প্রশ্নোত্তর:
শুদ্ধস্বর: কবিতা লিখতে হবে বা কবিতা লেখার জন্য তাড়না বোধের ব্যাপারটা প্রথম কিভাবে অনুভব (মানসিক অবস্থা, পরিবেশের সাথে সংশ্লেষ) করতে শুরু করলেন?
সুহিতা সুলতানা: চমৎকার প্রশ্ন। মানুষের যাপিত জীবন তার মানসিক অবস্থা ও পরিবেশ দ্বারা মীমাংসিত। বোধের অনিঃশেষ তাড়নায় জীবনের মূল সুর অনুরণিত হয়। ঠিক সে রকমভাবে একদিন কবিতাকে গ্রহণ করি। কবিতা লেখার শিল্পিত রূপকে অভূতপূর্বভাবে স্পর্শ করতে চেয়েছি বারবার। আবেগাক্রান্ত হয়ে কবিতা লিখি এটা যেমন ঠিক তেমনি স্বস্তি, মুক্তি ও সুস্থতালাভের প্রত্যাশায় কবিতা লিখি এটাও ঠিক। তবে লেখার তাড়না বোধতো থাকেই। কোন ঘটনা ও বিষয় যদি তুমুলভাবে আমার মস্তিষ্ককে নাড়া দেয় তখন মানসিকভাবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের সাথে যুক্ত হয়ে সংশ্লেষণ হতেই পারে। সময় ও প্রেক্ষাপট ধরে আমার কবিতার বক্তব্য এগুতে থাকে। সেখানে সময়ের বৈপরীত্য ও নৈঃশব্দ্য আমি অনুভব করি যা আমার কবিতায় প্রধান উপজিব্য।
শুদ্ধস্বর: আপনার কবিতার সমসাময়িকতা, রাজনৈতিক বোধ, নিজের ভাষা শৈলির বিষয়গুলো যতটুকু সম্ভব বিস্তারিত ভাবে শুনতে আগ্রহী।
সুহিতা সুলতানা: আমি সব সময় সময়কে ধরতে চাই। আর সময়কে ধরেই মূলত লিখি। একজন লেখকের একটা দায়বদ্ধতা থাকে সেটা সামাজিক ও রাজনৈতিক দুই-ই হতে পারে। আদর্শহীন মানুষ সব সময় বিপজ্জনক। নিজের ভাষা শৈলীর প্রকরণগত রূপ তৈরি করতে হলে একটা নিজস্ব ভঙ্গি বা প্রণালি তৈরি হতে হয়। একজন লেখক বা কবিকে চিহ্নিত করা যায় তার ভাষা শৈলি দিয়ে এটা যদি কোনো লেখক তৈরী করতে পারে তার স্বরকে পাঠক যদি শনাক্ত করতে পারে সেটা কবির বড় প্রাপ্তি।
শুদ্ধস্বর: কবিতার শ্লীল অশ্লীল ব্যাপারগুলো সম্পর্কে আপনার ধারনা ও অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
সুহিতা সুলতানা: সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অবক্ষয়, ঘৃণা-মিথ্যাচার একজন কবিকেও সমানভাবে ক্ষত-বিক্ষত করে। চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী এবং ঐতিহ্যানুসন্ধানের দায় থেকে কবিতার মধ্যে উঠে আসে সময়কাল। পবির্তনশীল মানুষরাই পোশাক পরিবর্তনের মত চিন্তার জগৎটাকেও বদলে ফেলতে চায়। ঠিক সে রকমভাবেই কবির কবিতায় উঠে আসে শ্লীল ও অশ্লীলতার বিষয়টি। আধুনিক কবি মাত্রেই তার চারপাশের ঘটে যাওয়া চিত্রপট কবিতায় দৃশ্যায়িত করতে চায়। শব্দ চয়নের রূপ শ্লীল অশ্লীল ব্যাপারগুলো নির্ণিত হয়। এবং এই বিষয়সমূহ প্রসঙ্গিক করে তুলতে চায় একজন কবি।
শুদ্ধস্বর: বাংলাদেশে ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলা কবিতা নিয়ে আপনার নিজস্ব মূল্যায়ন/বিশ্লেষণ জানতে চাই। এটা যে কোনো সময় ধরে হতে পারে, আপনার যেমন ইচ্ছে।
সুহিতা সুলতানা: একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ বাংলা ভাষাভাষি প্রতিবেশী দেশ হলেও রুচি ও চাহিদার তারতম্য তো রয়েছে। আমি বলবো বাংলা কবিতায় অনেকটা এগিয়ে বাংলাদেশ। এটি সম্ভব হয়েছে আমাদের পুরো ভূ-খণ্ডটাই বাঙালি ও বাংলা ভাষা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বাংলা ভাষা একক ভাষা হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত। অন্য কোনো ভাষার আগ্রাসন নেই। এগিয়ে থাকার পেছনে এটিও একটি বড় কারণ। তবে আমরা চাই পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়টা অক্ষুন্ন থাক। বাংলাদেশের কবিতা অনেক এগিয়ে গেছে আগের তুলনায় এটা সত্য। যদি পরবর্তী প্রজন্ম এ ধারাটিকে অব্যাহত রাখে তাহলে একদিন বাংলাদেশের কবিতার সাফল্য বিশ্বের অন্যান্য ভাষার কবিতার সাথে তুলণীয় হতে পারে। অস্বস্তি, ক্ষোভ ও সংশয় থেকে আমরা বরাবর মুক্ত হতে চাই। সেটি কবিতার ক্ষেত্রে আরো প্রযোজ্য।
শুদ্ধস্বর: খুব সাম্প্রতিক সময়ে আপনার পাঠ অভিজ্ঞতা (যে কোনো বই বা লেখা) নিয়ে কিছু বলুন।
সুহিতা সুলতানা: সম্প্রতি পাঠের মধ্যে নন্দন তত্ত্বের ইতিহাস (দি হিস্টি অব এস্থেটিক্স, মূল ক্যাথারিন এভারেট গিলবার্ট ও হেলমুট কুন অনুবাদ: শফিকুল ইসলাম) গ্রন্থটি একটি চমৎকার গ্রন্থ। গ্রন্থটি পাঠের মধ্যে দিয়ে এটা আবার নতুন করে অনুভূত হলো নান্দনিক সুষমার কাছে জীবনবোধ বিশ্লেষণাত্মক চিন্তা প্রকাশের একটা ধরণ। গ্রন্থটি পাঠের মধ্যে দিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নান্দনিক সত্যদর্শন গ্রহণের ক্ষেত্রে চিন্তাধারার পরিবর্তন ব্যাপক একটি প্রণালী। তবে সৌন্দর্য বলতে শুধুমাত্র মনের ধারণাকে বোঝায় এটাই শুধু নয় মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতাও একটি বিষয়। ‘অ্যাডিসন, হিউম এবং বার্কের জন্য মৌলিক ও প্রধান নান্দনিক অভিজ্ঞতা হলো সেই সহজাত আকর্ষণ যা আমরা নিজেদের প্রজাতির সৌন্দর্যের প্রতি অনুভব করি। অ্যাডিসন বলেন এই সৌন্দর্য অধিকতর উষ্ণ এবং উদ্দাম সেই সৌন্দর্যের চেয়ে যা আমরা শিল্পের রূপ ও রঙে প্রত্যক্ষ করি। প্রজাতির সৌন্দর্য তাহলে কী, প্রাণীকুলের একটা শ্রেণিকে একসঙ্গে শিলিভূত করে এমন জাদুময় আবেগ ছাড়া আর কী? হিউম সাদৃশ্যের মধ্যে এর চিহ্ন খুজেঁ পান। তিনি বলেন, প্রকৃতিতে সকল বস্তুরই তাদের আত্ম-সদৃশ বস্তুর প্রতি সহজাত আকর্ষণ থাকে। প্রাচীন অ্যাম্পিডোক্লীন জাদু হলো সর্বশেষ সংজ্ঞাতীত নীতি যা প্রত্যক্ষকারীর জৈব প্রক্রিয়াটিকে বহির্জগতের প্রত্যক্ষীকৃত ’উপলক্ষ’ অথবা দৃশ্যমান ‘কারণ’ কিংবা আনুষঙ্গিক পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত করে।’
‘নন্দনতত্ত্বের ইতহাস’ গ্রন্থটি পাঠের মধ্য দিয়ে নান্দনিক আদর্শ ও আধুনিক সৌন্দর্যবোধের মনোভঙ্গিকে স্পর্শ করা যায়। গ্রন্থপ্রিয় পাঠকের জন্য বইটি সুপাঠ্য হবে বলে মনে করি।
কবিতা:
বিষদৃশ
অনিদ্রা আত্মাকে নিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি বসে
বিষদৃশ মুখগুলো অযাচিত হিম হয়ে ওঠে, যে
গতকাল স্যুসাইড নোট লিখতে লিখতে মৃত্যুকে
হৃদয়ের কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল সে সত্যই
আজ মৃত! এরকম অনেক রাত শূন্য হতে হতে
দীর্ণ হয়ে বিবর্ণ হয়ে যায় কেউ তা দেখেনা!
স্হিরতা একটা প্রলোভন উপলদ্ধিও বলা যায়
সারা বাড়ি নিঃসঙ্গতায় মোড়ানো তাহলে কী
মানুষের মৃত্যুর জন্য মানুষই দায়ী? কিন্তু এসব
অচেনা গন্তব্য চোখের ভেতরে নক্ষত্রের বদলে
মরুতৃষ্ণা জাগিয়ে তোলে। উড়তে থাকে বালুঝড়
সর্বত্রই প্রবেশ নিষিদ্ধ হলে একদিন তারাও
কি স্যুসাইড নোট লিখতে লিখতে মারা যাবে?
ধুলো আর বরফের নিচে এসব ইতিহাস সব
ভয়াবহ অভিশাপ হয়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকাতে
থাকে! মানুষ আসলেই আজ মৃত, পেশাকটা
আধিপত্য মাত্র।পথটা আপেলের মতো শূন্য
পানশালা, শপিংমল, বুকস শপ, শর্মা হাউজ
সর্বত্র যে যার মতন। কেবল শীতের সকালে
শিশির ভেজা ঘাস, ঝরে পড়া হলুদ পাতা
মানুষের প্রতিহিংসা থেকে কিছুটা সময় দূরে
রাখতে পারে! তারপর আবার সেই অফিস
স্মৃতিগুলো চোখের নিমিষে পর হয়ে যায়
কত মানুষের জন্য কতকিছু করলেও কেউ
মনে রাখেনা, মনে না রাখাটাই নাকি ধর্মে
লেখা!এভাবেই মানুষ ক্রমশ একা হয়ে যায়
মুহূর্ত
মানুষ আসলে ছোট্ট কিছুর জন্যও মারা
যেতে পারে! হোক সেটা স্বপ্ন ও অপেক্ষা
স্মৃতি,মায়াজাল, দ্রোহ স্তব্ধতার মুখোমুখি
ম্লান হতে থাকে মুহূর্ত। স্মৃতিগুলো নিঃস্ব
করে দেয়, হু হু করে বেজে ওঠে অন্তর
আজকাল মানুষ বড় অসহিষ্ণু দ্বিধাহীন
চারপাশ আঁধার করে রাখে।লোভের কাঁটা
হয়ে কেউ কেউ ঝুলে পড়ে কণ্ঠ বরাবর।
যে উসকে দিয়ে সব লণ্ডভণ্ড করে দেয়
সে কী মানুষ না যমদূত? নাকি বিবিধ চুক্তি
সম্পাদনে নেশাখোর ডাকিনী! তাহলে এ
ভূমি, অরণ্যের গান সব অন্যের দখলে চলে
যাবে? দিনশেষে সব কবিরা কী নিঃস্ব হয়ে
যায়? নিজের বলতে তার কিছুই থাকেনা?
এভাবে মানুষ প্ররোচিত হতে হতে অন্যের
হাতের পুতুল হয়ে ওঠে। এখন মানুষ
ক্রীতদাসের বদলে ভেড়া হয়ে যাচ্ছে!
একমাত্র ঈশ্বরই জানেন এর শেষ কোথায়
মায়া
অদৃশ্য হতে হতে দৃশ্যায়নের চিত্র
প্রশ্নকর্তা হয়ে দৃশ্যসীমার ভেতরে
বনভূমি উজাড় করে ফেলে! সূর্যাস্ত
ও অদৃষ্ট ঘন হয়ে পাশে বসে। অথচ
নিজস্ব নিয়মে যিনি খেলেন তিনি তো
নটরাজ। চারদিকে নগ্ন উল্লাস আর
সম্ভাবনাহীন দিন ও রাত্রির কাছে
লুটিয়ে পড়েছে মায়া।চেয়ে দেখি,
মায়াবী প্রান্তর ক্রমশ ধূসর নিস্তব্ধ
রক্তাক্ত আলোর গ্রীবা বেয়ে ছোবল
উঁচিয়ে ধরে। বিষময় সময় ব্যেপে
অগ্রহণের কাল। এ দুঃসহকালে কেউ
কারো থাকেনা। কেবল প্রতিশ্রুতিহীন
ধুলো আর স্মৃতির সংসারে দৃশ্যহীন
মায়া বিস্ময়ের সূচক হয়ে গভীর ক্ষত
তৈরি করে অস্তিত্বজুড়ে।
কারণ
আমি কারো প্রতিদ্বন্দ্বি নই
কারো পাকা ধানে মঈ দেবার
মতো মানসিকতাও আমার নেই
নির্বিচারে কেউ যদি জড়বস্তু খায়
তা দেখার ইচ্ছাও আমার নেই
তবে হ্যা যখন তুমি কারণ ছাড়াই
চৌহদ্দী গিলে খেতে উদ্যত হও
অকারণে মানুষের মগজ থেতলে
দাও তখন তোমার এ দায়ভার
কে নেবে হে? কেন অন্ধ করে
দাও চোখগুলো? এত উদ্দেশ্য এত
নৃশংসতা ভালো নয় জেনো। এই
একফোঁটা চোখের জল লোহার
শেকল হয়ে নীরবতা কাঁধে নিয়ে
হাঁটতে থাকে অবিরাম।যেদিন
নিভৃতে শীতের কাঁটা তোমাকে
মগডাল দেখাবে সেদিন বুঝবে
ডাকবাক্সের কদর!যে মানুষ বোঝে
না সে চাঁদ ও স্বপ্নের মর্ম কীভাবে
বোঝে? যে দর্শন ও ভাষার ইতিহাস
বোঝেনা কেবল সূচকের পদ্ধতি
মাথায় নিয়ে নাচতে থাকে তার
কাছে মূল্যবোধের কোনো মূল্য নেই
বৈভব
মানুষ বদলে যায় দ্রুত নৈঃশব্দ্যের ভেতরে
শীত ও দুঃখগুলো হামাগুড়ি দিয়ে স্মৃতি ও
ধ্বংসের মুখোমুখি বসে। অভিজাত হাওয়ায়
ভেসে বেড়ায় বরফ কুচি, পক্ষপাত, ঘৃণা আর
শেষ ট্রেনের হুইসেল। সত্যদৃষ্টি দিয়ে যা দেখা
যায় তা কেবল যথেষ্ট অনুতাপ নয় রীতিমত
প্রায়শ্চিত্ত যাকে বৈপরীত্যও বলা যেতে পারে
ক্রোধ ও হিংসার জাল কোনো প্রভুত্ব মানে না
কারো তুলনাও অপরাধ কমানোর জন্য যথেষ্ট
নয়। সঙ্কীর্ণ পথের জন্য মানুষের স্পন্দন শ্লথ
হয়ে আসে। জীবনে স্হায়ী বলে আসলে কিছু
নেই। রাত্রিরা বহুদূর নির্জনতা খুঁজে ফেরে …
পরস্পর গ্রাহ্যর সীমার ভেতরেও এখন কিছু
নেই। সব কৃতঘ্নর দল উঁচিয়ে ধরেছে ফণা
যা কিছু বৈভব তা যেন স্বার্থের নির্ভুল পাঠ
অভিশাপ
সহজ সরল মানুষেরা গরল বোঝে না
ধূর্ত শৃগালের মতো যারা ওৎ পেতে থাকে
তারা মহাকালের পতন দেখেনি।ঘরহীন
ঘরের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে নির্জনতা খোঁজে
অভিশাপ। রহস্যময়তার সম্মুখে সে এক
কাপুরুষ বটে যে অন্যের বাড়া ভাতে ছাই
দিয়ে উল্লসিত হয়। যার কাছে মৃত্যু ও
বার্ধক্যের কোনো মূল্য নেই সে ঘুমের মর্ম
কী তা উপলদ্ধি করতে জানে না। এই যে
নিজের সত্তাকে বির্সজন দিয়ে যে ভেঙে
ফেলে মায়ার বিস্তার, সমূহ সম্ভাবনা
তার কাছে সবই তলাহীন ঝুড়ির মতন
আমরা আলাদা হতে হতে পৃথক সাম্রাজ্য
গড়ি। শুভ্রতার বিদ্রূপও কম নয় অস্হির
করে তোলে চারপাশ। এই মায়াবী অপরাহ্নে
মানুষ ভুলে গ্যাছে ছাদ ও মাটির মর্মযাতনা
কে বোঝে স্বচ্ছ জলের কাতরতা? যে প্রণয়
বোঝে না তার কাছে সবই জলাশয় সবই
হট্টরোল। সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা যার নেই
সে কখনো সন্ধ্যার কারুকার্য ও শিল্পের নহর
দেখেনি।এক সময় মানুষও নিঃস্ব হতে হতে
ভূমিহীন হয়ে যায় তখন চিন্তা ও মগজ খুলে
খুলে পড়ে। বিক্ষিপ্ত আন্দোলনের মুখে ধর্ম
খেয়ে ফেলে অস্তিত্ব।চেয়ে দেখি চারপাশে
লোভের কুমির। হে বৃক্ষ তুমি প্রশান্তি দাও
ভাষা
মানুষের মস্তিষ্ক ভোতা হয়ে গেলে অবশিষ্ট কিছুই থাকেনা জলের মতো শুদ্ধ কোনো ভাষা জগতে আছে বলে মনে হয়না। প্রেম ও বিশ্বাস এখন অসত্যের গান। ক্ষোভ ও দুঃখের দিনে যারা ফুঁ দিয়ে সম্পর্ক নিভিয়ে দিতে চায় তারা বিকেলের সূর্যাস্ত দেখেনি। কখনো কখনো স্বপ্নসমূহ সাপের খোলসে মোড়ানো থাকে। দুধ কলা দিয়ে যাকে আসন এগিয়ে দিলে সেকি এর মর্ম বোঝে? নিভৃতে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ বিষাদে নীল হয়ে ওঠে। মাঝে মাঝে শীতের বিকেলে সূর্যমুখী ফুলগুলো অহঙ্কারহীন বীয়ারে চুমুক দিতে উদ্যত হলে সীমান্তে মুখ থুপড়ে পড়ে অসংখ্য পাখির পালক। কিছুদিন হলো অস্থিরতা সংক্রমিত করে বুকের ভেতর হিম করে তোলে। সবকিছু অস্তিত্বহীন মনে হলে মানুষ অনুভূতিহীন হয়ে পড়ে। জীবনে যা কিছু অধিক তা ব্যালে নৃত্যের মতন। মধ্যরাতে চন্দ্রের আলো বিজ্ঞাপনের মতো মনে হলেও ভাষার তারতম্যে তা অফিস ফেরৎ কেরানীর মতন ধূসর। এখন দন্তহীন রমণীরা ইনসিওরেন্স’র ঘাড়ে চেপে দুনিয়াকে এক হাত দেখাতে চায়। যদিও অনুপযুক্ত সংলাপের কোনো মানে নেই, এরকম জীবনও বিবর্ণ, অবিন্যস্ত অর্কেস্ট্রা ভয়ার্ত করে তোলে চারপাশ
More Posts From this Author:
- None Found
“এখন মানুষ ক্রীতদাসের বদলে ভেড়া হয়ে যাচ্ছে! ” — কী চমৎকার! একটি প্রতিতুলনা, একটি চিত্রকল্প, একটি বাক্য। অথচ সময়ের সবটুকু বেদনাকে ধারণ করতে চেয়েছে অক্ষুণ্ণ রেখে শিল্পের সবখানি সৌন্দর্য। সুহিতা সুলতানা মানবিক বোধে উজ্জীবিত ও চিরজাগ্রত একজন কবি। বাতাসের নিবিড়তায় ছুঁয়ে চলা বেদনাগুলো ধরা দেয় সুহিতা সুলতানার শাণিত রাডারে। সে বেদনা স্বভাবে কখনো একান্ত, কখনো-বা সামষ্টিক। তারা ভাষা পায় সুহিতার হাতে। সে ভাষায় ক্ষোভ থাকে, শ্লেষ থাকে, ঘৃণা থাকে, আক্রমণও থাকে কিন্তু তা বিস্ময়করভাবে অনুদ্ধত ও অপ্রগলভ। সে ভাষা নিবিড়ভাবে চিত্রকল্পময়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিত্রকল্পসমূহ নতুনত্বে উজ্জ্বল ও সচ্ছল। প্রায় ক্ষেত্রেই তার কবিতা একবার পড়ে সবখানি বোঝা যায় না। কিন্তু যতখানি বোঝা যায়, তা পুনঃপাঠের আগ্রহ সৃষ্টি করে, উস্কানি দেয়। অক্ষমের চালাকি–উৎসারিত দু্র্বোধ্যতা থাকে না বলে পাঠককে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসতে হয় না। ফলে পাঠক আবার পড়ে। আবারও তার কোঁচায় জোটে বাড়তি আনন্দ, নতুন রস। সুহিতা সুলতানার সবচেয়ে বড় অর্জন নিজস্ব কাব্যভাষা যা আলো-আঁধারিময়, কোমলকণ্ঠী এবং প্রাণরসে সচ্ছল । এত ক্ষুদ্র একটা সাক্ষাৎকারে তাকে বোঝা যাবে না সম্যকভাবে যদিও তিনি প্রশ্নক’টির স্মার্ট ও সাবলীল জবাব দিয়েছেন।