সব মনে রাখবো

Share this:
সব কিছু মনে রাখবো।
মনে রাখবো আমার ঠোঁটে তোমার সুঁই-সুতো।
ফাঁটল জমা কপাল মেপে যাবে তোমার লাঠির ওজন,
বুকের ছেঁড়া পাঁজর গুনবে বন্দুকের এক তরফা গুলি- সবগুলো।
কুঁকড়ে যাওয়া তলপেট মনে রাখবে তোমার বুটের লাথি,
হাড় ভাঙার পুরোটা শব্দ মনে রাখবে তোমার হাতুড়িটাকে।
ফিনকি ঝরা রক্তরা শেষ হতে হতেও চিনে রাখবে কুপিয়ে যাওয়া চাইনিজ কুড়ালদের।
তোমার বিষ দাঁত, নোংরা নখ, পুঁজে ভরা শিশ্নকে চিনে রাখবে আমার শরীরের প্রতিটা কালসিটে।
চোখ বুঝে নেবে তোমার খুনি আইনের দলিল।
হাতের আঙুল মনে রাখবে বন্ধুর হাতটা মুঠো থেকে টেনে হিঁচড়ে কেড়ে নেবার তোমার সবটুকু স্পর্ধাকে।
আর প্রতি দিনের খসে যাওয়া আজন্ম সাধ, আহ্লাদ পুষে রাখবে তোমার গরাদ ঘরে খুন হয়ে যাওয়া আমার দিন-রাত্রিদের।
তবুও এই দুমড়ানো শরীরেই আমি মনে রাখব চিৎকার করার সবটা সাহস।
তুমি আমার জিহ্বা কেটে নাও, শহর গ্রামের অলি গলির প্রতিটা দেয়াল- বেড়ায় আমার কলম লিখে যাবে তোমার সুশীল লাম্পট্য, জবান খাবার তোমার রাক্ষসী সব ক্ষিধা।
তুমি আমার তুলি ভেঙে দেখ, আমার পুরো শরীর বনে যাবে আস্ত ক্যানভাস।
আমি রক্ত-মাংসে এঁকে যাবো তোমার খুনের কেচ্ছা।
তোমার পোষা খুনী খুবলে, ছিঁড়ে খাক আমায়, আমি বাকি অবশিষ্ট হাড়ে খোদাই করে যাব গুম করে ফেলা সব বন্ধুর নাম।
তুমি আমায় পুড়িয়ে মারো, আমার ছাই চিনে নেবে তোমার পিপীলিকা পাখা।
আমার আত্মা মনে রাখবে কারা চুপচাপ ভুলে গিয়েছিলে।
আমার হাজতে গলা-পচা লাশ মনে রাখবে টপাটপ কারা বিক্রি হয়েছিলে ভীষণ স্বস্তা দামে।
মনে রেখ আমি ‘ঋণ’ খেলাপী নই।
কড়ায়-গন্ডায় তোমার হিসেব চুকাতে আমার এতটুকু ভুল হবে না।
আমি সব কিছু মনে রেখে বারবার ফিরবো,
শব্দে, আওয়াজে, প্রতিবাদে – আর তোমার পতনে।
তোমার জুলুম, শাসনের দাগ শোধ-বোধ হবে আমার ইনসাফের চিৎকারে।
যেই চোখ থেকে কেড়ে নাও স্বপ্ন, সেই চোখেই আবার হিসেব বসাবো অযুত কোটি স্বপ্ন-মশাল।
আমার লাশ জমিয়ে যে বদ্ধভূমি তুমি গড় ,
হিসেব দেব সেই বদ্ধভূমির ইঞ্চি-ইঞ্চিতে বেঁচে থাকার গান বুনে।
আমার বন্দীনামায় তোমার স্বাক্ষরের হিসেব চুকাবো তোমারও যে অধিকার আছে সেটা মনে রেখে।
আমি সবকিছু মনে রাখবো হিসেব মেলানোর সেই দিনটা পর্যন্ত।
শুরুর কথা: কবিতাটি আমির আজিজের “সব ইয়াদ রাখখা জায়েগা” কবিতার ‘মনে রাখবো’ এর থিম থেকে অনুপ্রাণিত। অনেকেই সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই থিম ব্যবহার করেছেন তাদের অনলাইন, অফলাইনের প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে। অন্যদিকে ‘সবকিছু মনে রাখা হবে’ এই আওয়াজকে কেও কেও  “ভবিষ্যতের জন্য মৃদু ভয়েরও” ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। এই ভয় যৌক্তিক ভয়। ইতিহাস-বর্তমান দুটোই স্বাক্ষী দেয় যে বাংলাদেশে জুলুমের বদলা হরদম জুলুম করেই নেয়া হয়েছে, নেয়া হচ্ছে। সত্যিকারের অধিকার, সমতা, সুবিচার কখনো লাঠির বাড়ি দিয়ে লাঠিকে হারানোতে প্রতিষ্ঠা পায় না। কিন্তু তবুও প্রতিটা গল্প ইঞ্চিতে-মাইলে, শব্দে-বাক্যে, রঙে-রেখায় মনে রাখা দরকার। মনে রাখাটা সকল সময় কুৎসিত প্রতিশোধের নয়। মনে রাখাটা বুক ফাটা কষ্টের, অপমানের ব্যর্থতার, চোখ জ্বলা ক্ষোভের, এবং অন্যায় না মানার চাপা শপথের। মনে রাখাটা তাই প্রতিবাদের শক্তিও। তাই প্রতিবাদের ভাষা, বা কবিতার শব্দকে শক্তি হিসেবে না দেখে শুধুই সন্দেহের চোখে, ভীতির চোখে দেখাটাও সমস্যাজনক। সেই ভীতি টপকাতে এই কবিতা।
Aanmona Priyadarshini is doing her PhD in anthropology at the University of Pittsburgh, USA. She is a dreamer and a shameless borrower of inspirations. She believes that the only way to fight injustice and inequality is to raise our fists in the air for solidarity.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

শুদ্ধস্বর
error: Content is protected !!