প্রকৃত শিল্প নির্মেদ ভাবে সত্যকেই প্রকাশ করে

Share this:

প্রশ্নোত্তর:

শুদ্ধস্বর: কবিতা লিখতে হবে বা কবিতা লেখার জন্য তাড়না বা বোধের ব্যাপারটা প্রথম কীভাবে অনুভব (মানসিক অবস্থা, পরিবেশ-প্রতিবেশের সাথে সংশ্লেষ) করতে শুরু করলেন?

বেবী সাউ: এভাবে দিনক্ষণ মনে নেই। তবে কবিতা পড়তে শুরু করেছি যখন, তখন আমি, এই ধরুন নবম,দশম …

 

শুদ্ধস্বর: আপনার কবিতার সমসাময়িকতা, রাজনৈতিক বোধ, নিজস্ব ভাষাশৈলীর বিষয়গুলো যতটুকু সম্ভব বিস্তারিতভাবে শুনতে আগ্রহী।

বেবী সাউ: প্রত্যেক কবির মতো আমি চেষ্টা করি সমসময় ও আবহমানকে মিশিয়ে দিতে। পারিনি এখনও। চেষ্টা করে চলেছি।

 

শুদ্ধস্বর: কবিতার শ্লীল অশ্লীল ব্যাপারগুলো সম্পর্কে আপনার ধারণা ও অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

বেবী সাউ: কবিতা বা কোনও শিল্পের শ্লীল অশ্লীল হয় না। কারণ প্রকৃত শিল্প নির্মেদ ভাবে সত্যকেই প্রকাশ করে।

 

শুদ্ধস্বর: বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের বাংলা কবিতা নিয়ে আাপনার নিজস্ব মূল্যায়ন/বিশ্লেষণ জানতে চাই। এটা যে-কোনো সময় ধরে হতে পারে,আপনার যেমন ইচ্ছে।

বেবী সাউ: মূল্যায়ন করার মতো ক্ষমতা আমার নেই। বোমা না ফেলে,  হত্যা না করে এক অন্য পৃথিবীর স্বপ্ন যারা দেখেন, তাঁরাই লেখেন। মূল্যায়ন করে সময়।

 

শুদ্ধস্বর: খুব সাম্প্রতিক সময়ে আপনার পাঠ অভিজ্ঞতা (যে কোনো বই বা লেখা) নিয়ে কিছু বলুন।

বেবী সাউ:  সাম্প্রতিককালে অনেক বই-ই পড়েছি। তবে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছিন্নপত্র আবার নতুন করে পড়লাম। এমন এক ঘোরের মধ্যে ডুবে গেলাম যা বাক্য ও মনের অতীত। চারপাশটি সুন্দর এবং স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হলো যেন…

 

 

কবিতা: 

এই দেশে যুদ্ধ নেই

জলের ভিতরে মাছ সন্তানের মতো নিরুপায়

এঁকেবেঁকে ভেসে যায়, কত দূরে ঠিকানাবিহীন

জানে না সে, কবি একা ডুবে মরে, অলকানন্দায়

বোয়াল মাছের পেটে রাখা থাকে তার জন্মঋণ।

তবুও তো টোপ নামে, আহা টোপ, কী নিপুণ তার

ছদ্মবেশ,যেন লোভ নিয়ে যাবে কতদূরে তাকে,-

মাছের জীবনতৃষ্ণা তাকে খুলে দেয় সে দুয়ার

এসেছ জ্যোতির্ময়? ভেঙেছ সে জীবনপোশাকে

উঁকি মারা ডাকাতের মৃগতৃষ্ণা? কস্তুরীর দিকে

এত কেন হাত বাড়াও? এত তার আকর্ষণ আজও?

কী লোভ সুগন্ধী আনে? কতক্ষণ পাণ্ডুলিপি লিখে

নিজেই নিজের কাছে মাদলের মতো তুমি বাজো?

জলের ভিতরে মাছ, কবি তুমি, কবিতায় বিষ

যত থাকে, তত টোপ, মন্থন করেছ অহর্নিশ?

 

যা খুশি লেখার পর, লেখা থেকে জন্ম নেয় গাছ।

সাদা ফুল পাশে রেখে নীল ফুল পাশেই সাহস।

আমিও তো তাকে বুঝি, তবু তাকে দেখাইনি নাচ

ময়ূর যেভাবে নীল, আমি তার কিয়দংশ রস।

তবুও তো খেয়ে যাও, কিছু মাত্র, এই দিলাম ভাঁড়।

এ ভাঁড়ে নেশার জল, মজে যাওয়া, জীবন পোহাও।

শিশির পড়েছে ঘুমে, ওহ ঘুমে খুলে গেল দ্বার

রবীন্দ্রসংগীতে, তুমি এত কেন বিষাদ জাগাও?

আমি তো লেখাই বুঝি, কবরেও শ্বাসাঘাত থাকে।

শব্দ চায় পোড়া মাটি, মাটি চায় নগ্ন শ্বাসমূল।

নজরুল ইসলাম যেন, কবিতা লেখার ফাঁকে ফাঁকে

দেখেছেন জ্যোৎস্নায় চাঁদ মাথায় জেগে আছে ফুল।

ও ফুল তুলো না মালী, এ বাগানে ঘোরে অজগর।

এ জমি কারোর নয়, কোথায় আমার নেই ঘর।

 

গানের স্বভাব জানি, সুরেই জীবন রেখে যায়।

আমি তো জীবন রেখে এই নাও , খুচরোই নিলাম।

বাজারে কয়েক শো দেনা, কত ভাত খাবে যে পোলায়

ওদিকে ভেঙেছে ঘর, ভূত দেখলে বলিনি হে রাম।

আমার সুরের দিনে কারা আজ হয়েছে মাতাল?

রাতের আঁধারে হয় এই সব, ভূতের স্বভাব।

আমি তো জেনেছি সেই ইতিহাস বইতে ভাত-ডাল

খেয়েছে ধর্মের অস্ত্র, মহাকাব্য দেখেছে খোয়াব।

পাতা ওড়ে, পোড়া পাতা, অক্ষরের জন্মদিন শেষ।

এত আঁকিবুকি গেল, এত রাস্তা হল যে প্রবীণ।

এত মুখ দেখল চোখ, এত গ্রাম হয়ে গেল দেশ

কাঁটাতারে কাঁটাতারে লটকে আছে নবান্নের দিন।

আমার শরীর নিয়ে আর কত খেলবে মহাজন?

এবার গুড়ের জলে কিছুটা ভিজিয়ে নেব মন।

 

অশনি সংকেত দেখে আজ আর লাগে না যে ভয়।

আমরা তো দেখেছি কারা রাত হলে গ্রামদেশে ফেরে।

ছায়া ছায়া খিদে সব, গায়ে লেগে আছে যে সংশয়।

যাওয়া তো রাস্তাই, তবু কী করে যাব যে সব ছেড়ে?

তবুও পেটের খিদে মাথায় দুঃখের বোঝা টানে।

সলিল চৌধুরী যেন, রানার ছুটেছে অসংযত।

আমি যে কবিতা লিখি, তুমি তার লিখেছ কি মানে?

নদীর ধারেই তারা হয়েছে যে ভীষণ নিহত।

আমি তো দুঃখের বোঝা বাড়াতে আসিনি এই দেশে।

তবু বুলেটের শব্দে পেটের ভিতরে নাচে মন

প্রজাপতি ওড়ে নাই, যৌনতায় ভাতে ভাত মেশে

এত সেক্সি খাদ্য যদি, তবে কেন আহত যৌবন?

শরীর আশ্চর্য মিথ্যা, যতই মাদলে বাজো নেশা।

আমার জীবন নেই, তোমারও তো নেই মাটি পেষা।

 

ভূমিকা তো শেষ হল, এবার প্রত্যক্ষ কথা হোক,-

কত লোক মরে গেছে? কত জল ঢুকেছে বন্যায়?

তোমার আমার প্রেমে নেই চিরন্তন প্রকাশক।

আমাদের লেখা দেখে ভড়কে গেছে তার পিতৃদায়।

বলো তো জীবন খুলে, আমি তাকে এ শরীর দেব।

কেন এত বার তুমি বদলে যাও মোহানার জলে?

এ কবিতা আমি ঠিক দাম দিয়ে আজ কিনে নেব,-

যদি বা আগুন হয় শিশিরের ঠিকানা প্যারোলে।

আমিও তো কেউ নই, তবে কেন বাঁধ ভাঙলে হাওয়া-

গাছের শিকড় ভাঙল, মাটি ফেটে ধ্বসে গেল পাড়

এখন সময় নয় তোমার তীর্থক্ষেত্র যাওয়া

ফেঁসে যাওয়া বাঘ দেখে মনে পড়ে ভোঁতা হল ধার।

ভূমিকা তো শেষ হল, এবার আসল কথা বলো-

পোশাক-আশাক নেই, নেই কোনও মধুর আড়ালও।

 

এস মৌন, অন্ধকারে। জল যায় নিখিলনগরে।

কে নিখিল? বেজে যায় ব্যানার্জির হাতের মুদ্রায়।

সেই বিশ্ব চেননি তো। মাটি মাখে পাও অসহায়।

তোমাকে বুঝিনি আজও। এ জীবন পঙ্গপাল ধরে৷

আমার প্রতীক নেই, আমি তো তোমার হাতে বাজি।

সুরবাহারে যে জীবন আকাশের মহাকালসম

তাকে কি বুঝেছি আমি, মধ্যমায় লেগেছে গমক।

তুমি কি আমার সঙ্গে যৌবনমন্থনে যেতে রাজি?

তবে চল, ভুলে যাও অতীতের কী ছিল জীবন।

ঘন মেঘে হাত বাড়ায় দুঃখগুলি, চিনিনি তাদের।

সকলের মুখে দেখি কী অপূর্ব  নবকুমারের

পথিক রয়েছে একা, চোখে মুখে নষ্ট বিনোদন।

 সলিল চৌধুরী বাজে হেমন্তের  রানারের পায়ে।

সূর্য তো ওঠে না আর, অন্ধকারে বৃষ্টি পড়ে যায়।

 

আমার সনেটগুচ্ছ চাকরির পরীক্ষার্থী নয়;

অধ্যাপক তাকে কোনও পিএইচডির পর্ববিভাজনে

বলবেন না এই তো রাস্তা, কত কাব্য ভ্রান্ত রসায়নে

মিশে গেল মহাকালে, কারো হাতে নেই তো সময়।

কেউ তো থাকে না আর, মা থাকেন, একা তিনি, মা-ই

পাশেই থাকেন শুধু, হাত রাখেন কবিতার পাশে

ধর্ম গেল, জল গেল, কত প্রেম ভাসালো খাতাই,

সেই সব অক্ষরেরা আজ কি জীবন লেখে ত্রাসে?

এ কেমন আগুনের কাব্য লেখা বিশ্ববিদ্যালয়ে?.

সবার মাথায় ছাদ, ঘন বাড়ি, মার্বেলের রাত।

পোষা বেড়ালের মতো নারীদেহ নিয়ে মাখে ভাত

নিভে যায় যে প্রদীপ, তারও ধোঁয়া পেয়েছি আশ্রয়ে।

আমার সনেটগুচ্ছে একশো দিন কাজ লেখা নেই।

বিয়ে হয়ে যাবে তার, নথভাঙা হয়েছে আগেই।

About The Author

  • More From This Author:

      None Found

Subscribe to Shuddhashar FreeVoice to receive updates

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

শুদ্ধস্বর
error: Content is protected !!