পোশাকের চরিত্র কেমন হবে সেটা র্নিধারনের ক্ষেত্রে আমরা মোটা দাগে চারটি ডাইমেনশন পেলাম: অর্থনৈতিক অবস্থান মানে ভোক্তার শ্রেনি মানে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা, ভোক্তার সামাজিক সংস্কৃতিক কাঠামো,ভৌগলিক অবস্থান, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের শর্ত। এর সাথে পোশাকের ধরন কেমন হবে সেখানে আরেকটা ডাইমেনশন যুক্ত হতে পারে, জিও পলিটিক্স। মানে অনেক সময় আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক রাজনীতিও পোশাক এর ধরন র্নিধারনের ক্ষেত্রে যুক্ত হতে পারে। এই পঞ্চম ডাইমেনশন মানে জিও পলিটিক্স যখন যুক্ত হয় তখনই পোশাক ধারনাটা অনেক বেশি আলোচনার সামনে চলে আসে, বা সমালোচিত হয়।
বাংলাদেশে গত দুই দশকে নারীদের মধ্যে হিজাব ব্যবহারের পরিমান উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। এই পোষাকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়াকে কেন্দ্র করে অনকেগুলো প্রশ্ন সামনে উঠে এসেছে। এমন না যে আজকেই হঠাৎ করে হিজাব কেন্দ্রিক আলাপ-আলোচনা-সমালোচনা উঠে আসছে। থেকে থেকে মাঝে মাঝে আমরা হিজাব ব্যবহারের পক্ষে বিপক্ষে শক্ত মতামত দেখি, এমনকি ঘৃনা প্রকাশও দেখি। সবচেয়ে বিপত্তিকর ব্যাপারটা হলো আলোচনা সমালোচনাগুলো খুব বাইনারি। মানে একদল বলবেন হিজাব হচ্ছে অপ্রেশন আরেকদল বলবেন হিজাব হচ্ছে ফ্রিডম। একদল বলছেন হিজাব ব্যক্তি-পছন্দ, আরেক দল বলছেন এইটা সম্পূর্ণ চাপিয়ে দেয়া। এর মাঝে কোন ইনবিট্যুইন ভাবনা নাই, চিন্তা নাই ।
বাংলাদেশে হিজাব এর বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রধান যে প্রশ্নগুলো উঠে এসেছে সেগুলো মোটামুটি এরকম – হিজাব কি বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হতে পারে? হিজাব কি পলিটিক্যালি মোটিভেটেড কোন চয়েস? এইটাকে কি উপর কোন মহল থেকে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে নারীর উপর? হিজাব কি মেয়েরা নিজেদের সিদ্ধান্তে পরছে, নাকি সমাজ এবং পরিবার তাদের বাধ্য করছে? ধর্মীয় বাধ্য-বাধকতার অংশ হিসেবে কি মেয়েরা হিজাব পরছে, নাকি এর পিছনে আর কোনও কারণণ থাকতে পারে? হিজাব কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি কি অর্থনৈতিক শ্রেণিভেদে ভিন্ন হচ্ছে? হিজাব কি আসলেই নারীকে স্বাধীনতা দেয়, নাকি বেশি কাপড়ের আবডালে এটা নারীকে আরো বেশি পরাধীন করে? নাকি হিজাব বিস্তার এর ক্ষেত্রে গভীর কোনও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আছে? সবচেয়ে বড় বিষয় পোশাক হিসেবে হিজাব নিয়ে যত আলোচনা সমালোচনা বাংলাদেশে হয় আর কোন পোশাক নিয়ে বোধহয় এত সমালোচনা হতে দেখা যায় না।এইটাও একটা প্রশ্ন তৈরি করে এই একটা পোশাক নিয়ে এত আলোচনার আবশ্যকতা আছে কিনা?
এই প্রত্যেকটা প্রশ্ন আসলে একটা আরেকটার সাথে সম্পর্কিত এবং জড়ানো। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আলাদা আলাদাভাবে খুজতে গেলে সেইটা ভুল মেসেজও দিতে পারে।
পোশাকের চরিত্র যে ভাবে র্নিধারিত হয়:
শুধু হিজাব না, কোন পোশাকই ব্যক্তি মানুষের স্বাধীন পছন্দ থেকে আসে না। পোশাক র্নিবাচনে ব্যক্তির অর্থনৈতিক অবস্থান, সামাজিক সাংস্কৃতিক কাঠামো এবং ভৌগলিক অবস্থান মানে আবহাওয়া, মুখ্য ভূমিকা পালন করে বা শর্ত হিসেবে কাজ করে। আধুনিক সময়ে এই তিনটি শর্তকে মাথায় রেখে কনজিউমার ওয়ার্ল্ড তার প্রডাক্ট তৈরি করে। তারপর উৎপাদন মূল্যের সাথে ক্রয় ক্ষমতা তুলনা করে সেটা ওই অর্থনৈতিক শ্রেণির ভোক্তা যে অঞ্চলে থাকে সেই আঞ্চলিক বাজারে নিয়ে যায়। এবং ভোক্তা তার ক্রয় ক্ষমতা অনুযায়ীই তার পোশাকটি বাজার থেকে র্নিবাচন করেন এবং পরেন। বাজারে যে পোশাকের চল নাই সে পোশাক ভোক্তা চাইলেও বাজার থেকে কিনতে পারে না। আবার ঠিক উল্টাটা হলো, পুঁজি বাজার ভোক্তার চাহিদা যাচাই করে এবং সমাজ সংস্কৃতি অনুযায়ী কোন প্রডাক্ট (পোশাকের ক্ষেত্রে এইটাকে ফ্যাশন বলতে পারেন ) ওই র্নিদিষ্ট বাজারে চলবে সেইটা অনুমান করে এবং বাজারে সেই অনুযায়ী প্রডাক্ট নিয়ে আসে। এটা মোটা দাগে পুঁজিই হলো বাজারের চরিত্র।
এর বাইরে কোন দেশ বা অঞ্চলের পোশাক কেমন হবে সেটার একটা ঐতিহাসিক ধারাবাহিক প্রেক্ষাপটও থাকে। আর যারা লিঙ্গীয়-রাজনীতিতে সমাজকে বিশ্লেষণ করেন তারা মনে করেন নারীর পোশাক র্নিবাচনের ক্ষেত্রে পুরুষ বা পিতৃতান্ত্রিক সমাজ সিদ্ধান্ত নেয় বা মূখ্য ভূমিকা পালন করে। তার মানে পোশাকের চরিত্র কেমন হবে সেটা র্নিধারনের ক্ষেত্রে আমরা মোটা দাগে চারটি ডাইমেনশন পেলাম: অর্থনৈতিক অবস্থান মানে ভোক্তার শ্রেনি মানে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা, ভোক্তার সামাজিক সংস্কৃতিক কাঠামো,ভৌগলিক অবস্থান, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের শর্ত। এর সাথে পোশাকের ধরন কেমন হবে সেখানে আরেকটা ডাইমেনশন যুক্ত হতে পারে, জিও পলিটিক্স। মানে অনেক সময় আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক রাজনীতিও পোশাক এর ধরন র্নিধারনের ক্ষেত্রে যুক্ত হতে পারে। এই পঞ্চম ডাইমেনশন মানে জিও পলিটিক্স যখন যুক্ত হয় তখনই পোশাক ধারনাটা অনেক বেশি আলোচনার সামনে চলে আসে, বা সমালোচিত হয়। যেমন গান্ধীর চরকায় বোনা মোটা কাপড় তার স্বদেশী আন্দোলনে আলোচিত হয়ে আছে। ‘মায়ের দেয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলেনে রে ভাই, দিন দুঃখিনি মা যে তোদের এর বেশি আর সাধ্য নাই’, ‘স্বদেশী পন্য কিনে হও ধন্য’- এই ধরনের গান বা শ্লোগানের মধ্যে দিয়ে আমার বুঝতে পারি দেশীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে বা জাতীয়তা বোধকে চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে পোশাক একটি রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেছে। মানে জিও পলিটিক্সকে পোশাকের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। পশ্চিমা নেক টাই ধারনা যেমন উঠে এসেছে কৃষ্ণাঙ্গ দাস প্রথাকে কাউন্টার দিয়ে। ওই রকম মুজিব কোট, জিন্নাহ টুপি এই পোশাকগুলো রাজনৈতিক সিগনিফিকেন্স বহন করে। যেমন ভূটানে কোন রাজনৈতিক নেত্রীত্ব সাধারনত তাদের জাতীয় পোশাক ছাড়া কোনো রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নেন না। ভারতের বিজেপী গেরুয়াকে রাজনৈতিক পোশাক হিসেবে সামনে নিয়ে আসছে। ৯/১১ এর পর পুরো বিশ্বেই মুসলিম নারীরা হিজাবকে একটি পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট হিসেবে দাড় করাতে পেরেছে। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আমেরিকায় মুসলিম ফ্যামিনিস্টমেয়েরা হিজাবকে তাদের আইডেনটিটি মুভমেন্ট এর অংশ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। এবং ৯/১১ পর ভৌগলিক রাজনীতির ক্ষেত্রে হিজাবের যে প্রভাব বা ভূমিকা সেটাও আলোচনার দাবী রাখে।
হিজাবের প্রসারে বাংলাদেশে বাজার অর্থনীতির ভূমিকা :
বাজার অর্থনীতিতে হিজাবের ভোক্তা খুব সুর্নিদিষ্ট, মুসলিম নারী।বাজার অর্থনীতির ধর্ম হচ্ছে সে ভোক্তা চিহ্নিত করে সম্ভাবনা দেখবে, সেই অনুযায়ী প্রডাক্ট ডিজাইন করবে এবং সেইটা বাজারে তুলবে। বাজারে সাধারনত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা সুষ্পষ্ট থাকে সেইটা বোঝা যায় কিন্তু এর বাইরে লাক্সারী আইটেম বা নিত্য প্রয়োজনীয় নয়, এরকম প্রডাক্ট এর চাহিদা হিডেন থাকে মানে সুস্পষ্ট ভাবে থাকে না। যে কারনে হিডেন চাহিদাকে পুঁজি বাজার প্রমোট করে, কখনো কখনো কৃত্রিম চাহিদাও তৈরি করে। যেমন ধরেন লরয়িাল এর চুল রঙ করার প্রডাক্ট। এখন এই যে নারী বা পুরুষ হিসেবে চুল রং করলে আমার ভালো লাগবে বা আমাকে আধুনিক দেখাবে বাংলাদেশে এই বোধ বা এই ফ্যাশন সেন্স কে আনলো? কোত্থেকে আসল? লরিয়াল এর মতো কনজিউমার প্রডাক্ট কোম্পানিগুলো বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যবহার করে প্রথমে সাদা চুল কালো করা, তারপর কালো চুল রঙিন করার প্রচারণা ক্রমাগত করে গেছে এবং একটা সময় ভোক্তা মনে করা শুরু করেছে চুল রং করলে আমাকে ভালো দেখাবে, আধুনিক দেখাবে। তারমানে পুঁজি এখানে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে প্রডাক্ট বাজারে নিয়ে এসেছে।
সেখানে বাংলাদেশ হচ্ছে একটি মুসলিম প্রধান দেশ যার শতকার ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। বাংলাদেশের মানুষ যে শুধু ভাব জগতে মুসলমান এরকম না, তারা প্র্যাকটিশনার মুসলমান। চর্চার মাত্রায় র্পাথক্য থাকতে পারে কিন্তু ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্ম চর্চা করে এটা ঘটমান বাস্তবতা। এটাকে অস্বীকার করার সুযোগ নাই। গোড়া মুসলিম, মডারেট মুসলিম, পারিবারিক ভাবে মুসলিম সে যে ফর্মেই হোক ব্যক্তি মনে করে সে মুসলমান। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে পুঁজি বাজার আসলে তার কোন প্রডাক্ট নিয়ে আসবে? এইটা কি অবশ্যম্ভাবী না যে পুঁজি মুসলমান ভোক্তাদের এই যে বাজার সেটা ধরার জন্য চেষ্টা করবে? মুক্ত বাজার অর্থনীতির যুগে যখন এক দেশের কনজিউমার প্রডাক্ট খুব সহজেই আরেক দেশে ঢুকে পড়তে পারছে, সেইখানে একটা মুসলিম প্রধান দেশে অপর মুসলিম প্রধান দেশের প্রডাক্ট বাজারে ঢুকে পরবে এইটাই কি স্বাভাবিক না? আপনি যদি কাশী বা ত্রিবেনী বা এই রকমের র্ধমীয় তীর্থ স্থানগুলোতে যান তাহলে ওই অঞ্চলের আঞ্চলিক বাজার দেখবেন গড়েই উঠেছে ধর্মীয় আচার চর্চা সামগ্রী দিয়ে। পুঁজির ধর্ম হলো সে যেখানে সম্ভাবনা দেখবে সেখানেই যাবে। ওই জন্যই শশ্মানের পাশে কাঠ চন্দনের দোকান থাকে, মসজিদের পাশে টুপির আর মন্দির এর পাশে ফুল প্রসাদের দোকান। ছোট পুঁজি বা বড় পুঁজি, যেখানে চাহিদা থাকবে পুঁজি সেখানে চাহিদা মোতাবেক প্রডাক্ট নিয়ে যাবে, হিডেন চাহিদা থাকলে প্রমোট করবে, কোন ধরনের চাহিদা না থাকলে কৃত্রিমভাবে চাহিদা তৈরী করবে। প্রডাক্ট হিসেবে হিজাবের ক্ষেত্রেও এর ব্যতয় কেন হবে?
খেয়াল করে দেখবেন বাঙলাদেশে যে গতিতে কাপড়ের মার্কেট বেড়েছে সমানুপাতিক হারে নারীদের মধ্যে হিজাব পরাও বেড়েছে।আমরা বলি যে আজ থেকে বিশ বছর আগেও মানে বিংশ শতকের গোড়ার দিকেও আমাদের মা খালারা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীরা এই হারে বোরখা পরত না। ১৯৮০/ ১৯৭০ সালের মধ্যবিত্ত নারীদের ছবি শেয়ার দিযে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বলছেন তখন আমাদের নারীরা হিজাব পরত না। খেয়াল করে দেখেন ১৯৭০, ১৯৮০ কিংবা ২০০০ সালের দিকেও আমাদের মার্কেট এর সংখ্যা কত ছিলো? ঢাকা শহরেই গাউসিয়া নিউ মার্কেট ছাড়া আর কয়টা মার্কেট ছিলো? বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক মোদ্দাকথা পুরা ঢাকা শহর জুড়ে এখন আপনি শুধু মার্কেটই দেখবেন। গত বিশ বছরে শুধু যে বিভাগীয় পর্যায় আধুনিক মার্কেট হয়েছে বিষয়টা এরকম না জেলা উপজেলা পর্যায় মার্কেট ছড়িয়ে গিয়েছে। যে প্রডাক্ট যে দামে আপনি ঢাকা শহরে পাবেন একই গোত্রের প্রডাক্ট আরেকটু নিম্ন মানে আরেকটু কম দামে আপনি পাবেন জেলা শহরে, তারও চেয়ে আরেকটু নিন্ম মানে আরেকটু কম দামে উপজেলা শহরে। হিজাব এর ক্ষেত্রও তাই হয়েছে; দারুন ফ্যাশনেবল দামী হিজাব বিভাগীয় শহরে বিক্রি হলে, জেলা শহরে তার চেয়ে একটু কম দামে হিজাবের ভিন্ন ভারশন চলে গেছে, উপজেলা পর্যায় তার চেয়ে আরেকটু নিম্ন মানের প্রডাক্ট চলে গেছে। কিন্তু হিজাব বড় শহর থেকে ছোট শহড় হয়ে গ্রামে ছড়িয়ে গেছে। পুজি ভোক্তা ধরার জন্য সবসময়ই প্রডাক্টে ভেরিয়েশন আনে। আর ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি ভ্যারিয়েশন আনতে না পারলে লাভ করতে পারবে না। সালোয়ার কামিজ, শাড়ি, হিজাব, প্যান্ট শার্ট, ফতুয়া যত ভেরিয়েশন সামনে থাকবে ভোক্তা নারী তত কিনবে পুঁজি তত প্রফিট করবে।
হিজাব বাঙালি সংস্কৃতির অংশ কিনা?
প্রথম বিষয় হলো সংস্কৃতি কোন কনস্ট্যান্ট বা স্ট্যাটিকি বিষয় না। একটি সমাজ বা জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি সদা পরিবর্তনশীল। এইটা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত এর মধ্যে অভিযোজন, বিয়োজন ঘটছে।তবে সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিবর্তনটা ধীরগতিতে হওয়ায় এটাকে চট করে চোখের দেখায় ধরা যায় না। সময়ের সাথে ঘটনা প্রবাহের মধ্যে দিয়ে এই পরিবর্তনের প্রভাবটা বোঝা যায়, টের পাওয়া যায়। সমাজের মানুষের খাদ্যাভাস, শিক্ষার হার, উৎপাদন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন, অর্থনৈতিক প্রক্রিযায় অংশগ্রহনের হার বাড়া বা কমা, ভিন্ন জাতি সত্তার সাথে মিশ্রন, ভিন্ন জাতি সত্তার শিল্প সাহিত্যে অনুপ্রবেশ এই বিভিন্ন প্রক্রিয়ার পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে একটি সমাজের সংস্কৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই বিশ্বায়নের যুগে সাংস্কৃতিক এই পরিবর্তন আরো অবশ্যম্ভাবী। অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে সাংস্কৃতিক ঢেউ ইউরোপ থেকে রাশিয়া হয়ে মধ্যপ্রাচ্যকে যুক্ত করে ডিশ এন্টেনা এবং ইন্টারেনেট এর মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশের বেড রুমে। মোবাইলে দাবী করা হচ্ছে ফোর জী চলে।তাহলে বাঙালি সংস্কৃতি বলে আসলে আপনি কোনটাকে আকড়ে ধরতে চাচ্ছেন? নদী সব মরে যাচ্ছে মাছ কোথায় পাবে? সেইখানে মাছে ভাতে বাঙালি বলে যে আমাদের খাদ্য সংস্কৃতির বড়াই ছিলো সেটা পরিবর্তিত হতে বাধ্য হচ্ছে। গ্রাম এবং শহরের সুযোগ সুবিধা, গঠনে যত পার্থক্য সূচিত হবে দুই সমাজের সংস্কৃতিতেও তত পার্থক্য তৈরি হবে। একটা জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির অনেকগুলো অংশের একটা অংশ হলো পোশাক। এবং এই পোশাক বা ফ্যাশনটাই হচ্ছে সবচেয়ে পরিবর্তনশীল এবং সহজে পরিবর্তনশীল।ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে ধরে নেয়া হয় এক দশক। মোটামুটি এক ধরনের ফ্যাশন সামনে পিছনে মিলে দশ বছর টিকে। দশ বছর পর ফ্যাশনের একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। এখন এই পোশাকের পরিবর্তনটা দিয়ে আসলে একটা জনগোষ্ঠী সামনে আগাচ্ছে না পিছনে যাচ্ছে সেইটা মাপা সম্ভব কিনা বা আদৌ মাপাটা সঠিক হয় কিনা? আর বাঙালি সংস্কৃতি বলতে আসলে আমরা কি বুঝি? ভাত মাছে শহুরে বাঙালি এখন আর শুধু তিন বেলা ভাত মাছ খায় না; রুটি,পাস্তা, নুডুলস খায়। রুটি ভিনদেশি খাবার, পাস্তা-নুডুলস ইটালিয়ান খাবার। শহরের মোড়ে মোড়ে আমেরিকান ক্যান্টাকি ফ্রাইড চিকেন। বাঙালি পিঠা পুলিকে সরিয়ে দিয়ে ইউরোপিয়ান কেক পুডিং জায়গা করে নিয়েছে। হাডুডু কিংবা দাড়িয়াবান্ধাকে সরিয়ে দিয়ে জায়গা করে নিয়েছে ক্রিকেট। পুরুষের ধুতিলুঙ্গিকে সরিয়ে দিয়ে শতকরা ৯৯ ভাগ যায়গা করে নিয়েছে ইউরোপিয়ান প্যান্ট, শার্ট। তাহলে বাঙালিয়ানা কি শুধু নারীর পোশাকে রক্ষা হবে কি না? বা বাঙালি নারী বলতে আসলে আমি কি বুঝি? শাড়ি ব্লাউজ পরা, বড় করে টিপ দেয়া নারী? আমার মা, খালা, ফুপু, তাদের কন্যা সন্তান কাউকে কখনো আমি কপালে বড় টিপে দেখি নি। আমাদের পুরো গুষ্টির মধ্যে একমাত্র আমার এক বোন বড় টিপ পরতে পছন্দ করে। তাহলে বাঙালি নারীর সাজ পোশাক কি? ঠিকই আছে ৬০/ ৭০ দশকে সেটা শাড়িই ছিলো, তারপর সালোয়ার কামিজ আসল। সালোয়ার কামিজ তো পাকিস্থানি সংস্কৃতি আমাদের না। কিন্তু আমাদের আবহাওয়ায় এইটা যায়,আমাদের দেশীয় নারীদের শরীরের কাঠামো অনুযায়ী এই পোশাকটা এডাপ্ট করা সহজ যেই কারনে খুব দ্রুত এই পোশাকটা সার্বজনীনতা পেয়েছে এবং এর উপযোগিতার কারনেই দীর্ঘস্থায়ীও হয়েছে। ২০২০ এ যদি আপনি দেখেন পোশাকের সংস্কৃতিটা খবুই মিশ্র আকার ধারন করেছে। শহর কেন্দ্রিক তরুণীরা সালোয়ার কামিজ, ফতুয়া, শাড়ি, হিজাব সবই পরে। যার যেটা ভালো লাগে সে সেটা তার চাহিদা অনুযায়ী বাজার থেকে কিনে নিয়ে যায়। ফ্যাশন এখন সরাসরি গ্লোবাল বিষয়। শহুরে তরুণীরা ফ্যাশনের জন্য এখন তার বড় বোন বা পাড়া প্রতিবেশি কি পরছে সেইটা ফলো করে না। গ্লোবাল ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে চোখ বুলায় বর্তমান গ্লোবাল ফ্যাশন ট্রেন্ড কি সেইটা বোঝার জন্য এবং সেই মোতাবেকই নিজের সাজ সজ্জা ফ্যাশন ঠিক করে। যেই দেশীয় মিডিয়ার প্রভাব বেশি সেই দেশীয় ফ্যাশন প্রভাব ফেলছে বেশি। আমার অবজারভেশনতো বলে ২০২০ এ বাঙালি নারীদের মধ্যে হিজাবের চেয়ে ভারতীয় সিরিয়ালের চরিত্রগুলোর সাজ সজ্জার প্রভাব অনেক বেশি। বাজারে হিজাব যত চলে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি চলে বিদেশী মেকাপ। কনসিলার, ফউন্ডেশন, বেইজ মেকাপ, ব্লাশন, আইশ্যাডো এত হরেক পদের মেকাপ এখন বাংলাদেশের আঞ্চলিক বাজারে বিক্রি হয় যেইটা আমাদের ৬০-৭০ দশকের মা খালারা কোনদিন হয়ত নামও শোনেনি। তাহলে বাঙালি নারীর মেকাপ কি বাঙালিসংস্কৃতির অংশ হবে, না হবে না ? যেহেতু ৭০ দশকে নারীরা এত মেকাপ দিত না তাহলে বর্তমানে মেকাপ দিলেই কি সেই নারীকেবাঙালি নারী নয় বলে খারিজ করতে পারছি কিনা? অথবা শহুরে তরুনীদের মধ্যে জিন্স ফতুয়া খুবই জনপ্রিয় দেখা যায়। জিন্স তো সরাসরি পশ্চিমা পোশাক। তাহলে জিন্স ফতুয়া পরা এই নারীরা বাঙালি নারী হিসেবে খারিজ হয়ে যায় কি না? যদি না হয় তাহলে হিজাব কে বাঙালি নারীর ফ্যাশন জগতে এডাপটেশন ধরে নিতে আমাদের আপত্তিটা আসলে কোথায়? এইটা বরং ভাবা জরুরী হিজাব পরলে বাঙালি নারী নয় বলে খারিজ করার পিছনে কি ধরনের মনস্তত্ব কাজ করছে। কেন করছে। মোদ্দা কথা বাঙালি নারীর সাংস্কৃতিক অবয়ব মাপার জন্য কোন মানদন্ড আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি কিনা? মানে এই এই পরলে বাঙালি নারী হবে, না পরলে বাঙালি নারী বলা যাবে না। যদি কোন মানদণ্ড দাড় করে থাকি তাহলে এই মানদণ্ড দাড় করানোর অথরিটি আসলে আমাদের কে দিলো?
বাংলাদেশে মেয়েরা হিজাব কেন পরছে?
এনজিওতে একটা কথা খুব ব্যবহার করা হয় যে কন্ঠ শোনা যায় না সেই কন্ঠ শোনার চেষ্টা করো। আমার সেই সব কন্ঠই শুনি যেই কন্ঠস্বরগুলা খুব উচু স্বরে বাজে। যেই কন্ঠগুলো চাপা পরে থাকে তাদের কন্ঠস্বরগুলো আমাদের কান পর্যন্ত পৌছায় না। যে মেয়ে হিজাব পরে তাকে আমরা প্রশ্নটা করি না আপনি হিজাব কেন পরেন? বাঙালি মধ্যবিত্ত হিসেবে সাংস্কৃতিকভাবেই আমরা ব্যক্তিগত জাজমেন্ট দিতে পছন্দ করি। ঘটমান বাস্তবতা যাই হোক আমাদের নিজেদের মাথায় কিছু এজাম্পশন থাকে আমরা সেইটাকে মানদণ্ড হিসেবে ধরে নিয়ে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত দিয়ে দেই। মেয়েটি নিজের সিদ্ধান্তে হিজাব পরেনি,তার পরিবার বা তার স্বামী তাকে বাধ্য করেছে অথবা সমাজের চাপে মেয়েটি হিজাব পরেছে। এই বিষয়ে গুগলেও ভালো কোনো সার্ভেভিত্তিক গবেষনা পেলাম না যেটা দিয়ে অনুমিত সিদ্ধান্তে পৌছানো যায়, বাংলাদেশে এই এই কারণে মেয়েরা হিজাব পরে ।
প্রাথমিক ভাবে অনলাইন থেকে পাওয়া আমি তিনটি গবেষনার ফলাফল রেফার করছি। A Conceptual Framework on the Study of Trends of Islamic Fashion and Clothing Practices Amongst Young Muslim Female in Bangladesh. (Mohsina Fatema and Md. Aminul Islam)। ২০১৪ সালে পরিচালিত এই গবেষণা ফাইন্ডিংসে পাওয়া গেছে, শতকরা ৬০ ভাগ নারী হিজাব পরে ফ্যাশনের অংশ হিসেবে। বিজিএমইএ ফ্যাশন ও টেকনলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার আফরোজা আকতার এর করা আরেকটি গবেষণা যেটা American Scientific Research Journal for Engineering, Technology, and Sciences (ASRJETS) (2017) এ প্রকাশ হয়েছে। গবেষক ২০ থেকে ২৫ এবং ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী এই দুই ভাগে সার্ভে করেছেন স্ট্রাকচারড প্রশ্নপত্র দিয়ে। উত্তরদাতাদের সবাই নারী এবং তারা হিজাব পরেন। তার গবেষণার ফাইন্ডিংস এ দেখা যাচ্ছে শতকরা ৮১ ভাগ নারী বলছেন তারা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তে হিজাব করছেন, ১৬ ভাগ নারী বলেছেন তারা পরিবারের সিদ্ধান্তে হিজাব করছেন এবং মাত্র ৩% নারী সামাজিক কারণে হিজাব পরছেন বলে জানিয়েছেন। তার গবেষনায় আরো উঠে এসছে যে ৮১ ভাগ নারী বিয়ের আগেই হিজাব পরা শুরু করেছেন। তার সার্ভেতে আরো কিছু বিষয় উঠে এসেছে। যেমন ৭৪ ভাগ মেয়েই মনে করছে হিজাব খুবশীঘ্রই ফ্যাশন হিসেবে হাজির হবে। শতকরা ১৯ ভাগ মেয়ে হিজাব পরে ফ্যাশনের অংশ হিসেবে এবং শতকরা ২৬ ভাগ নারীই হিজাব পরছেন মাথার চুলের যত্ন নেয়ার জন্য। কোন রকম কোন ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার জায়গা থেকে এই ২৬ ভাগ নারী হিজাব পরেন না।তার মানে আমরা মধ্যবিত্ত শ্রেণি যে হিজাবকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত দাড় করাচ্ছি, মানে, সকলেই বাধ্য হয়ে হিজাব পরছে, স্বামী বা পরিবার বাধ্য করছে অথবা ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার কারনেই মেয়েরা হিজাব করছে- এটা সর্বোতভাবে সত্যি নয়। আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ফটো জার্নালিস্ট জিএমবি আকাশ ২০১৫ সালে আরেকটি পিকটোরিয়াল গবেষনা করেছিলেন হিজাবের উপর। ১০০ জন হিজাব পরিহীতা নারীর উপর কোয়ালিটেটিভ ডকুমেন্টেশন। সেখানে দেখা গিয়েছে, ৮০ জন নারীই নিজের ইচ্ছায় হিজাব পরছেন। তারা উচ্চ শিক্ষিত, চাকুরীজীবী কিংবা গৃহিনী। হিজাব পরার পিছনে এই ৮০ জন নারী অন্যতম প্রধান কারন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন হিজাব পরলে রাস্তায় স্বাধীনভাবে চলা যায়। আফরোজা আকতারের গবেষণাতেও তিনি ফাইন্ডিংস পেয়েছেন, ৭৪ ভাগ নারীই মনে করছেন হিজাব পরে তারা অনেক বেশি স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছেন। আমি আমার ব্যক্তিগতঅবজারভেশনেও একাধিক নারীকে চিনি যারা কেবল পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলতে হয় বলে হিজাব করেন। সকাল বেলা আপনি যদি বাংলাদেশের গার্মেন্টস এর মেয়েদের দিকে দেখেন দেখবেন বিরাট একটা অংশের মেয়েরা স্রেফ রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের হয়রানি কমানোর জন্য হিজাব পরেন, কারখানায় ঢোকার ঠিক আগে দরজার ভিতরে ঢুকে হিজাব খুলে ফেলেন। আমি ব্যক্তিগত জীবনে এমন নারীকেও চিনি উচ্চ শিক্ষিত, বড় পদে কাজ করেন, পশ্চিমা পোশাক পরতে পছন্দ করেন, পাবলিক পরিবহনে যাতায়াত করতে হয় বলে হিজাব পরেন এবং অফিসে গিয়ে হিজাব খুলে ফেলেন। অনেক মডেল আছে ঢাকা শহরে হিজাব পরে চলাফেরা করে।অনেক নারী আছেন ঘরের কাপড় পাল্টাবেন না বলে উপরে হিজাব চাপিয়ে বাইরে বের হয়ে যান। এইগুলা বাস্তব অবজারভেশন,কোনটাই মনগড়া কথা না ।
হিজাবের বিস্তারের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয়কে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। মনে করা হচ্ছে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতির সাথে সাথে প্রচুর গ্রমীন নারী শহরে প্রবেশ করছেন কাজের প্রয়োজনে। এই গ্রামীন নারীদের বিরাট একটা অংশ পোশাক হিসেবে হিজাবে সাছন্দ্য বোধ করছেন। ৭০/৮০ এর দশকে এই পরিমান গ্রামীন নারী পোশাক কারখানা বা শহরের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য ভীড় করেনি। ফলে ওই শতকে এই ধরনের গ্রামীন নারীর ভীড় শহুরে মানুষকে দেখতে হয় নি।
হিজাব কি কাপড়ের আড়ালে নারীকে পরাধীন করে না স্বাধীন করে?
হিজাব নিয়ে উপরের আলোচনায় আমরা দেখেছি হিজাব চাপিয়ে দেয়া এবং এইটা সিম্বল অফ অপ্রেশন- ঢালাওভাবে আসলে এটা বলা যাচ্ছে না। এবং হিজাব পরিহিত নারী মনে করছেন,তিনি তুলনামূলক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছেন যদি তিনি এই পোশাকটি পরেন। তাহলে যারা মনে করছেন এইটা চাপিয়ে দেয়া এবং এই পোশাকটি মেয়েদের কে ঘেরাটপে বন্দী করছেন তারা কিসের ভিত্তিতে আসলে বলছেন। তারা বলছেন ধর্ম মতে এই পোশাকটির উদ্ভব, উৎপত্তি এবং বিস্তার এর তত্ত্বগত যে উৎস সেটাকে মাথায় রেখে। একটা হচ্ছে বিষয়বস্তুর তত্ত্বগত অবস্থান,আরেকটা হচ্ছে সময়ের সাথে চর্চার মধ্যে দিয়ে তার অনেকগুলো এডাপটিভ ডাইমেনশন যুক্ত হয় সেটা। হিজাবের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো একটা দেশে যেখানে পাবলিক পরিবহনে রাস্তায় মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের হেনস্থার শিকার হতে হয় এবং যে পরিবেশটা আমরা ঠিক করতে পরি নি, বর্তমান অবস্থায় এর কোনো সম্ভাব্য সমাধান নাই তখন কিছু মেয়ে এইটাকে চলাচলের জন্য আপাত সমাধান হিসেবে বেছে নিয়েছে; এটা একটা ডাইমেনশন। এই রকমই সময়ের সাথে প্রয়োজনের তাগিদে অন্য অনেক কিছুর মতোই পোশাকেরও ব্যবহার এর ধরন পাল্টায়, চরিত্র পাল্টায়। বাংলাদেশে হিজাবও এইরকমই একটি বর্ধিত চরিত্রের পোশাক হিসেবে হাজির আছে বলেই মনে হচ্ছে।
হিজাব হচ্ছে সিম্বল অফ অপ্রেশন, এই বক্তব্যকে অপোজ করে অনেক মুসলিম ফেমিনিস্ট যে যুক্তিটি করেন সেটা হচ্ছে ব্যক্তি নারীর স্বাধীনতা তার শরীরের মধ্যে কিনা? তাহলে এই চিন্তার সাথে পুরষতান্ত্রিক সমাজের নারীদেহকে অবজেকটিফাই করার যে চিন্তা তার সাথে পার্থক্য কি? নারীর শরীর ঢেকে রাখা কিংবা শরীর অবমুক্ত করার মধ্যে দিয়ে কি নারীর অর্জিত স্বাধীনতা পরিমাপ করা যাবে কিনা? নারী স্বাধীনতা নারীর কম কাপড় পরিধান বা বেশি কাপড় পরিধানের মধ্যে নিহিত আছে কিনা? চিন্তা, চেতনায়, শিক্ষায়, সামাজিক অর্জনে, কর্মক্ষেত্রে যদি হিজাব পরা একটি নারী এগিয়ে যায় তাহলে তাকে আমরা স্বাধীন নারী বলব কিনা? ভারতের শাহীনবাগ কিংবা কাশ্মীর কিংবা প্যালেস্টাইনে আমরা দেখেছি হিজাব পরিহীতা নারীরা পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটা জাতির স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। এই হিজাব পরিহীতা নারীরা কি স্বাধীনতার সিম্বল, না অপ্রেশনের সিম্বল? শহীনবাগে হিজাব পরিহীতা যে নারীরা শ্লোগান দিয়ে দুনিয়া কাঁপালেন ‘লড়কে ল্যাংগে আজাদী’ তারা কিসের সিম্বল? পরাধীন নারী নাকি স্বাধীন নারী?
ছবি সূত্র: ইন্টারনেট
Dilshana Parul, Research and implementation professional. Involved in political activism. Interested in politics, gender politics, feminism etc.