
শূন্য
সৃষ্টির আদিতে কিছুই ছিল না ইহসংসারে এক শূন্য ছাড়া। আধুনিক বিজ্ঞানের মতে ‘শূন্য’ থেকেই সবকিছুর উৎপত্তি। অর্থাৎ ‘নাই’তেই ‘আছে’র জন্ম। ধাঁধার মতো লাগছে? ধাঁধাই বটে, কিন্তু সত্য, এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান ও পদার্থবিদ্যার মহাপণ্ডিতদের দৃঢ়বিশ্বাস যে তার সাক্ষ্যপ্রমাণ প্রকৃতির মাঝেই প্রতীয়মান শুধু নয়, দৃশ্যমানও।
শূন্য ও অসীম একই সাথে পরস্পরের প্রতিচ্ছবি ও প্রতিপক্ষ। দুয়েতে মিলে রচনা করেছে সংসারের গূঢ়তম রহস্য। প্রাচীন গ্রিক দর্শনে এরা সৃষ্টি করেছিল বিতর্ক ও সংশয়, ভারতীয় চিন্তায় অধ্যাত্ববাদ ও দৈবাত্মার দ্বৈতসত্ত্বাবোধ, এবং সেই বোধের ফলশ্রুতিতেই গঙ্গার কল্যাণবহ সলিলধারার মতো জন্ম নিয়েছে গণিতের ‘শূন্য’। “গণিত” দ্য ভিঞ্চি ও গ্যালিলির ভাষায় “প্রকৃতির ভাষা”। ‘শূন্য’ আর ‘অসীম’ পরম নিভৃতচারী এদুটি প্রাণ সন্ধানী মানুষের চিন্তা ও কল্পনার কোষে কোষে বাস করে যে উর্বরতা দান করেছে মানুষকে তারই প্রতিফলন এই অত্যাশ্চর্য আধুনিক বিজ্ঞান।
‘শূন্য’ আমার ছোটবেলার কৌতূহল। শূন্য আমার মধ্যে অসীমকে জানার উৎসাহ জাগিয়ে তোলে। এ-বইটির লিখবার পেছনে একটাই উদ্দেশ্য আমার বাংলাভাষাভাষী জগতের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরকেও আমার নিজের কৌতূহল ও আগ্রহটিতে সংক্রমিত করে তোলা। আশা করি শূন্য বনাম গণিতকে একটু ভিন্নচোখে দেখবার চেষ্টা করবে ওরা বইটা পড়ার পর। ‘গণিত’ কোনও ভীতিকর জন্তুর নাম নয় গণিত জীবনের প্রতি আনাচে কানাচে বন্ধুর মতো, প্রিয়জনের মতো, প্রতিক্ষণে উপস্থিত।