ ছোট শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা সম্ভব সেখানে কখনও দীর্ঘ শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।
- যদি কোনও শব্দ বাদ দেয়ার সুযোগ থাকে তবে তা অবশ্যই বাদ দিতে হবে।
- যে ভাষ্যটি প্রত্যক্ষভাবে উপস্থাপন করা যায় সেখানে কখনও পরোক্ষ বাক্য ব্যবহার করা যাবে না।
- দৈনন্দিন ব্যবহৃত ইংরেজি শব্দ দিয়ে যা প্রকাশ করা সম্ভব তার পরিবর্তে কখনও বিদেশি ফ্রেইজ, বৈজ্ঞানিক শব্দ বা কোনও জারগন ব্যবহার করা যাবে না।
- আপনার ভাষ্যটি কাটখোট্টা বা বর্বরোচিত হয়ে গেলে প্রয়োজনমাফিক আপনি উপরের যে কোনো নিয়ম ভঙ্গ করতে পারেন।
এই নিয়মগুলো খুবই সাধাসিধে মনে হতে পারে এবং এগুলো আসলেই তাই। কিন্তু প্রচলিত রীতিতে লেখালেখি করে যারা অভ্যস্ত এই নিয়মগুলো তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে সক্ষম। এই নিয়মগুলো অনুসরণ করলেও কেউ বাজে ইংরেজি লিখতে পারে কিন্তু এগুলো অনুসরণ করলে বাজে লেখাপত্রের যে উদাহরণগুলো আমি প্রথমে কোট করেছি সেরকম ইংরেজি লেখা সম্ভব নয়।
আমি এখানে ভাষার আক্ষরিক ব্যবহার নিয়ে ভাবছি না বরং ভাষাকে অভিব্যক্তি প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করছি। ভাষা কখনও চিন্তার প্রতিবন্ধক বা প্রশমক হতে পারে না। স্টুয়ার্ট চেইস ও অন্যান্যরা মোটামুটিভাবে দাবি করেছেন যে সব বিমূর্ত শব্দই অর্থহীন এবং এর ভাষ্যের মাধ্যমে তারা এক ধরনের রাজনৈতিক নীরবতাকে সমর্থন করে গেছেন। আপনি যদি না জানেন ফ্যাসিজম কী, তাহলে কীভাবে ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লড়বেন? এরকম অযৌক্তিকতাগুলো মেনে নেয়া জরুরি না, তবে ভাষার অক্ষয়ের সাথে এখনকার রাজনৈতিক অবক্ষয়ের যে যোগ রয়েছে তা বুঝতে হবে এবং মৌখিক ভাষ্যে এসব প্রয়োগ বন্ধ করে অবস্থার কিছুটা উন্নতি করা সম্ভব। আপনি যদি সহজ ইংরেজি ব্যবহার করেন তবে গোঁড়ামির বাজে প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। তখন ভাষাতে কোনও প্রকার প্রলেপ দেওয়া সম্ভব হবে না এবং কোন অর্থহীন মন্তব্য করলে এর অর্থহীনতা নিজের কাছেই স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়বে। ভিন্নতা সত্ত্বেও রক্ষণশীল থেকে এনার্কিস্ট সব রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক ভাষা প্রায় একইরকম। এগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে মিথ্যাকে সত্যের মত শোনায়, হত্যাকারীদের পূজনীয় মনে হয় এবং দমবন্ধ করা পরিস্থিতিকে স্বচ্ছ বাতাসের মত দেখায়। এক মুহূর্তেই সমস্ত কিছু ঠিক করা হয়ত সম্ভব না তবে অন্তত নিজের অভ্যাস বদলানো সম্ভব এবং সময়ের সাথে সাথে তীব্র বিদ্রুপে jackboot, Achilles’ heel, hotbed, melting pot, acid test, veritable inferno or some jackboot, Achilles’ heel, hotbed, melting pot, acid test, veritable inferno or other lump of verbal refuse এর মত কিছু জ্বরাজীর্ণ এবং অপ্রয়োজনীয় বাক্যাংশকে আবর্জনার স্তূপে ছুঁড়ে ফেলা সম্ভব।
[i] An interesting illustration of this is the way in which the English flower names which were in use till very recently are being ousted by Greek ones, snapdragon becoming antirrhinum, forget-me-not becoming myosotis, etc. It is hard to see any practical reason for this change of fashion: it is probably due to an instinctive turning-away from the more homely word and a vague feeling that the Greek word is scientific.
[ii] Example: ‘Comfort’s catholicity of perception and image, strangely Whitmanesque in range, almost the exact opposite in aesthetic compulsion, continues to evoke that trembling atmospheric accumulative hinting at a cruel, an inexorably serene timelessness… Wrey Gardiner scores by aiming at simple bullseyes with precision. Only they are not so simple, and through this contented sadness runs more than the surface bitter-sweet of resignation’. (Poetry Quarterly.)
[iii] One can cure oneself of the not un- formation by memorizing this sentence: A not unblack dog was chasing a not unsmall rabbit across a not ungreen field.